গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিচিত ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে তরুন প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রাফিক্স ডিজাইনে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করে নেয়ার স্বপ্ন দেখে। এর প্রধান কারণটি হলো এ সেক্টরে প্রচুর পরিমাণ কাজ পাওয়া যাওয়ার পাশাপাশি দক্ষ হতে পারলে আর্কষণীয় অংকের অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তাই একদিকে যেমন কাজের সহজলভ্যতার কথা ভেবে অনেকেই একে পেশা হিসেবে গ্রহন করে নেয় আবার একটি অংশ এখান থেকে উচ্চাভিলাষী উপার্জনের কথা চিন্তা করে গ্রাফিক্স ডিজাইনকে নিজেদের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু আসলেই কি তাই?
সত্যিটা হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে যেমন প্রচুর পরিমাণ কাজের অফার পাওয়া যায় তেমনি কাজ করতে হলে সে পরিমাণ দক্ষও হতে হয়। আবার এ সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে আসা অনেকের লাখ টাকা উপার্জনের স্বপ্ন দেখাও ভুল কিছু নয়। কিন্তু এজন্য অবশ্যই জাদুকরী দক্ষতার সাথে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন হবে।
যারা শুরুতেই লাখ টাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এ পেশাকে নিজেদের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য এ পেশা নয়। কিন্তু তাই বলে গ্রাফিক্স ডিজাইন করে লাখ টাকা উপার্জন অসম্ভব কিছু নয়। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময় পার করে সে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো পেশায় আসার আগেই বেশ কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে জেনে বুঝে তারপর এখানে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য পা বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে সফলতার জন্য দেখা স্বপ্ন ব্যর্থতার দুঃস্বপ্নে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি আসলেই এ সেক্টরে ভালো কিছু করার ক্ষমতা রাখেন কি-না তা যাচাই-বাছাই করে তবেই এখানে আসুন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে ভালো কিছু করার জন্য আপনার মধ্যে বেশ কিছু কোয়ালিটি না থাকলেই নয়। এজন্য আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে এবং প্রচুর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। এ দু’টি কোয়ালিটিই নির্ধারণ করে দিবে গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কারও সাফল্য বা ব্যর্থতার গল্পগুলোকে।
লোগো ডিজাইন কি? লোগো ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়?
এ কারণে এ পেশায় নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করার জন্য পা বাড়ানোর আগে অল্প সময় ও পরিশ্রমে লাখ টাকা উপার্জনের স্বপ্ন থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজেকে বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে। যে কোন ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রেই ছোট-বড় চড়াই উৎরাই আসবেই। দৃঢ় মনোবল নিয়ে এসব অসময়ের মুখোমুখি যুদ্ধ করতে হবে। কখনোই ভয় পেয়ে পরাজয় মেনে নেয়া চলবে না। তবেই আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের পেশায় নিজেকে সফলদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন
ফ্রিল্যান্সিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন এ ধারণা দুটি ওতপ্রোতভাবে একে অন্যের সাথে জড়িত। ফ্রিল্যান্সিং বলতে রিমোট ওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যের যে কোনো কাজ অর্থের বিনিময় করে দেয়াকে বোঝায়। আর যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় জড়িত তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলা হয়। অন্যদিকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা চিত্রকলা বলতে ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে যে কোন প্রকার চিত্র বা আর্ট ও ডিজাইন সম্পন্ন করাকে বোঝায়। আর এ কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় ভার্চুয়াল রং,তুলি, পেন্সিল, পেন সহ অন্যান্য উপাদান।
ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে যে কোন স্হান থেকে স্বাধীনভাবে নিজের সময়-সুযোগ মত কাজ করা যায় বলে বর্তমানে এ ধারণাটি অনেক জনপ্রিয়। বিশেষত ভার্চুয়ালি করা যায় এমন যে কোন একটি কাজে দক্ষ হয়ে থাকলে এখান থেকে মোটামুটি ভালো অংকের অর্থ উপার্জন সম্ভব। আর এই কারণেই ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটি বর্তমান তরুন সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাছাড়াও পড়াশোনা ও চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা যায় বলে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষেরা বাড়তি অর্থ উপার্জনের আশায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে।
আবার ফ্রিল্যান্সিংয়ে সবচেয়ে বেশি কাজের চাহিদা আছে এমন একটি কাজ হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন হচ্ছে চিত্রকলা বা আর্টের আধুনিক রুপ। পূর্বে কাগজ বা ক্যানভাসে রং-তুলি ব্যবহার করে শিল্পীরা বিভিন্ন আর্ট বা ডিজাইন ফুটিয়ে তুললেও বর্তমানে একই কাজটি করা হয়ে থাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহার করে। শুধু পার্থক্যটা হলো ডিজিটাল ও ম্যানুয়াল প্লাটফর্মের। কিন্তু এখনকার গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেক অনেক অ্যাডভানটেজ রয়েছে যা পূর্বে কখনও ছিল না। এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহার করে খুব সহজেই বুক কভার, টি-শার্ট, ভিজিটিং কার্ড এরকম ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করে থ্রিডি অ্যানিমেশন ও সিনেমা পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের পরিধি এখন অনেক বিস্তৃত।
এখনকার গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও আধুনিকায়নের সময়োপযোগী ক্ষেত্র। যার ব্যবহার ও চর্চা বর্তমান পৃথিবীর সর্বত্র। আজকের দিনে প্রতিটি পণ্যের মোড়ক থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। তাইতো ক্যালিওগ্রাফি, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন গ্রাফিক্স ডিজাইনের জয়জয়কার। আর এই বহুমাত্রিক চাহিদার কারণেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের রয়েছে স্বকীয়তা ও অনন্যতা।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের আরো শত শত কাজের মধ্য থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনেই নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চাওয়ার হাজারটা কারণ রয়েছে। এখানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সম্ভব যা অন্য কোনো সেক্টরে সম্ভব হয় না। এছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইনের অর্জিত দক্ষতাগুলো লাইফ অরিয়েন্ডেট হওয়ার আজীবন এর সুফল প্রাপ্তির আশা রাখতে পারেন। এমন অনেকই আছে যারা গ্রাফিক্স ডিজাইন অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে নয় বরং নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য করে থাকে। কারণ আমাদের ব্যবহারিক জীবনে ক্লাসের এসাইনমেন্ট থেকে শুরু করে স্যোশাল মিডিয়ার পোস্ট পর্যন্ত সর্বত্রই রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কারিশমা।
এতসব বিস্তৃত সুবিধার কারণে বর্তমান সময়ে যে কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং এর দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারছে। আর গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য খুব বেশি শিক্ষিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। এমনকি নেই কোন বয়সের ধরাবাঁধা নিয়মকানুন। তাই অল্পশিক্ষিত বা শিক্ষিত যে কোন বয়সের ও পেশার মানুষের এ পেশায় এসে ভালো কিছু করার ক্ষমতা রাখে। শুধু প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন, ধৈর্য ও পরিশ্রমের।
গ্রাফিক্স ডিজাইনে কোন ভুলগুলো কখনোই করা উচিত নয়
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে এমন কতগুলো কাজ রয়েছে যেগুলো আপনার কখনই করা উচিত হবে না। কারণ এই কাজগুলো আপনার ডিজাইনের মানকে এবং আপনার কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই নিজেকে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আপনার পেশাদারীত্বের উপর প্রভাব পড়ে এমন ভুলগুলো কখনোই করা ঠিক হবে না। এখানে এমন কয়েকটি কমন ভুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১. অতিরিক্ত ফন্টের ব্যবহারঃ সবসময় চেষ্টা করতে হবে যত কম সম্ভব লেখা ব্যবহার করতে। অতিরিক্ত ফন্টের ব্যবহার ডিজাইনের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।
২. ভুল কালার নির্বাচনঃ কোনো ফন্ট কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডের রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তক থাকতে হবে। না হলে আপনি কোনো কিছুই ভালোমতো ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না।
৩. স্টক ইমেজের ব্যবহারঃ অবশ্যই অবশ্যই স্টক ইমেজ ব্যবহার করে শর্টকাটে ডিজাইন তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নয়তো পরবর্তীতে নতুন কোন কাজ পেতে আপনাকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
৪. জায়গা নির্বাচনে ভুলঃ কোনো ডিজাইনের মধ্যে টাইটেল, লোগো ও অন্যান্য ইনফরমেশন গুলোর প্লেসমেন্ট সঠিকভাবে করতে হবে। অন্যথায় ডিজাইনটিকে দেখতে দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে।
৫. মোড বা মিডিয়াম সিকেলশনঃ ডিজাইনের জন্য যখন যেমন প্রয়োজন সে অনুযায়ী CYMK বা RGB ও অন্যান্য মিডিয়াম বাছাই করে নিতে হবে।
৬. প্রুফরিডিংঃ ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়ে গেলে অবশ্যই কমপক্ষে দুই একবার প্রুফরিড করা জরুরি। অন্যথায় এর মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে।
৭. ভুল ফরমেটে ডিজাইন সেভ করাঃ কখনোই ভুল ফরমেটে ডিজাইন সেভ করা যাবে না। কোনো ডিজাইন JPG, PDF, AI, PSD, JPGE ইত্যাদি আরও অনেক ফরমেটে তৈরি করা যায়। তাই অবশ্যই উপযুক্ত ফরমেটে ডিজাইন তৈরি করে সেভ করতে হবে।