বিজনেস কার্ড ডিজাইন
বিজনেস কার্ড বা ভিজিটিং কার্ড হল এমন একটি কার্ড যেখানে কোনো প্রফেশনাল ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ও যোগাযোগের তথ্য উল্লেখ করা থাকে। তাই বিজনেস কার্ড মূলত প্রফেশনাল ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধারক ও বাহক রুপে কাজ করে। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত মার্কেটিং কলা-কৌশলের মধ্যে বিজনেস কার্ড অন্যতম একটি কৌশল।
বিজনেস কার্ডের মাধ্যমে খুব সহজেই অডিয়েন্স আপনার সাথে যোগাযোগের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। যা আপনার ব্যবসায়ের জন্য লাভজনক। তাই বর্তমানে বিজনেস কার্ড ডিজাইন এর বিষয়টি জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বিজনেস কার্ডের মাধ্যমে যতটা না অডিয়েন্স ইনফ্লুয়েন্স করা সম্ভব তা অন্য কোনো মাধ্যমে এতো সহজে সম্ভব নয়। একটি আকর্ষণীয় বিজনেস কার্ড আপনার ব্যবসায়ের একটি শক্তিশালী মার্কেটিং টুল হিসেবে কাজ করে।
এই ছোট্ট একটি বিজনেস কার্ডের মাধ্যমে আপনি নিজেকে অথবা আপনার ব্যবসাকে অডিয়েন্সের কাছে রিপ্রেজেন্ট করতে পারেন। যা আর কোন মাধ্যমে এত সহজে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি উক্তি হলো “প্রচারেই ব্যবসায়ের প্রসার”। যেখানে বিজনেস কার্ড হতে পারে আপনার ব্যবসায়ের প্রচারের মূলমন্ত্র।
বিজনেস কার্ড ডিজাইন কিভাবে শেখা যায়?
বিজনেস কার্ড মূলত বিস্তৃত গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে বিজনেস কার্ড ডিজাইন করাকে মূলত প্রাইমারি লেভেলের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। এজন্য বিজনেস কার্ড ডিজাইন শেখার জন্য গ্রাফিক ডিজাইন এর বেসিকটা জানলেই মোটামুটি হয়ে যায়। এরপর আপনার প্র্যাকটিস এর উপর নির্ভর করবে আপনি কত ভালো মানের বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে পারবেন।
বিজনেস কার্ড ডিজাইন যেহেতু গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রাইমারি লেভেলের একটি কাজ এ কারণে আপনাকে মাসের-পর-মাস এটি শেখার কোনো প্রয়োজন নেই। সাধারণত বিজনেস কার্ড ডিজাইন শেখার জন্য এক থেকে দুই মাস সময়ই যথেষ্ট। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে একজন প্রফেশনাল বিজনেস কার্ড ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে আপনাকে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হতে পারে।
বিজনেস কার্ড ডিজাইন করার জন্য প্রথমত আপনার একটি মোটামুটি মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর প্রয়োজন হবে। পরবর্তী ধাপে আপনাকে বেসিক কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বিজনেস কার্ড ডিজাইন শেখা শুরু করতে হবে। আপনি একেবারেই নতুন হয়ে থাকলে সর্বপ্রথম মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে শেখা আরম্ভ করতে পারেন। তবে প্রফেশনাল কাজের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে এডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে কাজ করতে হবে। তাই ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারটি ভালোভাবে আয়ত্ত করুন। তাছাড়া এডোবি ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারটির উপর ভালো দখল থাকলে আপনি সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্যান্য সেক্টর গুলোতেও নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন।
তাই বলে আপনার বিজনেস কার্ড ডিজাইন করা শুধু শিখে গেলেই হবে না। এর পাশাপাশি আপনাকে প্রচুর পরিমাণে প্র্যাকটিস করতে হবে। মনে রাখবেন অনুশীলনের বিকল্প কোনো কিছুই হতে পারে না। বিজনেস কার্ড ডিজাইন করে আপনি কতটা সফল হবেন তা নির্ভর করছে আপনি কতটা প্রাকটিস করবেন তার উপর। আজকে যারা অসাধারণ সব বিজনেস কার্ড ডিজাইন করছে তারা কিন্তু একদিনেই এত ভাল দক্ষ হয়ে ওঠেনি। এর পিছনে লুকিয়ে আছে অগণিত দিবা-রাত্রির অনুশীলনের গল্প।
বিজনেস কার্ড ডিজাইন সেক্টরে সফলতার আরেকটি মূলমন্ত্র হলো নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানো। একটু ভেবে দেখুন তো, আপনি যদি আর দশজনের চেয়ে একটু আলাদা না হন তাহলে মানুষ আপনাকে কেন কাজ দেবে? তাই আপনার কাজের মধ্যে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। কপি বা নকল করা ডিজাইন দিয়ে আপনি কখনোই বেশিদূর এগোতে পারবেন না। এজন্য আপনার সৃজনশীলতা কে কাজে লাগান। আপনার সৃজনশীলতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার আশেপাশের অনেক কিছুর মধ্যে থেকে হাজারো ডিজাইন আবিষ্কার করে ফেলতে পারবেন।
আপনি যে সেক্টরেই যান না কেন আপনার মধ্যে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিটি থাকতে হবে। আর তা হলো ধৈর্য। গ্রাফিক্স ডিজাইনের যে কোন সেক্টরে সফল হওয়ার জন্য অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। কারণ এখানে একবারে কেউ সফল হয়না, ব্যর্থতার শিড়ি বেয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌছাতে হয়। আপনার যদি এ ধরণের কোয়ালিটি না থাকে তাহলে আপনি কখনোই এ সেক্টরে টিকে থাকতে পারবেন না।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে আয় – মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন
বিজনেস কার্ড ডিজাইন এর ক্ষেত্রে কতগুলো অত্যাবশ্যকীয় কাজ আছে যেগুলোর প্রতি অবশ্যই আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। এগুলো হলোঃ সঠিক মাপ, লোগো, থিম, লে-আউট, সোশ্যাল আইকন ইত্যাদি। এসবের সুষ্ঠু সমন্বয়ে আপনি একটি আর্কষণীয় ও চোখে পড়ার মতো বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে পারেন, যা হবে গ্রাহকের কাছে স্বরণীয় ও আর্কষণীয়।
আপনি চাইলে বিজনেস কার্ড ডিজাইনের জন্য ভালো কোনো ইনস্টিটিউট বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। এতে করে আপনি কাজ শেখা থেকে শুরু করে কাজ পাওয়া পর্যন্ত সাপোর্ট পাবেন। বিজনেস কার্ড ডিজাইন এর ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক কিছু মাপকাঠি রয়েছে। তাই আপনাকে সব নিয়মকানুন মেনেই একটি স্মার্ট বিজনেস কার্ড ডিজাইন করে দিতে হবে। পাশাপাশি আপনাকে কালার, ফ্রন্ট, লে-আউট নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক ও অভিজ্ঞ হতে হবে। মনে রাখবেন, সফলতা কিন্তু আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ, প্রাকটিস ও ধৈর্যের উপরই নির্ভর করছে।
বিজনেস কার্ড ডিজাইন শিখে কি করা যায়?
আমাদের কোনো কিছু শেখার মূখ্য উদ্দেশ্যই থাকে অর্থ উপার্জন করতে পারা। আর সে শেখাটাকে যদি পেশা হিসেবে নিতে চান তাহলে তো কোন কথাই নেই। এর পাশাপাশি আরেকটি জিনিস চাই আর তা হলো সম্মান বা খ্যাতি।
আধুনিক গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি অন্যতম স্টার্টআপ হলো বিজনেস কার্ড ডিজাইন। খুব বেশিদিনের কথা না আজকে থেকে ৮/১০ বছর আগেও মানুষ বিজনেস কার্ড ডিজাইন এর সম্পর্কে খুব একটা জানত না। তবে সময়ের পরিক্রমায় বিজনেস কার্ড ডিজাইন গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি জনপ্রিয় সেক্টর এ পরিণত হয়েছে।
বুঝতেই পারছেন বিজনেস কার্ড ডিজাইন এর এমন জনপ্রিয়তা এমনি এমনি হয়নি। বর্তমান মার্কেটিং ট্রেন্ডের একটি আধুনিকতম কৌশল হলো বিজনেস কার্ড। তাই অলিতে-গলিতে থাকা ছোট ছোট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে মিলিয়নিয়ার পর্যন্ত সবাই নিজের জন্য একটি বিজনেস কার্ড রাখতে চায়। কারণ ভোক্তা পর্যায়ে অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলের চেয়ে বিজনেস কার্ড একটি স্মার্ট পদ্ধতি। আবার খুব ছোট ও পোর্টেবল হওয়ায় বর্তমানে অনেক ক্রেতাও একটি বিজনেস কার্ড পেতে চায়। আর তাইতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সবাই বিজনেস কার্ড ব্যবহার করছে।
এতসব বিভিন্ন পেশার মানুষের চাহিদার কারণে বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ বিজনেস কার্ড ডিজাইন করার প্রয়োজন পড়ছে। আর এ চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। তাই বিজনেস কার্ড ডিজাইনারদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। বর্তমানে একজন ক্রিয়েটিভ বিজনেস কার্ড ডিজাইনারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কারণ এখন সবাই চায় নিজের বিজনেস কার্ডটি যেন অন্যদের থেকে আকর্ষণীয় ও সুন্দর হয়।
বর্তমানে ক্রিয়েটিভ বিজনেস কার্ড ডিজাইনারদের একটি বড় অংশের গন্তব্য হলো ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো। দক্ষ বিজনেস কার্ড ডিজাইনাররা অনায়াসে এখান থেকে ৫০০-৬০০ ডলার ইনকাম করতে পারছে। তাই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটেপ্লেসগুলো বিজনেস কার্ড ডিজাইনারদের জন্য ভালো একটি অপশন। তবে কেউ চাইলে বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন কোম্পানি গুলোতেও চাকরি নিতে পারে। কিন্তু বর্তমান বিজনেস কার্ড ডিজাইনাররা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
এডোবি ফটোশপ কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য কি কি সফটওয়্যার প্রয়োজন?
আপনার কাছে ফ্রিল্যান্সিং এবং চাকরি দুটি পেশাকেই বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী আপনি যে কোনটিকেই যেতে পারেন। তবে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য একটি ভালো অপশন হতে পারে। আবার কেউ চাইলে চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং দুটোই করতে পারে। কিন্তু আপনি যাই করুন না কোন আপনার কাজে দক্ষ হয়ে থাকলে অবশ্যই সফল হবেন।