Graphics card

গ্রাফিক্স কার্ড কি? Graphics Card কিভাবে কাজ করে

কম্পিউটার গেমিং বা ভিডিও গেমিং বর্তমান সময়ের ছোট-বড়, তরুণ-তরুণী প্রায় সবার কাছে ইনডোর বিনোদন জগতের একটি অতি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ধরা দিয়েছে। তাই আমাদের মধ্যে যারা নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত যেভাবেই গেম খেলি না কেন, গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics card) তাদের জন্য বেশ পরিচিত একটি নাম।

শুধুমাত্র গেমারদের জন্যই নয়। বরং যারা হাই রেজ্যুলেশনে ভিডিও এডিটিং বা ইমেজ এডিটিং করে থাকেন তাদের কাছেও গ্রাফিক্স কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কাজ হলো যেকোন হাই রেজ্যুলেশন এর ভিডিও, ছবি বা গেম যাই বলিনা কেন, সেগুলোকে আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল উপায়ে মনিটরে প্রদর্শন করা। কিন্তু আমরা অনেকেই এমন রয়েছি যারা গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে এখনও সঠিকভাবে জানিনা। তো তাদের জন্যই মূলত আমাদের আজকের লেখনী। তাই এই লেখাতে আজকে আলোচনা করব গ্রাফিক্স কার্ডের সকল বিষয় নিয়েড। তাহলে চলুন দেখে নেই আর্টিকেল এর মূল অংশে কি কি রয়েছে।

গ্রাফিক্স কার্ড কি?

গ্রাফিক্স কার্ড হলো কম্পিউটারের মাদারবোর্ডে সংযুক্ত এমন একটি ডিভাইস বা হার্ডওয়্যার যা কম্পিউটারের সিপিইউ ও মনিটরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং ডিসপ্লেতে হাই রেজ্যুলেশন এর ছবি, ভিডিও এবং যেকোন ধরনের গ্রাফিক্যাল তথ্য প্রদর্শন করতে সহায়তা করে।

গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়াও এই কম্পিউটার কম্পোনেন্টটি গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টার (graphics adapter), গ্রাফিক্স অ্যাক্সেলেটর , গ্রাফিক্স বোর্ড (graphics board), গ্রাফিক্স কন্ট্রোলার (graphics controller), ডিসপ্লে কার্ড (display card), ডিসপ্লে অ্যাডাপ্টার (display adapter) বা জিপিইউ (GPU) প্রভৃতি নামেও বেশ পরিচিত।

তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বিশেষ এই কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এর কাজ কিন্তু একটাই। মেইনলি একটি ডিসপ্লে কার্ডের মূল কাজ হলো কম্পিউটারের বাইনারি কোডকে ডিজিটাল কোডে রূপান্তরিত করে যেকোন ছবি কিংবা ভিডিও-কে স্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছতর উপায়ে কম্পিউটার মনিটরে প্রদর্শন করা।

অর্থ্যাৎ যেকোন ভিডিও গেমিং, ভিডিও এডিটিং, কিংবা থ্রিডি ইমেজ রেন্ডারিং এর ক্ষেত্রে একটি গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টার কম্পিউটার মনিটরে সেই ছবি অথবা ভিডিওর high resolution ভিজুয়াল আউটপুট প্রদর্শন করে। যার ফলে আমরা যেকোন ভিডিও, ছবি বা গেমিং-এ হাই রেজ্যুলেশন থাকার কারণে সেটি অধিকতর স্পষ্ট রূপে দেখতে পাই এবং সহজতর উপায়ে নিজেদের কাজ সম্পন্ন করতে পারি। 

একটি গ্রাফিক্স কার্ড ব্যতীত কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে হাই রেজ্যুলেশন এর ছবি এবং ভিডিও দেখা, এডিট করা এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছের জনপ্রিয় আধুনিক হাই গ্রাফিক্স এর ভিডিও গেমগুলো খেলা সম্ভব নয়। এখন স্বাভাবিকভাবেই এ কথাটি শুনে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে আমিও তো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করি। কিন্তু গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার না করেও তো আমি ছবি বা ভিডিও দেখতে পাচ্ছি। তাহলে এটি কিভাবে সম্ভব?

এর উত্তরটি খুবই সিম্পল। যে কোন ভিডিও কার্ড বা ডিসপ্লে কার্ড ব্যতীত আপনি আপনার কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে যেকোন সাধারণ কাজ করে নিতে পারেন। কেননা আপনার কম্পিউটারে রয়েছে একটি বিল্ট ইন (built in) গ্রাফিক্স কার্ড। একে integrated graphics prossesor বা IGP-ও বলা হয়ে থাকে। এর সহায়তায় আপনার কম্পিউটার মনিটর যেকোন সাধারণ ভিডিও বা ইমেজ ডিসপ্লে করতে পারে। কিন্তু এই বিল্ট ইন গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টারের সাহায্যে হাই রেজ্যুলেশন এর ভিডিও বা ছবি দেখা সম্ভব নয়। 

তাই আপনি যদি একজন কম্পিউটার গেমার হয়ে থাকেন কিংবা ভিডিও এডিটর ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন। তবে হাই রেজ্যুলেশন (2d ও 3d)-এর ভিডিও ডিসপ্লে, অথবা বিভিন্ন ভিডিও গেমস এর কন্টেন্ট ডিকোডিং ও এনকোডিং করার জন্য আপনার পিসি বা ল্যাপটপে একটি এক্সটার্নাল গ্রাফিক্স বোর্ড থাকা অত্যাবশ্যক। নতুবা আপনার মনিটর হবে একদম অন্ধকার। অর্থ্যাৎ মনিটরে কিছুই ডিসপ্লে হবে না। 

তাই এক্সটার্নাল উপায়ে কম্পিউটারের মাদারবোর্ডে গ্রাফিক্স কার্ড সংযুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে একটি GPU বা Graphics Prossesing Unit যত শক্তিশালী এবং যত ভালো মানের হবে, কম্পিউটার মনিটরে একটি ভিডিও বা কন্টেন্ট তত স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবো প্রদর্শিত হবে। 

গ্রাফিক্স কার্ড কিভাবে কাজ করে

গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ করার প্রসেসিং খুব জটিল কিছু নয়। টেকনোলজিতে যদি আপনার নূন্যতম জ্ঞানও থেকে থাকে তবে আশা করি গ্রাফিক্স কার্ডের কর্ম পদ্ধতি বোঝা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। বই ও গতানুগতিক ব্যাখ্যা বিশ্লষণ এর বাহিরে যেয়ে যতটা সহজ ও সাবলীলভাবে এটি উপস্থাপন করা সম্ভব আমি ঠিক ততটা সহজভাবেই উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।

সাধারণত আমাদের কম্পিউটার মনিটরে আমরা যেসমস্ত ছবি বা ইমেজ দেখে থাকি সেগুলো মূলত মনিটরে অবস্থিত লক্ষ লক্ষ পিক্সেল (pixels)– এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর সমন্বয়ে তৈরি।

এখন কম্পিউটার মনিটরকে যখন একটি ছবি প্রদর্শন করতে বলা হয়, তখন মনিটরের পিক্সেলের উপর আলাদা আলাদা বিভিন্ন রঙের আলো পতিত হয় এবং সবশেষে পতিত আলোকবিন্দু গুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি নির্দিষ্ট ইমেজ। আর ফাইনালি সেই ইমেজটি-কেই আমরা কম্পিউটার মনিটরে দেখতে পাই। 

সুতরাং এটা বলা যায় যে, কম্পিউটারে ইমেজ তৈরির মূল ভিত্তি হলো বিভিন্ন রঙের আলোর ব্যবহার। কিন্তু কথা হলো কম্পিউটার কিভাবে এই রঙের ব্যবহার করে? কেননা আমরা জানি যে, কম্পিউটার কেবলমাত্র বাইনারি কোড অর্থ্যাৎ ০ এবং ১ ব্যবহার করতে পারে। অপরদিকে মনিটরে ইমেজ তৈরির জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল কোড। আর এখানেই প্রধানত একটি গ্রাফিক্স কার্ডের মূল ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। 

একটি GPU-র মূল কাজ হলো বাইনারি কোডকে ডিজিটাল কোডে অর্থ্যাৎ ইমেজে রূপান্তরিত করা। এর জন্য প্রথমে কম্পিউটার সফটওয়্যার থেকে ইমেজ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় ডেটা বা তথ্য CPU (Central Processing Unit)-র মাধ্যমে কম্পিউটারের প্রসেসরে যুক্ত integrated graphics card, নতুবা কম্পিউটারের মাদারবোর্ডে সংযুক্ত এক্সটার্নাল গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টারে প্রেরিত হয়। 

এরপর গ্রাফিক্স কার্ড সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে তার কাজের জন্য একটি ওয়্যারফ্রেম তৈরি করে এবং পিক্সেলগুলোকে প্রয়োজনীয় আলো (light), টেক্সার (texture) এবং রঙ (color)-এর ব্যবহার করে পূরণ করে। এরপর গ্রাফিক্স কার্ড সেই রূপান্তরিত তথ্যকে একটি ক্যাবল বা তারের মাধ্যমে কম্পিউটার মনিটরে প্রেরণ করে। অতঃপর সেই ডেটা সমূহকে-ই আমরা কম্পিউটার মনিটরে ইমেজ রূপে দেখতে পাই। এই কাজটিকে-ই অত্যন্ত দ্রুততার সাথে করার জন্য কম্পিউটারকে প্রতি সেকেন্ডে ষাট বার এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। 

গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ করার প্রক্রিয়া আশা করছি ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন। তবুও এর কোন অংশ যদি এখনও না বুঝে থাকেন, তাহলে একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে ঘটনাটি আরও স্বচ্ছভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। 

মনে করুন,

দেশের নামি দামী কোন আর্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আপনি নিজের জন্য একটি ইমেজ তৈরি করতে চান। তাহলে এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো:

  • প্রথমে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (CPU)-এ আপনার কাজের চাহিদা উপস্থাপন করবেন। 
  • এরপর সেই ডেটা বা তথ্য সমূহ প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রতিষ্ঠানের আর্ট ডিপার্টমেন্ট (Graphics card)-এ চলে যাবে।
  • এখন আর্ট ডিপার্টমেন্ট সেই তথ্যের উপর বিচার বিশ্লষণ করে আপনার জন্য নির্ধারিত ইমেজটি তৈরি করবে। 
  • এরপর তৈরিকৃত ইমেজটি-কে নির্ধারিত মাধ্যমে (Cable) আপনার (Monitor) কাছে পৌঁছে দিবে। 

তো সম্মানিত পাঠক! আশা করি এই ছোট্ট উদাহরণটির মাধ্যমে গ্রাফিক্স কার্ডের কর্মপদ্ধতি এখন খুব সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন।

গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে

গ্রাফিক্স কার্ড কেনার জন্য যখন আমরা মার্কেটে যাই, তখন ভালো মানের একটি কার্ড নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমার প্রায় সবাই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাই। কেননা আমরা প্রায় অনেকেই জানিনা যে, একটি ভালো মানের জিপিইউ (GPU) ক্রয় করার জন্য exactly কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। 

তাহলে চলুন আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জেনে নেয়া যায়, গ্রাফিক্স কার্ড কেনার পূর্বে করণীয় সমূহ কি কি। 

ব্যান্ডউইথ (Bandwidth)

ভালো মানের একটি গ্রাফিক্স কার্ডের মূল বিবেচ্য বিষয়টি হলো এর ব্যান্ডউইথ। কার্ডের ব্যান্ডউইথ যত বেশি হবে, কাজের গতি এবং মান ততই বৃদ্ধি পাবে। 

অনেকেই মনে করে থাকেন যে, কার্ডের মেমোরির উপর এর পারফর্মেন্স নির্ভরশীল। কিন্তু এটি একদমই একটি ভূল ধারণা। মূলত একটি জিপিইউ-র পারফর্মেন্স নির্ভর করে এর ব্যান্ডউইথ বা DDR এর উপর। 

একটি ভিডিও কার্ডের ব্যান্ডউইথ মূলত দুটি অংশে বিভক্ত। একটি হলো clock speed এবং অন্যটি হলো width. ক্লক স্পিড কার্ডের কোরগুলো কত দ্রুত গতিতে কাজ করবে তা নির্ধারণ করে। সুতরাং যত বেশি ব্যান্ডউইথ সম্পন্ন কার্ড কিনতে পারবেন আপনি দিন শেষে ততই সুফল পাবেন।

মেমোরি (Memory)

ব্যান্ডউইথ দেখা হয়ে গেলে এবার আপনাকে দেখতে হবে জিপিইউ-র মেমোরি বা RAM কেমন। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, ভিডিও কার্ডের মেমোরি কখনওই সেই কার্ডের পারফরম্যান্সকে কন্ট্রোল করে না। সুতরাং আপনার কাজের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় RAM-এর গ্রাফিক্স কার্ডে থাকলেই চলবে।

শেডার কোর (Shader core)

ব্যান্ডউইথ এর পরে যে বিষয়টি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো শেডার কোর। শেডার কোরের মূল কাজ হলো ইমেজ প্রসেসিং করা। সুতরাং একটি গ্রাফিক্স কার্ডের শেডার কোর যত বেশি হবে, ঐ কার্ডের ইমেজ প্রসেসিং করার ক্ষমতাও তত বেশি হবে।

গ্রাফিক্স কার্ড তৈরি করে এমন দুটি কোম্পানি Nvidia এবং AMD শেডার কোর-কে দুটি আলাদা আলাদা নামে নামকরণ করে থাকে। যেমন-

  • AMD- Stream Processors
  • Nvidia- CUDA Cores

কুলার অপশন (Cooler Option)

ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ডের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর কুলার অপশন। অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে বর্তমানে বাজারে জিপিইউ লঞ্জ করে এমন কোম্পানি গুলোর মাঝে প্রায় সব কোম্পানিই তাদের প্রোডাক্টে কুলার অপশন দিয়ে থাকেন।

কেননা দীর্ঘ সময় ব্যবহারের কারণে কিংবা হাই পারফরম্যান্সের কোন সফটওয়্যার বা গেম পরিচালনা করার কারণে সিপিইউ (CPU) স্বাভাবিকভাবেই অনেক গরম হয়ে যেতে পারে। তৎক্ষনাৎ গ্রাফিক্স কার্ডে যদি কোন কুলিং মেশিন বা ফ্যান না থাকে, তবে অত্যধিক মাত্রায় গরম হওয়ার কারণে গ্রাফিক্স কার্ড সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

গ্রাফিক্স কার্ড (graphics card) নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আশা করছি কম্পিউটার গ্রাফিক্স কার্ড কি, এটি কিভাবে কাজ করে, এবং একটি গ্রাফিক্স কার্ড বা ভিডিও কার্ড কেনার পূর্বে কি কি করণীয় তা মোটামুটি বুঝতে পেরেছেন।

আজকের আর্টিকেলটির মধ্য দিয়ে আপনাকে হয়তো আমরা অতিজ্ঞানী করে তুলতে পারিনি, তবে সহজ ও সাবলীলভাবে সম্মক একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে মনে রাখবেন, আপনি যদি আপনার কম্পিউটারে এক্সটার্নাল ভিডিও কার্ড ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই একটি ভালো মানের পাওয়ার সাপ্লাই (power supply) যুক্ত করে নিন। নতুবা কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।

আর হ্যাঁ, গ্রাফিক্স কার্ড কিন্তু শুধুমাত্র কম্পিউটার বা পিসিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়নি। বরং এটি আপনার ল্যাপটপ, ট্যাব এমনকি মোবাইল ফোনেও ইউজ করতে পারবেন। 

Leave a Reply