গ্রাফিক্স ডিজাইন
গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে প্যাসিভ ইনকাম করার উপায়

গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে প্যাসিভ ইনকাম করার উপায়

গ্রাফিক্স ডিজাইন

প্যাসিভ ইনকাম হচ্ছে এমন একটি উপার্জন ব্যবস্থা যেখানে ইনকাম করার জন্য সব সময় কাজের পিছনে লেগে থাকতে হয় না। অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় একবার মাত্র কাজ করেই সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিয়ত উপার্জন করা সম্ভব।

সবসময় কাজ করার প্রয়োজন হয় না বলে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক চাকরিজীবী, স্টুডেন্ট ও অন্যান্য পেশার মানুষ প্যাসিভ ইনকামের দিকে ঝুঁকছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি উপায়ে প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব। এগুলো হলো-

নিজের তৈরি ফন্ট বিক্রয়ঃ গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে আপনি যে কোন ভাষার অ্যালফাবেটের ফন্ট ডিজাইন করতে পারেন। যা প্রতিবার বিক্রির মাধ্যমে আপনি প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।

স্টক গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ আপনি ভেক্টর আর্ট ও অন্যান্য উপায়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারেন। যা পরবর্তীতে এডোবি স্টক ও অন্যান্য প্লাটফর্মে বিক্রয়ের জন্য ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব।

ডিজিটাল টেমপ্লেট তৈরিঃ প্রিমিয়াম ডিজিটাল টেমপ্লেট তৈরির করে তা বিভিন্ন প্লাটফর্মে বিক্রির জন্য রাখা যেতে পারে।

ওয়ার্ডপ্রেস টেমপ্লেট বিক্রয়ঃ প্রিমিয়াম লুকের জন্য এখন প্রায় সবাই পেইড ওয়ার্ডপ্লেস টেমপ্লেট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। যা দেখতে ফ্রি গুলোর তুলনায় অনেক আর্কষণীয় এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়। আপনি এরকম প্রিমিয়াম টেমপ্লেট তৈরি করে টেমপ্লেট স্টকগুলোতে রেখে দিতে পারেন।

টিউটোরিয়াল বিক্রিঃ আপনি অভিজ্ঞ ও দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে থাকলে এখান থেকে প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন সম্ভব। এজন্য আপনি যে বিষয়ে দক্ষ তার উপর ভিত্তি করে ধারাবাহিক টিউটোরিয়াল তৈরি করুন। এরপর এসব টিউটোরিয়াল পেইড কোর্স হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত করুন। 

টি-শার্ট ডিজাইন

টি-শার্ট ডিজাইন হলো এমন একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত বা সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন ডিজাইনের মধ্য দিয়ে টি-শার্টে ফুটিয়ে তোলা হয়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত কাপড়গুলোর মধ্যে একটি হলো টি-শার্ট। স্বল্প মূল্যের ও আরামদায়ক হওয়ার কারণে প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছে টি-শার্ট অনেক জনপ্রিয়। 

একটি টি-শার্ট অনেকগুলো পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিজাইন করা যায়। ডিজাইনটি হতে পারে ইমেজ বা ছবি, শব্দ, আর্ট, লোগো ও স্লোগান ইত্যাদি নিয়ে। একটি বিশেষ ডিজাইন আপনাকে এককভাবে কিংবা আপনার গ্রুপ বা টিমকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তোলে। শুধু তাই নয় টি-শার্ট ডিজাইনকে আপনার কোম্পানী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিজনেস কার্ড ডিজাইন কিভাবে শেখা যায়?

টি-শার্ট ডিজাইন এত জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সব চেয়ে বড় কারনটি হলো যে কেউ খুব সহজে এর ডিজাইন করতে পারে। এর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনের বেসিক কিছু আইডিয়া থাকলেই চলে। এছাড়াও বর্তমানে বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপস বের হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আরও সহজে টি-শার্ট ডিজাইন করা সম্ভব। তাই এখন যে কেউ ইচ্ছা করলেই তার পছন্দমতো ইউনিক একটি ডিজাইন তৈরি করে নিতে পারে।

এখনকার সময়ে সবাই চায় অন্যদের থেকে নিজেকে একটু আলাদাভাবে প্রকাশ করতে। এ কাজের জন্য তারা টি-শার্ট ডিজাইনকেই বেছে নিয়েছে। এ কারণে স্কুল-কলেজ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে যেকোন উৎসব, উদযাপনে বা অনুষ্ঠানে নিজেদের ডিজাইন করা টি-শার্ট ব্যবহার করা একটি ট্রেন্ড বা প্রথা হিসেবে চালু হয়েছে। 

এছাড়াও টি-শার্টের ব্যাপক ও বিস্তৃত ব্যবহার এর ডিজাইনের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। যার ফলস্বরূপ সময়ের পরিক্রমায় মানুষ টি-শার্ট ডিজাইনকেই বেছে নিয়েছে সচেতনতা, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ আবার কখনওবা প্রচার ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে ফুটিয়ে তুলতে।

বুক কভার ডিজাইন

কোন একটি বুক কভার ডিজাইন এর অর্থই হলো পাঠকদের কাছে বইটি সম্পর্কে প্রাথমিক আইডিয়া দেয়া। “আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী” এ নিয়ে আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। তাই বইয়ের কভার এমন হওয়া চাই যেন তা বইয়ের ভেতরের অংশের চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রকাশ করে। একটি আদর্শ বইয়ের কভার তাই যা পাঠককে তার প্রথম দেখাতেই আকৃষ্ট করে ফেলে। আর এজন্যই বুক কভার ডিজাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একটি আদর্শ বুক কভার এর মধ্যে কতগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয় থাকা অতি জরুরি। বুক কভারের মধ্যে অবশ্যই বইয়ের টাইটেল, সাবটাইটেল, লেখকের নাম, প্রকাশনীর নাম, লোগো ইত্যাদি বিষয় থাকতে হবে। এগুলো ছাড়াও একটি বুক কভার এর মধ্যে প্রচ্ছদ, ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ এর মতো বিষয়গুলো থাকতে পারে। যা বুক কভার কে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলে।

একটি মানসম্মত বুক কভার ডিজাইনের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো বইটি সম্পর্কে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারা এবং যত সম্ভব এর বিক্রি বৃদ্ধি করা। আর এ কাজটি করার জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের। পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত গবেষণা ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ যার মাধ্যমেই অর্থবহ একটি বুক কভার ডিজাইন সম্ভব। 

ক্যারেক্টর ডিজাইন

 ক্যারেক্টর ডিজাইন মূলত এমন একটি ডিজাইন যেটি বর্ণনামূলক হয়ে থাকে এবং ভিউয়ার, পাঠক খেলোয়াড় কিংবা ব্যবহারকারী হিসেবে অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সহজ ভাষায় ক্যারেক্টার ডিজাইন বলতে এমন একটি চরিত্র ডিজাইন করাকে বোঝায়  যা কার্টুন, কমিকস, গেমস, এনিমেশন  ইত্যাদি মাধ্যমগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

আধুনিক গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরের একটি অন্যতম সেক্টর হলো কারেক্টর ডিজাইন। বর্তমানে এই  ক্যারেক্টর ডিজাইন এর মাধ্যমেই তৈরী  করা হচ্ছে আমাদের জনপ্রিয় সব কমিকস বা কার্টুন চরিত্রগুলো।  ক্যারেক্টর ডিজাইনের অনন্য উদাহরণ হচ্ছে  ডোরেমন, টম এন্ড জেরি এর মতো বিখ্যাত কার্টুন  চরিত্রগুলি।

৫ টি সেরা হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম

ক্যারেক্টর ডিজাইন এর ডেভেলপমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে একে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।  এগুলো হলো ডাইনামিক ক্যারেক্টার, রাউন্ড ক্যারেক্টার, স্ট্যাটিক ক্যারেক্টার, স্টোক ক্যারেক্টার এবং সিম্বলিক ক্যারেক্টর। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে এনিমেশন সিনেমার কাজে ব্যবহৃত হয় ডাইনামিক কারেক্টর, বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং কমিকস বুক এ ব্যবহৃত হয় স্ট্যাটিক ক্যারেক্টর, অন্যদিকে সিম্বলিক কারেক্টর বিভিন্ন লোগো ডিজাইন করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে অ্যানিমেশন সিনেমা, গেমস, কার্টুন তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ক্যারেক্টর ডিজাইন সেক্টরে চাহিদার তুলনায় দক্ষ জনবল সংকট রয়েছে। যে কারণে ক্যারেক্টর ডিজাইন বর্তমানে একটি অন্যতম ডিমান্ডেবল জব।

ইউআই / ইউএক্স ডিজাইন

 ইউ আই এর পূর্ণরূপ হল ইউজার ইন্টারফেস এবং ইউ এক্স এর পূর্ণরূপ হল ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। মূলত ইউআই ডিজাইন হল ইউএক্স ডিজাইনের একটি পার্ট বা অংশ। ইউআই বা ইউএক্স ডিজাইন হচ্ছে কোন প্রোডাক্ট সার্ভিস বা সিস্টেমকে এমন ভাবে সাজানো যাতে এর ব্যবহারকারী কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে খুব সহজেই নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ ইউজার এক্সপিরিয়েন্স  ডিজাইন হচ্ছে কোন সার্ভিস সিস্টেম এ ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার রোড ম্যাপ।

ইউআই / ইউএক্স  ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।  এজন্য কোন ডেভলোপার ইউআই / ইউএক্স ডিজাইন এর মতো বিষয় নিয়ে কাজ করার সময় ইউজারদের নিয়ে প্রচুর পরিমাণে গবেষণার প্রয়োজন হয়। কারণ ব্যবহারকারীর সুবিধাকে এখানে প্রাধান্য দেয়া হয়। 

কোন একটি প্রোডাক্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি করার জন্য এর মধ্যে বেশ কিছু গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। এজন্য প্রোডাক্টটি কে অবশ্যই ইউজফুল, ইউজেবল, ফাইন্ডেবল, ক্রেডিডেবল হতে হয়। ইউআই / ইউএক্স ডিজাইনে এসব গুণাবলির বাস্তবায়ন করা হয়।

শুধু তাই নয়, ইউআই / ইউএক্স ডিজাইনটি করার সময় বেশ কিছু ধাপে নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। এগুলো হলো; প্রবলেম আইডেন্টিটিফাই করা, টাস্ক এনালাইসিস করা, কার্ড সটিং স্কেচ তৈরি, ব্যবহারযোগ্যতা বা ইউজিবিলিটি টেস্টিং এবং সবশেষে ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন করা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস গুলোতে একজন ইউআই / ইউএক্স ডিজাইনারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এজন্য নিজেকে অবশ্যই একজন দক্ষ ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি।

Leave a Reply