লিড জেনারেশন মার্কেটিং কী? কো-মার্কেটিং কি?
কো-মার্কেটিং কি? লিড জেনারেশন মার্কেটিং কী? (৩য় পর্ব)

কো-মার্কেটিং কি? লিড জেনারেশন মার্কেটিং কী? (৩য় পর্ব)

লিড জেনারেশন

লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর ধারাবাহিক আলোচনায় আজ আমরা রয়েছি শেষ পর্বে। গত দুই পর্বে আমরা আলোচনা করেছি, লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং লিংকেডইন মার্কেটিং এর ভূমিকা নিয়ে। আজ শেষ পর্বে থাকছে- লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর কো-মার্কেটিং। 

কো-মার্কেটিং কি?

কো-মার্কেটিং এর প্রধান গোল হচ্ছে- কোম্পানী গুলো নিজেদের মাঝে রিলেশনশিপ তৈরি করা, এবং অডিয়েন্স শেয়ার করা, কোন রকম কম্পিটিশনে না গিয়ে অর্থাৎ, ধরুন ‘ক’ কোম্পানীর একটা পেইজ রাঙ্ক করেছে গুগলে এবং প্রচুর পরিমানে ট্রাফিক জেনারেট হচ্ছে। এখন এই ট্রাফিক গুলো শুধু ঐ নির্দিষ্ট পোস্টের সুবিধা পেয়ে চলে যাবে। কিন্তু কো-মার্কেটিং এর সাহায্যে এই অডিয়েন্স গুলোকে আবার নিজেদের মধ্যে রাখার একটা উপায় রয়েছে। ধরুন ‘ক’ ওয়েবসাইটের র‍্যাঙ্ক করা পেইজ হচ্ছে একটি স্মার্টফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন রয়েছে। এখন অডিয়েন্স কিন্তু স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন দেখে ঐ স্মার্টফোনের একশনে চলে যাবে, কিন্তু তার স্মার্ট ফোনের পাশাপাশি স্মার্ট কভার এবং স্ক্রিন প্রোটেক্টরও প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে ‘ক’ ওয়েবসাইট কিন্তু চাইলে যারা এই ধরণের স্মার্ট কভার এবং স্ক্রিন প্রোটেক্টর বিক্রি করেন, তাদের সাথে কো-মার্কেটিং এ যেতে পারেন। অর্থাৎ তারা স্মার্ট ফোন বিক্রির পেইজে স্মার্ট কভার এবং স্মার্ট প্রোটেক্টরেরও একটি ব্যকলিংক সংযুক্ত করে ঐ দু’ই পেইজে অডিয়েন্স পাঠাতে পারে। এতে করে অডিয়েন্সেরও যেমন সুবিধে হয়, মার্কেটারদেরও ভালো কমিউনিকেশন সৃষ্টি হয়। 

কো-মার্কেটিং এবং কো-ব্রান্ডিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?

কো-ব্রান্ডিং বিষয়টি হচ্ছে- যখন দু’টো কোম্পানী একত্র হয়ে তাদের প্রোডাক্ট বা আইডিয়া গুলোকে আরো উন্নত করে তখন তাকে কো-ব্রান্ডিং বলে। 

আর অপর দিকে কো-মার্কেটিং হচ্ছে- যখন দু’টো কোম্পানী একে অন্যের প্রোডাক্ট শেয়ারের মাধ্যমে অডিয়েন্সের কাছে পৌছায় ভালো সেলের আশায় বা ভালো ট্রাফিক জেনারেটের আশায়, তখন তাকে কো-মার্কেটিং বলে। একে অন্যের জন্য কাজ করা হচ্ছে কো-মার্কেটিং। 

কো-মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে?

কো-মার্কেটিং করতে হলে আপনার তিনটি জিনিস এর প্রয়োজন হবে। যেমন-

  • সম্ভাব্য কো-মার্কেটিং পার্টনারকে খুঁজে বের করা
  • সম্ভাব্য কনটেন্ট আইডিয়া খুঁজে বের করা
  • প্রত্যেকে অন্যের কনটেন্ট প্রমোট করা 

বিশ্বসেরা ৫ টি হ্যাকিং গ্রুপ

সম্ভাব্য কো-মার্কেটিং পার্টনারকে খুঁজে বের করা

কো-মার্কেটিং এর সম্পূর্ণ ধারণা হচ্ছে- আপনার পার্টনার থেকে আপনি প্রমোট পাবেন, এবং আপনিও আপনার পার্টনারকে প্রমোট করবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, নিশ একই হতে হবে বা অন্তত কাছাকাছি প্রাসঙ্গিক কিছু হতে হবে। না হয় মার্কেটিং পদ্ধতিটি খুব একটা কাজে দিবে না। মার্কেটিং জগতে একটা জোকস সব সময় চলে বেশ, আর তা হলো- প্রথমে সমস্যা সৃষ্টি করতে হবে, তারপর সমাধান দেখিয়ে সেল বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য কো-মার্কেটিং পার্টনার পাওয়া খুবই জুরুরি বিষয়। 

কিভাবে সঠিক কো-মার্কেটিং পার্টনার খুঁজে বের করবো?

প্রত্যেক কো-মার্কেটিং পার্টনার নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে, দু’জনের যেন উপকার হয় অর্থাৎ পারস্পরিক সুবিধা থাকতে হবে সমানভাবে। নিচে কয়েকটা টিপস শেয়ার করা হয়েছে কিভাবে আপনার জন্য ভালো পার্টনার খুঁজে পাবেন। এখানে প্রশ্ন করার মাধ্যমে উত্তর দেওয়া হয়েছে, যেই প্রশ্ন গুলো আপনার জন্যও প্রযোজ্য হবে।

১.আপনার অডিয়েন্স কি আমার মত একই নিশের/ক্যাটাগরির কিনা?

যদি না হয়ে থাকে তাহলে প্রমোটিং এর ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে না। এবং অডিয়েন্সেরও বিষয়টি খুব একটা কাজে আসবে না। 

২.আপনার সাথে পার্টনারশিপে গেলে আমি কতগুলো নতুন লিড পাবো? লিড পাওয়ার সংখ্যাটি কি বড় বা আমার সময় ব্যায়ের সমানুপাতিক হবে?

ভিজিটর এবং ক্লিকের ডাটার বিশ্লেষণ দেখে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন আপনার পার্টনারশিপে যাওয়া ঠিক হবে কিনা।

৩.তাদের অভিজ্ঞ জনবলের সংখ্যা কি আমার চেয়ে বেশি?

আপনার লিমিটেশন হয়তো সাধারণ এসইও জানার মধ্যে সীমিত। এক্ষেত্রে আপনার পার্টানারের টিম কি লোকাল এসইও জানে কিনা বা অন্য কোন সেক্টরে আপনার থেকে এগিয়ে আছে কিনা লক্ষ রাখতে হবে।

৪.পার্টনারদের ব্রান্ডের পরিচিতি কেমন?

আপনার পার্টনার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনার কোম্পানীর সমতুল্য লোকের সাথে ডিলে যাওয়া উচিত। কম জনপ্রিয় ব্রান্ড গুলো নির্বাচন না করা ভালো। কারণ ওদের থেকে খুব একটা ভালো বেনিফিট আশা করা যায় না।

৫.আপনার পার্টনাররা কি আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী কিনা?

কো-মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে দু’পক্ষের সম্মতির অবশ্যই প্রয়োজন আছে। সম্মতি ছাড়া পার্টনারশিপে না যাওয়া অতি উত্তম। আপনার পার্টনারের দিক থেকেও চিন্তা করতে হবে তারা কোন উপকারে আপনার সাথে কাজ করতে যাবে। 

সম্ভাব্য কনটেন্ট আইডিয়া খুঁজে বের করা

উপযুক্ত পার্টনার খুঁজে পাওয়ার পর, আপনাকে নতুন করে ফোকাস করতে হবে প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট এর উপর। কারণ প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট ছাড়া অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করা সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে সব সময় অডিয়েন্সের সুবিধার কথা চিন্তা করতে হবে। যেমন- যদি কোন অডিয়েন্স স্মার্টফোন কিনে থাকেন, তার সম্ভাব্য আর কি কি ধরণের প্রোডাক্ট প্রয়োজন হতে পারে তাৎক্ষনিক খুঁজে বের করে সমাধানের মাধ্যমে কো-মার্কেটিং করা সম্ভব হবে। এর পর যখন কনটেন্ট নির্ধারণ করা হয়ে যাবে, আপনার পার্টনারদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে, তাদের কোন পেইজের সাথে সংযুক্ত করলে বা কোন অংশে সংযুক্ত করলে তাদের এবং আপনার উভয়ের উপকার হবে। 

বিটকয়েন কি? বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?

কো-মার্কেটিং কনটেন্ট 

ই-বুকঃ কো-মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ই-বুকের ব্যবহার অনেক। কারণ ই-বুক সরাসরি কাওকে রেকমেন্ড করা যায়। 

ব্লগ পোস্টঃ গেস্ট পোস্টিং এর মাধ্যমে কো-মার্কেটিং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও আপনার পোস্টের সাথে যখন কোন ধরনের পোস্ট রিলিভেন্ট থাকে, যা অডিয়েন্সের জানা প্রয়োজন, ঠিক ঐ মহূর্তে আপনি কো-মার্কেটিং পার্টনারদের রেকমেন্ড করতে পারেন।

ওয়েবিনারঃ কোন এক্সপার্ট এর সাথে লাইভ প্রোগ্রাম করে রেকমেন্ড করার মাধ্যমে ওয়েবিনার কো-মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ভিডিওঃ ভিডিও এর মাঝে কো-মার্কেটারদের কনটেন্ট এর প্রমোশন। 

টুইটার চ্যাটঃ হোস্ট অডিয়েন্সদের হট টপিক গুলো থেকে প্রশ্ন করে অডিয়েন্সের এঙ্গেইজমেন্ট বাড়ায় 

ইভেন্ট(অনলাইন/অফলাইন)ঃ ইভেন্টের মাধ্যমে কো-মার্কেটিং করা যায়, অনলাইন এবং অফলাইন উভয় যায়গায়। 

প্রত্যেকে অন্যের কনটেন্ট প্রমোট করা

যখন আপনার টার্গেটেড কনটেন্ট তৈরি হয়ে যায়, এবং মার্কেটিং পার্টনার নির্ধারণ হয়ে যায়, তখন শুরু হয় আসল কাজ। এবার আপনার পার্টনার এবং আপনার মাঝে কনন্টেন্ট প্রমোটের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। রিলিভেন্ট কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে এবং ইউজারের সুবিধের কথা সবার আগে গুরুত্বদিয়ে যদি কনটেন্ট নির্ধারণ এবং সঠিক যায়গায় ব্যকলিংক বা রেফারেল দেয়া যায়, তাহলে সম্ভাব্য লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য সফল হয়। 

অন্যের কনটেন্ট প্রমোটের জন্য অনেক কিছুকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যেমন- ই-মেইল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া, লাইভ চ্যাট, ওয়েবসাইট কনটেন্ট এবং ব্লগ। এই মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে কনটেন্ট প্রমোট করা সম্ভব। 

সবগুলো যদি আরেকবার রিক্যাপ করার চেষ্টা করি, আমরা ধারাবাহিক তিন পর্বের আলোচনায় দেখিয়েছি, কিভাবে লিড জেনারেশন মার্কেটিং করতে হয়। কারণ লিড জেনারেশনের মার্কেটিং ছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছানো বা টার্গেটেড অডিয়েন্স পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আলোচনা করেছি, লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, লিংকেডইন অ্যাডভার্টাইজিং, এবং কো-মার্কেটিং বিষয় নিয়ে। এতক্ষন আমাদের সহ্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। জানতে থাকুন সঠিক ইনফর্মেশন, পড়ুন এবং নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। 

Leave a Reply