ফ্রিল্যান্সিং কেন করবেন?

আপনিও কি ফ্রিলান্সার হবার কথা ভাবছেন?কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না কোথায় শুরু করবেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘মুক্তপেশা’।বর্তমান তরুন সমাজের মাঝে স্বাধীনতাকামী মনোভাব বেশ লক্ষ্য করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশ ঝুঁকছে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি।নিজের পছন্দ ও দক্ষতা অনুযায়ী নিজের সুবিধামতো সময়ে কাজ করতে পারছেন এখানে।

কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং? 

কেউ পার্ট টাইম,কেউ ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।কোনো প্রতিষ্ঠানের অধিনস্থ না হয়ে নিজের ইচ্ছেমতো সময়ে পছন্দের কাজটি করে আয় করছেন ভালো অংকের টাকা।আর নিবেই না কেন বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে ফ্রিল্যান্সিং এখন অন্যতম উপায়। 

ইউরোপ,আমেরিকার দেশগুলো নিজ দেশের শ্রমের অত্যধিক মূল্যের কারণে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অন্য দেশের ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের মেধাবী ফ্রিল্যান্সাররা সেই মার্কেটপ্লেসগুলোতে বেশ ভালোভাবেই অবস্থান করে নিয়েছেন।

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা 

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউট এর তথ্য অনুযায়ী,বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং এ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এবং প্রায় ছয় লাখের মতো তরুণ এ পেশায় নিয়োজিত আছে।বাংলাদেশের সফল ফ্রিল্যান্সাররা প্রতিবছর প্রায় একশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ আমাদের অর্থনীতে যোগ করে যাচ্ছেন যা অন্য যে কোন খাতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?

অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংকে আপাতদৃষ্টিতে খুব সহজ মনে করে, ‘আরে ফ্রিল্যান্সারতো বসে বসে টাকা ইনকাম করে,ওদের আবার কষ্ট কি।’আপনার ও যদি এরকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে থাকে,তাহলে ফ্রিল্যান্সিং পেশাটা আপনার জন্য নয়।

মনে রাখবেন,পৃথিবীতে কাজ ছাড়া কেউই আপনাকে টাকা দিবে না।যে কোন কাজ করতে গেলে কিছু দক্ষতা থাকতে হয়।আর ফ্রিল্যান্সিংও এর ব্যতিক্রম নয়। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার কোন একটি দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইনকাম করতে পারবেন।এখানে কাজ করার জন্য দরকার যে কোন একটি বিষয়ে পারদর্শিতা।

ফটোগ্রাফি করে আয় করার উপায়

যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে চান তাহলে অবশ্যই যে কোন কাজ জানতে হবে।যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন,ওয়েব ডেভেলপিং,গ্রাফিক্স ডিজাইন, সফটওয়্যার ডেভেলপিং, ভিডিও এডিটিং, লেখালেখি বা কন্টেন্ট রাইটিং, এসইউই ব্লগিং,টাইপিং, ডাটা এন্ট্রি,কাস্টমার কেয়ার জব,ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। এছাড়া আরো অনেক কাজ রয়েছে এবং সেসব কাজের শাখা-উপশাখা রয়েছে। মোটকথা আপনি কাজ জানলে,টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আপনি চাইলে ঘন্টায়,  প্রতিদিন, সাপ্তাহিক, মাসিক ভাবে কাজ করে ইনকাম করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোর কাজ কি?

সহজভাবে বলতে গেলে, এই ওয়েবসাইটগুলো হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মিলনকেন্দ্র। ধরুন সাধারণ দোকানের মতোই এসব সাইটে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষ থাকে।এসব সাইটে ক্রেতা হচ্ছে ক্লায়েন্ট বা বায়ার যারা কাজটা টাকার বিনিময়ে করিয়ে নেন আর বিক্রেতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সাররা যারা কাজটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ক্লায়েন্টের বা বায়ারের কাছে বিক্রি করবেন।

ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইটসমূহ

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এত এত কাজ হয়,কিন্তু কোথায়? কিভাবে? আসুন বলছি।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট মার্কেটপ্লেস আছে।এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে কোনো কাজে দক্ষ ব্যক্তি এবং সে কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকেন যারা অর্থের বিনিময়ে কাজটা করিয়ে নেন। এধরনের অনেক মার্কেটপ্লেস আছে। কোথাও সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়(আপওয়ার্ক), আবার কোথাও নির্দিষ্ট একটি কাজ পাওয়া যায়। নিচে ফ্রিল্যান্সিং এর সেরা ওয়েবসাইট গুলোর কথা বলছি যেগুলা থেকে আপনি কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারবেনঃ

আপওয়ার্ক (upwork)

আপওয়ার্ক

যে কোন ফ্রিল্যান্সারকে যদি বেস্ট ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট কোনটি জিজ্ঞেস করা হয়,তবে এক কথায় তার উত্তর হবে আপওয়ার্ক। সব ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের কাছে এটি সমানভাবে  জনপ্রিয়। এটি সর্বপ্রথম ওডেস্ক নামে যাত্রা শুরু করে, পরে ২০১৫ সালে আরেকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্লার্টফর্ম ‘ইল্যান্স’এর সাথে যুক্ত হয়ে  আপওয়ার্ক নামে পরিচিতি লাভ করে।বর্তমানে এর গ্রাহক সংখ্যা দেড় মিলিয়নের বেশি।

এখানে শর্ট-টার্ম, লং-টার্ম, ঘন্টার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে বলে, এটি ফ্রিল্যান্সারদের প্রথম পছন্দ । তাছাড়া এন্ট্রি লেভেলের কাজ থাকায় নতুনদের দক্ষতা কাজে লাগানোর জন্যও উপযুক্ত প্লার্টফর্ম। 

আপওয়ার্কে ৩৫০০এর বেশি রেজিস্টার্ড কাজের তালিকা রয়েছে। 

প্রধান ক্যাটাগরি (ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল ডেভেলপমেন্ট, রাইটিং, ডিজাইন ইত্যাদি) ছাড়া ও আরো অনেক সাব ক্যাটাগরি রয়েছে।তাই সহজেই নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ নির্বাচন করতে পারে।কাজ শেষে সহজেই পেপাল,পেওনিয়ার এবং ব্যাংক ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে পেমেন্ট তুলে নিতে পারবেন।

আপওয়ার্কে কিভাবে কাজ পাওয়া যায়?

ফাইভার (fiverr)

প্রথম সারির মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে ফাইবার অন্যতম।এখানে ছোট থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়।এখানে সর্বনিম্ন ৫$ থেকে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পেয়ে থাকে।গ্রাফিক্স ডিজাইন, লোগো ডিজাইন,রাইটিং ইত্যাদি কাজে যদি আপনি দক্ষ হয়ে থাকেন,তাহলে খুব সহজেই ফাইভার থেকে ইনকাম করে নিতে পারবেন। 

ফাইভারে বিড করা ছাড়াও বায়াররা সার্চ করে ফ্রিলান্সারদের খুঁজে নিতে পারেন।ফাইভারে সব ফিক্সড প্রাইজের প্রজেক্ট। ফাইভারে এখনো ঘন্টা ভিত্তিতে কাজ আসে নি। কাজ শেষে খুব সহজেই পেমেন্ট বুঝে নিতে পারেন পেপাল,পেওনিয়ার বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে। 

ফ্রিল্যান্সার (freelancer)

বিল্যান্সার

বাকি সব প্ল্যাটফর্মের মতো,এখানে ও কাজের শেষ নেই।তবে এখানে আপওয়ার্কের চেয়ে এখানে কাজের পরিমান বেশি। এটির হেডঅফিস অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত।নতুনদের  জন্য এখানে কাজ করাটা একটু কঠিন মনে হতে পারে।কারণ এখানে প্রজেক্ট শেষে অতিরিক্ত কিছু ভাতা প্রদান করতে হয়। প্রতিটি প্রজেক্টের উপার্জিত অর্থের ১০ থেকে ২০% টাকা কোম্পানি রেখে দেয়।

গুগল থেকে ইনকাম করার উপায়

এই মার্কেটপ্লেসেটিতে ফ্রিল্যান্সাররা অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজ নিতে পারবেন। তাই আপনি যদি দক্ষ ও প্রতিযোগী মনোভাবের হন, তাহলে নিজের পোর্টফলিওর মাধ্যমে খুব সহজেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে পারবেন।জেনে খুশি হবেন যে,এখানে কাজের রেট আপওয়ার্কের চেয়ে বেশি।  

পিপল পার আওয়ার (peopleperhour

ফ্রিল্যান্সিং সেরা ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পিপল পার আওয়ার।এটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মার্কেটপ্লেস।এখানে ফিক্সড প্রাইস ও আওয়ারলি সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়। পেপাল,স্ক্রিল,পেওনিয়ার এবং ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়া যায়।

নাইনটি নাইন ডিজাইন ( 99designs)

ডিজাইনারদের জন্য একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে নাইনটি নাইন ডিজাইন। এটি মূলত সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। এখানে বায়াররা বা ক্লায়েন্টরা কেমন ডিজাইন লাগবে,তা বিস্তারিত লিখে একটি কনটেস্ট বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।ডিজাইনাররা ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন সাবমিট করেন।তারপর ক্লায়েন্ট তার পছন্দসই ডিজাইন কিনেন এবং পে করেন।পেমেন্ট পদ্ধতি পেপাল,পেওনিয়ার কেন্দ্রিক।

গুরু (guru)

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় প্লার্টফর্ম হচ্ছে গুরু। এর সদস্য প্রায়  ১.৫ মিলিয়ন।এত বড় মার্কেটপ্লেসটিতে ফিক্সড প্রাইস ও ঘন্টা ভিত্তিক উভয় ধরনের কাজ রয়েছে।১০থেকে ২০০ ডলার প্রায় সব ধরনের কাজ রয়েছে।  প্রতিটি কাজের ৪.৯৫% হতে ৮.৯৫% টাকা প্লার্টফর্মটি কেটে নেয়।এখানে প্রতিযোগিতা একটু বেশি।পেমেন্ট পদ্ধতি পেপাল, ব্যাংক টান্সফার,পেওনিয়ার নির্ভর। 

বিল্যান্সার( belancer)

বিল্যান্সার হচ্ছে বাংলাদেশি ফিল্যান্সিং ওয়েবসাইট।নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিল্যান্স অনেকেরই প্রথম পছন্দ। এখানে ১০০টাকা থেকে শুরু করে  বড় অ্যামাউন্টের কাজও পেতে পারেন।আর কাজ শেষে পেমেন্ট বিকাশ, ব্যাংক ট্রান্সফার বা সরাসরি অফিসে গিয়ে টাকা তুলে নিতে পারেন। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে এখান থেকে যে কোন একটিকে বেছে নিয়ে কাজ শুরু করে দিন।মোটকথা আপনি যদি কাজ জানেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী হোন,তাহলে এসব ওয়েবসাইট গুলো থেকে আপনি সহজেই ভালো অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *