গুগল একটি বিশ্বস্ত এবং স্বনামধন্য সার্চ ইঞ্জিন। যেখানে সার্চ করলে পাওয়া যায়না এমন তথ্য খুব কম আছে। ১৯৯৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কের এক গ্যারেজে গুগল প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে ইয়াহু সহ সকল সার্চ ইঞ্জিনকে পেছনে ফেলে গুগল বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বেশি ভিজিটেড সার্চ ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর নতুন নতুন আপডেটের মাধ্যমে এরা তাদের সার্ভিস এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স আরও উন্নত করছে। ইন্টারনেট ইউজ করে অথচ গুগলকে চেনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। গুগল সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানলেও এর কিছু অজানা বিষয় আছে যা আমরা সচরাচর জানিনা। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা গুগল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জানবো। যা জানার পর আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন।
গুগলের অজানা তথ্য
১. গুগল যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এর ডাটা স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ছিল মাত্র ৪০ জিবি। যেখানে ১০ টি ৪ জিবি স্পেসের হার্ডডিস্ক ইউজ করে টোটাল ৪০ জিবির সেটআপ তৈরি করা হয়েছিল। এই স্পেস ইউজ করেই শুরুর দিকে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ইনডেক্স ডাটা ষ্টোর করা হত।
২. গুগলের নাম দেওয়া হয়েছিল “BackRub” যা ১৯৯৭ সালে পরিবর্তন করে করা হয়েছিল গুগল। ব্যাকরাব নাম ইউজ করার পেছনে গুগলের প্রতিষ্ঠাতাদের উদ্দেশ্য ছিল অনেকটা ব্যাকলিংক টেকনোলজির মত। অর্থাৎ একটি ওয়েব পেজের সাথে আরেকটি ওয়েব পেজ লিংক করে ডাটার অ্যাভেইলাবিলিটি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া যেভাবে কাজ করে ঠিক সে রকম।
৩. ১৯৯৮ সালে গুগল তাদের প্রথম হোমপেজ রিলিজ করে। দেখতে সাদামাঠা ডিজাইনের হোমপেজ হওয়ার কারণে ভিজিটর এই পেজ পছন্দ করতে শুরু করে। এই পেজে কোন উদ্ভট এবং অপ্রয়োজনীয় ডিজাইন এবং কালার ইউজ না করার কারণে এটি অতি দ্রুত লোড হয়।
৪. গুগল বিশ্বের সবথেকে বেশি ভিজিট হওয়া ওয়েবসাইট। বিশ্বে বর্তমানে যত ইন্টারনেট ইউজার আছে তাদের মধ্যে প্রায় সবাই একবার হলেও গুগল ইউজ করেছে। একটি ব্লগের তথ্যমতে গুগলে প্রতিদিন ৫.৬ বিলিয়ন সার্চ পরে। এর থেকেই বোঝা যায় গুগল কত পপুলার একটি ওয়েবসাইট।
৫. গুগল তাদের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালে একটি বাইনারি কোড টুইট করে। যার ইংরেজি প্রকাশ ছিল “I’m Feeling Lucky”।
৬. ২০০৪ সালের এপ্রিলের প্রথম তারিখে গুগল জিমেইল নামক একটি মেইল সার্ভিসের ঘোষণা দেয়। অনেকেই ভেবেছিলো এর দ্বারা গুগল এপ্রিল ফুল বানাচ্ছে। তাদের এই ধারণা ভেঙে দিয়ে গুগল তাদের এই মেইল সার্ভিস কন্টিনিউ করে।
৭. গুগলের ইংরেজি বানান ছিল googol যার একটি বিশেষ নিউমেরিক মান হল ১ এর পর আরও ১০০ টি শূন্য। এর দ্বারা বোঝানো হয় যে গুগল অসীম তথ্যভান্ডারের সমাহার।
৮. গুগল তাদের প্রথম ডুডল প্রকাশ করে ১৯৯৮ সালে। সে সময় বার্নিং ম্যান নামক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন ডুডলের প্রচলন করেন। এর মাধ্যমে তারা বুঝিয়েছিলেন যে তারা বর্তমানে ভ্যাকেশনে আছে।
৯. গুগলের হেডকোয়ার্টার অনেক বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থিত। যেখানে হেডকোয়ার্টারের লনের ভেতরের ঘাস কাঁটার জন্য তারা মেশিন ইউজ না করে প্রতিবছর ২০০টি ছাগল ইউজ করে। এতে তাদের লনের ঘাস প্রাকৃতিকভাবে ছাঁটাই হয়ে যায়। এই ছাগল তারা প্রতিবছর ক্যালিফোর্নিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করে থাকে।
১০. গুগলের হেডকোয়ার্টারের নাম গুগলপ্লেক্স যা ২ মিলিয়ন স্কয়ার ফিট জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ এলাকায় সগৌরবে দাড়িয়ে আছে।
১১. গুগল একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা তাদের অফিসে পোষা প্রাণী সহ ঢুকতে দেয়। তবে পরিবেশ নষ্ট না করার শর্তে কর্মীরা তাদের পোষা প্রাণী নিয়ে আসতে পারবে।
১২. গুগল তাদের কর্মীদের অফিস টাইমে ফ্রী খাবার পরিবেশন করে। এছাড়া প্রতিটি কর্মী মনোরম পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পায়।
১৩. ২০০১ সালে গুগল তাদের ইমেজ সার্চ সার্ভিস চালু করে। যেখানে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ডে জেনিফার লোপেজের সবুজ পোশাক পরা একটি ছবি সার্চ রেজাল্টে র্যাঙ্ক করে।
১৪. গুগল কে গুগল করা অর্থে ভার্ব হিসেবে অভিধানে যুক্ত করা হয় ২০০৬ সালে।
১৫. Foo.bar নামক একটি হায়ারিং টুল ইউজ করে গুগল নতুন রিক্রুট করে থাকে। এই টুল ইউজ করে তারা ক্যান্ডিডেটের কোডিং দক্ষতা যাচাই করে।
১৬. গুগল তাদের কর্মীদের বিভিন্ন সাইড প্রোজেক্ট করতে উৎসাহিত করে। যার ফলে অনেক নতুন নতুন এবং ইনোভেটিভ আবিষ্কার তাদের দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এরকম সাইড প্রোজেক্টের কারণে আমরা অ্যাডসেন্স, গুগল নিউজ, অর্কুট, জিমেইল সহ অন্যান্য গুগল সার্ভিস ইউজ করতে পেরেছি।
১৭. বর্তমানে বিশ্বের ৫০ টি দেশে গুগলের ৭০ টির বেশি অফিস রয়েছে। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি ভাড়া করা গ্যারেজ থেকে।
১৮. আমরা গুগল ক্রোমের ডিনো রান (Dino Run) নামক গেমের কথা জানি। ইন্টারনেট অফ থাকলে এই গেম খেলা যায়। গেমটিতে যে ডাইনোসর লাফাতে দেখা যায় তা একটি টিরেক্স ডাইনোসর। এই ডাইনোসরটির একটি কংকাল গুগল তাদের হেডকোয়ার্টারের সামনে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য স্থাপন করেছে।
১৯. গুগল ভিজিটরকে মজা দেওয়ার জন্য ইস্টার এগ (Easter Egg) নামক একটি প্রোজেক্ট চালু রেখেছে। যেখানে গুগল ইউজ করে ফান করার অনেক পদ্ধতি আছে। যেমন আপনি যদি গুগলে “askew” লিখে সার্চ করেন তাহলে দেখবেন রেজাল্ট পেজ একদিকে বেঁকে গেছে।
২০. গুগল প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর তারা ইয়াহুর কাছে বিক্রি হতে চেয়েছি। কিন্তু ইয়াহু সে অফার নাকচ করে দেয়। তারপর ২০০২ সালে গুগলের পপুলারিটি দেখে ইয়াহু তাদের ৩ বিলিয়ন দাম অফার করে। তবে গুগল সে মূল্য নাকচ করে দেয়।
২১. গুগল ২০০৫ সালে ৫০ মিলিয়ন খরচ করে এন্ড্রয়েড কিনে নেয়। যা তাদের ব্যবসায়িক সাফল্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে এন্ড্রয়েড বিশ্বের মোট মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম মার্কেটের ৭১.৯৩ শতাংশ দখল করে নিয়েছে।
২২. ২০০৬ সালে ইন্টারনেট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউব ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে গুগল কিনে নেয়। এন্ড্রয়েডের পর এটি তাদের আরেকটি বড় ও সফল সিদ্ধান্ত।
২৩. গুগল তার যাত্রা একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে শুরু করলেও এখন তাদের অনেকগুলো আলাদা প্রকল্প আছে। এদের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ক্লাউড গেমিং, টেক গেজেট, আইওটি (IoT) ইত্যাদি অন্যতম।
২৪. গুগল মোট জন্মদিন হলো ৬ টি আলাদা আলাদা তারিখে। তবে তারা শুধুমাত্র ২৭ সেপ্টেম্বরকে গুগলের জন্মদিন পালনের সিধান্ত নিয়েছে।
২৫. গুগল একমাত্র কোম্পানি যারা নবায়নযোগ্য জ্বালানী ইউজ করে তাদের সার্ভিস পরিচালনা করে। তারা ২০১৮ সালে এই মর্যাদা প্রাপ্ত হয়।
২৬. গুগল বিশ্বের ১০০ টির মত ভাষা সাপোর্ট করে। অর্থাৎ আপনি ১০০ টি ভাষা ইউজ করে গুগলে তথ্য খুঁজতে পারবেন।
২৭. বর্তমানে গুগল সার্চ হওয়া ১৫ শতাংশ ডাটাই একদম নতুন। এসকল ডাটা আগে কখনো সার্চ করা হয়নি।
২৮. ২০০৯ সালের দিকে গুগলে কাজ করা একজন ইঞ্জিনিয়ার ভুল করে গুগল ব্লকড রেজিস্ট্রিতে ফরোয়ার্ড স্ল্যাশ (‘/’) বসিয়ে দিয়েছিল। এতে পুরো ইন্টারনেটে বিশাল বড় ধসের সৃষ্টি হয়েছিল। যেহেতু প্রতিটি ওয়েবসাইট ফরোয়ার্ড স্ল্যাশ (‘/’) ইউজ করে সেহেতু এই ভুলের কারণে সকল ওয়েবসাইট ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে কোন ওয়েবসাইট তখন ভিজিট করা যাচ্ছিল না।
২৯. বলা হয়ে থাকে গুগলের প্রতিষ্ঠাতারা এইচটিএমএল তেমন ভালো না জানার কারণে গুগলের হোমপেজ এত সাদামাঠা।
৩০. গুগল মোট কতগুলো সার্ভার ইউজ করে তা কখনো পাবলিক প্লেসে বলে না। তবে ধারণা করা হয় তারা মোট ১ মিলিয়নের মত সার্ভার ইউজ করে।
পুরো পোস্টে মোট ৩০ টি গুগলের অজানা বিষয় রয়েছে। এদের মধ্যে অনেক বিষয় আপনার জানা থাকতে পারে আবার অনেক বিষয় অজানা থাকতে পারে। যদি গুগল সম্পর্কে আপনাদের অজানা নতুন কোন তথ্য দিতে পারি তাহলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক। আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।