ই-কর্মাস বিজনেস শুরু করার আগে যা জানা জরুরী

ডিজিটাল বিশ্ব ব্যবস্থার কারণে বর্তমানে অনলাইন বাজার ধারণাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমান বিশ্বের বিক্রিত পণ্যের একটি বড় অংশই আসছে এই অনলাইন সাইট গুলো থেকে। বিশেষ করে এখনকার করোনা মহামারীর মতো পরিস্থিতিতে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইন ব্যবসায় প্রচুর পরিমাণ গ্রাহক থাকায় অনেকেই ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে সফল করে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। তবে হুটহাট করে কোন ব্যবসায় নেমে পড়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না।  যে কোন ব্যবসায় নামার আগেই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মার্কেট রিসার্চ করে তবেই মাঠে নামা উচিত। অন্যথায় আপনার সফল হওয়ার ছোট্ট  সম্ভাবনাটুকুও হারাবেন।

ই-কমার্স কি?

ই-কমার্স (E-commerce) একটি ইংরেজি শব্দ যার পূর্ণরুপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক কমার্স বা অনলাইন ব্যবসা। আপনি নিশ্চয়ই অনলাইনে কেনাকাটা করার কথা শুনেছেন? অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের এসব পণ্য কেনাবেচার ব্যবসাকেই বলা হয় ই-কমার্স। বর্তমান বিশ্বে প্রায় 300 কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, আর ই-কমার্স ব্যবসাটি মূলত পরিচালনা করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এখানে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিক্রেতারা নানা ধরনের পণ্য সাজিয়ে রাখেন যা একটি ভার্চুয়াল দোকান হিসেবে কাজ করে। এরপর গ্রাহকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওই ভার্চুয়াল দোকানটি ঘুরে আসতে এবং বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার দিতে পারে। আপনার অর্ডারকৃত পণ্যটি বিক্রেতারা বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস,ডাকযোগে বা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ডেলিভারি দিয়ে থাকে। ই-কমার্স ব্যবহার করে এভাবে খুব সহজেই আপনার কাংখিত পণ্যটি পেতে পারেন।

কেন ই-কমার্স শুরু করবেন?

আপনি কি জানেন? প্রতিবছর ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্যের কেনাবেচা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় এই ই-কমার্স ব্যবসার করেই জেফ বেজোস বর্তমানে বিশ্বের সেরা তিন জন ধনী ব্যক্তির একজন। এজন্য এখন শুধু উন্নত বিশ্বেই নয়, উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশেও ই-কমার্স ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়। তাই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত আপনার  জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। 

অন্যান্য যে কোন ব্যবসায় না গিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে মূলধন। অন্যান্য যে কোন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক বড় অঙ্কের একটি মূলধনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে সেরকম প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় না।কারণ এখানকার সব কাজগুলোই হয় ভার্চুয়ালি। 

এখানে ব্যবসা করার জন্য আপনার কোন দোকান কিংবা অন্য কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই, শুধু দরকার পণ্যের। এখানে অন্যান্য যে কোন ব্যবসার মতো অতিরিক্ত কোনো অর্থও খরচ করতে হয় না। শুধু প্রাথমিক অবস্থায় ই-কমার্স ব্যবসা করার উপযোগী একটি ওয়েবসাইট, ট্রেড লাইসেন্স এবং নিয়মিত মনিটরিং করার প্রয়োজন পড়ে। এর পাশাপাশি আপনি ঘরে বসেই নিজের ব্যবসা পরিচালনা করার সুবিধা পাবেন। যা আর অন্য কোন ব্যবসায় ক্ষেত্রে পাওয়া সম্ভব না। তাই বর্তমানে অনেকেই বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা নানা ধরনের ই-কমার্স ব্যবসার সাথে নিজেকে যুক্ত করছেন।

ই-কমার্স শুরুর আগে যে বিষয়গুলো জেনে নেয়া জরুরি

ই-কমার্স শুরুর আগে যে বিষয়গুলো জেনে নেয়া জরুরি

বর্তমানে বাজারে নতুন নতুন অনেক ই-কমার্স সাইট চালু হওয়ার কারণে এ খাতে ব্যবসা করাটাও মোটামুটি চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঠিক উপায়ে মার্কেট রিসার্চ, পণ্য বাছাই, ওয়েবসাইট ডিজাইন, গ্রাহক সেবা এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে ই-কমার্সে ব্যবসা করা আপনার জন্য একেবারেই সহজ হয়ে যাবে। চলুন তাহলে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

মার্কেট রিসার্চঃ অনলাইন বা অফলাইনে আপনি যে কোন মাধ্যমেই ব্যবসা করেন না কেন মার্কেটিং রিসার্চ একটি বড় ফ্যাক্টর। এ মার্কেট রিসার্চ এর কারনেই আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতার থেকে শতগুণ এগিয়ে থাকবেন। তাই সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে মার্কেট রিসার্চ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মার্কেট রিসার্চ করার জন্য প্রথমেই আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন খোঁজখবর নিন। এমনকি আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত কোন ই-কমার্স সাইট যদি থেকে থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারেও সম্পূর্ণ জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। আপনি যে পন্যটি নিয়ে ব্যবসা করতে যাচ্ছেন তার চাহিদা দাম এবং সুবিধা অসুবিধা গুলো সম্পর্কে জানুন। এসব বিষয়ে থাকা জ্ঞান আপনাকে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মারাত্মক সুবিধা দেবে। 

পণ্য বাছাইঃ অনলাইনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো পণ্য বাছাই। সঠিক পণ্য বাছাই করা সম্ভব হলে ই-কমার্স ব্যবসায় খুব সহজেই অন্যদের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকা যায়। পাশাপাশি পণ্যের দোষ-গুণ সম্পর্কিত আরো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর দিতে হয়।

তবে যাই হোক না কেন পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের চাহিদাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি যদি বেশি লাভের আশায় গ্রাহক বিমুখী পণ্য কেনেন তাহলে কখনোই আশার মুখ দেখবেন না। এজন্য সবার আগে গ্রাহকরা আকৃষ্ট হয় এবং বাজারে পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে এরকম পণ্য নির্বাচন করা জরুরি।

ওয়েবসাইট ডিজাইনঃ আপনি যদি গতানুগতিক কোন ব্যবসা করতেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনার দোকানটি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখতেন। ই-কমার্সের ক্ষেত্রেও আপনাকে ঠিক একই কাজটি করতে হবে। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এর ওয়েবসাইটটি ভার্চুয়াল দোকান হিসেবে কাজ করে। তাই আপনার পণ্যগুলো এই ওয়েবসাইটের মধ্যে সুন্দরভাবে সাজানোর কাজটি করতে হবে।

এমন অনেক পণ্যই আছে যা দেখামাত্র আমাদের ভালো লেগে যায়। আর এ ভালোলাগার পিছনে পণ্যটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা উপস্থাপন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো জড়িত। তাই গ্রাহক আকৃষ্ট করতে চাইলে অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটটি সুন্দরভাবে কাস্টমাইজ করুন। 

ই-কর্মাস ওয়েবসাইট বানাতে ভিজিট করুন

গ্রাহক সেবাঃ ধরুন, কোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইট এ থাকা একটি পণ্য আপনাকে ভালো লাগলো। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য আপনি তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন। কিংবা পণ্য কেনার পর কোন ত্রুটি ধরা পড়ায় ব্যবসায়ীর সাথে কনভারসেশনের চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে উঠতে পারলেন না। তাহলে আপনার উপর ই-কমার্স সাইটটি সম্পর্কে কেমন প্রভাব পড়বে? নিশ্চয়ই ভালো না।

আর এজন্যই কাস্টমার সাপোর্ট বা গ্রাহক সেবা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বিশেষ করে আপনার ই-কমার্স সাইট টি যখন পুরোদমে চালু হয়ে যায়। তাই সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার মূলমন্ত্র

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ গুলোর একটি হলো ই-কমার্স। তাই এখানে ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে। আর এই এগিয়ে থাকাটা নির্ভর করবে আপনার চিন্তাভাবনা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং আরো অন্যান্য কিছু মানদন্ডের ওপর।  আসুন এমন কতগুলো বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

ইউজার ফ্রেন্ডলি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইটঃ ই-কমার্সের যেহেতু ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই  আপনার পণ্যটি বিক্রয় হবে তাই ওয়েবসাইট তৈরীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করুন। ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারীদের জন্য সন্তোষজনক কিনা এ ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।

গ্রাহকের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুনঃ আপনি যদি বুঝতে পারেন গ্রাহকরা আসলে কি চাচ্ছে তাহলে ই-কমার্সে আপনার সফলতা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তাই গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে বোঝার জন্য প্রতিনিয়তই বাজার বিশ্লেষণ করুন।

পণ্যের সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিতকরণঃ আপনি যে পণ্যটি ব্যবসায়ের জন্য বাছাই করেছেন তার সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিতকরণে চেষ্টা করুন। কোনভাবেই যেন আপনার পণ্যটি মানহীন বা ত্রুটিযুক্ত না থাকে। এমনকি কোন কারনে কোন মানহীন বা ত্রুটিযুক্ত পণ্য আপনার কাছে ধরা পড়লে তা সরিয়ে ফেলুন।

পণ্যের দ্রুত ডেলিভারি নিশ্চিত করুনঃ পণ্যের দ্রুত ডেলিভারি আপনার ই-কমার্স সাইটটির উপর গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে ভূমিকা রাখবে। তাই কোন ধরনের বিলম্ব না করে দ্রুত পণ্য ডেলিভারির চেষ্টা করুন। কোন কারণে পণ্য ডেলিভারিতে বিলম্ব হলে তা গ্রাহককে আগেভাগে জানিয়ে রাখুন।

গ্রাহকের সাথে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরী করুনঃ অনেক গ্রাহকই এখন নতুন ই-কমার্স সাইট গুলোর কার্যক্রম নিয়ে সন্দিহান। তাই তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে আপনার ব্যবসায়িক সুনাম ও গ্রাহকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

কয়েকটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের তালিকা

ই-কমার্স সেক্টরে ভালো কিছু করতে চাইলে উপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন যা থেকে আপনি খুব সহজেই নতুন একটি ই-কমার্স সাইটের করণীয় যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এগুলোকে প্রয়োগ করে সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।

Leave a Reply