ফাইভার বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। ফাইভার মার্কেটপ্লেসে ফ্রিতে কাজ পাওয়া যায়, এখানে বায়ার রিকুয়েস্ট কেনার জন্য কোন পয়সা খরচ করতে হয় না, প্রতিদিন এক্সট্রা ১০টি কানেকশন দিয়ে থাকে ফাইভার কৃতপক্ষ। কিন্তু ফাইভার ছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পেতে হলে কানেকশন কিনতে হয়। এই জন্য ফাইভার নতুনদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়।
কিন্তু এই মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া নতুনদের পক্ষে খুবই কঠিন। ফ্রিতে বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠানো যায় এটি একপক্ষে যেমন সুবিধাজনক, অন্যপক্ষে অসুবিধার কারণও বটে। কারণ ফ্রি কিন্তু সবার জন্য, আপনি একার জন্য নয়। ফলে এখানে কম্পিটিশন অনেক বেশি। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি পেতে পারেন ফাইভারে কাঙ্খিত অর্ডার এই বিষয়ে। মূলত অভিজ্ঞতা শেয়ার মূলক আর্টিকেল।
কাজে অভিজ্ঞ হওয়া
ফাইভারে নয়, যে কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে কাজে দক্ষ হওয়া। আপনি যদি কাজ না পারেন, তাহলে কাজ শেখায় সময় দেওয়া উত্তম। অযথা ফাইভারে বা অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে এসে মার্কেট নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। এমনিতে বাংলাদেশ,ভারত এবং পাকিস্তান এই তিন দেশের মানুষের প্রতি বায়ারদের এক প্রকার বিতৃষ্ণা রয়েছে। বিশেষ করে কাজ না জেনে গিগ খুলে বসে থাকে, কাজ পাওয়ার পর কাজ ঠিকমত করতে পারেনা। ফলে বায়ারের সময় নষ্ট হয়, আর বিরক্ত সৃষ্টি হয়। তাই কাজ শেখার বিকল্প কিছু নেই। কাজ শেখে মার্কেটপ্লেসে আসেন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই, হয়তো আপনার ভবিষ্যত ক্লায়েন্ট এখনো ফাইভার কি চিনেও না, সো রিল্যাক্সে কাজ শিখে নেন।
ডিসেন্ট প্রোফাইল তৈরি করা
কাজ পারার পর প্রোফাইলটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন। ফাইভার ইংলিশ টেস্ট রয়েছে, সেই পরিক্ষা গুলো দিয়ে প্রমান করে দিন আপনি কতটা ইংরেজিতে যোগ্য। আপনি যে কাজে গিগ খুলেছেন সেই কাজে ফাইভারের কোন টেস্ট আছে কিনা তা দেখে নিন, যদি থাকে তাহলে পরীক্ষাটা দিয়ে রাখুন। যেমন কন্টেন্ট রাইটিং, কোডিং সহ আরো অনেক ধরনের পরীক্ষা আছে, সেগুলো দিয়ে রাখুন, ডেসক্রিপশনে সঠিক বর্ণনা দিন, যাতে বায়ার পড়েই বুঝতে পারে আপনি কি অফার করতে চাচ্ছেন। এই সব কিছু মিলিয়ে আপনার আপনার প্রোফাইলের বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়াবে। ফলে যদি আপনি কোন ক্লিক পেয়েও থাকেন, তাহলে খুব বেশি সম্ভাবনা থাকে অর্ডার পাওয়ার।
গিগ অপটিমাইজ করা
আপনার কাজের ধরণের সঠিক বর্ণনা দিয়ে গিগ সম্পন্ন করুন। যেই কাজের গিগ খুলেছেন, সেটির কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে সুন্দর করে টাইটেল, ইমেইজ এবং ডেসক্রিপশনে ঐ নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের জন্য অপটিমাইজ করুন। অনেকে ছবি অপটিমাইজ করেনা, অথচ এটিও একটি গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর। একটি নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড টার্গেট করে- ইমেইজ, ডেসক্রিপশন, টাইটেল, এসইও সব কিছুতে ব্যবহার করুন।
বায়ার রিকুয়েস্ট চেক করা
নতুন যারা আছেন, তারা শুরুতে কাজ পেতে চাইলে বায়ার রিকুয়েস্ট অপশনটা ভালো করে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার কাজের সঠিক বর্ণনা দিতে শিখুন। বায়ার রিকুয়েস্টের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ বায়ার যে ভুলটি করে থাকে, সেটি হলো তারা ক্লায়েন্টের সম্পূর্ন বর্ণনাটি না পড়েই কাজের জন্য আবেদন করে বসে থাকে, এটি করা কোন কারণেই উচিত নয়। বায়ার রিকুয়েস্ট আপনার ডিসপ্লেতে এসেছে মানে অনেক্ষন থাকবে, এত তাড়াহুড়ো করে সাবমিট না করে প্রথমে ভালো করে পড়ুন, তারপর কিভাবে প্রবলেমটি সলভ করা যায় তার চিন্তা করুন। এরপর প্রপোজাল লেখার সময় চাইবেন যেন, প্রথম লাইনে সমাধানের বিষয়টি নিয়ে আসতে। তাহলে খুব বেশি সম্ভাবনা থাকে আপনার প্রপোজালটি খুলে দেখার।
তাই যারা নতুন রয়েছেন, তারা বায়ার রিকুয়েস্ট টি ব্যবহার করে সফলতার মুখ দেখতে পারেন। যেহেতু এটি ফাইভারে ফ্রি তাই এর যত পারেন সঠিক ব্যবহার করুন। ফ্রি কথাটা মনে করিয়ে দেওয়ার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, এখানে কম্পিটিশনও অনেক বেশি। বায়ার রিকুয়েস্টটাকে এমন ভাবে গবেষণা করে পাঠাবেন, যেন ক্লায়েন্ট সবার আগে আপনার প্রপোজালটি খুঁজে দেখে। তবে নতুনদের জন্য আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি, গতানুগতিক বায়ার রিকুয়েস্ট না পাঠিয়ে, সব সময় চেষ্টা করবেন আগের বায়ার রিকুয়েস্ট থেকে আরো সুন্দর করে প্রপোজাল লিখতে।। আমি এমনও বলতে শুনেছি, ভাইয়া আমিতো দুই’শ এর অধিক বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছি, কিন্তু কাজ পাইনি। এর কারণ হচ্ছে, সে একেবারে গতানুগতিক ভাবে বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে, নতুবা কপি পেস্ট।
শুনুন কম্পিটিশন মার্কেটে কাজ পেতে হলে কম্পিটিশনেও জিততে হবে, অর্থাৎ কাজেও দক্ষ হতে হবে। আপনি যখন কাজে দক্ষ হয়ে যাবেন, তখন বায়ারের জব ডেস্ক্রিপশন দেখার সাথে সাথেই আপনি বুঝে যাবেন কিভাবে সল্ভ করতে হয়। আর এই সলভ করার বিষয়টি বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠানোর সময় প্রথম দিকে রাখার চেষ্টা করবেন।
বায়ারের দিক থেকে চিন্তা করা
আপনি যদি ফাইভারে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে কি সার্ভিস অফার করছেন তার সম্পর্কে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে আগে শিখুন। এর জন্য আপনি যদি একজন বায়ারের দিক থেকে চিন্তা করেন তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
কিভাবে বায়ারের মত চিন্তা করবেন?- আপনি যদি ফাইভার থেকে কোন সেলার হায়ার করতে চেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কি কি বিষয় দেখবেন? ধরুন আপনি একজন লোগো ডিজাইনার খুঁজছেন। এখন একজন বায়ার হিসেবে আপনি সেলারের প্রোফাইলটি ভালো করে অভজার্ব করবেন। প্রোফাইলে পূর্বের কাজের স্যাম্পল আছে কিনা ভালো করে লক্ষ্য করবেন। রেসপন্সিভ কিনা এই সমস্ত ব্যাপার সবার আগে আপনি লক্ষ্য করবেন। কারণ আপনি কখনও চাইবেন না একজন অপরিপক্ব লোকের হাতে আপনার অর্ডারটি দিতে। একজন লোক পরিপক্ব না অপরিপক্ব কাজের আগে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু ফাইভার এই বিষয়টি দেখার জন্য যে সমস্ত অপশন আপনাকে দিয়েছে, তা তো অন্তত ব্যবহার করতে পারেন। যেমন গিগে ইমেজ, কাজের স্যাম্পল, রেটিং, কমেন্ট, ইংলিশ প্রফিশিয়েন্সি।
হ্যাঁ, নতুনদের ক্ষেত্রে কিছু জিনিস রেঞ্জের বাইরে রয়েছে যেমন রেটিং বা কমেন্ট এর বাইরে বাকি ম্যাট্রিক্স গুলো কিন্তু তাদের হাতে রয়েছে। তারা এজন্য প্রোফাইলকে যতবেশি সম্ভব বিশ্বাস যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করতে পারে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী’। আপনি যত সুন্দর করে আপনার গিগটিকে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলতে পারবেন, তত বেশি বায়ারের সান্নিধ্যে যেতে পারবেন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করুন
আপনার লিংকড-ইনে মার্কেটিং করতে পারেন, প্রোফাইলে এড করে দিতে পারেন আপনি কি কি কাজ করছেন ফাইভারে। সম্ভাব্য বায়ারকে খুঁজে বের করে মেসেজ করে জানাতে পারেন আপনার কাজের ধরণ। আবার সকলের ফেসবুকে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে যাবেন না। আপনি মার্কেটিং করবেন, যেখান থেকে আপনার সম্ভাব্য কাস্টমার তৈরি হতে পারে সেখানে। অযথা উল্টাপাল্টা মার্কেটিং করে সকলের হাসির পাত্র হবেন না। এছাড়া টুইটার এবং ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন সম্ভাব্য কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্য।
অনলাইনে থাকার চেষ্টা করুন
নতুনরা কাজ পাওয়ার জন্য অনলাইনে বেশি পরিমানে সময় দিন। এতে করে বায়ার আপনার প্রোফাইলে আসার পর যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে আপনাকে টেক্সট করার সম্ভাবনা অনেকগুন বেশি। নয়তো একে তো আপনার প্রোফাইল নতুন তার উপর যদি অনলাইনে না থাকেন, বায়ার কোন দুঃখে বিশ্বাস করতে যাবে আপনি ফাইভারে বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন?
ধৈর্য ধরুন
প্রথম কিছু অর্ডার পেতে আপনাকে হয়তো বেগ পেতে হবে, যদি আপনি সঠিক ট্র্যাকে চলে আসেন তাহলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। একটা অর্ডারই আপনার জীবনের মোড ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই অপেক্ষা করুন, আর কাজ শিখুন সঠিক ভাবে। মার্কেটপ্লেসে কাজের অভাব নেই, এত তাড়াহুড়োরও কিছু নেই। তাই ধৈর্য ধরে সঠিকভাবে সব নিয়মকানুন ফলো করে যান, সফলতা একদিন আসবে।