প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন ডিভাইস এবং টেক পণ্য উন্নত হয়েছে, এর সাথে সাথে আমরা প্রযুক্তি পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরছি। প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত শেয়ার করছি। আমাদের পার্সোনাল এমনও বিষয় আছে যা আমরা নিজেরা না জানলেও সোশ্যাল মিডিয়া জানে। আর এসকল ডাটা কিছু টেক জিনিয়াস দ্বারা হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছে এবং অনলাইনে ছড়িয়ে পরছে।
হ্যাকিং শব্দটা একটি সাইকোলজিক্যাল গেম। আমাদের এই শব্দ দ্বারা এমন কিছু দেখানো হয় যে, যারা হ্যাকিং করে তারা অপরাধী। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলেই তাই? তো চলুন আজকে আমরা হ্যাকিং কি? হ্যাকার কে? হ্যাকিং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
হ্যাকিং কি?
হ্যাকিং অর্থ কোন কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে গোপনে অ্যাক্সেস নিয়ে মেইন সিস্টেমের নিয়ন্ত্রন নেওয়া। অথবা কোন কম্পিউটার সিস্টেমে ইউজারের অনুমতি ব্যতীত অনুপ্রবেশ কে হ্যাকিং বলে। এটি বর্তমান সময়ের অনেক পপুলার একটি শব্দ। ইউটিউবে হ্যাকিং নিয়ে সার্চ দেওয়া ভিডিও গুলোর ভিউ দেখলেই বুঝা যায় হ্যাকিং কতো পপুলার।
হাকিং কে সাধারণত অপরাধ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সম্ভবত গঠনগত সংজ্ঞার কারনে হ্যাকিং কে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বাস্তবে এর ভালো এবং খারাপ উভয় দিক আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডাটার সহজলভ্যতার কারনে মানুষ সহজেই অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। তেমনি মানুষ এখন হ্যাকিং নিয়ে ভবিষ্যৎ তৈরি করার চিন্তা-ভাবনা করে।
আমাদের মনে হ্যাকিং নিয়ে অনেক অজানা প্রশ্ন ভীর করে। কিন্তু কোথাও মনের মতো উত্তর পাইনা। এর পিছনে কারন আমরা হ্যাকিং নিয়ে বরাবরই ভুল জানি। হ্যাকিং হলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যা দিয়ে আমরা কোন সিস্টেমের দুর্বলতা বের করতে পারি। যা সিস্টেম ঠিক করতে টেকনিশিয়ানদের সাহায্য করে। মোটকথা হ্যাকিং একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যা দ্বারা কোন সিস্টেমের অ্যাক্সেস নেওয়া যায় এবং দুর্বলতা খুঁজে বের করা যায়।
হ্যাকার কে?
আমরা ইতিমধ্যে হ্যাকিং সম্পর্কে জেনেছি, কিন্তু হ্যাকার সম্পর্কে এখনো কোন ধারণা পাইনি। সহজ কথায় যারা হ্যাক করে তারাই হ্যাকার। কথাটা যত সহজে বলা যায় কিন্তু ব্যাপারটা ততো সহজ না। হ্যাকার হতে গেলে অনেক বিষয় শিখতে হয় এবং অ্যাডভানস নলেজ থাকতে হয়। হ্যাকার হতে গেলে আপনাকে সর্ব প্রথম প্রোগ্রামিং জানতে হবে।
একটা কথা মনে রাখবেন, একজন হ্যাকার একজন প্রোগ্রামার, কিন্তু একজন প্রোগ্রামার একজন হ্যাকার নয়। হ্যাকিং করার জন্য প্রোগ্রামিং এ মাস্টার হতে হয়। কারন হ্যাকার হিসেবে আপনার প্রধান কাজ হবে সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বের করা, এখন আপনি যদি সিস্টেম তৈরি করা না জানেন তাহলে সমস্যা খুঁজে বের করবেন কীভাবে? অর্থাৎ আপনাকে একজন ভালো প্রোগ্রামার এবং এনালিস্ট হতে হবে হ্যাকিং করার জন্য।
দুইটা বই পরে আর দুইটা কোর্স করেই কেউ নিজেকে হ্যাকার দাবী করতে পারবে না। বিশ্বে যত বড় বড় হ্যাকার আছে তারা একটি লম্বা সময় ধরে হ্যাকিং শিখছে। তাদের এক্সপার্ট হতেও অনেক সময় লেগেছে। হ্যাকার কারা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের হ্যাকার এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে হবে।
হ্যাকার সাধারণত ৩ প্রকার
- ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
- হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার
- গ্রে হ্যাট হ্যাকার
ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
Black Hat Hacker বা কালো টুপিওয়ালা হ্যাকার হলো যারা হ্যাকিং দ্বারা মানুষের ক্ষতি করে। এরা ইতিহাসের সকল বড় বড় এবং ক্ষতিকারক হ্যাকিং এর জন্য দায়ী। এরা কোন সিস্টেমের ব্যাকডোর বা ত্রুটি খুঁজে পেলে তা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে। ডার্ক ওয়েবে আমরা যে সকল পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, এবং কনফিডেনশিয়াল ডাটা দেখি তা সবই এই ব্ল্যাক হ্যাট দের কাজ। এরা সাধারণত নিজের ট্যালেন্ট কে খারাপ আর মানুষের ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করে এবং হ্যাকিং এর আন-ইথিকাল যত কাজ আছে এরা করে।
প্রতিটি সিস্টেম অ্যাডমিনের কাছে এরা একটা আতংক। অনেক দেশের সরকার এদের ভয়ে ভীত থাকে। আবার এমনও কিছু দেশ আছে যারা টাকা দিয়ে এদেরকে কিনে নেয় এবং অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। তবে এদের মধ্যে কিছু হ্যাকার আছে যারা ব্ল্যাক হ্যাট হলেও মানুষের ক্ষতি করে না। যেমন অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপ। এরা একটি স্বতন্ত্র হ্যাকার গ্রুপ যারা সবসময় অপরাধ আর অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার
হ্যাকার বলতেই আমাদের চোখের সামনে যে দৃশ্য ভেসে উঠে। একটি অন্ধকার রুমের ভিতরে বড় বড় স্ক্রীনের সামনে বসে মোটা একজন মানুষ চিপ্স খাচ্ছে এবং কোড লিখে সরকারী সাইটে অ্যাক্সেস করছে। পুলিশ সহ সকল গোয়েন্দা সংস্থা তাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান কিন্তু পাচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব জীবনে এরকম কিছুই না। যদিও বেশিরভাগ হ্যাকিং হয়ে থাকে ডাটা চুরি ও নষ্ট করার জন্য তবুও এদের মধ্যে কিছু আছে যারা সৎ। আর এমন হ্যাকারদেরই বলা হয় হোয়াইট হ্যাট বা সাদা টুপিওয়ালা হ্যাকার।
এরা তাদের স্কিল এবং পরিশ্রম ব্যায় করে সিস্টেমকে নিরাপদ রাখতে। এদের প্রধান কাজ সিস্টেমকে হ্যাকারের কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখতে অ্যান্টি হ্যাকার পদ্ধতি তৈরি করা। অর্থাৎ এরা ক্ষতিকারক হ্যাকার কে দূরে রাখার জন্য সিকিউরিটি সিস্টেম তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। এদেরকে ইথিকাল হ্যাকার বলে।
গ্রে হ্যাট হ্যাকার
এরা সাধারণত ভালো এবং মন্দ দুই কাজই করে। এরা প্রয়োজন পড়লে সরকারী সিস্টেমের বাইরে গিয়ে হলেও নিজেদের মতো কাজ করে। এরা যে কোন সময় মুখোশ পালটে ফেলতে পারে। অনলাইনে সবাইকে এদের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। কারন এরা কখন কোন কাজ করে তার ঠিক-ঠিকানা নাই।
হ্যাকিং প্রতিরোধের উপায় কী?
হ্যাকিং একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেকগুলো স্টেপ ফলো করে তারপর হ্যাকিং সম্পন্ন করা হয়। এখন কেউ তো আর চাইতেই পাসওয়ার্ড দিয়ে দিবে না। হ্যাকিং প্রতিরোধ করার আগে আমাদের জানতে হবে হ্যাকিং হয় কীভাবে বা এর কারন সম্পর্কে।
আমরা জানি হ্যাকিং করতে গেলে প্রথমে সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক এর দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হয়। এগুলো বের করার পর নানান পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করা হয় অ্যাক্সেস নেওয়ার জন্য। এখন আপনি আপনার সিস্টেম হ্যাকিং এর হাত থেকে রক্ষা করতে চাইলে হ্যাকারকে বাঁধা দিতে হবে।
হ্যাকিং প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে উইন্ডোজ সিস্টেমের জন্য অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইট ভিজিট করা বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত সিস্টেম আপডেট করতে হবে। পেনড্রাইভ সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, কোন ক্র্যাক বা নাল সফটওয়্যার বা ফাইল ইন্সটল করবেন না। উইন্ডোজ সিস্টেমের সিকিউরিটি দুর্বল হওয়ার কারনে হ্যাকাররা একেই টার্গেট বানায় বেশি।
তাই হ্যাকিং এর থেকে বাঁচতে ম্যাক বা লিনাক্স ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো স্টাবল এবং ভাইরাস অ্যাটাক থেকে অনেকটাই মুক্ত। তবে হ্যাকিং রিস্ক থেকে মোটামুটি ৯৯% মুক্ত হলো লিনাক্স সিস্টেম।
হ্যাকিং কি এবং হ্যাকার কারা তা সম্পর্কে আমরা মোটামুটি জানতে পারলাম। হ্যাকার হতে গেলে যেমন হ্যাকিং জানতে হবে তেমন হ্যাকিং জানতে গেলে প্রোগ্রামার হতে হবে। কারন প্রোগ্রামার না হয়ে হ্যাকার হতে গেলে দিন শেষে শুধু স্ক্রিপ্ট কিডি (Script Kiddie) হয়েই থাকতে হবে। কীভাবে নিজেকে হ্যাকিং থেকে মুক্ত রাখতে পারবো সেই টিপস গুলো সম্পর্কে জানলাম। আশাকরি পুরো আর্টিকেল পরে আপনি হ্যাকিং, হ্যাকার এবং নিজেকে হ্যাকিং থেকে নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। আপনার মতামত কমেন্টবক্সে জানিয়ে দিবেন ধন্যবাদ।