অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট

বর্তমানে বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য আধুনিকায়ন হল অনলাইন শপিং বা অনলাইন কেনাকাটা। খুব বেশি সময় নয়, মাত্র কয়েক বছর ধরেই অনলাইন কেনাকাটা প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর এর পিছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে তাহলো উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা। তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বে অনলাইন কেনাকাটার যাত্রা শুরু হলেও এর বিপুল জনপ্রিয়তা ও উন্নয়ন সাধন হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে।

মূলত অনলাইন কেনাকাটা গুলো পরিচালিত হয় বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মত প্ল্যাটফর্ম থেকে। যেগুলো পরিচালনার জন্য মোটামুটি উচ্চগতির ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। আবার গ্রাহকদের এসব ওয়েবসাইট ভিজিট করা ও পণ্য অর্ডার করার জন্যও প্রয়োজন হয় ইন্টারনেটের। তাই বলা যেতে পারে অনলাইন কেনাকাটার প্রাণ ভোমরা হলো এই উচ্চগতির ইন্টারনেট।

উচ্চগতির ইন্টারনেট আর সবার হাতে হাতে থাকা স্মার্টফোনের কারণে অনলাইন কেনাকাটার ধারণা বর্তমান বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পৌঁছে গেছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনলাইন কেনাকাটার পরিমাণ প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সাথে বিশ্বের মোট পণ্যের প্রায় ১৩ শতাংশই অনলাইনে বিক্রি হয়ে থাকে। যার পরিমাণ প্রতিনিয়তি বাড়ছে। এমনকি বর্তমান বাংলাদেশেও বছরে হাজার কোটি টাকারও বেশি পণ্য অনলাইনে কেনাকাটা হয়ে থাকে। এ থেকেই বিশ্বব্যাপী অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তা অনুধাবন করা যায়।

অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট

অনলাইনে কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম হলো অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইট মূলত ভার্চুয়াল দোকান হিসেবে কাজ করে। বিক্রেতাদের পণ্যগুলো এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য সুন্দরভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও পণ্যগুলোর বিস্তারিত বিবরণ, মূল্য ও বিভিন্ন অফারও এখানে উল্লেখ থাকে। যার ফলে যে কেউ খুব সহজেই এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি খুঁজে অর্ডার দিতে পারে।

অনলাইনে কেনাকাটার জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কয়েকটি ওয়েবসাইট ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন দেশে অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয় এমন কয়েকটি অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইট এর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যামাজন, আলিবাবা, ওয়ালমার্ট ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন দেশে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে বাংলাদেশে দারাজ, অথবা ও ইভ্যালি এবং ভারতে ইন্ডিয়া মার্ট, ফ্লিপকার্ট ইত্যাদি অন্যতম।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে এসব ওয়েবসাইটের কোনটিতে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য যেমন- বই, গ্রোসারি, ফুড ইত্যাদি বিক্রি করা হলেও অধিকাংশ ওয়েবসাইটে প্রায় সব ধরনের পণ্যই বিক্রি করতে দেখা যায়। বাংলাদেশেও এরকম বেশ কয়েকটি অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে। শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য যেমন বই, গ্রোসারি বা খাদ্য পণ্য কেনাকাটা করার এমন কয়েকটি ওয়েবসাইট হলো- রকমারি, চালডাল, ফুড পান্ডা ইত্যাদি। আবার একসাথে প্রায় সব ধরনের পণ্যই কেনাকাটা করা যায় এরকম ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হলো- দারাজ, ইভ্যালি, আজকের ডিল ইত্যাদি।

সাধারণত আমাদের কেনাকাটা করার জন্য দোকানে যেতে হলেও, অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলোই ভার্চুয়াল দোকান হিসেবে কাজ করে। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই গ্রাহককে পণ্য প্রদর্শন, অর্ডার নেয়া, পেমেন্ট ও রিসিট প্রদানের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, সয়ংক্রিয়ভাবে এসব ওয়েবসাইট একই সময়ে হাজার হাজার গ্রাহকে কে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে থাকে। যার ফলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার চেয়ে সময়, শ্রম ও অর্থ এ সবগুলো জিনিসেরই সাশ্রয় হয়। তাই বলতে পারেন ওয়েবসাইট হলো এমন একটি জাদু মন্ত্র, যা ছাড়া অনলাইন কেনাকাটা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

অনলাইন শপিং কিভাবে করে

বর্তমান সময়ে সকলেই বিভিন্ন কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে, চাইলে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। বিশেষ করে কোন কিছু কেনাকাটা করতে গেলে তো কথাই নেই। এর জন্য লম্বা একটা সময় বরাদ্দ রাখতে হয়। আবার বিশেষ কোনো উৎসবে কেনাকাটা করা অনেক ঝামেলার। যা হয়তো অনেকের জন্যই ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না। আর এসব সমস্যার যুগান্তকারী সমাধান করে দিয়েছে অনলাইন কেনাকাটা। এখন আপনি চাইলেই ঘরে বসে, গাড়িতে কিংবা অফিসে বসে যখন ইচ্ছে খুব সহজেই অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারেন।

অনলাইন কেনাকাটার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে। আপনাকে প্রথমেই এসব ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে কোন একটিতে প্রবেশ করতে হবে। এজন্য আপনি আপনার স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে এ ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে পারেন। বর্তমানে বেশিরভাগ ই-কমার্স সাইটগুলোরই নির্দিষ্ট অ্যাপস রয়েছে। তাই আপনি চাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে বা ব্রাউজ করে যেকোন উপায়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন।

ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের পর আপনি অনেক ধরনের পণ্য দেখতে পাবেন। তবে আপনার কাঙ্খিত পণ্যটি খুঁজে পেতে ওয়েবসাইটে থাকা সার্চ বক্সে পন্যটির নাম লিখে সার্চ দিতে বা ক্যাটাগরি অপশন থেকে সিলেক্ট করে নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ; মনে করুন আপনি একটি স্মার্টফোন কিনতে চান। এজন্য আপনাকে প্রথমে ওই ওয়েবসাইটটির সার্চ বক্সে স্মর্টফোন লিখে সার্চ দিতে হবে বা ক্যাটাগরি অপশন থেকে স্মার্টফোন সিলেক্ট করে নিতে হবে।

এখন আপনার সামনে ওয়েবসাইটটিতে থাকা সকল স্মার্টফোনগুলোকে প্রদর্শন করা হবে। এখানে মূলত আপনি স্মার্টফোনগুলোর নাম, ছবি, মূল্য, মূল্যছাড় ও বেসিক কিছু তথ্য পাবেন। এছাড়া প্রদর্শিত ছবি বা লিঙ্কের উপরে ক্লিক করে বিস্তারিত তথ্যও দেখে নিতে পারবেন। এখানে কালার বা ভ্যারিয়েন্ট বাছাই করার অপশন থাকলে নিজের পছন্দমত বেছে নিতে পারবেন। সবশেষে অর্ডার অপশনটি চেপে পণ্যটি অর্ডার করে দিতে পারেন। তবে এজন্য অবশ্যই আপনাকে সাইটটিতে একটি একাউন্ট থাকতে হবে। তাই নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বারের মত বেসিক কিছু তথ্য দিয়ে সাইটটিতে রেজিষ্ট্রেশন করে নিন। মূল্য পরিশোধ বা পেমেন্টের জন্য অনেকক্ষেত্রেই অগ্রিম মূল্য পরিশোধ বা পণ্য হাতে পেয়ে মুল্য পরিশোধের  সুযোগ থাকে। ওয়েবসাইটের নীতিমালা অনুযায়ী যেকোনো একটি উপায়ে মূল্য পরিশোধ করে দিতে পারেন। ব্যাস হয়ে গেলো অনলাইনে কেনাকাটা করা। এখন আপনি কোম্পানি প্রদত্ত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার ঠিকানায় পণ্যটির ডেলিভারি পেয়ে যাবেন।

তবে একাধিক পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনি চাইলে একসাথে সব পণ্য অর্ডার দিতে পারেন। যা ওয়েবসাইটটিতে থাকা আপনার অ্যাকাউন্টে ভার্চুয়াল কার্ট বা ওয়ালেটে জমা থাকবে। এখান থেকে একসাথে সব পণ্যের মূল্য পরিশোধের সুবিধা পাবেন। এভাবে খুব সহজেই যে কেউ অনলাইন থেকে কোন কিছু কেনাকাটা করতে পারে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অনলাইন কেনাকাটার ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলো ক্রমেই প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অনলাইন শপিংয়ের কথা বললে, যে নামগুলো সবার সামনে আসে সেগুলো হলো Daraz , Evaly , Ajker Deal মতো ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। 

তবে এ সবকিছু ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শপিং বা কেনাকাটার ওয়েবসাইট হওয়ার কৃতিত্বটা কিন্তু দখল করেছে দারাজ। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা “দারাজ বাংলাদেশ” নামের এ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি মূলত বাংলাদেশ অনলাইন কেনাকাটার ভিত্তি স্থাপন করেছে। দারাজের মূল প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানি জার্মানির রকেট ইন্টারন্যাশনাল হলেও পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বিখ্যাত শপিং ওয়েবসাইট আলিবাবা গ্রুপ এটিকে কিনে নেয়। বর্তমানে আলিবাবা গ্রুপের অধীনে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাংলাদেশেই নয়। এছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরের মত এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েক লাখ গ্রাহক রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি প্রতি প্রতি মাসে প্রায় ২০ লক্ষ পণ্য বিক্রি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের দাবি মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ অনলাইন কেনাকাটার ৮০ শতাংশই এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের অফার, ডিসকাউন্ট বা মূল্যছাড়ের ক্যাম্পেইন চালু থাকে প্রতিষ্ঠানটিতে। এগুলোর মধ্যে ১১.১১ (ইলেভেন ইলেভেন) ক্যাম্পেইন, মেগা ডিল, ইলেকট্রনিক উইক ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া অনলাইন কেনাকাটার সুবিধা গ্রামীণ পর্যায়ে পৌছে দেয়ার জন্য “দারাজ ভিলেজ” নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় দারাজের অফিস সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকছে। ভবিষ্যতে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

তবে দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান দারাজ ডট কম সুনামের সাথে কাজ করে গেলেও বিভিন্ন সময়ে এর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পরিমাণও কিন্তু কম নয়। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহক কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে, মানহীন বা ত্রুটি যুক্ত পণ্য পেয়ে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ করে থাকেন। যদিও দারাজের মতে এসব অভিযোগের পরিমাণ মাত্র ০.০১ শতাংশ। যাইহোক তারপরেও দারাজ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে আরো ভালো সেবা প্রদানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এ প্রতিষ্ঠানটি।

ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার আগে যা জানা জরুরি

আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির আধুনিকায়নের আশীর্বাদ হলো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। যা নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। অনলাইন কেনাকাটার ফলে মানুষের মূল্যবান সময়, অর্থ ও শ্রমের অপচয় কমে এসেছে। ফলে অনেকেই অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আর ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে অনলাইন কেনাকাটার মত সুবিধা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।

Leave a Reply