মোবাইলে ভিডিও এডিট করার ৫ টি সেরা সফটওয়্যার

আমরা কোন ঘটনা বা সৃতি ধারন বা সংরক্ষণ করার জন্য ভিডিও করে থাকি। ভিডিও এর মাধ্যমে সহজেই কোন কিছু দেখানো এবং বর্ণনা করা যায়। ইউটিউবের বদৌলতে এখন ভিডিও তৈরি করে অনলাইন থেকে ইনকাম করা যায়। এছাড়াও এই বিশাল মিডিয়া জগত পরিচালিত হচ্ছে একমাত্র ভিডিও টেকনোলজির মাধ্যমে। কিন্তু শুধু ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও শুট করলেই যে সব কাজ শেষ তা নয়। ভিডিও যেহেতু একটি সুন্দর উপস্থাপন মাধ্যম সেহেতু পাবলিশ করার আগে আমাদের ভিডিও এডিট করে নিতে হয়। সাধারণত প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং করার জন্য ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ ইউজ করা হয়। কিন্তু মোবাইল ফোন ইউজ করেও অনেক সুন্দর এবং প্রফেশনাল ভিডিও এডিট করা যায়। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা মোবাইলে ভিডিও এডিট করার ৫টি সেরা সফটওয়্যার সম্পর্কে জানবো।

৫ টি সেরা মোবাইলে ভিডিও এডিটর

মোবাইলে ইউজ করা যায় এমন অনেক ভিডিও এডিটর অনলাইনে পাওয়া যায়। কিন্তু এদের মধ্যে সব গুলোই মন মতো রেজাল্ট দেয় না। এখানে আমরা সব থেকে ভালো এবং বেস্ট মোবাইল ভিডিও এডিটর নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন সফটওয়্যার গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

কাইনমাষ্টার প্রো: 

মোবাইল ভিডিও এডিটর হিসেবে কাইনমাষ্টার সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। এর ফ্রী এবং প্রো উভয় ভার্সন প্লে ষ্টোরে পাওয়া যায়। তবে কাইনমাষ্টারের ফ্রী ভার্সনে ভিডিওর মাঝে ওয়াটারমার্ক থাকে যা রিমুভ করতে হলে আপগ্রেড করে প্রো ভার্সন ইউজ করতে হবে।

কাইনমাষ্টার অনেক ভালো এবং শক্তিশালী মোবাইল ভিডিও এডিটর। এটা দিয়ে ঠিক কম্পিউটারের মতো টাইমলাইন পদ্ধতিতে ভিডিও এডিট করা যায়। আপনি আপনার ইচ্ছা মতো ভিডিও ক্লিপ বা ইমেজ দিয়ে ভিডিও তৈরি করতে এবং এডিট করতে পারবেন। ভিডিও এডিটরের অন্যান্য ফিচারের সাথে এখানে ভিডিওর ভিতরে টেক্সট অ্যাড করা যায়। 

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কাইনমাষ্টারে অনেক ইফেক্ট পাওয়া যায় এবং ভিডিওতে সাবটাইটেল অ্যাড করা যায়। মোটকথা পুরো কম্পিউটারে ভিডিও এডিট করার মতো ফিল পাওয়া যায়। কাইনমাষ্টারের ইউজার ইন্টারফেস এবং ফাংশনালিটি অনেক সহজ। তাই সকল কোয়ালিটির ইউজার এটি ইউজ করে সহজেই অনেক সুন্দর সুন্দর ভিডিও এডিট করতে পারে।

অ্যাডোবি প্রিমিয়ার ক্লিপ: 

অ্যাডোবি প্রিমিয়ার ক্লিপ:

এটি একটি ফ্রী মোবাইল ভিডিও এডিটিং সফটয়্যার,  তবে ফ্রী হলেও এতে অনেক  প্রিমিয়াম ফিচার পাওয়া যায়। এটি অনেক লাইটওয়েট এবং পাওয়ারফুল এডিটর। প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করতে এরকম ফ্রী টুল দ্বিতীয়টি নেই। সহজ ফাংশনালিটি এবং ট্রিমিং, কাটিং, ফটো মোশন, ফিল্টার, ইফেক্ট সহ সকল ধরনের ফিচার সহজে ইউজ করা যায়।

আমরা জানি কম্পিউটারের জন্য অ্যাডোবি বরাবরই অনেক ভালো মানের সফটওয়্যার তৈরি করে। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে প্রিমিয়ার ক্লিপ তাদের অন্যান্য প্রোডাক্টের মতই ভালো এবং পাওয়ারফুল। ভিডিও তৈরি করে আপনি অ্যাপ থেকেই সরাসরি অনলাইনে আপলোড করে দিতে পারবেন। তাদের অনেক প্রিমিয়াম লাইব্রেরী আছে যেখানে কাস্টম ট্রানজিশন, ইফেক্ট, ক্লিপ ইত্যাদি পাওয়া যায়। 

এছাড়াও তাদের অনেক শক্তিশালি অডিও টুল আছে যেখান থেকে আপনি ভিডিওতে রয়েল ফ্রি অডিও ইফেক্ট এবং মিউজিক ইউজ করে ভিডিও আরও সুন্দর বানাতে পারবেন। বিল্ড-ইন অ্যানিমেশন ইফেক্ট পুরো অ্যাপকে আরও বেশি কাজের করে তুলেছে। আপনি প্লে-ষ্টোর থেকে অ্যাডোবি প্রিমিয়ার ক্লিপ অ্যাপ ফ্রীতে ইউজ করতে পারবেন।

পাওয়ার-ডিরেক্টর

কাইনমাষ্টারের সাথে এই অ্যাপ অনেকটাই সেম ক্যাটাগরির। অর্থাৎ কাইনমাষ্টার এবং পাওয়ার ডিরেক্টর একই ধরনের সার্ভিস প্রদান করে। তবে কাইনমাষ্টার থেকে পাওয়ার ডিরেক্টর অনেক অ্যাডভান্স ফিচারস সাপোর্ট করে। প্রধান প্রধান ফিচারস গুলো অন্যান্য এডিটরের মতো হলেও এতে কিছু মডার্ন ফিচারস আছে। এতে ভিডিও ব্যাকগ্রাউন্ড বদলানো বাদেও স্লো-মোশনে ভিডিও এডিট করা যায়। 

এতে ভিডিও ট্রিম এবং এক্সপ্যান্ড করা সহ বিভিন্ন ইফেক্টস, ট্রানজিশন ইত্যাদি ফিচার পাওয়া যায়। এছাড়া ভিডিও 720p, 1080p এবং 4K ফরম্যাটে ফোনে সেভ করা যায়। টাইমলাইন ভিডিও এডিটিং ফিচার সচরাচর কম্পিউটার ভিডিও এডিটরে থাকে। তবে পাওয়ার ডিরেক্টরে এই ফিচার সহ ভয়েজ চেঞ্জ করার ফাংশনালিটি আছে। 

পাওয়ার ডিরেক্টর একটি ফ্রী ভিডিও এডিটর হওয়ায় এতে অ্যাড দেখানো হয়। এটি আপনি প্লে ষ্টোর থেকে নিয়মিত আপডেট দিয়ে লেটেস্ট ভার্সন ইউজ করতে পারবেন। ইন্টারফেস এবং অ্যাপ পারফরমেন্স বিবেচনা করলে মোবাইল ভিডিও এডিটরের ক্ষেত্রে পাওয়ার ডিরেক্টর সব থেকে বেস্ট। এটি ব্যবহার করলে কম্পিউটারে এডিট করে যেমন প্রফেশনাল লুক দেওয়া যায় ঠিক তেমন প্রফেশনাল ভিডিও সহজেই তৈরি করা সম্ভব।

ফিল্মোরা গো

ফিল্মোরা গো

ওয়ান্ডারশেয়ার ফিল্মোরা একটি প্রফেশনাল পিসি ভিডিও এডিটর। ফিল্মোরা গো তাদের তৈরি একটি মোবাইল ভিডিও এডিটর। কম্পিউটারের জন্য ওয়ান্ডারশেয়ার ফিল্মোরা যেমন পারফেক্ট একটি এডিটর ঠিক তেমনি মোবাইলের জন্য ফিল্মোরা গো পারফেক্ট এডিটর। 

ফিচারের দিক দিয়ে ফিল্মোরা গো অনেক উচ্চমানের। এখানে আপনি ভিডিও এডিট করার সময় সে ভিডিও প্লে করে দেখতে পারবেন। যা আপনাকে পরিপূর্ণভাবে ভিডিও এডিট করতে সাহায্য করবে। আপনি তাদের লাইব্রেরী থেকে মিউজিক নেওয়া ছাড়াও নিজের মিউজিক ইউজ করতে পারবেন এবং ভিডিও থেকে অডিও আলাদা করেও শুধু অডিও এডিট করতে পারবেন। 

এদের একটি ইন্টারেস্টিং ফিচারস হলো আপনি টাইটেল অ্যাড করার সাথে পছন্দের স্টিকার অ্যাড করে দিতে পারবেন। এতে অনেক কাস্টম টেম্পলেট, ইফেক্ট, ট্রানজিশন ইত্যাদি পাওয়া যায়। অ্যাডভান্স লেভেলের সকল ফাংশন ইউজ করে ভিডিও আরও বেশি সুন্দর করে তৈরি করা যায়। এছাড়াও ভিডিও ট্রিম, কাট, অডিও এডিট, থিম সিলেকশন, অনলাইন আপলোড ইত্যাদি ফিচার ফ্রীতে ইউজ করা যায়। তবে ফিল্মোরা গো এর অনেক ফিচার ইউজ করতে অ্যাপ আপগ্রেড করতে হবে। তারপরেও ফ্রীতে যে সকল ফিচার পাওয়া যায় তা দিয়ে প্রফেশনাল এডিট করা যায়। বর্তমান সময়ে বেশীরভাগ ইউটিউবার ফিল্মোরা গো ইউজ করে তাদের ভিডিও এডিট করে। 

ইউআরএল শর্ট করে আয় করার সেরা কিছু ওয়েবসাইট

এটি ইউটিউব এবং ফেসবুক ভিডিও তৈরি করার জন্য অনেক পপুলার। এর সহজ ইউজার ইন্টারফেসের কারণে সহজেই ফাংশনালিটি বুঝা যায়। তবে ফ্রী ভার্সনে ভিডিওতে ওয়াটারমার্ক থাকে এবং এটি রিমুভ করতে প্রো ভার্সন ইউজ করতে হবে।

ভিভা ভিডিও

ভিভা ভিডিও একটি পাওয়ারফুল মোবাইল ভিডিও এডিটর। মডার্ন ভিডিও এডিটর হওয়ার জন্য যে সকল ফিচার থাকা দরকার তার সবকিছু এখানে আছে। প্রফেশনাল ভিডিও এডিট করার জন্য ভিভা ভিডিও অনেক কার্যকরী একটি অ্যাপ। 

যাহোক ভিভা ভিডিও দিয়ে অন্যান্য ভিডিও প্লাটফর্ম বাদেও টিকটক এবং ভাইন ভিডিও তৈরি করা যায়। টিকটক ভিডিও তৈরি করার জন্য তারা সং এবং মিউজিক লাইব্রেরী প্রোভাইড করে। ভিভা ভিডিও দিয়ে আপনি আপনার পছন্দের ইমেজ দিয়ে সুন্দর সুন্দর ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। এতে ইমেজ কোয়ালিটির উপর কোন প্রভাব পরবে না।

একটি ভিডিও এডিটরের মধ্যে যে সকল ফাংশন থাকা দরকার তার ম্যাক্সিমাম ফিচার ভিভা ভিডিও তে আছে। ভিডিও কাট, কপি, পেস্ট, মারজ, মাল্টি-স্প্লিট, ইফেক্ট, ট্রানজিশন, গ্লিচ ভিডিও ইফেক্ট ইত্যাদি ফিচার ভিভা ভিডিও তে পাওয়া যায়। 

এগুলো বাদে যে কোন ভিডিও এবং ইমেজের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করার ফিচার ইউজ করা যায়। নিজের রেকর্ড করা অডিও বাদেও ভিডিওতে ভয়েস-ওভার অ্যাড করা যায়। এর সাথে সাথে আপনি যেকোনো মিউজিক অ্যাড করতে পারবেন। ভিডিও সেভ করার জন্য আপনি 720p, 1080p এবং 4k ফরম্যাট ইউজ করতে পারবেন। ভিডিও সরাসরি অনলাইনে আপলোড করা ছাড়াও ফোনে সেভ করে রাখতে পারবেন।

তো এই ছিল ৫ টি বেস্ট মোবাইল ভিডিও এডিটর। এদের মধ্যে তেমন পার্থক্য করার কিছু নেই। তবে আপনার ফোনে কোনটি বেশি ভালো কাজ করে বা কোনটির ইন্টারফেস আপনার ভালো লাগে তা অবশ্যই দেখে নিবেন। আশাকরি আজকের পোস্ট আপনাকে সঠিক মোবাইল এডিটর বাছাই করতে সহায়তা করবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *