ব্লুটুথ হেডফোন এ সময়কার সবথেকে জনপ্রিয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোর মধ্যে একটি। গান শোনা, মোবাইলে কথা বলা, গেম খেলা, অনলাইন মিটিং, অনলাইন ক্লাস এবং মিউজিক রেকর্ডিং হলো হেডফোনের সবথেকে সাধারণ কিছু ব্যবহার। এছাড়া গণপরিবহন, রাস্তাঘাট এবং বিশেষ করে জনবহুল জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত আওয়াজ এবং গাড়ির অনাকাঙিক্ষত হর্ন থেকে সুরক্ষায় হেডফোনের ব্যবহার এখন সর্বজনীন।
ব্লুটুথ (Bluetooth) হেডফোন বাংলাদেশে তুলনামূলক আধুনিক প্রযুক্তি হওয়ায় এ নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্নের অভাব নেই। প্রয়োজনীয়তা এবং জনপ্রিয়তার কমতি না থাকলেও সঠিক তথ্য ও জ্ঞানের রয়েছে প্রচুর অভাব। তাই আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো ব্লুটুথ হেডফোন, ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহারের নিয়ম, ব্লুটুথ হেডফোন বাংলাদেশ প্রাইস এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু সমূহ। তাহলে চলুন দেখে নেই কি কি রয়েছে আমাদের মূল আলোচনায়।
ব্লুটুথ হেডফোন
ব্লুটুথ হেডফোন হলো ব্লুটুথ (Bluetooth) টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে তৈরি এমন একটি ডিভাইস যার মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটিং ডিভাইস যেমন- মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, পিসি থেকে সাউন্ড অথবা ভয়েস ডেটা তারবিহীন প্রক্রিয়ায় সঞ্চারিত হয়। এ ধরনের হেডফোন গুলো মূলত তারবিহীন হয়ে থাকে এবং ব্লুটুথ ডিভাইসটি হেডফোনের মধ্যে বিল্ট ইন অবস্থায় থাকে।
একটি ব্লুটুথ হেডফোন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং অন্য যেকোন কম্পিউটিং ডিভাইস যেটি ব্লুটুথ কানেকশন সমর্থন করে, তার সাথে ব্লুটুথ pair গঠনের মাধ্যমে কানেক্টেড হয় এবং শব্দ পরিচালনা করে।
তবে কিছু কিছু ব্লুটুথ হেডসেট কিছু কিছু মোবাইল ফোনের সাথে কানেকশন তৈরি করতে ব্যর্থ হতে পারে। কেননা হেডফোনের ফাংশনের সঙ্গে মোবাইলের ব্লুটুথ ফাংশন সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। ব্লুটুথ হেডসেটগুলো প্রধান দুটি ফাংশনের উপর ভিত্তি করে দুটি ভাগে বিভক্ত।
- HFP (Hand-free Profile) Headphone
- HSP (Head-set Profile) Headphone
সুতরাং হেডফোন ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই দেখে নিবেন যে হেডফোনটি আপনি যেই ডিভাইসের সঙ্গে কানেক্ট করবেন এটি সেই ডিভাইসকে সাপোর্ট করে কিনা। ব্লুটুথ হেডসেট গুলো মূলত ব্যাটারি চালিত। অর্থাৎ এ ধরনের হেডফোন ব্যবহারের জন্য প্রথমে সেই হেডফোনের ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ করতে হয় এবং এরপর তা ব্যবহার করতে হয়।
ব্লুটুথ হেডফোন প্রাইস
সহজে বহনযোগ্য, ব্যবহারযোগ্য এবং তথাকথিত তারের ঝামেলা দূর করে বলে বর্তমান বাজারে ব্লুটুথ হেডফোনগুলোর চাহিদা অন্যান্য যেকোন হেডফোনের চেয়ে অনেক বেশি। তবে এসমস্ত প্রোডাক্টের দামের যেমন ভিন্নতা রয়েছে তেমনি কোয়ালিটির দিক থেকেও রয়েছে বিশাল ব্যবধান।
সাধারণত একটি হেডফোনের দাম নির্ভর করে তার কোয়ালিটির ওপর এবং এই কোয়ালিটি নির্ভর করবে তার ম্যাটারিয়ালস, স্টাইল, ইম্পিড্যান্স, বেজ, কানেক্টিভিটি, সেন্সিটিভিটি এবং ফ্রিকোয়েন্সির ওপর। এছাড়া এক্ষেত্রে ব্রান্ডের বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন লোকাল ব্রান্ডের প্রোডাক্ট এর থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যেকোন ব্রান্ডের প্রোডাক্ট এর মূল্য ও কোয়ালিটি অনেক বেশি এবং ভালো হবে।
তাই আপনি যত ভালো মানের প্রোডাক্ট ক্রয় করতে চাইবেন সেই প্রোডাক্টের মূল্যও ততটাই বেশি হবে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারগুলোতে নূন্যতম ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের হেডফোন পেয়ে যাবেন।
ইন ইয়ার সিস্টেমের ব্লুটুথ হেডফোনগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত অনেক কম হয়ে থাকে এবং মোবাইল সেটের সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য এগুলো হলো আদর্শ ব্লুটুথ হেডসেট। যেমন- Lenovo LivePods LP1 Wireless Bluetooth Headset-টির দাম মাত্র BDT ৬৫০ ৳ ।
আবার ল্যাপটপ কিংবা পিসিতে ব্যবহার করার জন্য হেডফোন কিনতে চাইলে সেগুলো কিছুটা দাম দিয়ে কেনাই ভালো এবং সেক্ষেত্রে অন ইয়ার অথবা ওভার ইয়ার সিস্টেমের হেডফোনগুলো বেস্ট চয়েজ। যেমন- Edifier W570BT Lightweight On Ear Bluetooth Headset এর মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৳ ২,৪০০।
তবে গেমিং এবং স্টুডিওর কাজে ব্যবহৃত ব্লুটুথ হেডসেটগুলোর দাম সবথেকে বেশি হয়ে থাকে। যেমন- Boya BY-HP2 Professional Monitor Headphone-টির মূল্য প্রায় ৳ ৪,৮৫০ এবং Awei A799BL Foldable Gaming Wireless Headphone এর দাম প্রায় ৳ ১,৯৯০।
তো ব্লুটুথ হেডসেটের দাম সাধারণত একটু বেশিই হয়ে থাকে এবং কিছুটা দাম দিয়ে হলেও মোটামুটি ভালো মানের প্রোডাক্ট ক্রয় করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহারের নিয়ম
আপনার যদি কোন ব্লুটুথ হেডফোন থেকে থাকে তবে সেটির ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। যদিও এটি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি, তবুও সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ না করলে প্রয়োজনের সময় ডিভাইসটিকে ব্যবহার উপযোগী করতে ব্যর্থ হতে পারেন এবং অন্যান্য যেকোন বিড়ম্বনার মধ্যে পরে যেতে পারেন।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে একটি ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করতে হয়। ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
Step-1: প্রতিটি ব্লুটুথ হেডফোন-ই সাধারণত ব্যাটারি চালিত। সুতরাং সর্বপ্রথম আপনার হেডফোনটিকে সম্পূর্ণরূপে চার্জ করে নিন। কম চার্জে যেকোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
Step-2: হেডসেটটি সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে গেলে এর “ON” বাটনটি প্রেস করার মাধ্যমে এটি চালু করুন।
Step-3: এরপর হেডফোনটিকে অন্য যেই ডিভাইসের সঙ্গে কানেক্ট করতে চান সেই ডিভাইসের ব্লুটুথ অপশনটি “ON” করুন।
Step-4: এ পর্যায়ে ডিভাইসের ব্লুটুথ অপশনটি অন করা হলে সেই ডিভাইসের আশেপাশে থাকা আরও অন্যান্য ডিভাইসের নাম show করবে। সেখান থেকে আপনার হেডফোনের নামটি সিলেক্ট করে pair করে দিন।
Step-5: এভাবে আপনার কাঙ্ক্ষিত ডিভাইসের সাথে হেডফোনটির ব্লুটুথ কানেকশন সেট হয়ে গেলে সেই ডিভাইসের যেকোন অডিও সাউন্ড আপনি আপনার হেডফোনটির মাধ্যমে শুনতে পাবেন এবং ঐ ডিভাইস থেকে হেডফোনটিকে কন্ট্রোল করতে পারবেন।
খুবই সাধারণ এই পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার হেডফোনটিকে সহজেই ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে পারেন। অর্থাৎ আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য যেকোন কম্পিউটিং ডিভাইসের সঙ্গে ব্লুটুথ কানেকশন set করে সেই ডিভাইসের অডিও সাউন্ড আপনার হেডফোনের মাধ্যমে রিলাক্সে উপভোগ করতে পারেন।
তবে এই ধরনের হেডসেটগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কিছু নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এই নিয়মগুলোকে আসলে সাবধানতাও বলা যেতে পারে।
যেকোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। নতুবা সামান্যতম ভুলের জন্য আপনার পছন্দের ডিভাইসটির যেমন ক্ষতি হতে পারে তেমনি আপনার শারীরিক ক্ষতিসাধনও হতে পারে।
সুতরাং যেকোন ব্লুটুথ হেডফোন অপারেট করার সময় আপনার দেহের সার্বিক সুস্থতায় এবং ডিভাইসটির সার্বিক সুরক্ষায় নিম্নোক্ত দিক-নির্দেশনা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
- হেডফোন সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে গেলে সেটিকে অতিরিক্ত আরও দীর্ঘ সময় চার্জ দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে করে হেডফোনের ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যায়।
- হেডসেটের সঙ্গে প্রদানকৃত নির্দিষ্ট চার্জারের বাহিরে অন্য যেকোন চার্জার দিয়ে চার্জ দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে করে হেডফোনের চার্জিং পোর্টটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- হেডফোনটিকে খোলামেলা জায়গায় রাখুন। অত্যাধিক গরম পরিবেশ কিংবা গরম কাপরের মধ্যে হেডফোন রাখবেন না।
- যেকোন হেডফোন দীর্ঘসময় ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং একটানা অনেকক্ষণ হেডফোন কানের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবেন না।
- একাধারে অনেকক্ষণ হেডফোন ব্যবহারের ফলে কখনও কখনও সেটি অত্যধিক উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে। তবে এমতাবস্থায় হেডফোনটিকে কখনোই কানের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা উচিত নয়। এক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে হেডফোনটি switch off করুন এবং পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় না পৌঁছা অবধি পুনরায় চালু করা থেকে বিরত থাকুন।
- একটানা দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে করে শ্রবণশক্তি হ্রাস, কানে ইনফেকশন, টিটেনাস এবং মস্তিষ্কে নানাবিধ জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং হেডফোন ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ পর্যায়ে আমরা আমাদের আর্টিকেলের একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। ব্লুটুথ হেডফোন কি, ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহারের নিয়ম এবং সংশ্লিষ্ট আরও অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে আমাদের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা আশা করি আপনাদের হতাশ করবে না।
সেরা ৬ টি হেডফোন – বাজেট হেডফোন
ব্লুটুথ হেডফোন বাংলাদেশে তুলনামূলক একটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং যতই দিন পার হচ্ছে প্রযুক্তিটি আরও উন্নত হচ্ছে। প্রাত্যহিক জীবনকে সহজ, সুন্দর ও উপভোগ্য করে তুলতে প্রযুক্তির অবদান যেমন রয়েছে তেমনি শারীরিক এবং মানসিক অবক্ষয় থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে এসব প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে অবশ্যই আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।