আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ! স্বাগতম আপনাদের আজকের নতুন আর্টিকেলে। আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করতে চলেছি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনাকে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে আর দোকানে যেতে হবে না। ঘরে বসেই আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের সাহায্যে সহজেই একটি personal বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। তো বন্ধুরা! বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানার পূর্বে চলুন বিকাশ সম্পর্কে কিছু খুটিনাটি তথ্য জেনে নেয়া যাক।
বিকাশ কি?
মূলত বিকাশ(bkash) হলো বাংলাদেশের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান। যেটি ব্র্যাক ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত একটি ফিন্যান্স সংস্থা। বিকাশের সাহায্যে সহজেই যে কেউ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে টাকা আদান-প্রদান করা , বিদ্যুৎ বিল প্রদান , মোবাইল ফোন রিচার্জ সহ অন্যান্য আরো অনেক কাজ ঘরে বসে করা যায়।
বিকাশে সাহায্যে কি কি সেবা গ্রহণ করা যায়?
বিকাশ বাংলাদেশের একটি অর্থ আদান-প্রদানকারী পরিষেবা। নানামুখী সুবিধা সম্বলিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার জন্য বিকাশ বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। চলুন তাহলে এক নজরে দেখে নেয়া যাক বিকাশ এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সেবাসমুহ কি কি।
- দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে অপর একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা প্রদান এবং সেই সাথে টাকা গ্রহণ করা যায়।
- অ্যাকাউন্ট এ আনলিমিটেড টাকা জমা রাখা যায় এবং প্রয়োজনের সময় সেই টাকা তোলা যায়।
- রয়েছে ঘরে বসে সহজেই বিদ্যুৎ বিল প্রদান করার সুযোগ।
- এর মাধ্যমে যে কোনো মোবাইল সিম এ টাকা রিচার্জ করা যায়।
- যে কোনো ধরনের পণ্য ক্রয় করে তার মূল্য পরিশোধ করা যায় মুহূর্তেই।
- বিদেশি রেমিটেন্স গ্রহণ করা যায়।
- ঘরে বসে ট্রেন বা বাসের টিকেট ক্রয় করা যায়।
- অনলাইনে পণ্য ক্রয় করা ও মূল্য পরিশোধ করা যায়।।
- একাউন্ট থেকে এজেন্ট অথবা ব্রাক ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলার সুযোগ।
অ্যাকাউন্ট খুলতে কী কী প্রয়োজন
মোবাইলে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা এখন খুবই সহজসাধ্য একটি ব্যাপার। কেননা একটা বিকাশ অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে আমাদের খুব বেশি জটিল কিছু প্রয়োজন হবে না। হাতের কাছে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জিনিসের সাহায্যেই ৫ মিনিটে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নেওয়া যায়। চলুন দেখে নেই একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি লাগতে পারে।
এন্ড্রয়েড এর ১০ টি ট্রিকস এন্ড টিপস
- যিনি অ্যাকাউন্ট খুলবেন তার এন আই ডি কার্ড। মনে রাখবেন এন এই ডি কার্ড ছাড়া কখনও বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না। তবে এন আই ডি কার্ডের অনলাইন কপি দিয়েও অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।
- ইন্টারনেট সংযুক্ত একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। কেননা ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব নয়।
- যে মোবাইলে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে সেই মোবাইলের একটি একটিভ মোবাইল নাম্বার।
- যার এন আই ডি কার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে তার তাৎক্ষণিক সেলফি গ্রহণ।
এই কয়েকটি সাধারণ জিনিসের সাহাজ্যে ঘরে বসেই এখন একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নেয়া যায়।
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বন্ধুরা! আমি এর আগেও বলেছি বর্তমানে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা খুবই সহজ একটি কাজ। তাই এই মুহূর্তে আমি যে ধাপগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব , সেগুলো যদি সঠিকভাবে ফলো করেন তবে নিঃসেন্দহে আপনিও একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেই ধাপগুলো কি কি:
ধাপ-১: বিকাশ মোবাইল অ্যাপ ইন্সটল করুন:
সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার মোবাইলে একটি বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে। গুগল প্লে স্টোরে বিকাশ অ্যাপ লিখে সার্চ দিলেই আপনি বিকাশ অ্যাপটি পেয়ে যাবেন এবং সেখান থেকে অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। তবে অবশ্যই অ্যাপটি ডাউনলোড করার পূর্বে আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে নিতে হবে।
ধাপ-২: এ পর্যায়ে অ্যাপটি ডাউনলোড হয়ে গেলে সেটি ওপেন করুন। অ্যাপটি ওপেন করলে আপনি সাথে সাথে নিচে দেয়া ১ নাম্বার ছবির মতো একটি এন্টারফেজ দেখত পাবন।
ধাপ-৩: এবার উপরের ছবির মত log in/registration বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪: login/registration বাটনে ক্লিক করলে ২ নাম্বার ছবির মত একটি পেজ আপনার স্ক্রিনে আসবে। এরপর সেখানে যেই নাম্বারে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেই মোবাইল নম্বরটি দিয়ে দিন।
ধাপ-৫: মোবাইল নাম্বার দেয়ার পর এ পর্যায়ে ৩ নাম্বার মোবাইল সিম অপারেটর সিলেক্ট করুন এবং পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করুন।
ধাপ-৬: এবার অ্যাকাউন্ট এর ভাষা সিলেক্ট করে দিন।
ধাপ-৭: এই ধাপে আপনার প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বার যাচাই করার জন্য এই নাম্বারে একটা ভেরিফিকেশন কোড মেসেজ করে পাঠানো হবে। সুতরাং অবশ্যই এই নাম্বারটা ফোনে একটিভ থাকতে হবে। এরপর ফোনে ভেরিফিকেশন কোড মেসেজ আসার সাথে সাথে সেটা টাইপ করে দিতে হবে। এরপর বিকাশ অটোমেটিক্যালি তা গ্রহণ করে নিবে। এরপর নিচের ছবির মতো কনফার্ম বাটনটিতে ক্লিক করুন।
ধাপ-৮: এই ধাপে এখন আপনার এন আই ডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের উভয় পাশের ছবি তুলে তা সাবমিট করে দিতে হবে।
ধাপ-৯: তারপর যার এন আই কার্ড এর ছবি তোলা হয়েছে সেই ব্যাক্তির একটি সেলফি ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে তুলে পরবর্তী স্টেপে প্রবেশ করতে হবে। এখানে আপনার ছবিটি অটোমেটিক স্ক্যান হয়ে যাবে।
ধাপ-১০: এখন একাউন্ট খোলার সর্বশেষ ধাপে আমরা চলে এসেছি। এ পর্যায়ে তোলা সেলফিটি সাবমিট হয়ে গেলেই আপনার অ্যাকাউন্ট খোলার প্রাথমিক কাজগুলি শেষ হয়ে যাবে।
অ্যাকাউন্ট খোলার পর একাউন্ট একটিভ করতে যা যা করতে হবে
বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য উল্লেখিত ধাপগুলো শেষ হয়ে গেলে এ পর্যায়ে এখন একটি পিন কোড সেট করতে হবে। পিন কোডটি সেট করা হয়ে গেলেই আপনার অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে যা যা করতে সেগুলো নিম্নরূপ:
- প্রথমে *247# লিখে ডায়াল করুন।
- এরপর Active Menu Pin অপশন আসবে। সেখানে 1 লিখে রিপ্লাই প্রদান করুন।
- এবার ৫ ডিজিটের একটি পিন সেট করুন।
- পিনটি পুনরায় লিখে কনফার্ম করুন।
- এরপর ok অপশনে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট এক্টিভ করুন।
- অতঃপর বিকাশ অ্যাপে যেয়ে লগ ইন করুন।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! একটি বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য এতক্ষণ যেই নিয়মগুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম এগুলো সঠিকভাবে ফলো করলে আপনিও ঘরে বসেই নিজে নিজে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন।
এবার অ্যাকাউন্ট খোলা শেষ হয়ে গেলে চলুন জেনে নেয়া যাক বিকাশ অ্যাপে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কি কি বোনাস পেতে পারেন।
- প্রথমবারের মত একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুললে পেয়ে যাবেন ১০০ টাকা পর্যন্ত বোনাস।
- অ্যাকাউন্ট খোলার পর অ্যাপে লগ ইন করে যেকোনো মোবাইল নাম্বারে রিচার্জ করলেই পাবেন ৫০ টাকা বোনাস।
- এরপর নিজের মোবাইল নাম্বারে কমপক্ষে দুইবার ২৫ টাকা করে রিচার্জ করলে পাবেন আরও ৫০ টাকা বোনাস। তবে মনে রাখবেন কেবল মাত্র বিকাশের একজন নতুন গ্রাহক এই অফারটি নিতে পারবেন। যাদের অলরেডি একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে তারা এই অফারটি পাবেন না।
- তাছাড়া বিকাশ কর্তৃপক্ষের রেফারাল অফার ব্যবহার করে বোনাস টাকা পেতে পারবেন। আপনার অ্যাকাউন্ট এর রেফারেল লিংক দিয়ে কেউ যদি একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে তবে আপনি বিকাশ কর্তৃপক্ষ থেকে বোনাস পাবেন।
বিকাশ সম্পর্কিত কিছু কমন প্রশ্ন ও তাদের উত্তর
প্রশ্ন-১: একটি এন আই ডি কার্ড দিয়ে কয়টি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে?
উত্তর: একটি এন আই ডি কার্ড দিয়ে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
প্রশ্ন-২: এন আই ডি কার্ড এর অনলাইন কপি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ। এন আই ডি কার্ডের অনলাইন কপি দিয়েও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
প্রশ্ন-৩: বিকাশ অ্যাপ এর ক্যাশ আউট চার্জ কত?
উত্তর: বিকাশ অ্যাপে প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ১৭.৫ টাকা।
প্রশ্ন-৪: বিকাশ একাউন্ট এর চেক কোড কত?
উত্তর: বিকাশ একাউন্ট এর চেক কোড হলো *247# .
প্রশ্ন-৫: বিকাশ কাস্টমার কেয়ার নাম্বার কত?
উত্তর: ১৬২৪৭ বা ০২-৫৫৬৬৩০০১।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আজকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। এবার নিজে নিজে ঘরে বসেই একটি বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। ধন্যবাদ সবাইকে মূল্যবান সময় নিয়ে আর্টিকলেটি পড়ার জন্য।