বিশ্বসেরা কয়েকজন হ্যাকার
ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর প্রযুক্তির প্রসার দিন দিন বেড়েই চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক ফাস্ট আর উন্নত হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা সহজেই আয় করছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ ব্যবসার প্রচার এবং প্রসার ঘটাচ্ছে। আমরা যতই ইন্টারনেটের উপড়ে নির্ভরশীল হয়ে পরছি ততোই আমাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পরে যাচ্ছে।
আমাদের অনেক স্পর্শকাতর তথ্য অনলাইনে জমা হয়ে আছে। এবং ইন্টারনেটের সিকিউরিটিগত সমস্যার কারনে সেই তথ্য হ্যাকার দ্বারা হ্যাক হচ্ছে। যা আমাদের নিরাপত্তা এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। আজকে আমরা এমন কিছু হ্যাকার সম্পর্কে জানবো যাদের কাছে সিকিউরিটি কোন ব্যাপার না। তো চলুন বিশ্বসেরা কয়েকজন হ্যাকারদের জীবনী জেনে আসি।
বিশ্বসেরা কয়েকজন হ্যাকারদের জীবনী
ছোট খাটো হ্যাকিং সচরাচর হয়ে থাকে এবং এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমনও কিছু মানুষ আছে যারা হ্যাকিং করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বড় বড় কোম্পানি হ্যাক করে তারা জানিয়ে দিয়েছে কোন সিস্টেম নিরাপদ না। বিশ্বসেরা হ্যাকার কেভিন মিটনিক বলেছেন “ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড প্রতিটি ডিভাইস হ্যাক করা সম্ভব”। অর্থাৎ মোবাইল, কম্পিউটার, IoT ডিভাইস সহ সকল কিছু যা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তা হ্যাক করা সম্ভব এবং অনেক হ্যাকার তা করেও দেখিয়েছে। তো চলুন আজকে এমন কিছু হ্যাকারের সাথে পরিচিত হই যারা হ্যাক করে বিশ্বসেরা হয়েছেন।
কেভিন মিটনিক
তিনি তার হ্যাকিং জীবন শুরু করেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। সে সময় তিনি বাসে ব্যবহার করা পাঞ্চ কার্ড হ্যাক করতেন। তিনি হ্যাকিং মেথড হিসেবে ব্যবহার করতে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং যা একটু বহুল ব্যবহৃত হ্যাকিং পদ্ধতি। তাকে গ্লেন কেজ উপাধি দেওয়া হয় কারন তিনি হ্যাকিং এ খুব পারদর্শী ছিলেন। তিনি ফ্রী বাস যাতায়াতের জন্য পাঞ্চ কার্ড হ্যাক করতেন।
১৯৭৯ সালে একটি টেলিফোন নাম্বার দিয়ে ARPANET (টেলিফোন ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা) হ্যাক করেন। এবং এর মাধ্যমে মার্কিন ডিফেন্স মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের অ্যাক্সেস পেয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে তিনি মটোরোলা, নোকিয়া, আইবিএম, পেন্টাগনের মতো তৎকালীন বড় কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করেন। এবং এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন। তাকে এখনো হ্যাকিং জগতের বস বলা হয়।
তার এই হ্যাকিং অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড হয় যার মধ্যে ৭ মাস ছিল নির্জন কারাভোগ। ২০০০ সালে তিনি কারাভোগ থেকে মুক্তি পান এবং তাকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সকল প্রকার ইন্টারনেট ডিভাইস থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হ্যাকিং সম্পূর্ণভাবে ছেরে দিয়েছেন। তিনি এখন বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সিকিউরিটি কনসাল্টেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
আদ্রিয়ান লামো
তিনি একজন গ্রে হ্যাট হ্যাকার এবং তাকে সবাই হোমলেস হ্যাকার হিসেবে চিনতো। কারন তিনি কখনো পার্সোনাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতেন না। তার সকল হ্যাকিং কার্যক্রম তিনি পাবলিক নেটওয়ার্ক এ বসে করতেন। এতে তিনি নিজের পরিচয় গোপন করে নিরাপদে তার হ্যাকিং পরিচালনা করতেন। তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন ২০০৩ সালে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তথ্য ফাঁস করা। সে সময় তিনি ইয়াহু, মাইক্রোসফট, নিউ ইয়র্ক টাইমস এর ওয়েবসাইট হ্যাক করেন।
তিনি উইকিলিকস এ তথ্য দেওয়ার অভিযোগে আটক করা একজন সেনা কর্মকর্তার তথ্য ফাঁস করে দেয়। এবং এই কারনেই তাকে ২০১০ সালে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। তার সবধরনের হ্যাকিং এর জন্য মোট ৬৫ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়। তাকে ৬ মাস গৃহবন্দী এবং ২ বসর আন্ডার সার্ভিল্যান্স এ রাখা হয়।
গ্যারি ম্যাকিনন
হ্যাকিং জগতে তিনি একটি আতংকের নাম। তিনি হ্যাকিং শুরু করেন সাধারণত এলিয়েন সম্পর্কে জানতে। ছোটবেলা থেকেই তার এলিয়েনের প্রতি একটা আলাদা ধরণের কৌতূহল কাজ করতো। নাসা যেহেতু অ্যাস্ট্রোনট নিয়ে গবেষণা করে তাই সে আর্মড ফোর্স এবং নাসার ৯৭ টি কম্পিউটার হ্যাক করে এবং তিনি এই হ্যাকিং করে তার লন্ডনে তার গার্লফ্রেন্ডের আন্টির বাসা থেকে। তিনি পুরো ১৩ মাস সময় নেয় এগুলো হ্যাকিং করতে। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে “Solo” ব্যবহার করতেন।
সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো তিনি শুধু হ্যাকিং করে যে তথ্য চুরি এবং ধ্বংস করেছেন তা নয়। তিনি আর্মড ফোর্স এর ওয়েবসাইটে “Your Security Is Crap” নামে একটি নোটিশ পোস্ট করে। যা আর্মড ফোর্স এর সিকিউরিটি তে থাকা সকলের জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।
ইউ এস মিলিটারির সবথেকে বড় হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটিয়ে তিনি রাতারাতি হেডলাইনে চলে আসেন। তিনি ২৪ ঘণ্টার জন্য ইউ এস মিলিটারির ২০০০ এর মতো কম্পিউটার বন্ধ করে রাখেন। ৯/১১ এর ঘটনার পর তিনি আর্ল নেভাল অস্ত্র স্টেশনের অস্ত্রের লগ মুছে দিয়েছিলেন এবং ইউ এস ন্যাভালের ৩০০ টি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অকেজো করে দিয়েছিলেন। যা ক্ষতির অংকে ছিল ৭ লক্ষ ডলারের থেকে বেশি। তার কাছে হ্যাকিং ছিল একটি নেশা।
ম্যাথু বেভান এবং রিচার্ড প্রাইস
তারা দুইজন একসাথে কাজ করতেন। তারা ইতিহাসের এক নেক্কারজনক হ্যাকিং করেছিনেল। আমরা জানি উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া আলাদা হবার পর তাদের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকতো। এই সুযোগ নিয়ে তাদের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধ লাগানোর পরিকল্পনা লুকিয়ে ছিল তাদের হ্যাকিং এ।
তারা উত্তর কোরিয়া এবং ইউএসএ এর মধ্যকার তথ্য চুরি করতে হ্যাকিং শুরু করে। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল ইউ এস মিলিটারির কম্পিউটার সিস্টেম। তারা সফলভাবে এই নেটওয়ার্কএ ঢুকে পরে এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য চুরি করে। এবং তা ব্যবহার করে কোরিয়ার পারমাণবিক গবেষণাগার ধ্বংস করতে।
তারা প্রধানত বিভিন্ন সিকিউর সামরিক নেটওয়ার্ক টার্গেট করতো। অন্যান্য হ্যাকিং এর মধ্যে গ্রিফিজ বিমানঘাঁটির নেটওয়ার্ক হ্যাক অন্যতম। এই দুই ব্রিটিশ হ্যাকার বিশ্বে পরিচিত ছিল ডাটা স্ট্রিমিং কাউবয় নামে।
আলবার্ট গঞ্জালেজ
ক্রেডিট কার্ড ডাটা চুরির বাদশা বলা হয় আলবার্ট গঞ্জালেজকে। হ্যাকিং এর দুনিয়ায় তার পরিচিতি ছিল সুপানাজি নামে এবং এই নামেই সবাই তাকে চেনে। তিনি গোটা বিশ্বের ক্রেডিট কার্ড সিস্টেমের নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছিল। ১৭০ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড ডাটা তিনি মাত্র ২ বছরে হ্যাক করেন। এবং এটাই আজ পর্যন্ত সব থেকে বড় ক্রেডিট কার্ড চুরির ঘটনা।
তার এই ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকিং এর দুনিয়ায় প্রবেশ ঘটে হাইস্কুলে। তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে ইন্টেরেস্টেডদের নিয়ে একটি টীম গঠন করে। যাদের প্রধান কাজ ছিল ক্রেডিট কার্ড এর ডাটা চুরি করা। তিনি একসময় শ্যাডোক্রু নামের এক সাইবার ক্রাইম ওয়েবসাইটের সক্রিয় সদস্য ছিল। তার এই হ্যাকিং স্কিলের জন্য সেই সময় তাকে সেরা হ্যাকার বলা হতো।
এতো বড় অপরাধ করার পর যখন তাকে নিউ ইয়র্কে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে তিনি শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সিক্রেট সার্ভিসের জন্য ইনফরমার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। কিছু সময় কাজ করার পর তিনি আবার ক্রেডিট কার্ড ডাটা চুরি করা শুরু করে। তিনি চাকরি করা অবস্থায় মোট ১৮ কোটি ক্রেডিট কার্ড ডাটা চুরি করে এবং এর জন্য ২০১৫ সালে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হ্যাকিং এর সাথে অপরাধ সরাসরি সম্পৃক্ত। যদিও বর্তমানে অনেক কোম্পানি হ্যাকারের সমর্থন দিচ্ছে এবং ত্রুটি ধরিয়ে দিতে টাকা অফার করছে এবং ধীরে ধীরে ভালো কাজের জন্য অনেক হ্যাকার গ্রুপ তৈরি হচ্ছে এবং নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে। পুরো আর্টিকেল পরে আমরা বিশ্বের নামকরা বাঘা বাঘা হ্যাকার দের সম্পর্কে জানলাম। এবং তাদের অর্জন এবং ক্ষতি দুটো সম্পর্কেই ধারণা পেলাম। এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন ধন্যবাদ।
Thanks
welcome