আলো এক প্রকার শক্তি এবং যার গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার। খুব সহজেই ডিজিটাল বৈদ্যুতিক ত্বরঙ্গকে আলোক ত্বরঙ্গে রূপান্তরিত করা যায় এবং আলোর গতিবেগ বেশি হওয়ার ফলে সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ত্বরঙ্গ আদান-প্রদান করা সম্ভব। অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক প্রকার সরু কাচের তন্ত বিশেষ। যা মানুষের চুলের মতো চিকন, সাধারণত বিশুদ্ধ কাঁচ (সিলিকা) বা প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি করা হয়, যেটি আলো পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
এই অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা লম্বা দূরত্বে অল্প সময়ে আলোক ত্বরঙ্গের মাধ্যমে তথ্য পরিবহন করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবারের আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন- এটি তড়িৎ চুম্বকীয় প্রভাব থেকে মুক্ত। ফলে ত্বরঙ্গ বিকৃতির সম্ভাবনা থাকে না, ফলো সিগন্যালে noise কম হয়। বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে এই অপটিক্যাল ফাইবার বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার
কপার তারের মাধ্যমে যেকোন ডাটা এক স্থান হতে অন্য স্থানে পৌছানোর জন্য নির্ভর করে বৈদ্যুতিক ত্বরঙ্গের উপর। যখন এর মাধ্যমে কোন সিগন্যাল পাঠানো হয় তখন পারস্পরিক পারিবেশের ওপর নির্ভর করে ওই সিগন্যালগুলো noise এ Affected হয়। এছাড়া কোন মেটাল বা কপার এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল পাঠানোর কাজে ব্যবহার করলে তা অপটিক্যাল ফাইবারের তুলনায় অনেক কম সময় এ নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য কপার তারের এক স্থানে Electrical সিগন্যালকে Input হিসেবে দিলে অপর প্রান্তের output সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না।
এছাড়াও কপার বা অন্য কোন মেটাল এর মাধ্যমে ১০০% ডিজিটাল সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব হয় না। এছাড়াও কপার তারের তুলরায় অপটিক্যাল ফাইবারের দাম কম এবং তুলনা মূলক বেশি দিন কার্যক্ষতা থাকার কারণে দিন দিন অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো সিগন্যালকে সহজেই ডিজিটাল সিগন্যালে পরিবর্তন করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবারের বিভিন্ন ব্যবহার ক্ষেত্র হলো:
- টেলিযোগাযোগ এটি অধিক ব্যবহার হচ্ছে।
- ইন্টারনেট কানেকশন ও দ্রুুত ডাটা ট্রন্সমিশন কাজে।
- মোবাইল নেটওয়ার্ককিং এ ব্যবহার করা হচ্ছে।
- ডিশ বা স্যাটেলাইট টিভির কানেকশন বিপণন এর ক্ষেত্রে।
- দূরবর্তী সাথে কোন noise ছাড়া ডিজিটাল সিগন্যাল প্রেরন এর ক্ষেত্রে।
অপটিক্যাল ফাইবারে বাংলাদেশ
অন্যান্য দেশের মতো তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশনের জন্য বাংলাদেশেও অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকশনের এটির ব্যবহার সব থেকে বেশি হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, টেলিযোগাযোগ, নেটওয়ার্কিং, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ইত্যাদিতে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও দেশের ৬৪টি জেলা সহ দেশের সকল ইউনিয়নে (২৩শত) পরিষদেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য অপটিক্যাল ফাইবারের আওয়াতায় আনা হচ্ছে। অপটিক্যাল ফাইবারের প্রত্যান্ত অঞ্চলে উচ্চগতির Internet কানেক্টিভিটি সম্প্রসারিত হচ্ছে
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল দূর-দূরান্তরে ডিশ লাইন সংযোগ নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং হাই কোয়ালিটি ভিডিও এর জন্যও ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ইন্টারনেট এতো ফাস্ট হওয়ার পিছনে অপটিক্যাল ফাইবারের ভূমিকা রয়েছে, এই ফাইবারের জন্য দেশের যেকোন স্থানে কম সময়ে ডাটা আদান-প্রদান করা যাচ্ছে এবং এটি শেয়ারিং কানেকশনের জন্য ব্যবহৃত হয়,কারণ এর ট্রান্সমিট স্পীড প্রচুর। এটি যে শুধু মাত্র Communication এ ব্যবহৃত হচ্ছে তা নয়, এটি বহু বছর থেকে মেডিকেল গ্যাজেটেও ব্যবহার হয়ে আসছে এই অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল। এই ক্যাবলের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোন স্থানে সহজেই তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
অপটিক্যাল ফাইবার দাম
কোম্পনী ও কোয়ালিটি এবং প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের দামের পার্থক্য আছে। আমাদের দেশে সচারচর যে সকল অপটিক্যাল ফাইবার পাওয়া যায় এবং বেশি ব্যবহার সেগুলোর দাম ও কোয়ালিটি নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
- ২ কোরের অপটিক্যল ফাইবার। এটি কয়েকটি ব্রান্ডে পাওয়া যায়। ব্রান্ড ভেদে এর দাম প্রতি মিটার ১০ টাকা থেকে ১৩ টাকার মধ্যে।
- ৪ কোরের অপটিক্যল ফাইবারের মূল্য ব্রান্ড ভেদে প্রতি মিটার ১২ থেকে ১৬ টাকা। এটির মূল্য ২ কোরের অপটিক্যল ফাইবারের কাছাকাছি হওয়ায় ২ কোরের তুলণায় এটি বেশি ব্যবহার হয়। ২ ও ৪ কোরের অপটিক্যাল ফাইবার গ্রাহক পর্যায়ে বেশি ব্যবহার হয়।
- ৬ কোর অপটিক্যাল ফাইবারের মূল্য ব্রান্ড ভেদে ১৮ থেকে ১১০ টাকা প্রতি মিটার
- ১২ কোর অপটিক্যাল ফাইবারের মূল্য ব্রান্ড ভেদে ২৯ থেকে ৫০ টাকা প্রতি মিটার
- ২৪ কোর অপটিক্যাল ফাইবারের মূল্য ব্রান্ড ভেদে ১২০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি মিটার
- ৪৮ কোর অপটিক্যাল ফাইবারের মূল্য ব্রান্ড ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা প্রতি মিটার
১২ কোর থেকে বেশি কোরের ক্যাবল গুলো কমার্শিয়াল ডাটাট্রন্সমিশনের কজে ব্যবহার হয়। অধিক পরিমানে ডাটা ট্রন্সফারের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। তাই এগুলো খুচরা বাজারে সহজেই পাওয়া যায় না।
অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা ও অসুবিধা:
প্রতিটা পন্যের সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। তেমনি অপটিক্যাল ফাইবারেরও সুবিধা অসুবিধা দুটাই রয়েছে। তবে এর সঠিক ব্যবহার অসুবিধার থেকে আমাদের বেশি সুবিধা দেয়।
অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা
- আলোর গতিতে তথ্য ট্রান্সফার হয় অর্ধাৎ অনেক দ্রুতগতিতে ডাটা আদান-প্রদান হয়।
- সরু ও মানুষের চুলের ন্যায় আকৃতির এবং ওজন খুবই কম ও হালকা।
- বৈদ্যুতিক চুম্বুক বা তরঙ্গের প্রভাব থেকে মুক্ত।
- ট্রান্সমিশন খরচ কম হয়।
- পারিপার্শ্বিক অবস্থায় তথ্য স্থানান্তররে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না ফলে নিরাপত্তা রক্ষা সম্পন্ন।
- সঠিক ডাটা ট্রান্সমিশনের একুরেসি বেশি।
- তুলনা মূলক দাম কম
অপটিক্যাল ফাইবারের অসুবিধা
- প্রয়োজনে একে ইচ্ছা মতো বাকানো যায় না, যার ফলে Install করা বেশ কঠিন।
- এটি সহজে টুকরো বা স্লাইজ করা সম্ভব হয় না।
- দুইটি ক্যাবলের জোড়া দেয়া কষ্টকর।
- এটি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দক্ষ ও কারিগারি সম্পন্ন জনবলের প্রয়োজন হয়।
- অপটিক্যাল ক্যাবল রক্ষনাবেক্ষন এর খরচ বেশি।
- অপটিক্যাল ফাইবার স্লাইসিং এর জন্য প্রয়োজন পড়ে কেমিক্যাল এপোক্সি কিংবা Electric ফিউশন।
- এটি U আকারে বাকানো যায় না, সেজন্য যেখানে বেশি বাকনোর প্রয়োজন না সেখানে ব্যবহার করা হয়।
রাউটার কি? রাউটার কিভাবে কাজ করে?
আশা করি বুঝতে পেরেছেন অপটিক্যাল ফাইবার কি, এটি বাংলাদেশে কিভাবে কাজ করছে ও কোন কোন কাজে এটি বেশি ব্যবহার হচ্ছে এবং এর দাম কেমন বাংলাদেশে। এছাড়াও অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কেে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও এই আর্টিকেল নিয়ে যদি আরো কোন প্রশ্ন এবং সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।