আপনি যদি অল্প সময়ে ক্রেতা বেশি পেতে চান ও মুনাফা অর্জন করতে চান তাহলে অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা করতে পারেন। আপনার জন্য কাপড়ের ব্যবসা অতি তাড়াতাড়ি সফলতা বয়ে আনতে পারে। অনলাইন ব্যবসা অল্প খরচে, কম মুনাফায় একটি স্মার্ট পোশাকের ব্যবসায় দ্বার করাবে, আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করবে। তবে সফলতা অর্জনের জন্য আপনার নিজেকেই পরিশ্রম করতে হবে, আপনার যদি কাজের প্রতি আগ্রহ এবং প্রেরণা থাকে তাহলে পোশাকের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনলাইনে ঘরে বসেই ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারবে সে ক্ষেত্রে তাদের মার্কেটে ঘুরে ঘুরে কাপড় কিনতে হবে না। পোশাকের ডিজাইন সংগ্রহ করে ক্রেতার দৃষ্টি আর্কষণ করতে হবে। যাতে ডিজাইন পছন্দ করে ক্রেতা তার পছন্দ মতো পোশাক কিনতে পারে। ব্যবসা চালু করার আগে নিচের তথ্য গুলো এক নজরে ভালোভাবে পড়ুন।
অনলাইন ব্যবসা
- অনলাইন স্টোর সেটআপ
- পণ্যের উপযুক্ত ধরন নির্বাচন
- পন্য ডিজাইন
- ব্যবসার জন্য সব কিছু করার অঙ্গিকার
- পণ্যের প্রচার
অনলাইন স্টোর সেটআপ
অনলাইন ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলছে, অনলাইন মার্কেট হয়ে উঠেছে প্রতিযোগিতা-পূর্ণ, যার জন্য স্টোর সেটআপ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। পুর্বে অনলাইন ব্যবসা করার জন্য কম্পিউটার থাকাটা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আপনি ব্যবসার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। এখন ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা করা সহজ এবং কম ব্যয়বহুল আর এটাকে F-commers বলা হয়।
ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার আগে যা জানা জরুরি
পণ্যের উপযুক্ত ধরন নির্ধারন
প্রায় প্রত্যেকটি পণ্যের টার্গেটেড কাস্টমার রয়েছে, সেটি মাথায় রেখে পোশাক নির্ণয় করুন। আপনি যত বেশি ক্রেতা এবং ক্রেতার পছন্দ সম্পর্কে জানতে পাবেন ততো বেশি সঠিক পন্য আমদানি বা তৈরি করতে পারবেন। সবসময় আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ক্রেতার চাহিদা মতো আপনি পণ্য দিতে পারছেন কিনা। যদি অঅপনি পণ্যের উপযুক্ত ধরন নিশ্চিত না হতে পারেন তাহলে সফলা নিশ্চিত কিভাবে হবে। সেজন্য পণ্যের উপযুক্ত ধরন নির্বাচন প্রথমে করতে হবে। যেমন- মেয়েদের পোশাক নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলে মেয়েরা কোন ধরনের পোশাক বেশি ক্রয় করে। সেদিকে খেয়াল করে পন্য আমদানি/তৈরী করতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই বিষয়। বর্তমানের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় নির্বাচন করতে ।পণ্যের গুণগত মান অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে।
পণ্য ডিজাইন
ক্রেতা প্রথমে যেটা দেখে পছন্দ করবে সেটার প্রতি সবচেয়ে বেশি আর্কষণ থাকবে। তাই প্রথম ইম্প্রেশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে মানানসই রঙ্গের পণ্য এবং উপযুক্ত ডিজাইন মত পণ্য পছন্দ করা কতটা ঝামেলার সেটা শুধুমাত্র ক্রেতারাই জানে। সেক্ষেত্রে নিজেকে কাস্টমারের স্থানে বসিয়ে পণ্য ডিজাইন নির্ধারন করত হবে। আপনি যদি ক্রেতা হিসাবে পণ্য পছন্দ করেন তাহলে ধরে নিতে পারবেন কাস্টমারও পণ্য পছন্দ করবে। পণ্যের ডিজাইন উপযুক্ত কিনা আপনি যদি বুঝতে না পারেন তাহলে আপনার কোন বন্ধু-বান্ধবীর এ বিষয়ে ভালো ধারনা আছে তাদের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন আবার বিভিন্ন কাপড়ের ডিজাইন সাইটের সাহায্য নিতে পারেন।
ব্যবসার কিছু অঙ্গিকার
ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে হলে কিছু কমিটমেন্ট করা খুবই প্রয়োজন। ব্যবসার বেপারে আপনি যদি নিজের প্রতি নিজেই অঙ্গিকারবদ্ধ থাকেন সেক্ষেত্রে সফলতা অর্জন অবশ্যই করবেন। সফল কাপড় ব্যবসায়ী হতে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
- সোশাল মিডিয়া/ওয়েবসাইট এ নতুন নতুন পণ্যে আপডেট দিতে হবে।
- কাস্টমারের মেসেজের দ্রুত রেসপন্স দ্বারা বিশ্বাস অর্জন করা।
- রুটিন মাফিক আপনাকে কিছু কাজ নিয়মিত করে যেতে হবে।
- নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করতে হবে।
- ব্যবসার প্রসার বাড়তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
- নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড় সংগ্রহে রাখেতে হবে সময় এবং ট্রেন্ড অনুযায়ী।
এই বিষয় গুলো আপনি ফলো করলে ব্যবসা করতে গিয়ে আর ঘাবড়ে যাবেন না। ব্যবসা সম্পর্কে আপনার চিন্তাধারাকে সর্বক্ষণ ইতিবাচক রাখুন। কারণ সফলতার সুযোগকে বৃদ্ধি করে দেয় সঠিক দৃষ্টি ভঙ্গি।
পণ্যের প্রচার
আপনি একটি অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করলেই যে পণ্য নিশ্চিত বিক্রি হবে তা কিন্তু না। ক্রেতা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার পণ্য বিক্রি হবে না। পণ্যের প্রতি ক্রেতার আর্কষণ বাড়ানোর জন্য আপনাকে পণ্যের প্রচার অবশ্যই করতে হবে।
- আপনার পণ্যের বিষয়ে সোশাল মিডিয়ার দ্বারা জানিয়ে দিতে হবে।
- পণ্যের বৈশিষ্ট্য ও গুনাগুণ সম্পর্কে ডিটেলস লিখে পণ্যের সাথে যুক্ত করতে হবে।
- পণ্যের সুন্দর সুন্দর ছবি উপস্থাপন করতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনি নিজের মোবইলের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন আবার ভালো কোন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের সাহায্য নিতে পারেন।
- পণ্য প্রচার করতে আপনি নিজেই মডেল হিসেবে কাজ করতে পারেন অথবা কোন অভিনয় শিল্পী হায়ার করতে পারবেন ইত্যাদি।
অনলাইন শপিং ব্যবসা
প্রায় মানুষই অনলাইনে শপিং করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করা হয় অনলাইনে এবং অনলাইনে প্রায় ২৫ হাজার অর্ডার ডেলিভেরী দেয়া হয়। বাংলাদেশে ওয়েবসাইট ভিত্তিক প্রায় এক হাজার অনলাইন শপ রয়েছে এবং প্রায় ১১ হাজারের বেশি ফেসবুক ভিত্তিক রয়েছে। নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করে ও বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট এ ক্যাটাগরি অনুযায়ী স্টোর তৈরী করেও অনলাইন ব্যবসা করা যায়।
বিশ্বের সর্বপ্রথমে এখন রয়েছে অ্যামাজন কোম্পানী। এখানে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সকল পণ্যদ্রব্য কেনা যায়। এই অ্যামাজন হচ্ছে একটি ইন্টারনেট জায়ান্ট, বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই অ্যামাজন শপিং। এখানে কাস্টমার তার পছন্দ মতো যেকোন পণ্য ক্রয় করতে পারেন। অ্যামাজন একটি ই-কমার্স প্লার্টফর্ম। যেখানে ক্রেতা পণ্য অর্ডার করার কিছু সময়ের মধ্যেই পণ্য হাতে নিয়ে ক্রেতার দরজায় উপস্থিত হবে। অ্যামাজনে শপিং করতে চাইলে সরাসরি অ্যামাজন ওয়েবসাইটএ শপিং না করে বিশ্বব্যপী তাদের যে মার্কেট গুলো রয়েছে সেখানে শপিং করতে পারেন।
এছাড়াও দেশীয় অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরী হয়েছে যেমন দারাজ, বিডিশপ, আজকের ডিল, পিকাবো ইত্যাদি। এই সাইটগুলোতে পোষাক, ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য ও পণ্য সামগ্রী পাওয়া যায়।
ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা
দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষ ফেসবুুক ব্যবহার করে। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসার প্রচার করে অধিক পরিমানে গ্রাহক পাওয়া সম্ভব। যার ফলে যেকোন পণ্যদ্রব্য ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার ও বিক্রি করা সম্ভব অনলাইন এ ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আপনি যাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে চাচ্ছেন তারা কোন ধরনের পন্য নিতে বেশি আগ্রহী। নিজের ফেসবুক একাউন্টে পণ্যের ছবি আপলোড করে প্রচার করার পাশাপাশি আপনার প্রডাক্ট রিলেটেড গ্রুপে পণ্যের ছবি আপলোড করে প্রচার সহজে করতে পারবেন। প্রচারের সঙ্গে পণ্যের কোয়ালিটি, ডিজাইনকৃত ছবি, প্রাইস উল্লেখ করে প্রচার করতে হবে। তাহলে গ্রাহক পণ্যের ডিটেলস সম্পর্কে জানবে এবং ক্রেতাদের অর্ডার করতে সুবিধা হবে।
ফেসবুকে অনেক বিজনেস গ্রুপ আছে। যেগুলোতে জয়েন করে সেখানে আপনি আপনার পণ্যের প্রচার চালাতে পারবেন। এছাড়াও ফেসবুক লাইভ বা প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও এর মাধ্যমে পণ্যের প্রমোশন করতে পারেন। পাশাপাশি ইউটিউবকেও ব্যবহার করতে পারেন প্রোডাক্ট রিভিউ এর জন্য।
ফেসবুক এর বিভিন্ন বিজনেস গ্রুপে আপনার পন্যের রিভিউ পোষ্ট করার আগে আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার একটি নাম নির্ধারণ করে নিন এবং প্রতিটা পোষ্টে তা মেনশন করুন। এতে করে আপনার পন্য খুববেশি পছন্দ করে এমন গ্রাহকরা আপনার পেজ এ লাইক/ফলো করার মাধমে আপনার সাথে পারমানেন্টলি কানেক্ট থাকবে। ফলে আপনি কিছু পামানেন্ট কাস্টমার পাবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই অনায়াসে অনলাইন ব্যবসা করা যায় এবং খুব সহজে আয় করে নিজের ক্যারিয়ারও গড়া যায়। অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে চাইলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে জানাবেন।