ফ্রিল্যান্সার মাহমুদুল হাসান এর সফলতার গল্প

আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন

আমি মাহমুদুল হাসান। ২০১২ সাল থেকে কাজ করছি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কে একজন ফ্রিল্যান্স ওয়েব রিসার্চার হিসেবে। সাথে চেষ্টা করছি নিজের একটা এজেন্সি দাঁড় করাতে।

অনলাইনে যে ইনকাম করা যায় এটা প্রথম কিভাবে জেনেছেন?

এটা প্রথম জেনেছি টেকটিউনস নামের একটা ব্লগ থেকে। ২০১২ এর দিকে ব্লগটা বেশ জনপ্রিয় ছিল প্রায় সবগুলো পোস্টই পড়া হত এবং সেখান থেকেই জানতে পারি অনলাইনে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আয় করা যায়।

কোথায় থেকে, কিভাবে কাজ শিখলেন?

কাজ শেখা নিজে থেকেই বেশ কিছু ব্লগ, ইউটিউব, ফ্রিল্যান্সিং রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপ এবং সমমনা কিছু বন্ধুবান্ধবদের সাথে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে। আমার প্রথম দিকের ক্লায়েন্টরাও বেশ হেল্পফুল ছিল।

ফাইভারে কাজ পাবার উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন

প্রথম দিকে কাজ করতে গিয়ে কি কি অসুবিধায় পড়েছেন?

প্রথম যে সমস্যায় পরেছি সেটা হল ধীরগতির ইন্টারনেট কানেকশন। কাজ শেখার প্রথম দিকে মোবাইল ইন্টারনেটের ২জি কানেকশনে টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করে দেখা লাগতো। গ্রামে থাকি তাই এখানে ব্রডব্যান্ডও সহজলভ্য ছিল না। ৮ বছর পরে এসে ইন্টারনেট এবং বিদ্যুতের অবস্থা সন্তোষজনক হলেও এখন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরতে হয় সহজ একটা পেমেন্ট গেটওয়ে নিয়ে।

সফলতা পেলেন কবে এবং কিভাবে?

আপওয়ার্কে ২০১২ সালে প্রথম কাজ পেলেও নিয়মিত প্রোজেক্ট পেতে থাকি ২০১৩ থেকে। এরপরেও বেশ কিছু চড়াই-উৎরাই ছিল তবে আমি সব সময় ডেডিকেটেড ছিলাম। ধীরে ধীরে প্রোফাইলটা গ্রো করতে থাকে, বেশকিছু ভালো ফিডব্যাকও জমা হয়। এখন আমরা ৩ জনের ছোট্ট একটা টিম। আপওয়ার্কের বাইরেও নিজের এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করছি। 

এখন বর্তমানে কি কি করছেন?

বর্তমানে দুইটা রিয়েল এস্টেট এজেন্সির সাথে কাজ করছি। সাথে মার্কেটপ্লেসে ওয়েব রিসার্চ, লিড জেনারেশন, ডাটা এন্ট্রি সার্ভিসও দিচ্ছি। 

মাহমুদুল ভাই অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের মতই ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। কাজের ফাঁকে ঘুরে বেড়ান দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে

আপনি কি নিজেকে সফল মনে করেন?

সফলতার মাপকাঠি আসলে একেক জনের কাছে একেক রকম। নিজে ভালো আছি, পরিবারকে ভালো রাখতে পারছি, পরিবারে যথেষ্ট সময় দিতে পারছি, দুই-তিন জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছি, মাঝে মাঝে ঘুরতেও যেতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ নিজেকে মোটামুটি সফলই মনে হয়।

আপনি যে সেক্টরে কাজ করেন সেই সেক্টরে বাংলাদেশিদের অবস্থান কোথায়?

এডমিন সাপোর্ট ক্যাটাগরিতে আমরা বেশ ভালো অবস্থানে আছি। খুব সম্ভবত ফিলিপাইনের ফ্রিল্যান্সাররা আমাদের চেয়ে একটু এগিয়ে আছে এই ক্যাটাগরিতে। কমিউনিকেশন স্কিলটা বাড়াতে পারলে আমাদের আরোও ভালো করার সুযোগ আছে।

আপনি কি টিম ভিত্তিক কাজ করেন? কিভাবে টিম গড়ালেন? কিভাবে টিম মেইন্টেইন করেন?

আগেই বলেছি আমরা এখন ৩ জনের ছোট্র একটা টিম। আমার বড় ভাই এবং ছোট ভাই সোহাগ আমার টিম মেম্বার। কাজের ব্যাপারে তারাও বেশ ডেডিকেটেড। করোনার কারনে আপাতত ওয়ার্ক ফ্রম হোম রুলস ফলো করছি। 

আপনার দৃষ্টিতে এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ কেমন?

আমার কাছে এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ বেশ ভালো মনে হয়, টেকনোলজির ব্যবহার বাড়তেছে, টেক জবগুলোর নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, অনেক টেক উদ্যোক্তা উঠে আসতেছে সবকিছু মিলিয়ে এই সেক্টর বেশ আগাবে বলেই মনে হচ্ছে।

যারা এই কাজটা নতুন শুরু করতে চায় তারা কিভাবে এটি শুরু করতে পারে?

এখন গুগল, ইউটিউব ঘাটলেই বেশ ভালো রিসোর্স পাওয়া যায়। গুগল, ইউটিউবের সাথে বিভিন্ন ব্লগ, ফোরাম, ফেসবুক গ্রুপেও বেশ ভালো হেল্প পাওয়া যায়। তবে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেইনিং নিতে চাইলে সর্বপ্রথম পরামর্শ থাকবে ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা যাচাই করা এবং ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটিতে তার গ্রহনযোগ্যতা কেমন তা বিবেচনা করা।

লিড জেনারেশন কি? লিড জেনারেশন কিভাবে করবেন?

আপনি নিজেকে ৫ বছর পর কোন পর্যায়ে দেখতে চান? আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

৫ বছর পর নিজেকে কি অবস্থানে দেখতে চাই এরকম স্পেসিফিক কোন প্লান নাই। তবে নিজের এজেন্সিটাকে আরোও বড় করতে চাই, আরোও কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। ইচ্ছা আছে ট্রেডিশনাল কোন ব্যবসায় জড়ানোর। 

[একটা ফানি প্রশ্ন করি, কিছু মনে করবেন না, উত্তর দেওয়া অপশনাল]

এই যে রাত জেগে কাজ করেন, এতো কিছুর মধ্যে ভাবিকে সময় দেন কি ভাবে? বিবাহিত ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাপারে দাম্পত্য জীবন সুখি করে তোলার কিছু পরামর্শ দেন।

প্রথমত আমি কাজের এক্সেসিভ কোন প্রেসার নেইনা। সাথে টিম মেম্বাররা ডেডিকেটেড থাকায় আমার দায়িত্বও অনেক কমে যায়। হাতে একসাথে বেশ কিছু প্রোজেক্ট এলে ফ্রিল্যান্সার ডট কম থেকে কোন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করি বা পরিচিত ভাই ব্রাদারের থেকে ফিক্সড প্রাইসে করিয়ে নিই। সবকিছু মিলিয়ে বেশ বড় একটা সময়ই পরিবারকে দেওয়া হয়। আর শুধু ফ্রিল্যান্সার নয় সব পেশার মানুষের দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকাটা বেশ জরুরি। 

এই কাজ গুলো কি শুধু মার্কেটপ্লেস ভিত্তিক? নাকি বাহিরেও করা সম্ভব? সম্ভব হলে কিভাবে বাহিরে থেকে কাজ ধরা যেতে পারে?

এই কাজগুলো শুধুমাত্র মার্কেটপ্লেস ভিত্তিক না, বাহিরেও বেশ ভালো পরিমান সুযোগ আছে। কাজ পাবার ক্ষেত্রে লিংকডিনও বেশ বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেও নতুন কাজ পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশে যারা আপনার সেক্টরে কাজ করছে তাদের ব্যাপারে সর্বশেষ কিছু উপদেশ দিন

উপদেশ দেওয়ার পর্যায়ে এখনো যাইনি 🙂

[মাহমুদুল ভাইয়ের সফলতার গল্প পড়ে আপনার মতামত আমাদের জানান কমেন্ট বক্সে। ধীরে ধীরে আমরা মাহমুদুল ভাইয়ের মত সফল ফ্রিল্যান্সারদের গল্প তুলে ধরতে চাই আমাদের সবার প্রিয় নেট কথা ব্লগের মাধ্যমে। সাবক্রাইব করে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।]

2 thoughts on “ফ্রিল্যান্সার মাহমুদুল হাসান এর সফলতার গল্প”

  1. আপনার সফলতার গল্প শুনে ভালো লাগলো ইনশাল্লাহ সামনের দিকে এগিয়ে যান দোয়া রইলো

    Reply

Leave a Reply