গুগল কিভাবে তৈরি হলো? গুগলের ভবিষ্যৎ কি?

ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন গুগল সমন্ধে জানেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে আদৌ আছে কি তার সন্দেহ রয়েই যায়। কারণ বর্তমানে ইন্টারনেট মানেটাই গুগল হয়ে গেছে। হ্যাঁ, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা গুগল নিয়েই আলোচনা করব। আজ যে যে বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করতে চলেছি সেগুলো চলুন এক পলক দেখে নিই-

গুগল কী?

গুগল হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। তবে শুধু এই কথাটি বললে বোধহয় গুগলকে অনেকটা অপমান করা হবে। কেননা আজকের এই যুগে গুগল মাত্র একটি সার্চ ইঞ্জিনই নয়। বিশাল এক তথ্যের সম্রাটও বটে। আর এ জন্যই কেউ কেউ আবার বলে থাকেন, যা গুগলে নেই তা পৃথিবীতেই নেই। কথাটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটার বিচার না হয় আপনার হাতেই ছেড়ে দিলাম। আবার এখন তো অনেকে গুগলকে তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড ও বলে থাকেন। তবে যে যাই বলুক, উইকিপিডিয়ার মতে গুগল হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা ও পণ্যে বিশেষায়িত একটি আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। 

১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি অধ্যয়নরত দুইজন ছাত্র ল্যারি পেইজ এবং সের্গেই ব্রিন এটি নির্মান করেন।

গুগলের নাম গুগল কেন? 

কখনো কি এই প্রশ্নটি আপনার মাথায় এসেছে, আচ্ছা, গুগলের নাম গুগলই বা কেন? হয়তো আসলেও তেমনভাবে জানা হয়নি। জানলে তো আর ক্ষতি নেই। তবে চলুন জেনে আসি গুগলের নাম এমন অদ্ভুদ কেন??

গুগল নামটি আসলে এসেছে (googol) নামে একটি গাণিতিক বিশেষ সংখ্যা থেকে। সংখ্যাটি হলো ১ এর পরে ১০০ টা শুন্য বসালে আমরা যা পাই। ল্যারি এবং সার্গেই এই নামটি বেছে নিয়েছিলেন তাদের ওয়েবসাইটে বিপুল পরিমান মানুষের তথ্য উপাত্য ঘাটাঘাটী করার চিন্তাধারা থেকে। অবাক করা বিষয় দেখুন আজ সত্যিই তা সফল হয়েছে। এতক্ষণে আপনি হয়তো ভাবছেন গুগল শব্দটার ফুল ফর্ম কি? অনেক ভিন্ন মত পোষণ করলেও আমরা গুগল শব্দটির যে ফুল ফর্ম টি জানি তা হলো- Global Organization of Oriented Group Language of Earth. তবে অনেকে মনে করেন, আসলে গুগলের কোন ফুল ফর্ম নেই। গুগল শব্দটিই একক একটি শব্দ । যা গোগোল(googol) থেকে এসেছে। আমরা গোগোল কি তা আলোচনা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি।

গুগল কীভাবে তৈরি হলো?

গুগল কীভাবে তৈরি হলো?

১৯৯৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চলাকালীন ছাত্র ল্যারি পেইজ এবং সের্গেই ব্রিন তাদের গবেষণার অংশ হিসেবে তখনকার অনুসন্ধান ইঞ্জিনগুলোর কিছু লিমিটাশন দেখতে পান। কারন তখনকার সার্চ ইঞ্জিনগুলো অনুসন্ধানের ফলাফল্গুলোকে বিন্যাস করত  একটি বিষয় কতবার অনুসন্ধান ইঞ্জিন পাতায় এসেছে তার উপর। ল্যারি পেইজ এবং সের্গেই ব্রিন এমন একটা অনুসন্ধান ইঞ্জিন বানানোর পরিকল্পনা করলেন যেটি ওয়েবসাইটগুলোর পারস্পরিক বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে ফলাফল দেখাবে। সেখান থেকেই প্যাজর‍্যাংক বিষয়টি এসেছিল। তবে শুরুতে ল্যারি এবং ব্রিন সেই অনুসন্ধান ইঞ্জিন্টির নাম রেখেছিল ‘ব্যাকরাব’। কেননা তখন সেই অবস্থায় তাদের ইঞ্জিনটি কোন সাইটের ব্যাকলিঙ্কগুলি যাচাইয়ের মাধ্যমে সাইটের গুরুত্বপূর্ণতা নির্ধারণ করতেন।

গুগল এর ডোমেইন নাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৯৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরে। আর এটি কর্প্রেশন হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। আপনি জেনে অবাক হবেন যে প্রথমে গুগল একটি গ্যারেজ থেকে পরিচালনা করা হতো। সুজান অচিচিকি নামে ল্যারির এক বন্ধুর গ্যারেজ ছিল সেটি।

এরপর দিন যেতে থাকে। আর গুগলের জনপ্রিয়তাও সেই সাথে তুমুল বেগে বাড়তে থাকে। ২০১১ সালের মে মাসে গুগলের ইউনিক ভিজিটরের সংখ্যা ১ বিলিয়ন ক্রস করে। বর্তমানে গুগলের প্রধান কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ শহরে অবস্থিত।

গুগলের যে কথাগুলো আজও জানা হয় নি! 

এবার আমি আপনাদের গুগল সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দিব, যেগুলো হয়তো আপনার সচরাচর উপলব্ধির মধ্যে পড়বেনা। নিম্নে তা পয়েন্ট আকারে উল্লেখ্য করা হল-

  •  গুগলের মূলমন্ত্র জানেন কি? এর প্রাতিষ্ঠানিক মূলমন্ত্র হল- ‘Dont be Evil’
  • একসময় ল্যারি এবং সের্গেই ব্রিন গুগলকে ইয়াহুর কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল। আবার দিন বদলে এমন এক সময় আসে যখন গুগল ইয়াহুকে কেনার প্রস্তাব দিতে পেরেছিল।
  •  গুগলের প্রথম টুইট কী ছিল জানেন?? সেটা আর কিছুই নয়, ‘ I am feeling lucky’.
  • google.com লিখে সার্চ করলেই যে গুগলের হোমপেইজটি আসে। লক্ষ্য করবেন সেখানে সাধারনত কোন এড থাকে না। তবে কেউ যদি সেখানে এড দিতে চায়, তাহলে বিজ্ঞাপনদাতাকে ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার গুনতে হবে গুগলের কাছে।
  • যেখানে ইয়াহু গুগলকে মাত্র ১ মিলিয়ন ইউএস ডলারে কিনার সুজোগ পেয়েও কিনেনি, সেখানে গুগল আজ ২০০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানী আর ইয়াহু সেই তুলনায় মাত্র ২০ বিলিয়নের কোম্পানী।
  • আপনি কি জানেন, গুগলে ৮০ টিরও বেশি ভাষা রয়েছে আর তন্মধ্যে এলিয়েনদে জন্যও রয়েছে একটি আলাদা ভাষা?? আর সেটি হল-‘স্ট্যার ট্রেক’স ক্লিগন’’।
  •  গুগলের হেড কোয়ার্টারের এলাকায় ঘাস কাটার জন্য তারা ছাগল ভাড়া নিয়ে থাকে।
  •  আপনি হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন গুগলের হোমপেজটি কতটা সাধারন। কিন্তু এই সাধারন থাকাটাই গুগলকে অসাধারণ করে তুলেছে। তবে এই সাধারন থাকার বিষয়টি কিন্তু গুগল একরকম বাধ্য হয়েই রেখেছে। প্রথম যখন গুগল তৈরি করা হয় তখন ল্যারি আর সের্গেইর HTML সম্পর্কে ধারণা ছিল খুব সীমীত। আর তাই তারা তখন জটিল কোন ডিজাইন বেছে না নিয়ে এই সহজ ডিজাইনটিই দিয়েছেন
  • গুগলের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রায় ১ মিলিয়নের মত কম্পিউটার রয়েছে। আর প্রতিদিন তাদের প্রায় ১ বিলিয়নের মত সার্চ রিকোয়েস্ট সামলাতে হয়।
  •  আপনি যদি গুগলে চাকরি করেন তবে আপনাকে ডাকা হবে একজন গুগলার হিসাবে। তবে নতুন হয়ে থাকলে কিন্তু আপনাকে ডাকা হবে একজন নুগলার হিসাবে।

গুগল কীভাবে কাজ করে?  

বর্তমানে কোন কিছু খুজে না পেলেই, সবাই বলে ওঠি গুগল করো সব পেয়ে যাবে। কিন্তু আপনি জানেন কি, গুগল কীভাবে এত তথ্য খুজে বের করে নিয়ে আসে আপনার কাছে?এমনকি আমরা মাঝে মাঝে যদি ভুল কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করি গুগল তা নিজে থেকেই ঠিক করে নেই, কিন্তু কীভাবে ?? 

গুগলের মত প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনের রয়েছে বিশাল বিশাল হার্ড ডিস্কের সমন্বয়ে একটি সার্ভার। ইন্টারনেটে যতরকম তথ্য বিদ্যমান তার সবগুলো সেই সার্চ ইঞ্জিনগুলো হার্ড ডিস্কে সংরক্ষন করে রাখে।আর সেখান থেকেই আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য প্রদান করে থাকে। তবে একটি মজার বিষয় হলো, আমরা গুগলে সার্চ করলে এটি আমাদের যে ফলাফলগুলো দেখায়, সেগুলোকে কিন্তু সে নিজে আগে সার্চ করে বের করে।আর এই কাজটি করে থাকে বিশেষ কিছু সফটওয়ার রোবট। যাদেরকে বলা হয় স্পাইডার। এদের কাজ হলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করা আর নতুন নতুন লিঙ্ক কালেক্ট করা। আর যেসব লিঙ্ক নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলোকে সার্ভার থেকে মুছে ফেলে। 

আবার এরা সাইটে নতুন কোন আপডেট এসেছে কিনা তাও চেক করে এবং গুগলের কাছে পৌছে দেয়। ফলে কোন ওয়েবসাইটে যখনই নতুন পোস্ট  করা হয়, গুগল কিন্তু ঠিকই তা জানতে পারে আর আমরা সেই কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করলেই আমরা আমাদের কাংক্ষিত তথ্যগুলো পেয়ে যাই। আশা করি, বিষয়টি আপনারা ধরতে পেরেছেন।

গুগলে সার্চ করার কিছু অভিনব টেকনিক

গুগলে সার্চ করার কিছু অভিনব টেকনিক

প্রতিদিন তো আমরা গুগলে অনেক কিছুই সার্চ করি। আর সঠিক তথ্য স্বল্প সময়ে পেতে আমাদের অনেকেরই বেগ পেতে হয়। তাই আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা গুগলে কার্যকরী উপায়ে কীভাবে তথ্য সার্চ করতে পারি তা আলোচনা করা হল-

  • পিডিএফ ফাইল খুজে বের করতে হলে- যে সম্পর্কিত ফাইল আপনি খুজতে চান সেটি লিখে  fileType:pdf  লিখলেই আপনার পছন্দের ফাইল্টি চলে আসবে।
  • কোন কিছুর অর্থ জানতে- কোন শব্দের অর্থ জানতে হলে সেই শব্দটি লিখে পাশে meaning লিখলেই তার অর্থ চলে আসবে।
  • কোন ইউনিট পরিবর্তন করতে চান- সার্চ বক্সে লিখুন kg in pound, inch in km etc.
  • কোন এলাকার সময় জানতে চান- যে এলাকার টাইম জানতে চান সেটির আগে টাইম লিখলেই চলে আসবে সেখানকার স্থানীয় সময়। যেমনঃ Time sydney.
  •  কোন এলাকার আবহাওয়ার রিপোর্ট জানতে হলে- আগের মত এলাকার নাম এর আগে weather লিখলেই হবে।যেমনঃ weather sydney
  • কোন এলাকার সূর্যদয় এবং সূর্যাস্তের সময়- সার্চ বক্সে লিখুন sunset:india etc.
  • ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে- সার্চ বক্সে টাইপ করুন (৩৩৪ +৯৮৯=) ইত্যাদি।
  • ফোন নাম্বারের মাধ্যমে মালিককে খুজে বের করুনঃ এর জন্য শুধু নাম্বারটির আগে এরিয়া কোড লিখে সার্চ করলেই হবে।

এগুলো ঠিকমত ব্যবহার করতে পারলেই আপনি নিজে থেকেই এমন অনেক টেকনিক বের করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

গুগল নিয়ে কিছু পাগলামি

আজকে আমরা আপনাদের শেখাবো গুগলের সাথে কীভাবে আপনি মজা করতে পারেন। নিচে এমন কিছু ট্রিক্স দেয়া হলো-

১।গুগলের হোমপেজ (www.google.com) এ যেয়ে নিম্নের কীওয়ার্ডগুলো একটি একটি করে লিখে পাশের I am feeling lucky অথবা ভাগ্যবান অনুভব করছি লেখাটায় ক্লিক করুন আর তারপর ম্যাজিক দেখুন-

  • Google Gravity
  • Epic Google
  • Google Loco
  • Loneliest Number
  • Annoying Google
  • Google Hacker
  • Rainbow Google
  • Google Magic
  • Early Google
  • Google Mirror
  • Google Sphere
  • Weenie Google
  • Google Guitar
  • Google water

২।গুগলের কিছু মজার কী-ওয়ার্ডঃ এবার নিচের কীওয়ার্ড গুলো লিখে গুগলে সার্চ করুন আর দেখুন গুগল আপনাকে কোথায় নিয়ে যায়-

  • Do a Barrel roll
  • z or r twice
  • A long time ago in a galaxy far, far away
  • <blink>
  • google in 1998
  • Zerg rush
  • atari breakout
  • Flip a coin
  • Roll a die
  • Askew

গুগল আপনার ব্যাপারে কি কি জানে?

আসলে গুগল তো কোন মানুষ নয় যে আপনার সম্পর্কে জানবে। আসলে গুগল কি করে, আপনার সব ইনফরমেশনগুলো স্টোর করে রাখে। গুগল আপনার যা কিছু জানতে পারে-

  • আপনি কি সার্চ করছেন গুগলের কাছে সেই হিস্ট্রি আছে।
  • আপনি কোন কোন অয়েবসাইটে ভিজিট করেছেন, গুগল তাও জানে।
  • গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করে থাকলে, সেখানে আপনি যা যা আপলোড করেছেন গুগল তা জানে।
  • আর আপনি যদি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি কোথায় আছেন এবং এই পর্যন্ত কোথায় কোথায় গিয়েছেন তাও গুগল জানে।

সবকিছুর মোদ্দা কথা কথা হলো, আপনি গুগলের সাথে যাই শেয়ার করবেন গুগল তাই জানবে।

আর্টিকেলটি শেষ করার আগে আপনাদের একটি কথা জানিয়ে দিতে চাই যে, গুগলে কিন্তু এমন অনেক ক্ষতিকর সাইট আছে, যেগুলো আপনার জন্য হয়তো হুমকির কারণও হতে পারে। তাই গুগলে কোন কিছু সার্চ করার সময় হুমড়ি ধুমড়ি করে সব জায়গায় চলে যাবেন না। একটু খেয়াল রাখবেন। 

গুগলের ১০ টি দারুণ ট্রিকস

Leave a Reply