ফাইভার হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেখানে ৫ ডলার থেকে শুরু করে হাজার হাজার ডলারের কাজ পাওয়া যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি খুবই জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। শুধু বাংলাদেশে জনপ্রিয় এমন না বিষয়টি, সারাবিশ্বে ফাইভারের বেশ ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফাইভারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে সবচেয়ে কম রেটে কাজ পাওয়া এবং কাজ দেওয়া যায়। তাছাড়া বিড়ও করা যায় ফ্রিতে। এই সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে ফাইভারের গ্রহনযোগ্যতা সবার নিকট রয়েছে।
ফাইভার কি?
ফাইভার একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেখানে যে কেউ অনলাইনে সার্ভিস বিক্রি করতে পারে এবং কিনতে পারে। বর্তমান সময়ে এটি সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যাদের রয়েছে ৩ মিলিয়নের বেশি গিগের ডেটাবেজ।
ফাইভার মার্কেটে এসেছে ২০১০ সাল থেকে। ফাইভার নামকরণ করা হয়েছে কারণ শুরুতে এখানে শুধুমাত্র পাঁচ ডলারের কাজ করা যেত। তাদের যাত্রার শুরুর প্রথম পাঁচ বছর এই নিয়ম অব্যাহত ছিলো। পরে ২০১৪ সালে তারা পাঁচ ডলারের লিমিটটি প্রত্যাহার করে নেয়। যার ফলে মার্কেটপ্লেস আরো বেশি গতি পেয়েছে কাজের ক্ষেত্রে। এতে করে আরো উন্নত মানের গিগ দেখা যেতে লাগলো খুব কম সময়ে। বর্তমানে এই মার্কেটপ্লেসে প্রায় সব ধরণের কাজ পাওয়া যায়, এখন অনেক উন্নতমানের গিগ রয়েছে, যেখান থেকে যে কেউ তার জন্য সবচেয়ে বেস্ট জব সেল করতে পারবে এবং কিনতে পারবে।
ফাইভার কিভাবে কাজ করে?
ফাইভারের কাজ অন্যান্য মার্কেটপ্লেস এর মত একই। এখানে সেলার তার সার্ভিসটি সকলের নিকট গিগের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে, এরপর বায়াররা যার যেমন ইন্টারেস্ট তেমন অনুযায়ী তাদের গিগ দেখে পছন্দ করে কাজের জন্য জিজ্ঞেস করতে পারে। বায়াররা চাইলে খুব সহজে যে কোন সার্ভিস কিনতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?
ফাইভার মূলত মিডেলম্যান হিসেবে কাজ করে থাকে। ইংরেজিতে যাকে বলে ব্রোকার আর বাংলায় তা- দালাল। প্রতিটি অর্ডারে ফাইভার প্রায় ২০% টাকা কেটে রেখে দেয়। একবার যদি কোন সেলার কাজ কমপ্লিট করে, তারপর বায়ার যদি অর্ডারটি গ্রহন করে, তখন সেলারের একাউন্টে ২০% বাদে বাকি অংশ এড হয়ে যায়। সাধারন ইউজারদের ক্ষেত্রে ফাইভার ২ সপ্তাহের মত সময় নিয়ে থাকে টাকা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে যদি স্পেশাল সেলার হয়ে থাকে, তাহলে আরো খুব শীগ্রই পেমেন্ট এর ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকে।
ফাইভার গিগ(Gigs) কি?
ফাইভারে সার্ভিসের পুরো প্রোফাইলকে বলা হয়ে থাকে গিগ অর্থাৎ একজন ফ্রিল্যান্সার কি দামে তার সার্ভিস বিক্রি করবেন, কি কি অফার করবেন, কি কি এক্সট্রা সুবিধা দিবেন এ সকল বিষয় যে পেইজের মাধ্যমে বর্ণনা করে থাকে, তাকে গিগ বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি গিগ পাঁচ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত বেশি দামের সেল গুলো বেশি উন্নত মানের সার্ভিস হয়ে থাকে।
ফাইভার কি বৈধ / নিরাপদ?
হ্যাঁ, ফাইভার একটি বৈধ এবং নিরাপদ ওয়েবসাইট তবে অনেক রকম সেলার আছে যারা বায়ারকে ঠকানোর জন্য বসে থাকে। উল্টাপাল্টা কাজ করে দিয়ে বায়ার থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মত অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে একজন বায়ারের উচিত তার কাজ গুলো ঠিক মত বুঝে নিয়ে তারপর অর্ডার কমপ্লিট করা।
ফাইভার একটি নিরাপদ ওয়েবসাইট যেখানে একটি বিশাল সক্রিয় কাস্টোমার সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে। যারা আপনাকে যে কোন ধরনের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত সর্বদা। কেউ যদি কোন ইস্যু নিয়ে অভিযোগ করে, আশা করা যায় ২৪ ঘন্টা আগে তাদের ফিডব্যাক পাওয়া যায়।
একজন সেলার যদি ফাইভারে সময় মত আপনার কাজ কমপ্লিট করে দিতে না পারে, তাহলে আপনি খুব অল্প সময়ের মাঝে পুরো টাকা পেয়ে যাবেন। কখনো কখনো পার্শিয়াল পেমেন্টও দিয়ে থাকে তারা।
ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সার কারা?
ফাইভারে সকল প্রকার ট্রানজেকশনের তথ্য খুব সুনিপুন ভাবে রেকর্ড করে রাখে, এতে করে লেনদেনের বিষয় নিয়ে খুব একটা বেশি পরিমানে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। কারণ যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের বিশাল একটি কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস রয়েছে। আপনি সেলার কিংবা বায়ার যাই হয়ে থাকেন, কাস্টোমার সার্ভিস সকলের জন্য সমান। তবে অনেকে দাবি করে থাকেন, মার্কেটপ্লেস গুলো বায়ারদের বেশি পরিমানে এডভান্টেজ দিয়ে থাকে।
ফাইভারের রয়েছে SSL (Secure Sockets Layer) সার্টিফিকেট, যা সকল প্রকার ট্রানজেকশন এবং ব্যাক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে করে অতি গোপন তথ্য খুব নিরাপত্তার সাথে সকলের থেকে আড়াল করার সুযোগ থাকে।
ফাইভার একজন ভাল মানের সেলার খুঁজে পেতেও অনেক কার্যকর, এ জন্য তাদের অনেকগুলো ম্যাট্রিক রয়েছে। যেমন – সেলারের প্রোফাইল, সেলারের পূর্বের কাজের ধরণ অনুযায়ী রেটিং, লেভেল এবং রিভিউ। এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একজন বায়ার খুব সহজে ভালো মানের সেলার নির্বাচন করে নিতে পারে।
এছাড়াও ফাইভারে অনেক টেস্টিং প্রসিডিউর রয়েছে। প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা করে টেস্টিং প্রসিডিউর রয়েছে। যেমন ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সি, কন্টেন্ট রাইটিং, কোডিং ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পরিক্ষা রয়েছে এর ফলে একজন বায়ার খুব সহজে সেলারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারে। যেখানে পাশ এবং ফেইলের অপশন রয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষা আউট অফ টেনের মধ্যে স্কোর করা হয়। প্রায় ৪০ টির মত MCQ করা হয়, এর মধ্যে পাশ মার্ক ২৮ যার উপর ভিত্তি করে রেটিং গুলো দেওয়া হয়।
এছাড়াও ফাইভারে সেলারের এডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে বর্ণনা করার সুযোগ দিয়ে থাকে। ফলে আরো নির্দিষ্ট করে সেলারের সম্পর্কে ধারণা নেওয়া সম্ভব।
কিভাবে ফাইভারে সেলার হওয়া যায়?
ফাইভের সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে তারা সবাইকে সেলার হওয়ার মত যথেষ্ট সুযোগ অফার করে থাকে। এর জন্য একজনের সেলারের কাজের প্রতি অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা প্রয়োজন। সাধারণ অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের মত এখানে খুব সহজে সাইন-আপ করা যায়। সাইন-আপ করার সময় তারা জিজ্ঞেস করে নেয় বায়ার হিসেবে যোগ দিতে চায় নাকি সেলার হিসেবে যোগ দিতে চায়। তখন যার যেমন সে ওই বক্সে ইনফরমেশন দিয়ে খুব সহজে সাইন-আপ করে নিতে পারে। সাইন-আপ যদি সেলার মোডে করে থাকে তাহলে তাকে নতুন একটি গিগ খোলার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে ফাইভার। এরপর সেলার তার কাজের ধরণের বর্ণনা দিয়ে একটি আকর্ষনীয় গিগ খুলে নিতে পারে। নতুন গিগ গুলো ফাইভারের পক্ষ থেকে এক্সট্রা কিছু বুস্ট পেয়ে থাকে। যা কাজে লাগিয়ে একজন সেলার তার প্রথম অর্ডারটি কমপ্লিট করে নিতে পারে। যদি একজন সেলার ভালো মানের রেটিং অর্জন করতে পারে তাহলে ফাইভারে তার জার্নি অত্যন্ত সুগম হয়।
কিভাবে ফাইভারে সেলার হতে পারেন
প্রথমে আপনাকে এই লিংক ব্যবহার করে ‘Become a Seller’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর একেএকে তারাই বলে দিবে কি কি ইনফর্মেশন দিতে হবে।
এরপর আপনাকে এই ৫ টি কাজ করতে হবে-
১. সেলার প্রোফাইল কমপ্লিট করা।
২. নতুন একটি গিগ তৈরি করা।
৩. একটি ভিডিও ইন্ট্রোডাকশন তৈরি করা (আবশ্যক নয়)।
৪. সেলার যে ধরনের সার্ভিস অফার করছে তার বিভিন্ন রকম প্যাকেজ এর সঠিক বর্ণনা দেওয়া যা গিগের বুস্টের জন্য ভালো কাজে দেয়।
৫. গিগে ইক্সট্রা কিছু সংযুক্ত করা যা আপনার র্যাঙ্ক পেতে সাহায্য করতে।
প্রথম দুটি কাজ করা বাধ্যতামূলক। বাকি তিনটি করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে করতে পারলে ভালো ইম্প্রেশন পাওয়া যায়। ফলে এটি সেলারের গিগে র্যঙ্ক করতে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে।
ফাইভার ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ এবং না দুটোই সত্য। যদি জিজ্ঞেস করেন ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি নিরাপদ কিনা, তাহলে উত্তর হচ্ছে -হ্যাঁ। ফাইভারের ওয়েবসাইট অত্যন্ত নিরাপদ এই ব্যাপারে কোন রকম সন্দেহ নেই। কিন্ত যদি জিজ্ঞেস করেন ফাইভার গিগ নিরাপদ কিনা? তাহলে উত্তর দিতে অনেক মুশকিলে পড়তে হয়। সব ফাইভারে সব ধরনের গিগ নিরাপদ নয়, অনেক বাটপার ওঁত পেতে বসে থাকে ফাইভারে ক্লায়েন্টকে ঠকানোর ধান্দায়। এই ধরনের বাটপারদের গিগ গুলো অত্যন্ত সহজে চেনা যায়। যখন দেখবেন ২০ হাজার ব্যাকলিঙ্ক মাত্র ৫ ডলারে, কিংবা ১ মিলিয়ন ভিউ ১০ ডলারে অফার করছে, তখন আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে, এই ধরনের গিগ থেকে। তবে বায়ারের দিক থেকে ফাইভার যথেষ্ট নিরাপদ। বলা যায় শতভাগ নিরাপদ।