ইন্টারনেটের মালিক কে? কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হলো?

দিনের বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্যায় করি। ইনস্ট্যান্ট মেসেজ, ইমেইল, অনলাইন গেম, ফেসবুক, এগুলো ছাড়া আমাদের দৈনিন্দ জীবন প্রায় অচল। কিন্তু একবারও কি চিন্তা করে দেখেছি এসব ডিভাইসে ইন্টারনেট না থাকলে কেমন হতো?

আজকে আমরা ইন্টারনেট সংযোগের কারণে সহজেই দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছি। মুহূর্তেই আমরা একদেশ থেকে অন্যদেশে ভিডিও কলে কথা বলছি সেটাও আবার ফেস টু ফেস। উনবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেট আবিষ্কার গোটা বিশ্বে যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিপ্লব এনেছে। আজ আমরা যে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো:

ইন্টারনেট কি?

ইন্টারনেট একটি ইংরেজী শব্দ যার বাংলা করলে দাড়ায় অন্তর্জাল। অর্থাৎ, এটি এমন একটি পদ্ধতি যা একটি জাল এর ভিতরে আরও জাল এর সমন্বয়ে তৈরি। সহজ কথায় বলতে গেলে এটি এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যা অনেক গুলো তার (কপার/ফাইবার-অপ্টিক ক্যাবল) এর সমন্বয়ে একে অপরের সাথে সংযোজিত এবং কম্পিউটার দ্বারা পরিচালিত নেটওয়ার্ক।

ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এর জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে আমরা দুইভাবে বর্ণনা করতে পারি। একটি সার্কিট সুইচিং এবং অপরটি প্যাকেট সুইচিং। দুটি পদ্ধতিতেই ডাটা একটি ডিভাইস থেকে আরেকটি ডিভাইস এ ক্যাবল দ্বারা আদান প্রদান হয়।

ইন্টারনেট যখন আবিষ্কৃত হয় তখন এটি সার্কিট সুইচিং পদ্ধতি ব্যবহার করতো। সার্কিট সুইচিং এর সবথেকে বড় অসুবিধা হচ্ছে যখন ডাটা পাঠানো বা গ্রহণ করা হয় তখন এটি একটা লাইন ব্যবহার করে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ডাটা আদান-প্রদান শেষ না হয় ততোক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোন সংযোগ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। যেমন আপনি একটি ইমেইল পাঠানোর জন্য লেখা শুরু করলেন। এখন এখানে আপনি যতক্ষণ ধরে লিখতে থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য কেউ আপনার সাথে বা যাকে আপনি মেইল করবেন তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।

অন্যদিকে, প্যাকেট সুইচিং একটি আধুনিক এবং দ্রুত সংযোগ পদ্ধতি। এই মাধ্যমে আপনার প্রেরিত ডাটা প্যাকেট বা ক্ষুদ্র আকারে ভেঙ্গে ভেঙ্গে প্রেরিত হবে। প্রতিটি প্যাকেট এ ট্যাগ লাগানো থাকে যা নির্দেশ করে কোথায় যেতে হবে। এই পদ্ধতিতে ডাটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায় বলে কোন ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হয়না এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান হয়।

ইন্টারনেটের মালিক কে?

আমরা যদি ইন্টারনেট এর ইতিহাস এবং গঠন প্রণালী সম্পর্কে জানি তাহলে সহজেই বুঝতে পারবো কে এই ইন্টারনেটের মালিক। ১৯৬৯ এর দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ নামক একটি প্রতিষ্ঠান সহজ এই যোগাযোগ মাধ্যম আবিষ্কার করে। যদিও তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারের মধ্যে সহজ এবং গোপন যোগাযোগ মাধ্যম স্থাপন করা। কিন্তু তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার গোটা বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।

ইন্টারনেট একটি কম্পিউটার ভিত্তিক সংযোগ ব্যবস্থা। যা একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে ক্যাবলের মাধ্যমে, এই ক্যাবল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা বিশ্বে। এবং প্রতিটি কম্পিউটার যা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়, তা এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্যাবলের সাথে যুক্ত। বর্তমান সময়ে প্রতিটি ইন্টারনেট লাইন পরিচালিত হয় অপটিক্যাল ফাইবারের সাহায্যে। যেখানে ডাটা আদান-প্রদান হয় মাথার চুলের থেকেও পাতলা কাচের তন্তুুর মাধ্যমে। এবং প্রতিটি ডাটা প্রেরিত এবং গ্রহণ হয় আলোকরশ্মির মাধ্যমে। অর্থাৎ আপনি আপনার কম্পিউটারের স্ক্রীনে ইন্টারনেট থেকে যে ডাটা দেখতে পাচ্ছেন তা প্যাকেট সুইচিং এর দ্বারা খণ্ডিত হয়ে সার্ভার থেকে এসে আপনার কম্পিউটারে প্রদর্শিত হয়।

এই বিশাল অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল যা গোটা পৃথিবীকে এক সুতোয় বেঁধেছে তা কোন নির্দিষ্ট মালিকানায় নেই। অর্থাৎ কোন দেশ বা কোন দেশের সরকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রন করে না। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে টাকা খরচ করতে হয় কেন। এই প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক এবং যুক্তিযুক্ত। কিন্তু আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য টাকা খরচ করি এটা ঠিক না। আমরা বরং টাকা খরচ করি অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।

মালিকানার প্রশ্নে একটা সহজ উত্তর দিচ্ছি যাতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে। আমরা জানি ইন্টারনেট ক্যাবল গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে সাবমেরিন ক্যাবলের দ্বারা। এই ক্যাবল গুলো সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে একদেশ থেকে আরেক দেশে গিয়েছে। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে দেওয়ার কারন হলো যাতে এটি সহজে মানুষের নাগালে না আসে।

আমাদের দেশে সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং পয়েন্ট হলো কুয়াকাটা এবং কক্সবাজার। কোন দেশের ইন্টারনেট সংযোগ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তিনটি ধাপে। ধাপ তিনটি হলো টিআর ওয়ান, টিআর টু, এবং টিআর থ্রী। দুইটি ল্যান্ডিং পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ অংশের সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ন্ত্রন করে টিআর ওয়ান এ যে সকল কোম্পানি আছে সে সকল কোম্পানি। বাংলাদেশে টিআর ওয়ান কোম্পানি হলো বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড। যারা নিজস্ব অর্থ খরচ করে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং এদের কাছ থেকে টিআর টু কোম্পানি যেমন সামিট, রবি, গ্রামীণফোন ইত্যাদি ব্যান্ডউইথ কিনে নিজেদের টাওয়ার সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, এবং আমরা এই মাধ্যমে আমাদের মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কিন্তু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আমাদের আইএসপি এর শরণাপন্ন হতে হয়। আর এই আইএসপি গুলোকে বলা হয় টিআর থ্রী কোম্পানি। টিআর থ্রি কোম্পানি গুলো সামিট এর থেকে ব্যান্ডউইথ কিনে এবং লোকাল মার্কেটে তা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। সর্বোপরি ইন্টারনেট এর কোন মালিক নেই। এবং এটি একটি স্বতন্ত্র পরিষেবা যা এর ব্যবহারকারী দ্বারা পরিচালিত হয়।

তবে ভবিষ্যতে আমরা এই অমালিকানা ইন্টারনেট সংযোগ থেকে মালিকানা ইন্টারনেট সংযোগ এ যোগ হবো। কারন ইতোমধ্যে স্টারলিংক (Star Link) নামক মালিকানা প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কার্যক্রম চালু করেছে।

কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হলো?

কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হলো?

ইন্টারনেট তৈরি হওয়ার ইতিহাস খুবই আনন্দদায়ক। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ টেলিফোন এর বিকল্প একটি নিরাপদ ও গোপন যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে গবেষণা শুরু করে। এবং ১৯৬৯ সালে তাদের গবেষণা সফলতার মুখ দেখতে পায়। তারা সেই সময় ৮ টি কম্পিউটার পরস্পর সংযুক্ত করে প্রথম ইন্টারনেট দিয়ে তথ্য প্রেরণ করায় সফল হয়। যেহেতু এটি একটি টেলিফোন লাইন নির্ভর তথ্য আদান-প্রদান পদ্ধতি সেহেতু এটি টেলিফোন ক্যাবল ব্যবহার করতো। কিন্তু এই মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা ছিল খুবই ধীরগতির।

সময়ের সাথে সাথে ইন্টারনেট লাইনের উন্নতি ঘটতে থাকে। প্রথম ডেক্সটপ আবিস্কারের পর প্রথমবারের মত পার্সোনাল কম্পিউটারের সাথে ইন্টারনেট সংযোগ হয়। এবং এই টেলিনেটওয়ার্কের নাম দেওয়া হয় ARPANET। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের আবিষ্কার ইন্টারনেট সংযোগকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। যদিও লোক সমর্থন পেতে কিছুটা সময় লেগেছিল এবং উন্নত সংস্করণ আসা দরকার ছিল। কিন্তু বর্তমানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল একমাত্র ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যম।

ফাইবার অপটিক ক্যাবলের একটি বিশেষ গুণ হলো এটি প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতি একটি আধুনিক ডাটা ট্র্যান্সফার পদ্ধতি যা ডাটা কে ভেঙে ভেঙে পাঠায় এবং এই ভাঙা অংশকে প্যাকেট বলে। যার কারনে ডাটা একটি রাস্তা ব্যবহার না করে ইচ্ছে মত ফাকা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। প্রতিটি প্যাকেটে একটি করে ট্যাগ দেওয়া থাকে যা নির্দেশ করে কোথায় গিয়ে থামতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় যাওয়ার কারনে আমরা খুব দ্রুত ডাটা গ্রহণ করতে পারি এবং পাঠাতে পারি।

প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতি আরও বেশি প্রচলন হয়েছে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের কল্যাণে। আমরা জানি, ফাইবার অপটিক ক্যাবল হলো মাথার চুলের থেকেও পাতলা কাচের তন্তু যা খুবই শক্তিশালী। কারন এরকম একটি ক্যাবল দিয়ে 6TB/S গতিতে তথ্য আদান প্রদান যায়। কারন ফাইবার অপটিক কাজ করে আলোক শক্তির মাধ্যমে। অর্থাৎ এই ক্যাবল দিয়ে ডাটা সঞ্চালন হয় আলোর মাধ্যমে। আমরা জানি সাধারণ মাধ্যমে আলো প্রতি সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার গতিতে সঞ্চালিত হয়। কিন্তু ফাইবার অপটিক ক্যাবলে তা কমে গিয়ে দাড়ায় তিনভাগের দুই ভাগে। তারপরেও এই গতি কিন্তু কম নয়। প্রকারভেদে ফাইবার অপটিক ক্যাবল 768 Tbit/s এ তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। যা নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন।

চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা পরিষ্কার করি। ধরুন আপনি আপনার তৈরি করা একটা ভিডিও আপনার বড়ভাইকে দেখাতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনার ভাই থাকে আপনার থেকে দূরে এক শহরে। এখন তাকে ভিডিও টি দেখাতে হলে হয় আপনাকে তারকাছে যেতে হবে না হয় তাকে আপনার কাছে আসতে হবে, যা অনেক ঝামেলার এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু আপনি এই কাজ ফাইবার অপটিক ক্যাবলের দ্বারা সহজেই করতে পারবেন। আপনি যখন আপনার ভাইকে ভিডিও টি পাঠাবেন তখন তা ইলেকট্রিক সিগন্যালে পরিণত করে আলোক মাধ্যমে প্রবেশ করবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে একটি লেজার দ্বারা তৈরিকৃত ক্রমিক লাইট পালসের মাধ্যমে। এবং সেই লেজার উক্ত লাইট পালস কে ক্যাবলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনার ভাইয়ের কম্পিউটারে থাকা ফটো ইলেকট্রিক সেল প্রেরিত লাইট পালস কে আবার আলোক মাধ্যম থেকে ইলেকট্রিক মাধ্যমে রূপান্তরিত করবে। এবং পর্যায়ক্রমে তা কম্পিউটারের পর্দায় প্রদর্শিত হবে।এভাবেই ফাইবার অপটিক ক্যাবল দ্বারা ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এবং পরিচালনা করা হয়।

ইন্টারনেটের অসুবিধা কি?

ইন্টারনেট একটি বহুল প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখানে আপনি অবাধ ঘোরাফেরা করতে পারবেন। যুক্ত থাকতে পারবেন পৃথিবীর একস্থান থেকে অন্যস্থানে। জানতে পারবেন এখন ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। কিন্তু ইন্টারনেটের অনেক সুবিধা থাকার পরেও এর অসুবিধা বা খারাপ দিক কিন্তু কম নেই। চলুন একে একে ইন্টারনেট এর খারাপ দিক সম্পর্কে জেনে নেই।

ডার্ক ওয়েবঃ ডার্ক ওয়েব (Dark Web/Deep Web) একটি ইন্টারনেট এর অন্ধকারচ্ছন্ন অধ্যায়। আমরা ইন্টারনেট এর দুইটি দিক দেখি একটি সারফেস ওয়েব আর অন্যটি ডিপ ওয়েব। এখানে আমরা সাধারণ ভাবে যা দেখি তা সারফেস ওয়েবের অন্তর্গত। এই যেমন আপনি ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগল ব্যবহার করছেন। এগুলো ব্যবহার করতে আপনাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে ওয়েব ব্রাউজারে গেলেই দেখতে পারবেন। কিন্তু ডার্ক ওয়েবে ঢুকতে হলে আপনাকে বিশেষ ভাবে তৈরি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। ডার্ক ওয়েব এমন একটা যায়গা যেখানে পৃথিবীর সকল ধরনের অবৈধ জিনিস দেখতে পাবেন। শিশু পর্ণগ্রাফি থেকে শুরু করে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও বিক্রি এসব সহজেই হাতের নাগালে পাবেন। সিল্ক রোড (Silk Road) নামে একটা ওয়েবসাইট ছিল যেখানে আপনি যেকোনো ধরনের পণ্য কিনতে পারবেন। অনেকটা অ্যামাজন এর মত। কিন্তু সিল্ক রোডে আপনি পাবেন মিসাইল, মানুষ, আগ্নেয়াস্ত্র, হীরা, সোনা, ভাড়াটে খুনি, এবং হ্যাকার সহ সকল অবৈধ জিনিস।

পর্ণগ্রাফিঃ ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আমরা এখন যেকোনো স্মার্টফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি। আর ইন্টারনেট আর মোবাইল এখন আর গোপন বা দামি কিছু না যা আমাদের নাগালের বাইরে। যার কারনে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারি। সহজ হওয়ার কারনে শিশু এবং কিশোর/কিশোরী রা ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত পর্ণগ্রাফির সাথে পরিচিত হচ্ছে। কারন তারা এখন খারাপ আর ভালোর মধ্যকার পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেনি। এর ফলে তারা পর্ণগ্রাফি তে আসক্ত হয়ে পরছে। এবং ধিরে ধিরে মানুষিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পরছে। নিজের চাহিদা পুরন করতে তারা মাদক সেবন করা শুরু করে দিচ্ছে। ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট কাজ নিয়মিত হচ্ছে। আমরা কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় কোন অ্যাডাল্ট অ্যাড এ ক্লিক করে পর্ণ সাইটে ধুকে পরছি। যা আমাদের যুবসমাজের সামাজিক এবং মানুষিক অবক্ষয়ের জন্য যথেষ্ট।

সাইবার ক্রাইমঃ আমরা ইতিমধ্যে হ্যাকার নামক শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি। এরা ইন্টারনেট জগতের একটি আতংকের নাম। কারন এদের পাল্লায় পরলে আপনার কোন তথ্যই নিরাপদ নয়। এমনও হতে পারে এই মুহূর্তে আপনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড হয়ত ডার্ক ওয়েবের কোন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য হয়ত কেউ হ্যাক করার চেষ্টা করছে। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের কারনে। এটি ইন্টারনেটের আরও একটি ভয়ানক দিক।

অনলাইন গেমঃ আমরা হরহামেশা শুনি অমুক যায়গায় কেউ আত্মহত্যা করেছে কারন তাকে গেম খেলতে দেওয়া হয়নি। এরকম হাজার হাজার উদাহরণ পাবেন যা একমাত্র ইন্টারনেটের কুফলের কারনেই সম্ভব হয়েছে।

সর্বোপরি, ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। আগে যেখানে আমরা মাঠে গিয়ে খেলা করতাম তা এখন আমরা ঘরেই করি। আমরা সবদিক থেকেই ইন্টারনেটের উপর নির্ভর হয়ে পরেছি। কোন কারনে এখন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে সম্পূর্ণ পৃথিবী অকেজো হয়ে যাবে। আমাদের আগামি প্রজন্ম একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারন কোন কিছুই বাড়াবাড়ি পর্যায় পর্যন্ত ভালো না।

ইন্টারনেটের সুবিধা কি?

ইন্টারনেটের সুবিধা কি?

ইন্টারনেটের সুবিধা বলে শেষ করা যাবে না। ইন্টারনেট আবিষ্কৃত হয়েছিল শুধু যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য। কিন্তু তা ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের সমন্বয়ে আমরা আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলেছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের খবরা-খবর সহজেই আমরা মোবাইল স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছি। প্রিয়জনদের সাথে অডিও এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলতে পারছি। মুভি, গেম, ওয়েব সিরিজ, কনসার্ট সহ সকল কিছু অনলাইনে দেখতে পাচ্ছি। ইউটিউব এর মত ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট থেকে সহজেই শিখতে পারছি এবং ভিডিও তৈরি করে টাকা আয় করতে পারছি। গুগলে সার্চ করে সহজেই সকল তথ্য খুঁজে বের করতে পারছি। ফেসবুকে নিজের বা ব্র্যান্ড এর মার্কেটিং করতে পারছি।

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তরুণ সমাজ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। আমাদের দেশের অনেক বড় একটা তরুন সমাজ যারা বেকার ছিল তারা ফ্রীল্যান্সিং করে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ টাকা আয় করছে। ইন্টারনেট এর বদৌলতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। আমরা অ্যামাজন, আলিবাবার নাম জানি, এগুলো ইন্টারনেটের সাহায্যেই আজকে এত বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকের মত সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্ব বাজারে নিজেদের আলাদা একটা নাম তৈরি করে ফেলেছে।

ইন্টারনেট ব্যবহার করে এখন আমরা স্কুল-কলেজের ক্লাস ঘরে বসেই করতে পারি। অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যাদের প্রধান কাজ হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষকে শেখানো। কোন প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে আমরা এখন সহজেই বিশ্ব মানের কোর্স করতে পারি ।

ইন্টারনেটের এই প্রসারের কারনে আমাদের জীবনযাপন এখন সহজ হয়ে গিয়েছে। আগে যেখানে আমাদের চিঠি দিয়ে সরকারী দপ্তরের কাজ করাতে হতো সেখানে তা আজকে একটি অ্যাপ দিয়েই করা যাচ্ছে। এখন চিঠির কাজ একটি মেইল পাঠিয়ে দিলেই হয়ে যায়। মোটকথা ইন্টারনেট আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ, যা আমাদের দৈনিন্দ্য জীবনকে অনেক সহজ আর গতিসম্পন্ন করে দিয়েছে। সেদিন আর বেশি দূরে নেই যে, আমরা ইন্টারনেট ইন্টারনেটের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়বো।

ইন্টারনেট একটি বহুমুখী সম্ভাবনার নাম যা মানব সভ্যতাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা আমাদের জীবনের একটি মুহূর্ত ইন্টারনেটের বাইরে থাকি না। বাসা বাড়ি কিংবা অফিস যেখানেই থাকি ইন্টারনেট আমাদের ব্যবহার করতে হয়। হিসাব করে দেখলে ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে আমাদের যোগাযোগ স্থাপনের খরচ আগের থেকে অনেক কমে গেছে। যেখানে একটি ফোনকলে আমাদের ৬০ পয়সার উপরে খরচ দিতে হয় সেখানে ২ টাকার মেগাবাইট খরচ করে অডিও কলে সারাদিন কথা বলতে পারছি।

যদিও ইন্টারনেটের অনেক ভালো আর খারাপ দিক আছে, তারপরেও ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিশেষে বলতে চাই, ইন্টারনেট একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে। আমরা একে খারাপভাবে ব্যবহার না করে ভালোভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করি। ইন্টারনেট সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন এবং পরবর্তী পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

জিপিএস কি? জিপিএস কি কি কাজে ব্যবহার হয়

2 thoughts on “ইন্টারনেটের মালিক কে? কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হলো?”

Leave a Reply