ই-কমার্স কি? ই-কমার্স এর সুবিধা

দ্রুত ইন্টারনেট সেবা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বা ই-কমার্সের চাহিদা বিগত কয়েকবছরে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য ই-কমার্স ওয়েবসাইট। যেখান থেকে ঘরে বসেই ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা যায়।

তাই দেখা যাচ্ছে এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের মাঝে অনেক কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে। আবার এত অধিক সংখ্যক ওয়েবসাইট থাকার কারণে অনেকে কনফিউশনে পরে যান যে, বিশ্বস্ততা এবং প্রোডাক্টের কোয়ালিটির দিক থেকে কোন সাইটটি ভালো বা কোনটি থেকে তারা কেমন ও কি ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

ই-কমার্স কি?

ই-কমার্স (E-commerce) হলো ইলেকট্রনিক কমার্স এর সংক্ষিপ্ত রূপ। আরেকটু বাড়িয়ে বলতে গেলে, আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ডিজিটাল ডিভাইস ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়, পণ্যের মার্কেটিং, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন এবং যাবতীয় হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করাকেই ই-কমার্স বলে।

অর্থ্যাৎ ই-কমার্স এমন একটি ডিজিটাল ব্যবসা পদ্ধতি যে প্রক্রিয়ায় একজন ক্রেতা যেমন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যেকোন পণ্য ক্রয় করতে পারেন তেমনই একজন বিক্রেতা ইন্টারনেটের সাহায্যে দেশের যেকোনো প্রান্তে অবস্থিত যেকোন ভোক্তার নিকট কাঙ্ক্ষিত পণ্য পৌঁছে দিতে পারে।

ই-কমার্স প্রধানত চার প্রকার। যথা-

১.ব্যবসা থেকে ভোক্তা (Business to Consumer) : এই প্রক্রিয়ায় মূলত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ভোক্তা সরাসরি পণ্য ক্রয় করে থাকে। তাই এই ব্যবসা পদ্ধতিকে ব্যবসা থেকে ভোক্তা ই-কমার্স বলা হয়।

২.ব্যবসা থেকে ব্যবসা (Business to Business) : ব্যবসা থেকে ব্যবসা ই-কমার্স পদ্ধতিতে এক বা একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেচা-কেনা বা লেনদন সম্পন্ন হয়।

৩.ভোক্তা থেকে ব্যবসা (Consumers to Business) : যখন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভোক্তার নিকট থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে তাকে ভোক্তা থেকে ব্যবসা পদ্ধতি বলা হয়।

৪.ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumers to Consumers) : ই-কমার্স ব্যবসার এই প্রক্রিয়ায় যেকোন দুইজন ভোক্তার মধ্যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় এবং পারস্পরিক লেনদন ঘটে থাকে।

ই-কমার্স এর সুবিধা

ই-কমার্স এর সুবিধা

যতই দিন পার হচ্ছে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে বহুগুণে। চাকরি, পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-সংসার সব মিলিয়ে প্রত্যেকেই ভীষণ ব্যস্ততার মাঝে দিন পার করছেন। যার ফলে প্রতিদিন বাজারে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করা বেশ কষ্ট সাধ্য এবং পর্যাপ্ত সময়েরও প্রয়োজন হয়। তাহলে কেমন হত যদি এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘরে বসেই কেনা যেত এবং গ্রহণ করা যেত?

হ্যাঁ বন্ধুরা! এই অসম্ভবকে এখন সম্ভব করে দিয়েছে ই-কমার্স। ই-কমার্সের কল্যাণে এখন ঘরে বসেই যে কোন পণ্য ক্রয় করা সম্ভব। শুধুমাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। কেবল পণ্য ক্রয় করাই নয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে সেই পণ্য সরাসরি পৌছেঁ যায় গ্রাহকের দোরগোড়ায়।

তাছাড়া চলমান বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সমগ্র বিশ্ব যখন স্থবির, মানুষজন যখন ঘরের মধ্যে বন্দি প্রায়, ই-কমার্সের আশীর্বাদে পুরোপুরি সুরক্ষার সাথে মানুষ ঘরে বসেই যেকোন সময় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে নিতে পারছেন।

ই-কমার্সের এরূপ অসংখ্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে যা এরকম এককথায় বলে শেষ করা যাবেনা। ই-কমার্সের সবথেকে বড় কয়েকটি সুবিধা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. ঘরে বসে পণ্য ক্রয়: ই-কমার্সের সবথেকে বড় সুবিধাটি হলো একজন ক্রেতা ঘরে বসে বা তার নির্দিষ্ট কাজের জায়গা থেকেই পণ্য ক্রয়, পণ্য গ্রহণ এবং লেনদেন করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিজিটাল ডিভাইস যেমন- মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি।

২. দেশের যেকোন প্রান্তে পণ্য পৌছেঁ দেয়া: ই-কমার্স ব্যবসা পদ্ধতিতে একজন ব্যবসায়ী তার দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের যেকোন প্রান্তে তাঁর পণ্য ও সেবা পৌছেঁ দিতে পারেন। কেননা এই ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় একজন ক্রেতা এবং বিক্রেতা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোন প্রান্ত থেকে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।

৩. ক্ষুদ্র পরিসরে উদ্যোক্তা সৃষ্টি: ই-কমার্স সেবায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কেননা এই ব্যবসা পদ্ধতিতে দোকান বা কোন প্রতিষ্ঠান ছাড়াই শুধুমাত্র ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা সম্ভব। ফলে একজন উদ্যোক্তা কোন খরচ ছাড়া বা খুব অল্প ব্যয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন এবং বেকারত্ব হ্রাস করতে পারেন।

৪. লেনদেন প্রক্রিয়া সহজতর: ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঘরে বসে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা যায়। অনেক সময় পণ্য হাতে পাওয়ার পর সরাসরি ডেলিভারি ম্যান এর নিকট পণ্যের দাম পরিশোধ করা যায়।

৫. ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস: ই-কমার্স ব্যবসা প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ অনেক কমে যায়। পণ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রচার এবং প্রক্রিয়াকরণ অনেক সহজতর বিধায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ সাধারণের তুলনায় অনেক হ্রাস পায়। 

ইভ্যালি কিভাবে তৈরি হলো? ইভ্যালি কত বড়?

Leave a Reply