আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সবথেকে বড় অবদান রাখছে যে আবিষ্কারটি তা হলো মোবাইল ফোন। এটি এমন একটি আবিষ্কার যা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ধরণকে পাল্টে দিয়েছে। আর প্রতিনিয়তই একে ডেভেলোপ করা হচ্ছে মানুষের আরও কাজে লাগানোর জন্য।
গবেষকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় আমরা সাধারণ মোবাইল ফোনের যুগ পেরিয়ে হাতে পেয়েছি স্মার্টফোন। তাই মোবাইল ফোন বলতে এখন শুধু কথা বলার কোনো যন্ত্রকেই বোঝায় না। মোবাইল ফোন এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন আধুনিক ডিভাইস।
একটা সময় ছিল যখন মোবাইল ফোন এর পূর্বসূরী টেলিফোনগুলোকে সব সময় তাদের সাথে সংযুক্ত রেখে এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে হত। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনের ফলে এখন আপনি যে কোন স্থানেই আপনার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যেতে পারছেন। কথা বলতে পারছেন দুনিয়ার যে কোন প্রান্তের মানুষের সাথে।
মোবাইল ফোনের এ আবিষ্কার বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে করেছে আরও দ্রুত থেকে দ্রুততর। আর স্মার্টফোন এখন সে জায়গাটি দখল করে বিশ্বকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে শিক্ষা বিনোদন, চাকরি, ব্যাংক ইত্যাদি সব আধুনিক সেবাগুলোই এখন নেয়া যায় মোবাইল ব্যবহার করে।
মোবাইল ফোনকে এখন আপনি একটি ছোটখাটো কম্পিউটার বলতে পারেন। কারণ এখন মোবাইলফোন শুধু কথা বলা নয় একই সাথে বই পড়া, ভিডিও দেখা, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা ইত্যাদি নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তাই নিত্যসঙ্গী এ মোবাইল ফোনটি শুরু থেকেই অনেকের কাছে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে । এসব ফোনের দাম নির্ধারণের সময় আর্কষণীয় ডিজাইন ও ব্রান্ডভ্যালুকে বিবেচনা করা হয়। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় পৃথিবীর সবচেয়ে দামী এমন ১০ টি ফোন সম্পর্কে –
১. ফ্যালকন সুপারনোভা আইফোন ৬ পিংক ডায়মন্ড (Falcon Supernova iPhone 6 Diamond)
কাস্টম ডিজাইনের এ ফোনটি সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে বাজারে আসে। তখন থেকেই এ ফোনটি বাজারের সবচেয়ে দামি ফোনের অধিপত্য ধরে রেখেছে। ফোনটির ডিজাইন অসাধারণ এবং এর বাইরের বডি সম্পূর্ণ 24 ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি তবে এর বহিরাবরণের প্ল্যাটিনাম ভার্সনটিও পাওয়া যায়।
ফোনটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর পেছন দিকে মাঝখানে থাকা একটি গোলাপী হীরা। তবে ফোনটির আরো অন্য দুটি ভার্সনে গোলাপি বহুমূল্যবান হীরার পরিবর্তে সবুজ ও কমলা রঙের কিছুটা কম দামের হীরা রয়েছে। পৃথিবীর সবথেকে দামি এ ফোনটির বর্তমান বাজারমূল্য যথাক্রমে ৪২.৫ মিলিওন মার্কিন ডলার (গোলাপি হীরা যুক্ত ভার্সন) এবং ৩২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সবুজ ও কমলা হীরা যুক্ত ভার্সন)।
২. আইফোন ৪এস এলিট গোল্ড (iPhone 4S Elite Gold)
আভিজাত্যের দিক থেকে বরাবরই আইফোন সবার পছন্দের। আইফোন ৪এস এলিট গোল্ড তেমনি একটি অভিজাত্যপূর্ণ ফোন। এ ফোনটি সম্পূর্ণ কাস্টমাইজড এবং হাতে তৈরি। এই ফোনটির বিভিন্ন জায়গায় ১০০ ক্যারটের ৫০০ টি হীরা বসানো আছে। এর পিছনের দিকের বডি এবং এর ওপর বসানো অ্যাপলের লোগো দুটোই 24 ক্যারেট খাঁটি স্বর্ণের তৈরি। এছাড়াও লোগোটির সাথে ৫৩ টি হীরার সমন্বয়ে ডিজাইন করা ফিচারও রয়েছে।
আশ্চর্যের ব্যপার হলো এর হোম বাটনটিও হীরার তৈরি যা ৮.৬ ক্যারটের। যার ফলে ফোনটির অসাধারণ সৌন্দর্য ও আভিজাত্য প্রকাশ পায়। এ ফোনটির বক্সগুলোও অনেক দামী পদার্থ দিয়ে পালিশ করা। যার ফলে এর বক্স গুলোও অনেক প্রিমিয়াম। আকর্ষণীয় ও আভিজাত্যপূর্ণ এ ফোনটির বাজারমূল্য ৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পুরোনো ফোন কেনার আগে ১০ টি বিষয় জানা জরুরি
৩. আইফোন ৪ ডায়মন্ড গোলাপি ভার্সন (iPhone 4 Diamond Rose Edition)
আইফোনের তৈরি আরো একটি বিশ্বসেরা মাস্টারপিস ফোন হল আইফোন ৪ ডায়মন্ড রোজ এডিশন। গোলাপি রঙের এই ফোনটিতে ১০০ ক্যারটের প্রায় 500 টি হীরা রয়েছে এবং একই সাথে এর পিছনে থাকা আইফোনের লোগোটিতে 53 টি হীরা রয়েছে।
আইফোনের অন্যান্য ভার্সনগুলোর সাথে মিল রেখে এ ফোনটির হোম বাটনটিও ৭.৩ ক্যারটের হীরা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর সাথে আকর্ষণীয় ও দামি বক্স তো রয়েছেই। প্রিমিয়াম এ ফোনটির বাজার মূল্য ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৪. গোল্ডস্ট্রাইকার আইফোন ৩ জিএস সুপ্রিম (Goldstrike iPhone 3GS Supreme)
আইফোনের এ মডেলটি তৈরি করেছেন ব্রিটিশ ডিজাইনার স্টুয়ার্ড হুজেস। আরে মডেলটি তৈরি করার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ২২ ক্যারেট স্বর্ণ এবং তার সাথে ১৩৬ টি হিরা। হিরাগুলোর মধ্যে ৫৩ টি ফোনের পিছনে থাকা লোগোতে ব্যবহৃত হয়েছে।
এ ফোনের হোম বাটনটি অন্যান্য গুলোর মতই ডায়মন্ড দিয়ে রিপ্লেস করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ডায়মন্ড টি ৭.১ ক্যারটের। এগুলো ছাড়াও ফোনটির বক্সে থাকছে এক পিছ গ্রানাইট এবং বক্সটি লেদার ও কাস্মীরী সোনার প্রলেপ দিয়ে মোড়ানো। আর্কষণীয় এ ফোনটির দাম ৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫. আইফোন ৩ জি কিংস বাটন (iPhone 3G King’s Button)
বর্তমান সময়ের বিখ্যাত সুপরিচিত মোবাইল ফোন ডিজাইনার এলোইসন ও পারহ্যাপসের ডিজাইন করা ফোন এটি। গোল্ডস্ট্রাইকারের ফোনটির সাথে এ ফোনটির ডিজাইন এবং ফিচারে বেশ কিছু মিল রয়েছে। এ ফোনটির মধ্যে হলুদ ও হালকা সাদা ডায়মন্ড এবং সোনালি কালারের বেশ সুন্দর কম্বিনেশন রয়েছে। ফোনটির সামনের দিকের বর্ডার স্ট্রিপটি সাদা রঙের যা ১৩৮ টি ডায়মন্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে। যার কারণে ফোনটি প্রথম দৃষ্টিতেই যে কারও নজর কেড়ে নেবে। আইফোন কিংস বাটন ফোনটির হোম বাটনটি তৈরি করা হয়েছে ৬.৬ ক্যারটের হীরা দিয়ে। অসাধারণ ডিজাইনের এ ফোনটির বাজারমূল্য ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৬. ডায়মন্ড ক্রিপ্টো স্মার্টফোন (Diamond Crypto Smartphone)

ডায়মন্ড ক্রিপ্টো ফোনটির ডিজাইন করেছে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার পিটার অ্যালিসন। যা এক সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফোনগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল। ফোনটি প্লাটিনামের তৈরি হলেও এর পিছনে থাকা লোগো এবং হোম বাটন স্বর্ণের তৈরি।
এ ফোনটির হাইলাইট হওয়ার মত দুইটি ইউনিক ফিচার রয়েছে। যার একটি হলো এতে থাকা ৫০ টি হিরা, যার ১০ টি মহামূল্যবান নীল হীরা। অন্য ফিচারটি হলো ফোনটিতে থাকা বিশেষ এনক্রিপশন পদ্ধতি। এলিট ক্লাসের মানুষদের জন্য তৈরি করা এ ফোনটির দাম ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৭. গোল্ডভিস লে মিলিয়ন (Goldvish Le Million)
সুইডিস কোম্পানি গোল্ডভিসের তৈরি এ ফোনটি একসময় গিনেজ বুক অফ ওয়াল্ডের সবচেয়ে দামি ফোনের তালিকাভুক্ত ছিল। ফোনটির বাইরের সম্পূর্ণ আবরণটি ১৮ ক্যারটের স্বর্ণ ও ১২০ ক্যারেটের হীরা দিয়ে তৈরি। অবাক করা তথ্য হলো, এ ফোনটি মাত্র ৩ পিস তৈরি করা হয়েছিল। যার প্রতিটির দাম ছিল ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে।
৮. গ্রেসো লাস ভেগাস জ্যাকপট (Gresso Las Vegas Jackpot)
জ্যাকপটের মতোই এ ফোনটি তৈরি করা হয়েছে সোনা ও ৪৫.৫ ক্যারটের ব্ল্যাক ডায়মন্ড দিয়ে। আর ফোনটির পিছনের কভারটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে ২০০ বছরের পুরোনো আফ্রিকান পলিশ করা কাঠ। আশ্চর্যজনক ভাবে এ ফোনটিরও মাত্র ৩ পিস তৈরি করা হয়েছিল। যার প্রতিটির মূল্য ছিল ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৯. গোল্ডভিস রেভোল্যুশন (Goldvish Revolsion)
সুইডের বিখ্যাত গোল্ডভিস কোম্পানির তৈরি তুলনামূলক কম মূল্যের চোখ ধাঁধানো ডিজাইজের ফোন হলো রেভোল্যুশন। স্বর্ণ ও হীরা আরবণে তৈরি এ ফোনটির নিচের দিকে অ্যানালগ একটি ঘড়ি দেয়া আছে। যা ফোনটিকে অসাধারণ সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। এ ফোনটির সর্বমোট ৩২ টি কপি তৈরি করা হয়েছিল। যার এক একটির দাম ছিল ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার করে।
সেরা ৬ টি হেডফোন – বাজেট হেডফোন
১০. ভারচু সিগনেচার কোবরা (Vertu Signature Kobra)
সিগেচার কোবরা লাক্সজারিয়াস ফোনটি তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত মোবাইল ব্রান্ড নোকিয়া। যার ডিজাইন করেছিল ফ্রান্সের নামকরা জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ব্রউচেরন। ফোনটির কভার মূলত সোনার তৈরি হলেও এর ডিজাইনে মণি-মুক্তা, পান্না, হীরা ব্যবহার করা হয়েছে। মাত্র ৮ পিস তৈরি হওয়া এ ফোনটির একেকটি ইউনিটের দাম ৩ লক্ষ ১০ হাজর মার্কিন ডলার।