ফ্রিল্যান্সিং গ্রাফিক্স ডিজাইন
গ্রাফিক্স ডিজাইন

ফ্রিল্যান্সিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন

গ্রাফিক্স ডিজাইন

গ্রাফিক ডিজাইন হচ্ছে বর্তমানকালের সবচেয়ে বৃহৎ ও বিস্তৃত সেক্টর, তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের মত সেক্টরে কাজ শিখতে পারলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অপার সম্ভাবনার হাতছানি।

আমাদের আধুনিক জীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গ্রাফিক্স ডিজাইনে কারুকার্য। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে আপনি কি করবেন, তা না বলে কি করতে পারবেন না তা বলাটাই শ্রেয়।

আমাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে থাকা নানা ধরনের গেমস থেকে শুরু করে আবার বিনোদনের জন্য যেসব কার্টুন ও অ্যানিমেশন সিনেমা দেখি তার সবগুলোই কিন্তু গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমেই তৈরি করা হয়েছে, এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা শিশুদের বিনোদনের পাশাপাশি মানসিক বৃদ্ধির কাজেও অবদান রাখছে।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে ইন্টারনেটের জগতে থাকা লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট ও অ্যাপস থেকে শুরু করে আমাদের চারপাশের ব্যবহার্য অসংখ্য জিনিস, পোশাক, গাড়ি, বাড়ি, ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ ইত্যাদি  ডিজাইনের মাধ্যমে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজটি করে যাচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা।

তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের মত বিস্তীর্ণ সেক্টরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অপার সম্ভাবনা। এখানে আপনি ওয়েবসাইট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন, বিজ্ঞাপন ডিজাইন, ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার ডিজাইন, ভেক্টর আর্ট, ইলাস্ট্রেটর, এডিটিং, ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন সহ আরো অসংখ্য কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারেন। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন শিখবেন?

তাছাড়া বর্তমান ডিজিটাল যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইনের টুকটাক কিছু কাজ জানা সবার জন্যই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আমাদের  প্রেজেন্টেশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দেয়ার জন্য সাধারণ কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইন করার প্রয়োজন পড়ে থাকে, তাই অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকতে চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যাসিক কিছু জ্ঞান থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

এছাড়া একজন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে চাকরির ক্ষেত্র আপনি অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। যা আপনার সিভি এর শোভা-বর্ধন করবে এবং আপনার কাঙ্খিত চাকরি পাওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

আপনি যদি ভবিষ্যত কর্মজীবনের জন্য এমন একটি সেক্টর খুঁজে থাকেন যেখানে প্রচুর কাজের চাহিদা থাকার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে। তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম  সেরা একটি অপশন। 

দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে আপনি বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির যেমন, ওয়েব ডিজাইনিং কোম্পানি, বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান, মার্কেটিং কোম্পানি  সহ গেমস ও অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, সফটওয়্যার কোম্পানি এবং বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ লাভ করবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম যেমন- freelancer.com, fiverr, Upwork ইত্যাদিতে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার সুযোগ তো থাকছেই।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনার দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আপনিও হতে পারেন একজন বিশ্বমানের সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। 

ফ্রিল্যান্সিং গ্রাফিক্স ডিজাইন

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন একটি পেশা যার মাধ্যমে অনলাইনে অন্যের কাজ করে দেয়ার বিনিময়ে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। গতানুগতিক চাকরি অন্যান্য পেশার মতো বিধিনিষেধ না থাকায় ফ্রিল্যান্সিংকে মুক্ত পেশা বলা হয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইনের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে মানুষ যতটা না গতানুগতিক চাকরিতে যুক্ত হচ্ছে তার চেয়েও বেশি ফ্রিলান্সিং পেশায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ফ্রিল্যান্সার মাসুমের সফলতার গল্প

যে কোন পেশার ক্ষেত্রে চাকরি হলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল পেশা তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাকরি পেতে গেলে দক্ষতার পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, যা অর্জন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠেনা, তাই বিকল্প হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং পেশা বর্তমানে  ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।

তাছাড়া আগ্রহ ও একাগ্রতা থাকলে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় প্রতিষ্ঠিত হতে খুব একটা বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি নিজের ইচ্ছামত স্বাধীন ভাবে ঘরে বসেই কাজ করার সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়াও আর্কষণীয় পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হয় বলে ফ্রিল্যান্সিং পেশা হিসেবে অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার পৃথিবীতে পরিণত করেছে গ্লোবাল ভিলেজে। এর ফলে বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়টি মারাত্মকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আজকের দিনের হাজার হাজার তরুণ স্বপ্ন দেখছে নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কি কি লাগে?

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার তিনটি মূলমন্ত্র হচ্ছে (১) কম্পিউটার বা ল্যাপটপ (২) সফটওয়্যার  (৩) ইন্টারনেট এবং প্রচন্ড ধৈর্য্য,ইচ্ছাশক্তি।

প্রথমত বর্তমান আধুনিক যুগে সত্যিকার অর্থেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে গেলে আপনার অবশ্যই একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর প্রয়োজন হবে। তাই বলে শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকলেই চলবে না পাশাপাশি প্রয়োজন হবে বর্তমান সময়ের বিশ্বখ্যাত আধুনিক কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যারের। কারণ এ সকল সফটওয়্যারের উপর ভিত্তি করেই আপনাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে দক্ষ হতে হবে।

আজকের আধুনিক যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য শুধুমাত্র হাতের আঁকার ওপর নির্ভর করে থাকলেই চলে না। বর্তমান সময়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার গুলো আমাদের চিত্রগুলো কে আকর্ষণীয় রঙিন ও প্রাণবন্ত করে তোলে। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে সাফল্য অর্জনের জন্য তাই অবশ্যই আমাদের সফটওয়্যারগুলোর সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন, কারণ বর্তমান যুগ ডিজিটাল ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই আধুনিকতার ব্যবহার না করলে আমরা অন্যদের থেকে শতগুণে পিছিয়ে পড়বো। 

বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত কতগুলো গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যারের মধ্যে অন্যতম হলো; Adobe Photosho, Adobe Illustrator, Adobe Indesign, Canva, Designer, Microsoft PowerPoint, AutoCad, Blender ইত্যাদি। 

বলতে গেলে বর্তমান আধুনিক যুগের গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রাণ হলো এই সফটওয়্যার গুলো। এ

সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করেই বর্তমানে পৃথিবীর অসাধারণ সব গ্রাফিক্স ডিজাইন তৈরি করা হচ্ছে। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এ সকল সফটওয়্যার ব্যবহার ও পরিচালনায় নিজেকে দক্ষ হিসেবে তৈরি করে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।

ফাইভার বনাম আপওয়ার্ক

উল্লেখিত গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যারগুলোর প্রতিটিরই কোন না কোন বিশেষত্ব রয়েছে এবং এগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে কোন সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করবেন তা নির্ধারণ করে সফটওয়্যারগুলোর সমন্বয়ে নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে একজন সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনি সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কেমন মানের কম্পিউটার প্রয়োজন?

সাধারণভাবে বলতে গেলে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে মোটামুটি মানের একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়। তবে অ্যাডভান্স লেভেলে গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য অবশ্যই অত্যন্ত ভালো মানের কম্পিউটার এর প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয়।

তবে প্রথম অবস্থায় গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য মোটামুটি মানের একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হলেই কাজ চালিয়ে নেয়া যায়। এটা কিন্তু শুধুমাত্র শেখার জন্য আপনার প্রফেশনাল কাজের জন্য অবশ্যই একটি উচ্চ মানের কম্পিউটার এর প্রয়োজন হবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য ভালো মানের কম্পিউটার ব্যবহার করার পেছনের কারণটি হলো এর সফটওয়্যারের ব্যবহার। গ্রাফিক্স ডিজাইন এ ব্যবহৃত সফটওয়্যার গুলো অত্যন্ত উচ্চ মানের হয়ে থাকে। এ কারণেই সফটওয়্যারগুলোকে কম্পিউটারে সাবলীলভাবে পরিচালনা করার জন্য ভালো মানের হার্ডওয়্যার এর প্রয়োজন হয়।

প্রাথমিক অবস্থায় গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দামের কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ল্যাপটপ কিনতে হতে পারে। তবে কাজের দিক বিবেচনায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের ক্ষেত্রে ল্যাপটপ না কিনে ডেক্সটপ কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

তাই মোটামুটি বাজেট থাকলে অধিকাংশ গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা সাধারণত ডেস্কটপ কেনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডেক্সটপ কেনার ক্ষেত্রে একটু সচেতন ও দূরদর্শী হলে পরবর্তীতে অল্প কিছু টাকা ইনভেস্ট করে এটিকে আপগ্রেড করে নিতে পারবেন। যার ফলে, আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা ও পরবর্তীতে প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করতে পারা উভয় ধরণের সুযোগের দরজাই খোলা থাকলো। আজকের মতো এখানেই বিদায় পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করবো গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্য কোন বিষয় নিয়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

Leave a Reply