বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সব কিছুই যেন প্রযুক্তি নির্ভর। এমনকি মানুষের আয়-রোজগার বা জীবিকা তাও বহুলাংশে প্রযুক্তির প্রয়োগের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়েছে , বিশ্বের প্রথম সারির ধনী ব্যক্তিবর্গ তাঁরাই যারা সঠিকভাবে নিজেদের কাজে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন।
সুতরাং বুদ্ধিমান তারাই হবেন যারা বিভিন্ন অজুহাতে বেকার ঘরে বসে না থেকে প্রযুক্তির ছোট থেকে ছোট যে কোনো উপাদানকে কাজে লাগিয়ে নিজের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার চেষ্টা করবেন। যেমন- সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বেশ জনপ্রিয় একটি যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তাদের মূল্যবান অনেক সময় ব্যায় করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে , এই ফেসবুকেই অহেতুক সময় নষ্ট না করে এই সময়টাকে টাকা উপার্জনের উৎস হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন।
হ্যাঁ বন্ধুরা! বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমেও টাকা আয় করা যায় এবং এটি খুবই সহজ একটি কাজ। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের বলব ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়। সুতরাং পুরো আর্টিকেল জুড়ে সাথেই থাকুন।
ফেসবুকে যেভাবে টাকা আয় করা যায়।
বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। যেগুলোর মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে অবস্থান করছে। বাংলাদেশেও বর্তমানে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। যে কারণে এর মাধ্যমে টাকা আয় করাও খুবই সহজ ও ফলপ্রসূ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফেসবুকে টাকা আয় করার জন্য সবথেকে বেশি ফলপ্রসূ তিনটি উপায় হলো-
- ফেসবুক পেজ।
- ফেসবুক গ্রুপ।
- ফেসবুকে ভিডিও আপলোড।
এই তিনটি উপায়ের যেকোনো একটি বা একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করে যে কেউ সহজেই টাকা আয় করতে পারবেন। এবার চলুন জেনে নেই কিভাবে এই উপায়গুলো ব্যবহার করে আপনি টাকা আয় করতে পারবেন।
ফেসবুক পেজ থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়
ফেসবুক পেজ থেকে কিভাবে আয় করা যায় তা জানার পূর্বে জেনে নিব যে ফেসবুক পেজ আসলে কি? ফেসবুক পেজ হলো ফেসবুকের অত্যাধুনিক একটি ফিচার (Feature) যেটিকে পাবলিক প্রোফাইলও বলা হয়ে থাকে। একটি ফেসবুক পেজ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। যেমন- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং( Social Media Marketing) , অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং(Affiliate Marketing) , বিজনেস প্রোমোট (Promoting Business), প্রডাক্ট সেল ইত্যাদি।
ফেসবুক পেজ থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনাকে যেগুলো করতে হবে-
- একটি নিশ বা বিষয় সিলেক্ট করা।
- একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করা।
- পেজে ভিজিটরস (Visitors) যুক্ত করা।
- পেজে লাইক(Like) বা ফলোয়ার্স (Followers) বাড়ানো।
- পেজ থেকে টাকা ইনকাম করা।
পেজের নিশ সিলেক্ট করা
প্রথমে আপনার পেজের জন্য একটি Suitable নিশ সিলেক্ট করুন। অর্থাৎ এমন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে পেজটিকে ডেভেলপ করতে হবে যেটি আপনার জন্য সুইটেবল। হতে পারে আপনার কোনো ব্যক্তিগত বিজনেস অথবা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিংবা অন্য যে কোনো কোম্পানির প্রোডাক্ট রিভিউ বা প্রোডাক্ট প্রোমোট বা সেল।
বাংলাদেশের সেরা ১০ জন ইউটিউবার
এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি কোন কাজে দক্ষ বা কোন কাজ আপনি ভালো করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনে অবশ্যই ধৈর্য্য রাখা জরুরি। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
হতে পারে আপনি যে বিষয়ে পেজ খুলেছেন সেখান থেকে আপনি আশানুরূপ ইনকাম করতে পারছেন না। তাই বলে আপনি যদি এটি ছেড়ে দেন বা অন্য আরেকটি পেজ শুরু করে দেন তাহলে কিন্তু আপনার সফলতা আসবে না। কেননা একটি পেজ ডেভেলপ করতে যথেষ্ট পরিমাণ সময় , শ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
ফেসবুক পেজ ওপেন করা
এই পর্যায়ে নিশে সিলেক্ট করা হলে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে ফেলুন। তবে অবশ্যই আপনার পেজটি যেন আকর্ষণীয় হয়। যেটি সহজেই ফেসবুক ব্যবহারকারী বা ভিজিটরদের আকৃষ্ট করতে পারবে।
পেজে ভিজিটরস যুক্ত করা
ফেসবুক পেজ থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। মনে রাখবেন পেজের ভিজিটররাই পেজের প্রাণ। পারতপক্ষে তারাই আপনার প্রকৃত ইনকাম সোর্স। তাই বেশি পরিমাণে পেজে ভিজিটরস যুক্ত করার চেষ্টা করুন।
পেজে লাইক ও ফলোয়ার্স বাড়ানো
ভিজিটরের পাশাপাশি পেজে লাইক ফলোয়ার্স বাড়ানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর জন্য ফেসবুকে paid এবং non-paid দুই ধরণের পদ্ধতিই রয়েছে। তবে Paid Campaign অনেক বেশি কার্যকর। এক্ষেত্রে অনেক অল্প টাকা ব্যয় করে অনেক বেশি পরিমাণে লাভবান হওয়া যায়।
পেজ থেকে টাকা ইনকাম করা
উপরোক্ত ধাপগুলো যদি আপনার সম্পূর্ণ হয়ে থাকে তবে এবার আপনার কাজ হলো পেজ থেকে টাকা আয় করা। এই একটি পেজ থেকে আপনি বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করতে পারেন। যেমন-
- Affiliate Marketing করে আয়।
- Business Promotion and Advertising করে টাকা ইনকাম।
- Product Review এবং Sell করে আয়।
- পেজ Sell করে আয়।
- পেইড Ads থেকে ইনকাম।
- Facebook Instant Article থেকে আয়।
- Websites বা Blog Sites Promotion করে আয়।
ফেসবুক পেজ থেকে টাকা আয় করার জন্য এই প্রতিটি ধাপই বেশ কার্যকর। যেমন- বর্তমানে Affiliate Marketing এর বাজার বেশ রমরমা। তাছাড়া এক্ষেত্রে কোনো ইনভেস্টমেন্টেরও প্রয়োজন নেই। তাই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে টাকা আয় করার জন্য Affiliate Marketing বেশ কার্যকর।
তাছাড়া আপনার যদি কোনো বিজনেস কিংবা কোম্পানি থেকে থাকে তবে ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে আপনি আপনার বিজনেসের প্রোমোশন করতে পারেন। ফলে বিজনেসের পরিধি যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি অনলাইনে প্রোডাক্ট সেল হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়। পাশাপাশি ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ব্লগসাইটের প্রোমোশন ঘটিয়ে টাকা আয় করা যায়। এমনকি পেজে Instant আর্টিকেল পোস্ট করেও সহজে টাকা উপার্জন করা যায়।
এমনকি আপনার পেজে Paid Ads প্রচারের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন। যদি আপনার পেজে এক লাখের বেশি ফলোয়ার্স থাকে তবে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কনটাক্ট করে আপনি টাকার বিনিময়ে তাদের প্রোডাক্ট প্রোমোট করতে পারেন। এক্ষেত্রে সামান্য একটি লিংক শেয়ার করেও টাকা আয় করা যায়।
ফেসবুক গ্রুপ থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়
ফেসবুকে টাকা আয় করার আরেকটি কার্যকর উপায় হলো ফেসবুক গ্রুপ। ফেসবুক গ্রুপ থেকে এখন বিভিন্ন উপায়ে টাকা আয় করা যায়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ আর্থিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে এই সেবাটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দিয়ে আসছে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেই ফেসবুক গ্রুপ থেকে কিভাবে টাকা আয় করতে পারবেন-
প্রোডাক্ট সেল বা ই-কমার্স
বর্তমানে আমরা প্রায় সকলেই ই-কমার্স শব্দটির সঙ্গে বেশ পরিচিত। এর মানে হলো ইলেক্ট্রনিক কমার্স। যেটি মূলত ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করাকে বুঝায়।
ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যে কেউ সহজেই বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করে ফেসবুক বিজনেসের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। তাছাড়া Buy And Sell গ্রুপের মাধ্যমে গ্রুপ মনিটাইজেশন দ্বারাও টাকা ইনকাম করা যায়।
ফেসবুক গ্রুপ মনিটাইজেশন
একটি ফেসবুক গ্রুপ ডেভেলপ করতে একজন এডমিনকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। যার জন্য সে অবশ্যই পারিশ্রমিকের দাবিদার। সে লক্ষ্যেই মূলত ফেসবুক গ্রুপ মনিটাইজেশনের মাধ্যমে টাকা আয় করার একটি রাস্তা উন্মুক্ত করেছে।
ফেসবুক গ্রুপ মনিটাইজেশনের মাধ্যমে টাকা উপার্জনের মূল হাতিয়ার হলো সাবস্ক্রিপশন। গ্রুপের পরিধি এবং মেম্বার যত বৃদ্ধি পাবে গ্রুপের সাবস্ক্রিপশনও তত বৃদ্ধি পাবে। আর সাবস্ক্রিপশন যত বাড়বে আয়কৃত টাকার পরিমাণও তত বাড়বে। তাই গ্রুপে সাবস্ক্রিপশন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন- প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কন্টেন্ট , ভিডিও , লাইভ স্ট্রিমিং , ওয়েবইউনার ইত্যাদি পরিষেবা গ্রহণ করা যেতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ফেসবুকে টাকা আয় করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে তার মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা প্রতি মাসে ইনকাম করা সম্ভব।
এর জন্য গ্রুপে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের পণ্য বিক্রয় করে দিতে হয়। যেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন আপনি ঐ কোম্পানি বা সাইটের পক্ষ থেকে পাবেন। এর জন্য প্রথমে ঐ কোম্পানি বা সাইটের ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। এরপর তারা নির্দিষ্ট পণ্যের একটি লিংক তৈরি করে দিবে। এখন আপনি আপনার গ্রুপে ঐ লিংক ব্যবহার করে যত বেশি পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন তত বেশি আপনি কমিশন লাভ করতে পারবেন। অর্থাৎ টাকা আয় করতে পারবেন।
ফেসবুক ভিডিও থেকে আয়
সাম্প্রতিককালে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে আয় করা অত্যন্ত সহজ এবং লাভজনক একটি উপায়। ফেসবুকে আয় করার এৢ পদ্ধতিটিকে মূলত বলা হয় “Facebook Video Monetization” বা In-Stream Ads.
ফেসবুক In-Stream Ads বা ভিডিও Monetization হলো এমন একটি পদ্ধতি যেটি দিয়ে পেজে আপলোড করা ভিডিওতে বিজ্ঞাপন শো করা যায় এবং এর উপর টাকা ইনকাম করা যায়। এই ভিডিও মনিটাইজেশনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্তাবলি রয়েছে। যেগুলো নিম্নরূপ:
- অবশ্যই একটি ফেসবুক পেজ থাকতে হবে যেখানে কমপক্ষে দশ হাজার (১০, ০০০) লাইক থাকবে।
- আপলোড দেয়া প্রতিটি ভিডিও কমপক্ষে তিন মিনিটের হতে হবে। এর চেয়ে কম সময়ের ভিডিও তে মনিটাইজেশন দেয়া হয় না।
- বিগত ৬০ দিনে পেজের ভিডিওতে কমপক্ষে ত্রিশ হাজার ভিউস থাকতে হবে এবং প্রতিটি ভিউ মিনিমাম ১ মিনিটের হতে হবে।
- আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
- পেজে আপলোড দেয়া ভিডিওর ভাষা অবশ্যই In-Stream Ads সাপোর্ট করে এমন হতে হবে। তবে খুশির বার্তা হলো বর্তমানে ফেসবুক মনিটাইজেশন বা In-Stream Ads বাংলা ভাষা সাপোর্ট করে।
- ফেসবুকের সকল পার্টনার মনিটাইজেশন পলিসি মেনে ভিডিও আপলোড করতে হবে।
- কোনো ভিডিও কপি করা যাবে না বা ইউটিউবের কোনো ভিডিও আপলোড দেয়া যাবে না।
পরিশেষ
এই মুহূর্তে আমরা আর্টিকেলের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আশা করি ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় এ ব্যাপারে আপনাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পেরেছি। তাহলে আর বিলম্ব না করে এখনই শুরু করে দিন ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা। পরিশেষে সকলের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভকামনা। যাতে করে আর বেকার ঘরে বসে না থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে টাকা আয় করে নিজের পরিচিতি অর্জন করতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।