রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় বড় শহর যেমন- চট্টগ্রাম , সিলেট , বরিশাল ইত্যাদি অঞ্চল গুলোতে মানুষের বসতি যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। তাই বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার কারণে এদিক সেদিক যাতায়াতের জন্য শহরের রাস্তাগুলোতে যানবাহনের ব্যস্ততাও যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলেছে। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় বাংলাদেশে প্রকৃত যানবাহন এখনও অপ্রতুল। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে যেরকম হারে ট্যাক্সি সার্ভিস চোখে পড়ে বাংলাদেশে তেমন কখনওই ছিলোনা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসব সমস্যার কিছুটা সমাধান মিলছে উবারের কল্যাণে।
বন্ধুরা! আমরা যারা শহরে বসবাস করি কিংবা প্রযুক্তির ব্যাপারে সচেতন তারা ইতিমধ্যে উবার সম্পর্কে নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছি। কিন্তু এসবের মধ্যেও যারা এখনও উবার কি এবং এটি কিভাবে ব্যবহার করে সে সম্পর্কে জানেন না আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। এই আর্টিকেলটিতে আমরা আজকে উবারের আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। সুতরাং প্রিয় পাঠকবৃন্দ! পুরো আর্টিকেল জুড়ে সাথেই থাকুন।
উবার কি?
বন্ধুরা!আমরা প্রথমেই জানবো উবার কি। মূলত উবার হলো স্মার্টফোনের অ্যাপ ভিত্তিক ট্যাক্সি সেবার একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম যেখান থেকে একজন গ্রাহক যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে ট্যাক্সি কল করতে পারেন এবং রাইড নিতে পারেন।
আমেরিকা ভিত্তিক অনলাইন পরিবহন কোম্পানি উবার টেকনোলজিস ইনকর্পোরেশন (Uber Technologies Inc.)-২০০৯ সালের মার্চ মাসে এই ডিজিটাল সার্ভিস টি চালু করে। বর্তমানে বিশ্বের ৬৩ টি দেশ ও ৭৮৫ টি মহানগর এ উবার তাদের সেবা প্রদান করে চলেছে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লক্ষ মানুষ উবারের সার্ভিস গ্রহণ করছে।
উবার সার্ভিসের ইতিবাচক দিকসমূহ
২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম উবার তাদের যাত্রা শুরু করে। এরপর এই অল্প সময়ের মধ্যেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরে। কিন্তু এই অধিক জনপ্রিয়তার কারণ কি? এর একমাত্র কারণ হলো উবার ব্যবহারের কিছু ইতিবাচক দিকসমূহ।
তাহলে বন্ধুরা! আর দেরি না করে চলুন এক নজরে দেখে নেই উবার সার্ভিসের ইতিবাচক দিকসমূহ কি কি।
- যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে উবার অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহারের মাধ্যমে উবারের সেবা গ্রহণ করা যায়।
- যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে একজন ইউজার খুব সহজেই ট্যাক্সি কল করতে পারেন।
- প্রয়োজন মতো যে কোনো ধরনের মানসম্মত গাড়ি পাওয়া যায়।
- একজন ড্রাইভার অনেক সহজে কাঙ্ক্ষিত প্যাসেঞ্জার পেতে পারেন।
- একজন ড্রাইভার ও একজন প্যাসেঞ্জার অনায়াসে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে নিতে পারেন।
- ব্যক্তিগত গাড়ি আছে এমন যে কেউ কয়েকটি সহজ শর্ত ও যোগ্যতা পূরণ করে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে সহজেই অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
ইউটিউব কিভাবে তৈরি হলো? ইউটিউবারদের ভবিষ্যত কি?
উবার কিভাবে ব্যবহার করবেন?
আপনি যদি কোনো মহানগরী যেমন- ঢাকার নিয়মিত বাসিন্দা হয়ে থাকেন তবে উবার কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে আইডা থাকাটা জরুরি। কেননা এরকম ব্যস্ততম শহরে অনেকসময় প্রয়োজনীয় অনেক মুহূর্তে গাড়ি পাওয়া দুঃস্কর হয়ে যায়। সে সময় উবার হতে পারে আপনার জন্য আলোর দিশারী। সুতরাং প্রয়োজনের সময় উবার কিভাবে ব্যবহার করবেন তা জানা আবশ্যক।
তো যারা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে জানেন এবং উবার ব্যবহার করছেন তাদের জন্য তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা এখনও উবার ব্যবহার করতে জানেন না তাদের জন্য রইল কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। যেগুলো ফলো করলে যে কেউ সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবে। কেননা এটি তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়।
তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেই কিভাবে একজন গ্রাহক সহজেই উবার এর সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
- প্রথমে আপনার মোবাইলের প্লে স্টোর থেকে উবার (Uber) অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন।
- এরপর অ্যাপটি ওপেন করুন।
- এবার এখানে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হবে। কারণ একাউন্ট ব্যতিত কেউ উবারের সেবা গ্রহণ করতে পারবে না। তাই আর দেরি না করে উবারের একটি অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলে নিন। আর আপনি যদি নগদ ভাড়া প্রদান করতে না চান তবে আপনার ডেবিট কার্ডটি এখানে সংযুক্ত করতে পারেন।
- এখন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলেই আপনি যে কোনো সময় উবার অ্যাপ ব্যবহার করে ট্যাক্সি কল করতে পারবেন।
- এবার আপনি যদি একটি গাড়ি ভাড়া করতে চান তবে প্রথমে অ্যাপটিতে লগ ইন করুন।
- এখানে “where to” নামের একটি সার্চ বক্স পাবেন। বক্সে আপনি যেখানে যেতে চান সেখানকার ঠিকানা লিখুন।
- ঠিকানা লেখা হলে এর পরের স্টেপে আপনি তিনটি অপশন দেখতে পাবেন। সেগুলো হলো: “Moto” “UberX” “PREMIERE”. এখন আপনি যদি মোটর সাইকেলে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তবে “Moto” অপশনটিতে ক্লিক করুন। আর যদি নরমাল কোনো গাড়িতে করে যেতে চান তবে “UberX” অপশনটি সিলেক্ট করুন। আবার আপনি যদি খুব ভালো মানের গাড়িতে চড়ে যেতে চান তবে “PREMIERE” অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- এবার এরপরের ধাপে আপনাকে আনুমানিক ভাড়া দেখানো হবে। এখন আপনি যদি এই ভাড়াতে গন্তব্যে যেতে চান তবে “Confirm” বাটনে ক্লিক করুন।
- কনফার্ম করার পর আপনার কাছাকাছি অবস্থিত একজন উবার ড্রাইভার আপনার রিকোয়েস্ট accept করবে।
- এরপর আপনি সেই ড্রাইভারের নাম ও ছবি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল বিবরণী দেখতে পারবেন এবং ড্রাইভারের সঙ্গে সরাসরি ফোন কলে যোগাযোগের মাধ্যমে আপনার লোকেশন সম্পর্কে জানাতে পারবেন যেখান থেকে সে আপনাকে পিক করবে।
- একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনার লোকেশন মত গাড়ি পৌঁছে গেলে আপনি রাইড নিতে পারবেন।
- গন্তব্যে পৌঁছে গেলে আপনাকে আপনার প্রকৃত ভাড়া জানিয়ে দেয়া হবে। ড্রাইভারকে ভাড়া প্রদান করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ুন। আর যদি অ্যাকাউন্টে ডেবিট কার্ড যুক্ত করা থাকে তবে নগদ ভাড়া দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কার্ড থেকেই ভাড়া কেটে নেয়া হবে।
- এখন আপনার মোবাইল অ্যাপ থেকে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ড্রাইভারকে ১ থেকে ৫ রেটিং প্রদান করুন। ব্যাস তাহলেই হয়ে গেল উবারের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে রাইড গ্রহণ।
উবার ব্যবহারের নেতিবাচক দিকসমূহ
পৃথিবীতে অস্তিত্ব রয়েছে এমন যেকোনো জিনিসের যেমন একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে তার কিছু নেতিবাচক দিক। উবার এর ব্যতিক্রম নয়। উবারের এমন কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে যেগুলো চোখে পড়ার মত। যেমন-
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়: উবারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্যাসেঞ্জারদের যে কয়টি অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় অভিযোগটি হলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। এই ভুক্তভোগীরা পরবর্তীতে বলেছেন যে রাইড নেয়ার পূর্বে অ্যাপে যে পরিমাণ ভাড়া দেখানো হয় পরবর্তীতে ভাড়া প্রদানের সময় তা কয়েক গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এতে করে একজন প্যাসেঞ্জার কে মাঝ রাস্তায় ভাড়া প্রদান নিয়ে বিপদে পরতে হয়। কিন্তু তাদের সকলের অভিমত এই যে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি।
চালকের দুর্ব্যবহার: উবারের সেবা গ্রহণ করেছেন এমন গ্রাহকরা প্রায় সময়ই উবার চালকদের দুর্ব্যবহারের স্বীকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সময় মেইনটেইন না করা , গন্তব্যে পৌঁছে না দেয়া , অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানাভাবে উবার চালকগণ প্যাসেঞ্জারের সাথে মিসবিহেব করে থাকেন।
ফুডপান্ডা কি? ফুডপান্ডা থেকে কিভাবে খাবার অর্ডার করবেন?
গন্তব্য শুনে পরে সেখানে যেতে না চাওয়া: এমনটা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায় যে একজন উবার চালক রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করে পরবর্তীতে প্যাসেঞ্জার এর গন্তব্য শুনে নানান অযুহাতে সেখানে যেতে অস্বীকার করেন। ফলে একজন প্যাসেঞ্জার বাধ্য হন রাইড বাতিল করতে এবং ফলশ্রুতিতে তাকে ৩০ টাকা জরিমানা প্রদান করতে হয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আশা করছি ইতিমধ্যে উবার সম্পর্কিত আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। তবে মনে রাখবেন কোনো কিছুতেই কখনো অন্ধ বিশ্বাস করতে নেই। তাই উবার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এর নেতিবাচক দিক গুলোর ব্যাপারে সতর্ক হোন এবং পাশাপাশি এর সেবা গ্রহণের মাধ্যমে আপনার যাতায়াতে নিয়ে আসুন অভাবনীয় পরিবর্তন। ধন্যবাদ।