আজকের এই পর্বে আলোচনা করব কি-ওয়ার্ড রিসার্চ নিয়ে। যা এই এসইও এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় । তবে চলুন শুরু করি-
কিওয়ার্ড রিসার্চ কি?
কী-ওয়ার্ড রিসার্চ কি তা জানতে হলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে, কী-ওয়ার্ড কি। সহজ কথায় কি-ওয়ার্ড হলো এমন কিছু বাক্য বা বাক্যাংশ যা আপনার ওয়েবপেজের বিষয়বস্তু বর্ননা করে। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে বলতে মানুষ যা লিখে সার্চ করলে আপনার টারর্গেটেড কন্টেন্ট এ পৌছাতে পারবে তাই হলো আপনার কন্টেন্টের কি-ওয়ার্ড। এ থেকেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কি-ওয়ার্ড আপনার কন্টেন্টের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ন। আর সঠিক কি-ওয়ার্ড বাছাই করার জন্যই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ বিষয়টির আগমন।
কিওয়ার্ড রিসার্চ বলতে আসলে কী বোঝায়?
এটিকে আপনি একটি গবেষণা বলতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন-
- গুগলে মানুষ প্রতিনিয়ত কি ধরনের কথা লিখে বেশি সার্চ করছে?
- কতজন মানুষ আপনার কন্টেন্টের মত বিষয়বস্তু সার্চ করছে?
- তারা আপনার কন্টেন্টকে কি ধরনের ফরমেটে দেখতে চাচ্ছে?
আপনি কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করলে উপরের বিষয়বস্তু ছাড়াও আরো কিছু তথ্য এবং উপাত্ত পাবেন, যার মাধ্যমে সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন, কী ধরণের কন্টেন্ট আপনার লেখা প্রয়োজন আর কোন কি-ওয়ার্ড ইউজ করলে মানুষ আপনার কন্টেন্টে তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারবে। সহজ কথায়, গুগলে র্যাংক করানোর জন্য অর্থাৎ গুগলের প্রথমদিকে যেন আপনার কন্টেন্ট টি থাকে সেই লক্ষ্যে যে রিসার্চ করা হয় তাই হলো কি-ওয়ার্ড রিসার্চ।
কিওয়ার্ড রিসার্চ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আর্টিকেলের এতদূর আপনি যেহেতু পড়ে ফেলেছেন, তাই আশা করি কি-ওয়ার্ড রিসার্চ কী তা আপনি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। আর কি-ওয়ার্ড রিসার্চ কী তা বুঝলে হয়তো আপনার এতক্ষণে এটাও আন্দাজ হয়েছে যে, এটি কেন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আপনার ওয়েবপেজের জন্য।
সঠিক ভাবে আপনি যদি কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলের প্রথম পেজে নিয়ে আসতে পারেন। আর দেখুন কে না চায়, তার ওয়েবসাইটকে গুগলের ফার্স্ট পেজে র্যাংক করাতে। এখন আপনি হয়ত ভাবছেন, গুগলের ফার্স্ট পেজে নিয়ে এসে আমার লাভ কী?
সত্যি কথা বলতে এতে আপনার যা লাভ হবে তা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। আপনার ওয়েবসাইটটি যদি গুগলের প্রথম পেইজে র্যাংকড হয়, তাহলে ভাবুন মানুষ কত সহজেই আপনার কাছে পৌছাতে পারবে। আর যত মানুষ আপনার কাছে পৌছাবে, ততই তো আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়বে।
আপনি কি এটা চান না? নিশ্চয়ই চান। কারণ এটাই তো ওয়েবসাইট এর মূল লক্ষ্য। তবে গুগলের ফার্স্ট পেজে নিয়ে আসার কথাটা মুখে বলা যতটা সহজ , করে দেখানো কিন্তু ততটাই কঠিন। এমনকি একজন এসইও এক্সপার্ট কেও এটি করতে একপ্রকার হিমশিম খেতে হয়। তাই বলে আপনি ভেবে বসবেন না যে আপনার ওয়েবসাইট টি গুগলের প্রথম দিকের পেজে র্যাংক করানো টা একেবারেই অসম্ভব। সঠিকভাবে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করলে আপনিও পারেন গুগলের প্রথম পেজে আপনার ওয়েবসাইটটিকে নিয়ে আসতে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সেই বিষয়ের উপরই জোড় দিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকুন, আশা করি, আপনার লক্ষ্য পূরন হবে।
কিওয়ার্ড রিসার্চ কিভাবে করবেন?
এবার আসি আমাদের মূল আলোচনায়। কি-ওয়ার্ড রিসার্চ কি এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ন তা তো জানা হলো। কিন্তু সঠিকভাবে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করবেন কিভাবে? নিচে আমি ধাপে ধাপে পুরো বিষয়টি আপনাদের কাছে তুলে ধরবো। আশা করি, বুঝতে কোন সমস্যা হবে না।
বিষয়বস্তু বা টপিক নির্ধারণ
সর্বপ্রথম যে বিষয়টির উপর আপনার জোড় দিতে হবে তা হলো, আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক বিষয় সিলেক্ট করা। ব্রেইন স্টোর্ম করে আপনাকে ভাবতে হবে কি ধরনের টপিক আপনার ওয়েবসাইট এবং আপনার বিজনেসের জন্য ভালো হবে। এর জন্য আপনি একটি লিস্ট তৈরি করুন, যে যে বিষয়গুলোর উপর আর্টিকেল আপনার ওয়েবসাইটে আপনি রাখতে চান বা যেগুলো আপনার বিজনেসের জন্য প্রয়োজন হবে। এবার এই টপিকগুলো থেকেই আপনাকে বের করতে হবে সঠিক কি-ওয়ার্ড। এর জন্য কতগুলো বিষয় আপনাকে ভাবতে হবে-
ধরুন, আপনি এসইও নিয়েই লিখতে চান। এবার আপনি চিন্তা করুন, আপনি যদি এসইও নিয়ে জানতে চাইতেন তাহলে গুগলে কোন কোন কি-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করতেন। আর আপনার ওয়েবসাইটের জন্যও তেমন একটা কি-ওয়ার্ড ঠিক করুন যা বেশিরভাগ মানুষ সার্চ করে। তবে সমস্যা কিন্তু এখানেই , আপনি যদি খুব কমন একটা কি-ওয়ার্ড ঠিক করেন তাহলে কিন্তু গুগলের এই হাজার কন্টেনটের মাঝে আপনার ওয়েবসাইটটিকে খুজে পাওয়া সম্ভব হবে না, তাহলে? এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট করে ব্যতিক্রম কিছু ঠিক করতে হবে তবে মনে রাখবেন এমন কোন কি-ওয়ার্ড যেন না হয়ে যায় যেগুলো মানুষ কখনো কল্পনাও করে নি!! অর্থাৎ প্রোডাক্টের নাম দিয়েই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে সঠিক কি-ওয়ার্ড টি।
সাব-টপিক পর্যালোচনা
এবার আপনাকে আপনার টপিকগুলোকে কয়েকটি সাব-টপিকে ভাগ করে নিন। যেমন ধরুন আপনার ওয়েবসাইটের একটি গুরুত্বপুর্ন টপিক হলো এসইও। এবার ভাবুন এস ই ও নিয়ে কি কি বিষয় জানার আছে। অন পেজ অপটিমাইজেশন, অফ পেজ অপটিমাইজেশন, টেকনিক্যাল এসইও, ব্যাকলিংক এসব বিষয়। এবার এই সাবটপিকগুলো নিয়ে আগের মত ভাবুন আর রিসার্চ করুন। এতে আপনার কিওয়ার্ডের টপিক ঠিক করা আরো একধাপ সহজ হয়ে যাবে। আবার সাব-টপিক বের করার পাশাপাশি, বিভিন্ন কী-ওইয়ার্ড রিসার্চ টুলসের সাহায্যে আপনি চেক করে নিতে পারেন কোন কোন কিওয়ার্ডগুলো র্যাংক করানো আপনার জন্য সহজ হবে।
আর তাছাড়া আপনার যদি ব্লগিং এর কিছু দিন অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে খেয়াল করুন মানুষ কোন কোন কি-ওয়ার্ডগুলো লিখে সার্চ করলে আপনার ওয়েবসাইটে পৌছাতে পারছে। আর সেই কি-ওয়ার্ড গুলো নিয়ে কাজ করলেও অনেকটা ফলপ্রসু হবে বলে আশা করা যায়। এবার আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন মানুষ কি লিখে আমার ওয়েবসাইটে আসছে, তা আমি জানব কিভাবে? এর জন্য আপনি গুগল এনালাইটিক্স টুল ব্যবহার করতে পারেন।
রিলেটেড কিওয়ার্ডের গুরুত্ব
আপনি যখন কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করবেন, তখন ভাবুন আপনার কি-ওয়ার্ডের সাথে রিলেটেড কি কি কি-ওয়ার্ড নিয়ে মানুষ সার্চ করছে। এর জন্য আপনার আপাতত কি-ওয়ার্ড টি লিখে গুগলের সার্চ দিন। দেখবেন সবার নিচে কতগুলো রিলেটেড কি-ওয়ার্ড আসবে। এই রিলেটেড কি-ওয়ার্ডগুলো থেকে আপনি যদি একটি বেছে নিয়ে আবার সার্চ দেন তাহলে সেই সার্চকৃত কি-ওয়ার্ডের আবার কিছু রিলেটেড কি-ওয়ার্ড পাবেন। এভাবে আপনি করতে থাকলে একসময় বুঝে যাবেন মানুষ কি ধরনের কি-ওয়ার্ড লিখে বেশি সার্চ করে আর আপনার জন্য উপযুক্ত কি-ওয়ার্ড কি হতে পারে। সহজভাবে করার জন্য গুগলে আপনি অনেক কন্টেন্ট স্ট্রেটিজি টুলস পাবেন, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি একেবারেই সবগুলো কি-ওয়ার্ড বের করতে পারবেন।
সীড কি-ওয়ার্ডের পাশাপাশি কিছু লং টেইল কিওয়ার্ড খুঁজে বের করুন
লং টেইল কি-ওয়ার্ড কি তা যদি আপনি না জেনে থাকেন, তাহলে বলে রাখি এটি আপনার ছোট কি-ওয়ার্ড তুলনায় কিছুটা বড় । অর্থাৎ সীড কি-ওয়ার্ড বা দুই তিন শব্দের কি-ওয়ার্ড এর পাশাপাশি আরো কিছু শব্দ যূক্ত করে যে কি-ওয়ার্ড তৈরি করা হয়।
তবে মনে রাখবেন , লং টেইল কি-ওয়ার্ড কিন্তু আপনার সুনির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড টি অবশ্যই থাকতে হবে। যেমনঃ ‘ এসইও কিভাবে করতে হয়?’ বা ‘এসইও করার সহজ কিছু উপায়’ এই দুইটি কি-ওয়ার্ড হলো লং টেইল কি-ওয়ার্ড আর এখানে মূল শব্দ কি, তা হয়ত আর বলে দিতে হবে না। সেটা হল এসইও। আপনি হয়তো কি-ওয়ার্ড বুঝতে পারছেন এসইও থেকে ‘ এসইও কি-ওয়ার্ড শুরু করতে হয়’ এই কি-ওয়ার্ডটি গুগলে র্যাংক করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, লং টেইল কি-ওয়ার্ড র্যাংক করানো সহজ কেন??
আপনি যখন নির্দিষ্ট ছোট কোন কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, সেটা নিয়ে আরো অনেক আর্টিকেল গুগলে রয়েছে। আর তাই কম্পিটিশনও অনেক বেশি হবে। সেই তুলনায় আপনি যদি অপেক্ষাকৃত বড় কি-ওয়ার্ড ইউস করেন, সেক্ষেত্রে গুগলে র্যাংক করানো আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আপনার কম্পিটিটরদের নিয়ে ভাবুন
আমি আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের নিয়ে ভাবতে বলেছি, তার মানে এই না যে, তারা যা করছে হুবহু আপনাকে তাই করতে হবে। তবে মনে রাখবেন, প্রতিযোগিদের নিয়ে গবেষণা করলে আপনি আপানার ব্যবসাকে আরো ভালোভাবে বুঝতে এবং জানতে পারবেন। সবার কি-ওয়ার্ড আলাদা হলেও কিন্তু সব কি-ওয়ার্ড র্যাংক করানোর টেকনিকগুলো মোটামুটি একই। আর তাই প্রতিযোগীদের উপর রিসার্চ করে বের করুন তারা কিভাবে তাদের কি-ওয়ার্ডগুলো গুগলে র্যাংক করাচ্ছে। আর আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাদের কি-ওয়ার্ডগুলোর মাঝে আপনারটাও আছে, তাহলে সেটা নিয়েই আগে মনোযোগ দিন। আর কি-ওয়ার্ড এইসব কম্পিটিশনগুলো খুজে বের করার জন্য আপনি SEMrush টুলসটি ব্যবহার করতে পারেন।
কিওয়ার্ড রিসার্চের বিভিন্ন টুলস
এবার আমি আপনাদের সাথে কিওয়ার্ড রিসার্চের বিভিন্ন টুলসের সাথে পরিচয় করাবো। আর সাথে সাথে সেগুলোর লিংকও আমি আপনাদের সুবিদার্ধে দিয়ে দিব
- গুগল কী-ওয়ার্ড প্লানার
- সেমরাস
- আহরেফস
- গুগল ট্রেন্ডস
- ম্যাজেস্টিক
- কি-ওয়ার্ড ফাইন্ডার
- স্পাইফু
- লং টেল প্রো
- মার্কেট সামুরাই
- কিওয়ার্ড এভরিহ্যায়ার
এবার আপনি হয়তো ভাবছেন টুলসগুলো ব্যবহার করবো কিভাবে? আসলে এগুলো ব্যবহার করা তেমন কোন কঠিন বিষয় না। আপনি যদি এদের ওয়েবসাইটে যান তারাই আপনাকে বুঝিয়ে দিবে কিভাবে তাদের টুলসগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন আপনার সুনির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডটি খুঁজে পেতে। আশা করি, এর জন্য আপনাকে খুব একটা বেশি বেগ পেতে হবে না।
আমরা আমাদের আর্টিকেলের প্রায় একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এবার কিছু পরামর্শ আমি আপনার জন্য বলতে চাই। আসলে এসইও বিষয়টি হুট করে একদিনে শিখে ফেলা যায় না। এটা শেখার জন্য বহুদিন চর্চা করতে হবে। প্রথম প্রথম আপনার পেজটি যদি গুগলে র্যাংক করাতে না পারেন , তাই বলে ভেবে বসবেন না যে আপনার দ্বারা হবে না। সময় সময় এর স্ট্রেটিজিগুলোও কিন্তু পরিবর্তন হয়। কারণ মানুষ সারাজীবন এক জিনিস সার্চ দেয় না। তাই আপনাকে কিছু দিন পর পর কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে, আর উপযুক্ত কি-ওয়ার্ডগুলো ঠিক করে নিতে হবে। তবেই আপনার ওয়েব পেজের র্যাঙ্ক আপনি ধরে রাখতে পারবেন আর সঠিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনি ওয়েবসাইট এর যত বেশি পেজ র্যাঙ্ক করাতে সমর্থ হবেন ততই আপনার ওয়েবসাইটের মূল্য গুগলের কাছে বৃদ্ধি পাবে।