ক্রেডিট কার্ড কি?
ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড কিভাবে কাজ করে?

ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড কিভাবে কাজ করে?

ব্যাংক ব্যবস্থা একটি দেশের আর্থিক অবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। অর্থের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের অর্থনৈতিক কাজ কর্ম পরিচালনা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজেট ঘোষণায় সরাসরি যুক্ত থাকে এবং মুদ্রাস্ফীতি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এই সব কিছুই করে শুধু জনগনের আর্থিক সুবিধার জন্য। 

ব্যাংক থেকে আমরা নিজেদের কাজের জন্য লোন পাই। অন্যদিকে আমাদের আয় করা টাকা ব্যাংকে জমা করে রাখতে পারি। ডিজিটাল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থার যে উন্নতি হয়েছে ক্রেডিট কার্ড সিস্টেম তার মধ্যে অন্যতম। আজকের লেখায় আমরা ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড কিভাবে কাজ করে? ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা কি কি? এগুলো বিস্তারিত জানবো, তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

ক্রেডিট কার্ড কি?

ক্রেডিট কার্ড একটি প্লাস্টিক কার্ড। যাকে লোন কার্ড বা পেমেন্ট কার্ড নামেও ডাকা হয়। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা ইস্যুকৃত বিল পেমেন্ট কার্ড। ক্রেডিট কার্ড শুধু বিভিন্ন বিল পে করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।

১৯৫৮ সালে ব্যাংক অফ আমেরিকা প্রথম ক্রেডিট কার্ড প্রবর্তন করে। সে সময় তারা এই কার্ডের নাম দেয় Bank Ameri Card এবং কাস্টমারদের মাঝে বিতরণ শুরু করে। ক্রেডিট কার্ডের কনসেপ্ট খুবই সিম্পল, ক্রেডিট কার্ডের সাথে পোস্ট পেইড সিমের তুলনা করা যেতে পারে। কারণ আমরা পোস্ট পেইড সিম সারা মাস ইউজ করি কোন টাকা দেওয়া ছাড়াই। কিন্তু মাস শেষে কিন্তু পুরো টাকা টা আমাদের পে করে দিতে হয়। ক্রেডিট কার্ড ঠিক এভাবেই কাজ করে। 

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

অর্থাৎ ধরুন আপনি মাসের শুরুতে একটি শপিং মলে গেলেন এবং একটি ড্রেস পছন্দ করলেন। ড্রেসটির দাম দেওয়া আছে ৫ হাজার টাকা। এখন আপনার কাছে এতগুলো টাকা এই মুহূর্তে নেই কিন্তু মাসের শেষে টাকা পাবেন। আপনি এই টাকা ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে দিতে পারবেন। মাস শেষে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি আপনাকে পেমেন্ট রিসিট সহ একটি বিল তৈরি করে দিবে যা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে।

মোটকথা ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে আপনি টাকা হাতে না থাকলেও যে কোন পণ্য বা সেবা কিনতে পারবেন। যে অর্থ আপনি মাস শেষে পরিশোধ করে দিতে পারবেন। তাহলে আপনি ফিজিক্যাল কোন অর্থ ছাড়াই পুরো মাসের খরচ চালিয়ে যেতে পারবেন।

ক্রেডিট কার্ড কিভাবে কাজ করে?

ক্রেডিট কার্ড ব্যাংক বাদেও যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইস্যু করতে পারে। চাইলেই যে কেউ এই কার্ড পাবে না কারণ কিছু নিয়ম আছে যেগুলো আগে পূরণ করতে হবে। যেমন প্রথমত ক্রেডিট কার্ড শুধু পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। পেমেন্ট করা বাদে আর কোন ধরনের ট্রানজেকশন সুবিধা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীদের এই কার্ড দেওয়া হয়। কারণ ক্রেডিট কার্ডের মূল উদ্দেশ্য লোন দেওয়া, এখন আপনি যদি লোন শোধ করার ক্ষমতা না রাখেন তাহলে এই কার্ড আপনাকে দেওয়া অবশ্যই উচিৎ হবে না।

তৃতীয়ত ক্রেডিট কার্ড সার্ভিস পরিচালনা করার জন্য বার্ষিক চার্জের দরকার পড়ে। এই চার্জ প্রতিষ্ঠান ভেদে আলাদা আলাদা হয় তবে সবার ক্ষেত্রেই এটি ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। এর বাইরে কার্ড লিমিট বাড়ানোর জন্য আপনাকে এক্সট্রা খরচ করতে হবে।

চতুর্থত প্রতিটি কার্ডে অ্যামাউন্ট লিমিটেশন থাকে। অর্থাৎ আপনি চাইলেই ইচ্ছা মত খরচ করতে পারবেন না। এই লিমিটেশন নির্ভর করে গ্রাহকের ইনকামের উপরে। আপনি একজন চাকরিজীবী হয়ে থাকলে আপনার বেতনের উপর অ্যামাউন্ট লিমিট নির্ভর করবে। অন্যদিকে আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে লিমিট দেওয়া হবে। তবে সব কার্ডের একটি কমন অ্যামাউন্ট ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত লিমিট থাকে। এই লিমিট ক্রস করা সম্ভব হয় কারণ লিমিট শেষ হয়ে গেলে আপনার কার্ড আর কাজ করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পুনরায় লিমিট বাড়িয়ে নিবেন না বা পেন্ডিং পেমেন্ট জমা দিবেন না।

ক্রেডিট কার্ডে অফলাইন এবং অনলাইন দুই ভাবেই পেমেন্ট করা যায়। অফলাইন পেমেন্ট করার জন্য কার্ড টি একটি কার্ড সোয়াইপ মেশিন বা পস (পয়েন্ট অফ সেল) মেশিনে রিড করা হয়। উক্ত মেশিনে সঠিক ভাবে পিন এন্টার করলে কার্ড ডিটেইলস ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড টার্মিনালে গিয়ে সার্ভার থেকে কার্ড ভ্যালিডিটি চেক করে। ইনফো গুলো সঠিক থাকলে পেমেন্ট একসেপ্টেড দেখায় অথবা তথ্য না মিললে কার্ড ডিনাইড দেখায়।

ফ্রিল্যান্সার মাহমুদুল হাসান এর সফলতার গল্প

অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে কার্ড নাম্বার, এক্সপায়ার ডেট, নাম, বিলিং অ্যাড্রেস, সিকিউরিটি কোড, অ্যাড্রেস ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়। এরপর উপরে বর্ণনা করা উপায়ে কার্ড ভ্যালিডিটি চেক করে পেমেন্ট নেওয়া হয়।

ক্রেডিট কার্ড পরচিতি

ক্রেডিট কার্ড একটি প্লাস্টিকের তৈরি কার্ড যার আয়তন আইএসও/আইইসি ৭৮১০ আইডি-১ দ্বারা নির্ধারিত। কার্ডের দুইটি ভাগ আছে, একটি সামনের অংশ এবং অপরটি পেছনের অংশ। সামনের অংশে সবার উপরে যে ব্যাংক থেকে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে সেই ব্যাংকের লোগো থাকে। তারপর একটি এএমভি চিপ থাকে। এই চিপের ডান পাশে থাকে একটি হলোগ্রাম। এরপর এএমভি চিপ এর নিচেই থাকে ক্রেডিট কার্ড নাম্বার। তারপর পর্যায়ক্রমে এক্সপায়ারি ডেট এবং কার্ড মালিকের নাম থাকে, এগুলোর ডান পাশে ঠিক হলোগ্রাম এর নিচে কার্ড ব্র্যান্ড এর লোগো থাকে। কার্ডের পেছন পাশে শুরুতে একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে। এরপর সিগনেচার স্ট্রিপ এবং সিকিউরিটি কোড থাকে। এই হলো ক্রেডিট কার্ড পরিচিতি।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

নিরাপদ: ক্রেডিট কার্ড থাকলে কোন ক্যাশ টাকা বহন করতে হয়না। এতে একই সাথে ছিনতাই হওয়া থেকে নিরাপদ থাকা যায় অপরদিকে টাকা হারানোর বা নষ্ট হওয়ার কোন রিস্ক থাকে না।

ফাস্ট ট্রানজেকশন: ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনেক দ্রুত টাকা পরিশোধ করা যায়। এতে টাকা পরিশোধের কোন ঝামেলা থাকেনা বা ভুল করে বেশি টাকা দিয়ে দেওয়ার কোন চান্স থাকে না।

রিওয়ার্ড পয়েন্ট: আপনার লেনদেন এবং সময় মত লোন পরিশোধ করে দেওয়ার ওপর কোম্পানি বা ব্যাংক আপনাকে ফ্রী ক্রেডিট দিবে। এই ক্রেডিট ইউজ করে আপনি অ্যামাউন্ট লিমিট বাড়িয়ে নিতে পারবেন অথবা কোন পণ্য কিনতে পারবেন।

ক্যাশব্যাক: বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য শপ গুলো ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা উপলক্ষে ডিসকাউন্ট অফার করে থাকে। এসব ডিসকাউন্ট অফার বাদেও ক্যাশব্যাক অফার পাওয়া যায় যা দিয়ে পরবর্তীতে ক্রেডিট বাড়িয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেমেন্ট করা যায়।

ওয়েব ব্রাউজার কি? সেরা ১০ টি ওয়েব ব্রাউজার

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

সুদ খাওয়া: ক্রেডিট কার্ড সিস্টেম কাজ করে সুদের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ আপনি কোন কারণে সময় মত বকেয়া পে করতে না পারলে আপনাকে সুদ দিতে হবে। এই সুদের হার আপনার লোনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে বাড়তেই থাকবে। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড ইউজ করলে সুদ দেওয়া এবং নেওয়ার যে কোন পর্যায় পড়তে হবে।

অপরিকল্পিত ব্যয়: পকেটে টাকা থাকলে আমরা খরচ করার সময় হিসেব করে করি। কিন্তু যখন ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পে করি তখন আর হিসেব করা হয় না। কিন্তু মাস শেষে যখন টাকা পরিশোধ করতে হয় তখন ঝামেলায় পড়তে হয়। অথচ ক্যাশ দিয়ে ব্যয় করলে পরিমাণ হিসেব করে ব্যয় করা যায়।

ঋণের ঝামেলা: ক্রেডিট কার্ড ইউজ করা আর ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া একই কথা। কারণ এই কার্ড ইউজ করে আপনি ঋণ করে ইচ্ছামতো বিভিন্ন খরচ করলেন। কিন্তু মাস শেষে দেখলেন আপনার আয়ের সকল টাকা খরচ করে ফেলেছেন। তখন উল্টো ঋণের বোঝা ঘাড়ে এসে পড়বে।   

ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আমাদের অনেকের মনেই নানান ধরনের প্রশ্ন কাজ করে। আশাকরি এই পোস্ট পড়ে আপনাদের মনের সকল প্রশ্ন সমাধান হয়ে গেছে। এর পরেও যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ। 

Leave a Reply