ফটোগ্রাফি করে আয় করার উপায়
ফটোগ্রাফি করে আয় করার উপায়

ফটোগ্রাফি করে আয় করার উপায়

ফটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র কথাটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। হাজারো বাক্যের মূল কথাটি মুহূর্তেই যেন আমাদের কাছে পৌঁছে যায় একটি মাত্র ছবির মাধ্যমে। কোন কিছু না বলেও তার অর্থ খুব সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় । কেউ শখের বশে আবার কেউ বা ফটোগ্রাফি কে এখন পেশা হিসেবে নিজের করে নিচ্ছেন।

হ্যাঁ, ফটোগ্রাফি এখন আয়ের একটি মাধ্যমও বটে। আগের তুলনায় এখন আয়ের জন্য মানুষ ফটোগ্রাফি কে অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। একজন ফটোগ্রাফার তার ছবির দ্বারা প্রতিটি মুহূর্তকে সুনিপূর্ণ ভাবে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে সকলকে মুগ্ধ করতে বাধ্য করে। তাই ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে যারা বেছে নিচ্ছে তাদের আরও বেশি অনুপ্রাণিত করতে বর্তমানে ফটোগ্রাফি থেকে আয়ের সুযোগ এবং উপায়গুলোকে বাড়ানো হচ্ছে। ফটোগ্রাফি থেকে আয়ের এমনই কিছু উপায় নিয়ে আমাদের আজকের কথা।

ফটোগ্রাফ কোথায় বিক্রি করবেন? 

আপনার তোলা ছবিগুলোকে বিক্রির জন্য বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ওয়েব সাইট গুলোর সাহায্য নিতে পারেন। যার মাঝে অন্যতম অনলাইন স্টক ইমেজ  ওয়েবসাইট।এখানে আপনি আপনার তোলা ছবিগুলোকে আপলোড করবেন। এবং ডাউনলোড করে এই ছবি গুলো অন্যরা ব্যবহার করতে পারবে।

কারা কিনবে আপনার ছবি?

 ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে আপনার একটি মানসম্মত ছবির অনেক চাহিদা রয়েছে।  আপনি যখন আপনার ছবি গুলো কোনো স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট এ পাবলিশ করবেন তখন, নানা কোম্পানী, ওয়েবসাইটের মালিক, ব্লগার কিংবা অনলাইন বিজনেসম্যানরাই  হবেন আপনার তোলা ছবির সবচেয়ে বড় গ্রাহক।

অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা  বিভিন্ন কাজে যেমন  বিজ্ঞাপন,প্যাকেজিং ,প্রমোশন,রাইটিং, ব্রান্ডিং, ডিজাইন ইত্যাদি কাজে  মানসম্মত এবং কপিরাইট ফ্রি ছবি খোঁজে। কিন্তু তারা  ছবি যথষ্ট তোলার জন্য সময় নষ্ট না করে  অনেকসময়  স্টক ইমেজ সাইটগুলো থেকে ছবি এবং কপিরাইট কিনে নেয়। সুতরাং স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে মানসম্মত  কাজ করলে আপনার কাজের যথাযথ মূল্য পাবেন। 

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে ফটোগ্রাফি করে আয় করা যায়? 

স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে হলে আপনাকে  একটি ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট  বাছাই করতে হবে। আর সেখানে আপনাকে সাইন আপ করে নিতে হবে। স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটে সাইন আপ করতে হল sell image অথবা submit image অপশন এ যেতে হয়। 

গুগল থেকে ইনকাম করার উপায়

এরপর আপনাকে  রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।  রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ।  আপনার লিগ্যাল নেম, ইউজার নেম, একটি ভেরিফাইড ইমেল এড্রেস ও একটি স্ট্রং পাসওয়ার্ড দিয়েই রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলতে পারবেন। 

 জনপ্রিয় কয়েকটি স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট

Adobe stock- এটি একটি নামকরা ওয়েব সাইট।মানুষ এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রিমিয়াম ইমেজ কিনতে আসে। এখানে আপনাকে একটি একাউন্ট খুলতে হবে যেখানে আপনি ছবিগুলো আপলোড করে সেল করার জন্য দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি ছবিগুলো থেকে ৩৩%কমিশন বা প্রতি ছবির জন্য ৩৩%টাকা আপনাকে প্রদান করা হবে।

Big stock photo-কন্ট্রিবিউটর হিসেবে আপনাকে এখানে একাউন্ট খুলতে হবে।আপনার ছবি গুলোর রিভিউ এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন তা মানুষের কাছে কতটা পছন্দের। আপনার প্রতি ছবি ডাউনলোডের জন্য তারা আপনাকে ০.২৫$-৩.০০$  প্রদান করে থাকে। 

Shutterstock –  এই সাইটে কাজ করতে হলে,আপনার অবশ্যই একটি একাউন্ট থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি কন্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য তাদের দেয়া বিভিন্ন পলিসি বা নীতি গুলোকে মেনে আপনাকে একটি ফরম পুরন করতে হবে। এরপর আপনি সেখানে ছবি গুলো আপলোড করতে পারবেন।  এই ওয়েব সাইট টি ক্লাইন্টের সাবক্রিপশন প্ল্যান এর উপর নির্ভর করে টাকা প্রদান করে থাকে। আপনার আপলোডকৃত ছবিটি প্রতিবার ডাওনলোড এর জন্যে ১২০$  নির্ধারণ করা আছে। প্রতি ছবি বিক্রির জন্যে এরা ২০-৩০% দিয়ে থাকে। 

istockphotos- একই ভাবে এখানে সেল স্টক নামক ওপশন এর মাধ্যমে তাদের দেয়া (FAQs) গুলোকে মেনে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে নিজের একটি একাউন্ট খুলতে হবে। তবে আপনাকে আগে ৩টি ছবি আপলোড করতে যা তাদের দ্বারা বাছাই এর মাধ্যমে একাউন্ট খোলার অনুমতি পাবেন। এখানে আপনি ছবি গুলো আপলোড করে সহজই আয় করতে পারেন।

Alamy- আপনার পছন্দের ছবিটি সেল বা বিক্রি করার অন্যতম একটি ওয়েবসাইট। এখানে কন্ট্রিবিউটর কে তার প্রতি ছবি বিক্রির ৪০-৫০%টাকা প্রদান করা হয়। 

ফটোগ্রাফি করে কত টাকা আয় করা যায়? 

 আপনার আপলোডকৃত ছবির উপর নির্ভর করবে আপনার আয়। প্রতিদিন কত ছবি আপলোড করছেন এবং তা কেমন ডাউনলোড হচ্ছে তার উপর। আপনাকে প্রতি ছবি ডাউনলোডের জন্যে ০.২৫-০.৩$ প্রদান করা হয়। ধরুন আপনি দিনে ৬০টি ছবি আপলোড করলেন এবং তার ডাউনলোডের জন্য ০.২৫$ প্রদান করা হবে। তবে আপনি দিনে.০.২৫*৬০=১৫$ বা ১০০০ টাকার মতো এবং মাস শেষে ৩১০০০ টাকার কাছাকাছি আয় করতে পারেন সহজেই, তবে এটা যাস্ট একটা ধারণা মাত্র, আয়ের বিষয়টি নির্ভর করছে আপনার স্কিলের ওপর। এখানে আয় করার কোন লিমিটেশন নেই। তাই বলাই যায় আয়ের অন্যতম একটি মাত্রা যোগ করেছে ফটোগ্রাফি।

ফটোগ্রাফি করে আয় করার আরো কিছু উপায়

অনলাইন কোর্স- বর্তমান  দিনে মানুষ অনলাইন কোর্স গুলোর প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। এজন্য আপনি বেছে নিতে পারেন ভিডিও কোর্স কে। এজন্য আপনি সাহায্য নিতে পারেন ইংরেজি ফটোগ্রাফি কোর্সের জন্য udemy.com, skillshare.com। এছাড়া বাংলাদেশের জন্য অন্যতম কিছু প্লাটফর্ম instructory.net  ,  repto.com.bd  আপনার দেয়া ফটোগ্রাফির ভিডিও কোর্স  গুলোর থেকে আপনি আয় করতে পারবেন খুব সহজেই। 

ইউটিউব-  ফটোগ্রাফি সম্পর্কে আপনার সব ধরনের ধারণা কে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন ইউটিউবে ভিডিও গুলো আপলোড  এর মাধ্যমে। মানুষ আপনার দেয়া ভিডিও গুলো যত দেখবে ততই আপনার সাবস্ক্রাইবার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।  ইউটিউব পার্টনার পলিসি বা পার্টনার প্রোগ্রামের দ্বারা আপনি ইউটিউব থেকে সহজেই আয় করতে পারবেন।

ফেইসবুক- আয়ের উপায় খুঁজতে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন।  এখানেও আপনি আপনার ফটোগ্রাফির ধারণা গুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাতে পারবেন ভিডিও মনিটরিং এর মাধ্যমে। এভাবে ফেসবুক থেকেও  ফটোগ্রাফি করে আয় করা সম্ভব। 

বিজনেস ওয়েবসাইট- বিজনেস ওয়েবসাইট দিয়ে আপনি  ফটোগ্রাফি সার্ভিস প্রদান করতে পারেন । ফটোগ্রাফি সার্ভিসিং নানা ধরনের হতে পারে ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, পোর্টরেট ফটোগ্রাফি, ই-কমার্সের জন্যে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। 

ব্লগিং- ফটোগ্রাফি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস বা কিভাবে করতে হয় বা নানা রকমের ইভেন্ট গুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাতে আপনি ব্লগের সাহায্য নিতে পারেন, ব্লগসাইট এক্ষেত্রে আপনার জন্য আয়ের একটি মাধ্যম হতে পারে। এখানে আপনি আপনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, ফটোগ্রাফি সম্পর্কে ধারণা, কিভাবে শিখতে হয় ইত্যাদি জিনিস ভিডিও আকারে ব্লগের সহায়তায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। 

ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার আগে যা জানা জরুরি

ফ্রিল্যান্সিং-   ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি পেশা।  ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে আয় করতে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি fiver, upwork, freelancer ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইট গুলোর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। ফটো রিটাচিং, ফটো এডিটিং  বা ফটো ক্লিপিং এর মতো বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সেখানে  আপনি গিগ সেল করতে পারেন। এসব সেবা যেমন রিটাচিং,এডিটিং বা ক্লিপিং সার্ভিস গুলো অনেকে ই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইট গুলো থেকে নিয়ে থাকে। এখানে আপনি গিগ সেল করে আয়ের একটি মাধ্যম তৈরি করতে পারেন। 

ফটোগ্রাফি করে আয় কতটুকু লাভজনক? 

ফটোগ্রাফিকে যেহেতু আপনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাই আপনাকে এর সম্পর্কে জানতে হবে ভালো ভাবে। আপনার ধারণকৃত ছবিটি হতে হবে মানসম্মত। কোয়ালিটি থেকে শুরু করে স্পষ্ট ধারণাসহ বেশ ভালো মানে ছবিই ক্রেতারা কিনতে পছন্দ করেন। আপনি যদি ক্রেতাকে আপনার ছবির মাধ্যমে মুগ্ধ করতে পারেন তবে অবশ্যই আপনার জন্যে ফটোগ্রাফি ক্যরিয়ার থেকে আয় করা অনেক সহজ ও লাভজনক হবে।

কাজের প্রতি ভালো লাগা বা আনন্দ খুঁজে পাওয়ার জন্যে আমাদের উচিত পছন্দের পেশাকে বেছে নেয়া। তা আমাদের কাজের প্রতি একঘেয়েমিতা কে লাঘব করতে অনেকাংশে  সাহায্য করে।  ফটোগ্রাফি থেকেও মানুষ এখন আয় করছে প্রতি নিয়ত। অনলাইনের বিভিন্ন ধরনের ওয়েব সাইট গুলো ছাড়াও ইউটিউব, ফেইসবুক এর মতো বড় কিছু প্লাটফর্মও এখন ফটোগ্রাফি নিয়ে ক্যরিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। পরিচিতি বাড়ানোর অন্যতম একটি মাধ্যমেও হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ফটোগ্রাফি পেশা। আমরা তেমন ই কিছু উপায়গুলো সম্পর্কে আপনাদের বিভিন্ন তথ্য জানাতে চেয়েছি। আশা করি আপনারা উপকৃত এসব তথ্য জেনে। এবং আগ্রহী হবেন ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে।

Leave a Reply