স্যাটেলাইট কি? স্যাটেলাইটের সুবিধা অসুবিধা

স্যাটেলাইট হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য বিস্ময়কর। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্যাটেলাইট ছাড়া সম্ভব হতো না। স্যাটেলাইট আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও জীবনের সঙ্গে একদম ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমান যুগে স্যাটেলাইট ছাড়া ইন্টারনেট সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ অতি দ্রুত করা প্রায় অসম্ভব। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এই কৃত্রিম উপগ্রহ অত্যান্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এটি চাদের মতো একটা উপগ্রহ, যা নির্দিষ্ট গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতেছে। এটি মানুষের তৈরী জন্য একে কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়।

স্যাটেলাইট কি

স্যাটেলাইট শব্দটি মূলত ল্যাটিন থেকে এসছে। স্যাটেলাইট একটি অবজেক্ট, যা অন্য আরেকটি অবজেক্ট বা বস্তুকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। স্যাটেলাইট অর্থ কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশে উৎক্ষেপণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উৎক্ষেপিত একটি উপগ্রহ।

স্যাটেলাইটের দ্বারা আমরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের খবর অতি দ্রুত ও নিমিষেই পেয়ে যাই। কৃত্রিম উপগ্রহকে স্পেস শাটল বা রকেটের এর দ্বারা কক্ষপথে পাঠানো হয় এবং পাঠানোর সময় রকেট নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ইনার্শিয়াল গাইডেন্স System (আইজিএস) মেকানিজম। 

বিশ্বের সর্বপ্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-১, এটি ৪ অক্টোবর ১৯৫৭ সালের উৎক্ষেপণ করেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারপর থেকে ৪০ টিরও অধিক দেশ হতে উৎক্ষেপণ করেছে প্রায় ৮,৯০০টি উপগ্রহ। পৃথিবীর সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহও ২৪ ঘন্টা ঘুরতে থাকে। তবে জিওস্টেশনারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো এক স্থানে থাকে এবং এগুলা যোগাযোগ ও আবহাওয়া সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার হয় এবং স্যাটেলাইট পৃথিবীর উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে। 

স্যাটেলাইটের কাজ কি?

স্যাটেলাইটের কাজ কি?

স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের বডি ধাতু সংকরের ফ্রেম দ্বারা নির্মাণ করা হয়, একে বলে বাস এবং এর মধ্যেই স্যাটেলাইটের সমস্ত যন্ত্রপাতি থাকে।

প্রতিটা স্যাটেলাইটে রয়েছে Solar সেল এবং শক্তি জমা রাখার জন্য রয়েছে ব্যাটারি। কৃত্রিম উপগ্রহের Power System প্রসেসকে পৃথিবী থেকে সর্বক্ষণ মনিটর করা হয়। স্যাটেলাইটে একটি Unboard Computer থাকে যা এটিকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করে। এই যন্ত্রের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর অ্যান্টেনা ও রেডিও সিস্টেম।

মিলিটারী স্যাটেলাইট শুধুমাত্র সামরিক উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে ব্যবহৃত হয়। এটির মূখ্য কাজ হলো – Photography, নিউক্লিয়ার মনিটরিং, রাডার ইমোজিং এবং শত্রুর গতিবিধ পর্যবেক্ষন ।

রকেটকে পৃথিবীর অভিকর্ষ পার হতে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার ৩৯ মাইল ত্বরণে ছুটতে হয়। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও টানের মধ্যে যখন ভারসাম্য তৈরী হয় তখনই কোন কোন কৃত্রিম উপগ্রহ প্রদক্ষিণ করতে পারে।

স্যাটেলাইট স্থাপনের সময় জড়াতা ও তার কক্ষীয় গতির উপর পৃথিবীর অভিকর্ষের যে প্রভাব রয়েছে, এই ভারসাম্য ছাড়া কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূণ্যে একটি সরল রেখায় পতিত হবে অথবা উড়বে। কৃত্রিম উপগ্রহকে এই জন্য ১৫০ মাইল উচ্চতা বিশিষ্ট্য কক্ষপথে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মাইল গতিতে পরিভ্রমণ করানো হয়।

স্যাটেলাইট এর গতিবেগ কত হবে, তা নির্ভর করে সেটি পৃথিবী হতে কতটা উচ্চতায় রয়েছে, তার উপর। পৃথিবী হতে ২২ হাজার ২২৩ মাইল উপরে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহ প্রতি ঘণ্টায় ৭০০ মাইল বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করছে। স্যাটেলাইট গুলোও পৃথিবীর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা অনাবর্ত ঘুরতে থাকে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী ও টিভি এবং বেতার সংকেত প্রেরণ Satellite গুলো সাধারণত পৃথিবী হতে ৩৬ হাজার কি:মি: দূরে অবস্থান করে।

কৃত্রিম উপগ্রহ গুলো পৃথক পৃথক উচ্চতা, গতি ও পথে প্রদক্ষিণ করে থাকে। তবে দুটি কমন কক্ষপথ হলো- পোলার এবং জিওস্টেশনারী।

পোলার স্যাটেলাইট

এই উপগ্রহটি উত্তর হতে দক্ষিণ অভিমুখে এক মেরু হতে অপর মেরুতে ভ্রমণ করে বেড়ায় এবং পৃথিবীর নিম্ন দিকে ঘোরে বলে এই সমস্ত কৃত্রিম উপগ্রহ দ্বারা একই সময়ে পৃথিবীর চিত্রধারণ করা সম্ভব হয়।

জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইট

জিওস্টেশনারী উপগ্রহ বিষুবীয় রেখার উপর দিয়ে পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে ভ্রমণ করে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে তাল রেখে এই স্যাটেলাইট একই দিকে অগ্রসর হয় জন্য মনে হয় পৃথিবী থেকে জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইট একই স্থানে স্থিতিশীল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কৃত্রিম উপগ্রহ গুলোর মাঝে সংঘর্ষ হয় না কারণ, একটি উপগ্রহ যেন অন্য একটি উপগ্রহকে এড়িয়ে চলতে পারে সেজন্য উৎক্ষেপণের সময় তা নিশ্চিত করেই সবসময় কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। তবে নাসা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা উপগ্রহ গতিপথের উপর নজর রাখে। যার কারণে সংঘর্ষণ সৃষ্টি হয় না বললেই চলে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মহাকাশে দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে সংঘর্ষণ হয় এবং এই কৃত্রিম উপগ্রহ দুটি হলো আমেরিকান ও রাশিয়ান এর যা মানুষের বানানো স্যাটেলাইটের মধ্যে সর্বপ্রথম সংঘর্ষের ঘটনা বলে জানা যায়।

স্পেস এক্স কি? স্পেস এক্স এর অজানা ইতিহাস

স্যাটেলাইটের সুবিধা কি কি?

মহাকাশে অনেক স্যাটেলাইট রয়েছে এবং প্রত্যেকটি স্যাটেলাইটের কাজ আলাদা আলাদা। স্যাটেলাইটে বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা রয়েছে। নিম্নে স্যাটেলাইটের কিছু সুবিধা আলোচনা করা হলো

  • স্যাটেলাইট ব্যবহার করে একজন Sender তার ডাটাকে অনেক গুলো রিসিভারের কাছে প্রেরণ বা পাঠাতে পারে এবং ডাটা পাঠানোর এই সিস্টেমকে Broadcast বলা হয়ে থাকে। এই কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে একজন মানুষ একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য অনায়াশে পাঠাতে পারে।
  • যে সমস্ত মানুষ বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে বা বাসে গাড়িতে চলাফেরা করে ও প্লেনে থাকে, তাদের সঙ্গে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুব সহজে Communication করা যায়।
  • স্যাটেলাইটের Bandwidth অধিক বেশি, প্রায় 3 GHz এর কাছাকাছি এবং আমরা অনেক বেশি পরিমাণ তথ্য দূরে খুব দ্রুত পাটাতে পারি।
  • স্যাটেলাইট ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে মোবাইল দ্বারা যোগাযোগ করা যায়।
  • কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে পৃথিবীতে অনেক বেশি পরিমাণ স্থানকে Network এর দ্বারা Cover করা সম্ভব হয়।
  • অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের চেয়ে স্যাটেলাইট ব্যবহার করা অনেক সুবিধাজনক। কারণ অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মূল্য অনেক বেশি।
  • গ্রামাঞ্চল কিংবা যে সমস্ত স্থানে Communication ব্যবস্থা অনেক কঠিন সেসব স্থানে স্যাটেলাটের মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ করা যায়।

স্যাটেলাইটের অসুবিধা কি কি?

স্যাটেলাইটের অসুবিধা কি কি?

স্যাটেলাইটের সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। স্যাটেলাইট অনেক ভালো সার্ভিস দেয়াই খুব সহজেই প্রায়োনীয় কাজ করতে পারছি। তবে স্যাটেলাইটের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিম্নে স্যাটেলাইটের অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

  • পৃথিবী হতে স্যাটেলাইট অনেক দূরে অবস্থান করে বলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্যাটেলাইটের দ্বারা তথ্য পাঠাতে কিছুটা সময় বেশি লাগে।
  • কোন স্যাটেলাইট যখন অকেজো হয়ে পরে তখন সেই কৃত্রিম উপগ্রহকে আর মেরামত করা হয় না। কারণ স্যাটেলাইট ঠিক করতে অনেক অর্থ ব্যয় হয় এবং সেজন্য মহাকাশে অকেজো স্যাটেলাইটকে ছেড়ে দেয়া হয়, আবার পৃথিবীতে ওই স্যাটেলাইটকে আর ফেরত আনাও হয় না।
  • স্যাটেলাইটের প্রধান সমস্যা হলো মূল্য। করণ একটি স্যাটেলাইটকে মহাকশে উঠাতে অনেক অর্থ খরচ করতে হয়।
  • স্যাটেলাইটকে নির্দিষ্ট অরবিটে উঠানোর পরে সেটিকে সেই কক্ষপথে স্থির করে রাখার অনেক কঠিন ক্যালকুলেশন এবং মেকানিক্যাল এর কাজ করতে হয়। স্যাটেলাইটকে নিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে হিসাব-নিকাশ করতে হয় সেটি কত টুকু জায়গা সরিয়ে যাচ্ছে এবং কত স্পীডে ঘুরছে এইগুলো হিসাব করতে হয়।
  • স্যাটেলাইট খারাপ আবহাওয়াতে কাজ করতে পারে না এবং স্যাটেলাইটের কাছে যখন সিগন্যাল পৌছায় তখন খারাপ আবহাওয়া থাকা অবস্থায় সেই সিগন্যাল এর সঙ্গে noise সংযুক্ত হয়। যার কারণে সিগন্যালের Amplitude হ্রাস পায়।
  • সূর্য ব্যতিত মহাকাশে এনার্জি তৈরি করার জন্য আর কোন সোর্স নেই। স্যাটেলাইট সেজন্য সূর্যকে ব্যবহার করে সোলার প্যানেল এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি তৈরি করে থাকে। তবে সবসময় স্যাটেলাইটের Soler Panel গুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে না। স্যাটেলাইট ঘুরতে ঘুরতে যখন পৃথিবীর ছায়ার দিকে আসে তখন সোলার প্যানেল গুলি আলো পায় না। যার ফরে স্যাটেলাইটকে ব্যাটারী ব্যবহার করতে হয় এবং যতদিন ব্যাটারী ঠিক থাকবে নষ্ট হবে না ততদিন স্যাটেলাইটও Active থাকবে। তবে ব্যাটারী একবার নষ্ট হয়ে গেলে স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে যাবে আর কাজ করবে না

বিটকয়েন কি? বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?

এই আর্টিকেলে আমরা স্যাটেলাইট কি, কিভাবে কাজ করে, এর উপকারিতা এবং সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানলাম। কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে যদি আরো কিছু জানতে চান অথবা যদি স্যাটেলাইট নিয়ে কোন প্রশ্ন তাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ

Leave a Reply