গুগল অ্যাডসেন্স
কীভাবে অনলাইনে ইনকাম করা যায় তা নিয়ে আমাদের মনে অনেক ধরনের কৌতূহল কাজ করে। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাই সহজে অনলাইনে ইনকাম করার রাস্তা খুঁজে, ফেসবুক গ্রুপে ইনকাম স্ক্রিনশট দেখে আমরা না যে না বুঝে ভুল পথে চলে যাই।
যাইহোক, অনলাইন ইনকাম করার জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক গাইডলাইন এবং সঠিক তথ্যের। এমনও কিছু পথ আছে যা থেকে আপনি অনেক ভালো ইনকাম করতে পারবেন। যেমন ডাটা এন্ট্রি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইউটিউবিং, অ্যাডসেন্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি। আমরা আজকে অনলাইন ইনকামের প্রতিষ্ঠিত একটি মাধ্যম গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কে জানবো। তো চলুন জেনে আসি গুগল অ্যাডসেন্স কি? গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে কাজ করে? গুগল অ্যাডসেন্স থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
গুগল অ্যাডসেন্স কি?
গুগল অ্যাডসেন্স একটি অ্যাড নেটওয়ার্ক। এটি গুগলের একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন যা অ্যাড দেখানোর বিনিময়ে পাবলিশারদের পে করে থাকে। ২০০৩ সালের ১৮ জুন গুগল তাদের অ্যাডসেন্স প্রোগ্রাম চালু করে। বর্তমানে ১১.১ মিলিয়ন ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্স ইউজ করে।
অ্যাড নেটওয়ার্কগুলো সাধারণত তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এরা অ্যাডভারটাইজারের থেকে অ্যাড কালেক্ট করে পাবলিশার দের দেয় যারা সেই অ্যাড নিজেদের ওয়েবসাইট, ভিডিও বা অ্যাপে ডিসপ্লে করে রাখে।
৫ টি সেরা হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম
গুগল অ্যাডসেন্স বাদেও আরও অনেক অ্যাড নেটওয়ার্ক আছে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতার দিক দিয়ে অ্যাডসেন্স সবার থেকে এগিয়ে আছে। এর পেছনে কারন হলো অ্যাডসেন্স গুগলের একটি প্রোগ্রাম এবং বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষ গুগলে সার্চ করে পণ্য বা সেবা ক্রয় করে। যেহেতু গুগল পণ্যের মার্কেটিং এর সাথে সরাসরি জড়িত সেহেতু অ্যাডভারটাইজাররা গুগলে ইনভেস্ট করে।
২০০৩ সালে শুরু হওয়া গুগল অ্যাডসেন্স ২০০৫ সালের মধ্যেই গুগলের মোট রেভিনিউ এর ১৫ শতাংশ দখল করে নেয়। তাহলে ধারণা করেই নেওয়া যায় অ্যাডসেন্স সার্ভিস কত তাড়াতাড়ি মানুষ গ্রহণ করে নেয়।
গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে কাজ করে?
অ্যাডসেন্স একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন যা কয়েকটি ধাপে কাজ করে। অ্যাডসেন্সের প্রধান এবং একমাত্র কাজ অ্যাড শো করানো। কিন্তু চাইলেই কেউ ইচ্ছেমতো অ্যাডসেন্স সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে না। কারন তাদের কিছু নীতিমালা এবং কাজের ধরন আছে।
অ্যাডসেন্স কীভাবে কাজ করে তা জানার আগে আমাদের গুগল অ্যাডস সম্পর্কে একটু ধারণা নিতে হবে। কারন অ্যাডসেন্স এবং অ্যাডস সম্মিলিতভাবে কাজ করে। অর্থাৎ আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যে অ্যাড দেখি তা গুগল কালেক্ট করে গুগল অ্যাডস থেকে। গুগল অ্যাডস এমন একটি সার্ভিস যেখানে আপনি আপনার কোম্পানি, ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের অ্যাড দিতে পারবেন।
আপনার দেওয়া অ্যাড তখন গুগল অ্যাডসেন্স তাদের রেজিস্টার করা পাবলিশারদের ওয়েবসাইট, ভিডিও অথবা অ্যাপে পাবলিশ করে। তো চলুন অ্যাডসেন্স কাজ করার পুরো প্রসেস জেনে আসি।
গুগলের মাধ্যমে নিজেদের সার্ভিস প্রচারণার জন্য গুগল অ্যাডস নামক একটি প্রোগ্রাম আছে। এ প্রোগ্রামের আওতায় গুগল টাকার বিনিময়ে মার্কেটিং করে দেয়। একজন অ্যাডভারটাইজার গুগল অ্যাডস এ অ্যাড ক্যাম্পেইন চালু করে। প্রতিটি অ্যাড সচল রাখার জন্য তারা প্রতি মাসে গুগলকে পে করে।
গুগল এই অ্যাড গুলো তাদের সার্চ রেজাল্টে দেখানো বাদেও সরাসরি ওয়েবসাইট, ভিডিও এবং অ্যাপে দেখানোর ব্যবস্থা করে। এই প্রক্রিয়ায় গুগল প্রথমে ওয়েবসাইট মালিক, ভিডিও ক্রিয়েটর এবং অ্যাপ মালিকদের অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্লাই করার জন্য উৎসাহিত করে।
আপনি যদি আপনার ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল বা নিজের কোন অ্যাপ দিয়ে ইনকাম করতে চান তাহলে অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্লাই করতে হবে। তারা পাবলিশারদের জন্য কিছু রিকোয়ারমেন্ট রেখেছে। আপনাকে সেগুলো পূরণ করতে হবে।
আপনি যখন অ্যাডসেন্সে কোন ওয়েবসাইটের জন্য আবেদন করেন তখন গুগল প্রথমে আপনার ওয়েবসাইট দেখবে। গুগলের ক্রলার আপনার পুরো ওয়েবসাইট ক্রল করবে এবং দেখবে আপনার ওয়েবসাইট কোন বিষয়ের এবং কি কি তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্স এর সব নীতিমালা মেনে তৈরি কিনা সেগুলো ভালো করে যাচাই বাছাই করে।
এরকম যাচাই বাছাই করার পেছনে একটি কারন আছে। গুগল চায় তারা যেন প্রতিটি অ্যাড সুন্দর ভাবে প্লেসমেন্ট করতে পারে। একজন ভিজিটরের ইনটেনশন বোঝার জন্য গুগলের যে রকম অ্যালগরিদম ইউজ হয় ঠিক তেমন করেই তারা তাদের অ্যাড প্লেসমেন্ট করে।
তারা চায় প্রতিটি অ্যাড যেন ওয়েবসাইটের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় এবং ভিজিটরের বিরক্তির কারন না হয়। অর্থাৎ ধরুন আপনি একটি জুতো কেনার ওয়েবসাইটে গেলেন এবং পছন্দ করলেন। কিন্তু কেনার সময় ওই একই পেজে একটি জামার অ্যাড দেখলেন অথবা আপনি যে জুতো কিনলেন তার থেকে ভালো ব্র্যান্ড এর জুতো চোখে পড়লো। এখন হয় আপনি সেই জুতো কিনবেন এবং জামার ওয়েবসাইটে গিয়ে জামা কিনবেন। এই পুরো বিষয়টাই কিন্তু স্বাভাবিক। অন্যদিকে ওই পেজে জামার অ্যাড না থেকে যদি মেডিসিন বা ল্যাপটপ কেনার পেজ থাকে তাহলে কি আপনি তেমন স্বাভাবিক ফিল করবেন? অবশ্যই স্বাভাবিক ফিল হবে না। কারন এখানে রিলেভেনসির অভাব আছে। আর এভাবে অ্যাডভারটাইজার অ্যাড দেওয়ার উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।
এই পুরো প্রক্রিয়া কাজ করে অ্যাড ডিসপ্লে নামক একটি ফিচার দ্বারা। অ্যাডসেন্সে এই ফিচার অটোমেটিক চালু করাই থাকে। এই ফিচারের কাজ হলো একটি অ্যাড টপিকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল ওয়েবসাইট খুঁজে বের করা। যাতে অ্যাড গুলো মিসপ্লেস না হয় এবং ভিজিটরের বিরক্তি না আসে।
এভাবে চুল-চেরা বিশ্লেষণের পর গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভ করে। অ্যাপ্রুভ করার পর তারা একটি অ্যাড কোড দেয়। পাবলিশার হিসেবে আপনার কাজ হবে শুধু সেই কোড আপনার ওয়েবসাইট প্লেস করে দেওয়া। তারপরের বাকী কাজ গুগল একাই অটোমেটিক ভাবে করে। অর্থাৎ কোন পেজে কি অ্যাড শো করবে তা গুগল নিজে নির্ধারণ করে।
অ্যাকাউন্ট করা হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড ক্লিক এবং অ্যাড ইম্প্রেশন অনুযায়ী অ্যামাউন্ট যোগ হবে। অর্থাৎ আপনি যে দেশ বা ভাষা সিলেক্ট করে অ্যাড শো করাবেন তার উপর আপনার আয় নির্ভর করবে। এই প্রক্রিয়াকে CPC (Cost Per Click) বলা হয়। সব থেকে বেশি সিপিসি পাওয়া যায় ইউএসএ থেকে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ থেকে তুলনামুলক কম সিপিসি পাওয়া যায়।
গুগল অ্যাডসেন্সে জমা হওয়া ডলার উত্তোলন করা খুব সহজ। আপনার অ্যাকাউন্টে ১০ ডলার হওয়ার পর গুগল আপনার বর্তমান ঠিকানা যা আপনি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দিয়েছিলেন সেখানে একটি চিঠি পাঠাবে। সেই চিঠিতে একটি পিন থাকবে যা আপনাকে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে বসিয়ে আপনার অ্যাড্রেস ভেরিফাই করে নিতে হবে।
অ্যাড্রেস ভেরিফাই হওয়ার পর অ্যাডসেন্স লোকাল ব্যাংকের ইনফরমেশন যোগ করে নিতে হবে। অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার জমা হওয়ার পর গুগল আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠিয়ে দিবে। অ্যাডসেন্সের মিনিমাম পেআউট ১০০ ডলার এবং প্রতি মাসের ২১ তারিখ গুগল ব্যাংকে পেমেন্ট সেন্ড করে।
গুগল অ্যাডসেন্স থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
অ্যাডসেন্স থেকে কত টাকা আয় করা যাবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। যেমন ওয়েবসাইট কনটেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ, ভিজিটর কাউন্ট, সিপিসি ইত্যাদির উপর। আমরা বাংলাদেশ এবং আমেরিকার সিপিসি হিসেব করলে একটি ধারণা করতে পারবো। কিন্তু অ্যাডসেন্স ইনকাম কোন একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে না। অনেক গুলো টার্ম একসাথে হয়ে অ্যাডসেন্স ইনকাম নির্ধারণ করে।
গুগল অ্যাডসেন্স একটি প্যাসিভ ইনকাম প্রক্রিয়া। আপনি একটি ওয়েবসাইট যদি ঠিকমত তৈরি এবং মেইন্টেইন করতে পারেন তাহলে প্রতি মাসে একটি ভালো ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন। পুরো লেখায় আমরা গুগল অ্যাডসেন্স কি এবং কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জেনেছি। গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।
Thanks