সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক অনেক জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষ ফেসবুক ইউজ করে। এই বিশাল ইউজার তৈরি হওয়ার কারণ ফেসবুক সবসময় আপ-টু-ডেট থাকে। ইউজারের রুচি এবং পছন্দের কথা মাথায় রেখে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফিচার রিলিজ করে। এছাড়া তারা ভিজিটরের সুবিধার জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় অনেক সেটিংস তাদের প্লাটফর্মে অ্যাড করছে। এসব ফিচার বেশীরভাগ সময় আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। অথবা আমরা এগুলো ইউজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। যাহোক আজকে আমরা এমনই ফেসবুকের অজানা কিছু সেটিং নিয়ে আলোচনা করবো। যেগুলো ইউজ করলে আমাদের ফেসবুক ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পুরোপুরি বদলে যাবে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে ফেসবুকের সেটিং গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
ফেসবুকের অজানা কিছু সেটিংস
স্ট্যাটাস/পোস্ট শিডিউল
এটি অনেক প্রয়োজনীয় একটি সেটিং। বিশেষ করে যাদের নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর পোস্ট করতে হয় তাদের জন্য এই ফিচার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পোস্ট শিডিউল সেটিং ইউজ করে আপনি আপনার পেজে টাইম সেট করে পোস্ট/স্ট্যাটাস ষ্টোর করে রাখতে পারবেন। যেগুলো আপনার দেওয়া সময়মতো একে একে পোস্ট হতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে আপনি সবসময় অ্যাক্টিভ থাকতে পারবেন এবং আপনার পেজে এনগেজমেন্ট বাড়তে থাকবে।
ফেসবুক ডাটা ডাউনলোড
আমরা মেমোরি কার্ড ইউজ করি অডিও, ভিডিও অথবা ফটো সংগ্রহ করে রাখতে। নতুন কোন ছবি তুললে তা জমা হয় মেমরিতে যা যে কোন সময় আমরা দেখতে পাই। অন্য কাউকে সেই ছবি পাঠাতে চাইলে মেমরি থেকে তা সহজেই পাঠাতে পারি। ফেসবুক ঠিক তেমনি একটি জায়গা। এখানে আমরা আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত শেয়ার করি। আমাদের পছন্দ অপছন্দ সকল কিছুই ফেসবুকে আপডেট করি। আমরা চাইলে আমাদের এসকল সৃতি সহজেই ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে মেমরি বা হার্ডডিস্কে সংগ্রহ করে রাখতে পারবো। ফেসবুক ডাটা ডাউনলোড করার সেটিং থেকে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টের সকল ডাটা একবারে জিপ আকারে ডাউনলোড করতে পারবেন। অথবা আপনি চাইলে নির্দিষ্ট কিছু ডাটা আলাদা আলাদাভাবে সিলেক্ট করে ডাউনলোড করতে পারবেন।
কন্ট্রোল অ্যাড প্রিফারেন্সেস
ফেসবুক আয় করে তাদের ওয়েবসাইটে অ্যাড দেখিয়ে। ঠিক যেমন গুগল বা ইউটিউব তাদের ওয়েবসাইটে অ্যাড দেখিয়ে ইনকাম করে। যেহেতু অ্যাড দেখানো তাদের কাছে অনেক প্রয়োজনীয় সেহেতু তারা আপনার ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি উপর ডিপেন্ড করে অ্যাড শো করে। তবে প্রায় সময় এমন অ্যাড দেখা খুবই বিরক্তিকর। এরকম বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য আপনি এই অপশন ইউজ করতে পারেন। এখানে আপনি কোন কোন অ্যাড দেখবেন তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। এছাড়া আরও কিছু ইউসফুল সেটিংস আছে যা আপনার ফেসবুক ইউজ করা আরও আনন্দের করে তুলবে।
কাস্টমাইজড টাইমলাইন
ফেসবুকে যখন কোন গ্রুপে অ্যাড হই বা কোন পেজ লাইক করি অথবা কোন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করি তখন সেগুলোর আপডেট টাইমলাইনে শো করে। এদের মধ্যে অনেকের পোস্ট বা স্ট্যাটাস আমরা দেখতে চাইনা। অন্যদিকে কোন নির্দিষ্ট বিষয় অ্যাভয়েড করতে চাইলে কাস্টমাইজড টাইমলাইন সেটিং ইউজ করতে হবে। এখানে আপনি চাইলে কোন নির্দিষ্ট প্রোফাইল, পেজ বা গ্রুপ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাইমলাইন থেকে হাইড করতে পারবেন। এছাড়া আপনার পছন্দের সকল বিষয় যাতে টাইমলাইনে শো করে তা সেট করতে পারবেন। মোটকথা এই সেটিং বর্তমান সময়ের জন্য একদম উপযুক্ত একটি অপশন।
ফেসবুক টাইম ইউজড
এই সেটিং দিয়ে আপনি কতক্ষণ সময় ধরে ফেসবুক ইউজ করছেন তা জানতে পারবেন। তবে এটি দেখার জন্য আপনাকে ফেসবুক মোবাইল অ্যাপ ইউজ করতে হবে। মোবাইল অ্যাপে মেনু থেকে Settings & Privacy তে গেলে “Your Time On Facebook” নামক একটি অপশন পাবেন। যেখানে গেলেই ফেসবুকে আপনি কতো সময় অ্যাক্টিভ আছেন তা দেখাবে। এখানে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রিমাইন্ডার সেট করে দিতে পারবেন। যা আপনাকে নির্দিষ্ট সময় পর অ্যালার্ট করবে।
লেগেসি কন্টাক্ট
ধরুন আপনি হটাৎ করে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। তাহলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ইউজ করবে কে? যেহেতু আপনি জানেন না যে আপনি মারা যাবেন সেহেতু আপনি অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড কাউকে বলেননি। তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টের কি হবে? এই সমস্যা সমাধানের জন্য ফেসবুক লেগেসি কন্টাক্ট নামে একটি অপশন চালু করেছে। এখানে আপনি যাকে আপনার লেগেসি কন্টাক্ট অ্যাড করবেন সে আপনার অবর্তমানে পোস্ট করতে পারবে, প্রোফাইল ফটো/কভার ফটো চেঞ্জ করতে পারবে, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া সে আপনার ফেসবুক ডাটা ডাউনলোড করতে পারবে। তবে আপনি যদি চান যে আপনি মারা যাওয়ার পর আপনার অ্যাকাউন্ট ডিলিট হয়ে যাক তাহলে লেগেসি কন্টাক্ট অ্যাড না করলেও চলবে। সে ক্ষেত্রে আপনি অ্যাকাউন্ট পার্মানেন্ট ডিলিট রিকোয়েস্ট অপশন ইউজ করতে পারনে।
প্রাইভেসি কন্ট্রোল
এইতো কিছুদিন আগে পর্যন্ত ফেসবুকে নিজের প্রাইভেসি হাইড করার তেমন কোন অপশন ছিল না। যেমন আপনার বার্থডে, টাইমলাইন, ফটোস ইত্যাদি হাইড করার কোন অপশন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ফেসবুকে আপনি আপনার প্রোফাইল ফটো বাদে সবকিছু হাইড করতে পারবেন। আপনি পোস্টের অডিয়েন্স হিসেবে কাস্টম ফ্রেন্ডলিস্ট অ্যাড করতে পারবেন। এছাড়া প্রোফাইল লক করে নিজের প্রোফাইলকে আলাদা সিকিউরিটি দিতে পারবেন।
মার্কেটপ্লেস
এই অপশন ফেসবুক চালু করার বেশীদিন হয়নি। তবে ইতিমধ্যেই ফেসবুক মার্কেটপ্লেস অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এফ কমার্স বিজনেসের জন্য ফেসবুক মার্কেটপ্লেস অনেক হেল্পফুল। অথবা আপনি আপনার ইচ্ছা মতো যেকোনো পণ্য এই মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন।
নির্দিষ্ট চ্যাট লিস্ট তৈরি
সচরাচর আমাদের চ্যাট লিস্টে সকল অনলাইন প্রোফাইল শো করে। আপনি অ্যাক্টিভ ফ্রেন্ড যদি অনেক বেশি থাকে তাহলে নির্দিষ্ট কাউকে খুঁজে বের করতে সার্চ করতে হয় অথবা ম্যানুয়ালি খুঁজতে হয়। তবে আপনি কিন্তু চ্যাটলিস্টের সবার সাথেই কথা বলেন না। আপনার নির্দিষ্ট কিছু ফ্রেন্ড আছে যাদের সাথে নিয়মিত বা নিয়মিত বিরতিতে চ্যাট করে থাকেন। আপনি চাইলে আপনার এমন বন্ধুদের নিয়ে একি স্পেশাল চ্যাটলিস্ট তৈরি করতে পারবেন। যেখানে শুধু ওই লিস্টের সকল মেম্বারদের অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস দেখাবে। এই লিস্ট তৈরি করতে আপনাকে প্রোফাইল থেকে ফ্রেন্ডলিস্টে যেতে হবে এবং যে যে প্রোফাইল নিয়ে লিস্ট তৈরি করতে চান তাদের লিস্টে অ্যাড করতে হবে। লিস্ট তৈরি করার জন্য আপনার ফেসবুকের নিউজফিডে বাম পাশে নিচে “Friend Lists” নামক একটি ট্যাব পাবেন। সেখানে ক্লিক করে ভিতরে প্রবেশ করলেই সেটিং গুলো দেখতে পাবেন।
পাবলিক পোস্ট এম্বেড
অনেক সময় আমাদের সরাসরি ফেসবুক থেকে কোন পোস্ট কপি করতে হয়। এতে উক্ত কপি করা পোস্টের ফরম্যাট চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যা দূর করার জন্য পাবলিক পোস্ট এম্বেড করার অপশন ইউজ করা হয়। এতে করে আপনি নিজের অথবা অন্য কোন ওয়েবসাইটে এম্বেড কোড ইউজ করে যেকোনো ফেসবুক পোস্ট পাবলিশ করতে পারবেন।
অনলাইনে পোশাক ব্যবসা – ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা
ফেসবুকের সেটিংস বর্তমানে অনেক ফ্লেক্সিবল। এখানে নিজের ইচ্ছামতো কাস্টমাইজেশন করা যায়। অপ্রয়োজনীয় পোস্ট নিজের নিউজফিড থেকে দূরে রাখা যায়। নিজের ইচ্ছেমত অ্যাড দেখার সুযোগ থাকে যা বিরক্তিকর অ্যাড থেকে নিউজফিড মুক্ত রাখে। এছাড়া ফেসবুকে পোস্ট করা বা সেন্ড এবং রিসিভ করা যত মেসেজ আছে সেগুলো সহ সকল ডাটা ডাউনলোড করা যায়। আপনি চাইলে ফেসবুক ডার্ক মোড ইউজ করতে পারবেন এবং ফন্ট সাইজ অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারবেন। সব মিলিয়ে এসব সেটিং অ্যাপ্লাই করে পুরো ফেসবুক ইউজ করার এক্সপেরিয়েন্স আরও সুন্দর করা সম্ভব। আশাকরি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং কিছু অজানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য।