বিকাশ পিন বিকাশ অ্যাকাউন্টের অভ্যন্তরীণ সকল সেবা উপভোগের মুল উপাদান। একটি সঠিক বিকাশ পিন ব্যতীত বিকাশে মোবাইল রিচার্জ সহ ক্যাশ ইন কিংবা ক্যাশ আউট কোনটাই সম্ভব নয়। কিন্তু অনেকসময় ভুল বশত আকস্মিকভাবে অনেক ইউজার তাদের বিকাশ পিন নাম্বার টি ভুলে যান এবং এটি খুবই সাধারণ একটি ঘটনা।
তবে এটি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তাই বিকাশ পিন ভুলে যাওয়াটা অনেক দুশ্চিন্তার এবং ঝামেলার একটি ব্যাপার। কেননা বিকাশের বেশির ভাগ গ্রাহকগণ বিকাশ পিন ভুলে গেলে করণীয় সম্পর্কে অবগত নন। যার ফলে দিনের পর দিন বিভিন্ন সার্ভিস সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি করেও সহজে কোন সমাধান পাওয়া যায় না।
বিকাশ পিন ভুলে গেলে এর সহজ এবং একমাত্র সমাধান হলো বিকাশ পিন রিসেট। বিগত দিনগুলোতে বিকাশ পিন পুনরায় সেট করার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে জটিল হলেও বর্তমানে বিকাশ কর্তৃপক্ষ পিন রিসেট করার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ করেছেন। এক্ষেত্রে একজন গ্রাহক তার ঘরে বসেই নিজেই নিজেই তার বিকাশ পিন পুনরায় নিজের মত করে সেট করে নিতে পারবেন। এর জন্য তাকে শুধুমাত্র কয়েকটি সাধারণ ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
বিকাশের মোবাইল অ্যাপ এর সাহায্যে এবং USSD বা মোবাইল ব্যাংকিং মেনুর মাধ্যমে ঘরে বসে ন্যূনতম সময়ের মাঝে কোন ঝামেলা ছাড়াই বিকাশ পিন হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা সম্ভব।
উপায় একাউন্ট খোলার নিয়ম – উপায় একাউন্ট এর সুবিধা
যেহেতু একজন গ্রাহক হিসেবে বিকাশ পিন রিসেট করার সম্ভাবনা থাকেই এবং কিভাবে একজন গ্রাহক তার ভুলে যাওয়া পিন নাম্বার টি পুনরায় ফিরে পাবেন সে সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত নন। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো বিকাশ পিন রিসেট করার সহজ কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে। তাহলে চলুন জেনে নেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট এর পিন ভুলে গেলে করণীয় হিসেবে কিভাবে আপনি নিজে নিজে সেই পিন রিসেট করবেন।
বিকাশ পিন রিসেট
বিকাশ পিন (PIN) বা পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হলো পাঁচ সংখ্যার এমন একটি কোড যেটি একটি ভ্যালিড বিকাশ অ্যাকাউন্টের মালিককে তার অ্যাকাউন্টের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। এই পিন নম্বরটি অ্যাকাউন্টের প্রকৃত স্বত্বাধিকারী ব্যতীত অন্য কেউ জানবেন না এবং এই পিন নাম্বারের মাধ্যমেই সেই ব্যক্তি বিকাশের বিভিন্ন সেবা যেমন- অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠানো, টাকা গ্রহণ, মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল প্রদান সহ আরও অন্যান্য সেবা সমূহ গ্রহণ করতে পারবেন।
বিকাশ যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাই এর প্রতিরক্ষা বেরিটিও অনেক শক্ত। একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট যেন সহজে হ্যাকিং এর স্বীকার না হতে পারে তাই প্রতিটি অ্যাকাউন্ট এর রয়েছে একটি নিজস্ব পিন নাম্বার। একটি অ্যাকাউন্ট থেকে যেকোন একটি সেবা গ্রহণের জন্য প্রতিবার তার পূর্বে নির্ধারিত পিনের মাধ্যমে লগ ইন করতে হয়।
কিন্তু কোনক্রমে অনিচ্ছাকৃতভাবে সেই পিন ভুলে গেলে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার আর কোন সুযোগ থাকবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক পিন নম্বরটি প্রদান করা না হবে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, পরপর তিনবার একটি ভুল বিকাশ পিন প্রদান করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই অ্যাকাউন্টটি লক হয়ে যায়। এটিও বিকাশের শক্ত অবকাঠামোগত সুরক্ষাকেই প্রমাণ করে।
তবে ইতিমধ্যে যেমনটি জানানো হয়েছে, একজন বিকাশের গ্রাহক ঘরে বসেই তার ভুলে যাওয়া বিকাশ পিন রিসেট করতে পারবেন। তাই আপনিও যদি আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন ভুলে যেয়ে থাকেন তাহলে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে তা পুনরায় সেট করে নিতে পারেন।
শুরুর দিকে বিকাশ পিন রিসেট করার মাত্র দুটি উপায় ছিল। এই দুটি উপায়-ই ছিলো অনেক জটিল এবং এদের কোনটাই গ্রাহকের নিজের হাতে ছিলো না। যেমন- প্রথম পদ্ধতিটি ছিলো বিকাশের কাস্টমার কেয়ার নাম্বার ( ১৬২৪৭)-এ কল করে পিন রিসেট এবং দ্বিতীয়টি হলো বিকাশ লাইভ চ্যাট এর মাধ্যমে পিন রিসেট। কিন্তু এই দুটি পদ্ধতিই অনেক সময় সাপেক্ষ। তাই বিকাশ কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এমন দুটি পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন যার মাধ্যমে অনেক কম সময়ের মাঝে bKash PIN রিসেট করা যায়।
পদ্ধতি দুটি হলো-
- বিকাশ অ্যাপ থেকে পিন রিসেট
- মোবাইল ব্যাংকিং মেন্যু (USSD) থেকে পিন রিসেট।
তো এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম আমরা জেনে নেব পিন রিসেট করার জন্য আপনার কি কি ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন হবে।
প্রথমত যেই মোবাইল নাম্বারে বিকাশ অ্যাকাউন্টটি ওপেন করা সেই মোবাইল নাম্বারটি। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, যেই মোবাইল থেকে পিন রিসেট করা হবে সেই মোবাইলে ঐ সিমটি লোড করা থাকতে হবে অর্থাৎ নাম্বারটি একটিভ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এনআইডি কার্ড/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মধ্যে যে ডকুমেন্টটি ইউজ করা হয়েছিল সেই ডকুমেন্টটি। |
তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে মোবাইলে আপনার বিকাশ পিন রিসেট করবেন।
বিকাশ অ্যাপ থেকে পিন রিসেট
বিকাশ মোবাইল অ্যাপ থেকে পিন রিসেট করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ-১: প্রথমে আপনার মোবাইলে থাকা বিকাশ অ্যাপটি ওপেন করুন।
ধাপ-২: এরপর “Forgot PIN?” অথবা “পিন ভুলে গিয়েছেন” লেখাটির ওপর ক্লিক করুন।
ধাপ-৩: এবার “Reset PIN” অথবা “পিন রিসেট করুন” অপশনটিতে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪: এ পর্যায়ে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা মোবাইল নম্বরটি দেখানো হবে। নম্বরটি সঠিক থাকলে এবার “পরবর্তী” অপশনটি সিলেক্ট করুন।
ধাপ-৫: এই ধাপে সিম কোম্পানি সিলেক্ট করুন।
ধাপ-৬: এরপর আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি OTP কোড আসবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে OTP সাবমিট করার জন্য “Allow” অপশনটি সিলেক্ট করুন। তাহলে এ পর্যায়ে অটোম্যাটিক্যালি ওটিপি কোড সাবমিট হয়ে যাবে।
ধাপ-৭: ওটিপি কোড সাবমিশনের পর ইতিমধ্যে আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি অস্থায়ী পিন এসএমএস এর মাধ্যমে পাঠানো হবে। এই ধাপে সেই অস্থায়ী পিনটি ইনবক্স থেকে চেক করে লিখুন এবং কনফার্ম করুন ।
ধাপ-৮: এবার আপনার পছন্দমত পাঁচ সংখ্যার একটি নতুন পিন পর পর দুইবার লিখে কনফার্ম করুন ।
মূলত এই আটটি ধাপ অতিক্রম করলেই নতুন করে বিকাশ পিন সেট করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এরপর পুনরায় লগ ইন পেজে গিয়ে নতুন এই পিনটি দিয়ে লগ ইন করে চেক করুন যে আপনার পিন রিসেট সঠিকভাবে হয়েছে কিনা।
তবে আপনি যদি সঠিকভাবে উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই পিন রিসেট প্রক্রিয়ায় আপনি সফল হবেন।
মোবাইল ব্যাংকিং মেন্যুর মাধ্যমে পিন রিসেট
বিকাশ মোবাইল অ্যাপের পাশাপাশি বিকাশের মোবাইল ব্যাংকিং মেন্যু থেকে এখন পুনরায় বিকাশ পিন সেট করা সম্ভব। মোবাইলের ডায়াল প্যাড থেকে *247# নাম্বারে ডায়াল করে খুব সহজেই যে কেউ নতুন একটি পিন ফিরে পেতে পারেন। তো এই পুরো প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের নিম্নোক্ত দিকনির্দেশনা গুলো অনুসরণ করুন।
১. প্রথমে মোবাইলের ডায়াল প্যাড থেকে *247# কোডটি ডায়াল করুন।
২. এরপর টোটাল নয়টি অপশনের একটি USSD মেন্যু মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এবার ডায়ালগ বক্স থেকে 9 লিখে Reset PIN অপশনটি সিলেক্ট করুন।
৩. এ পর্যায়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনি আপনার এনআইডি কার্ড/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মধ্যে যেই ডকুমেন্ট ব্যবহার করেছিলেন সেই ডকুমেন্ট এর নম্বরটি প্রদান করুন।
৪. এরপর আপনার Date of Birth বা জন্মতারিখ লিখে সেন্ড করুন এবং পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করুন।
৫. এবার বিগত তিম মাস বা ৯০ দিনের মধ্যে করা সর্বশেষ দশটি লেনদেন এর যেকোন একটি সিলেক্ট করুন। আর যদি ৯০ দিনের মধ্যে কোন লেনদেন না করে থাকেন তাহলে “7” লিখে “No Transaction” অপশনটি সিলেক্ট করুন।
৬. এখন এই ধাপে আপনি যত টাকা লেনদেন করেছিলেন তার পরিমাণ লিখে সেন্ড করুন।
৭. এ পর্যায়ে প্রদানকৃত সমস্ত তথ্য যদি সঠিক বলে বিবেচিত হয় তাহলে এসএমএস এর মাধ্যমে প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে একটি অস্থায়ী পিন পাঠানো হবে।
এখন নতুন অস্থায়ী পিন দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে দেখুন পিন রিসেট সফল হয়েছে কিনা। যদি পুরো কার্যক্রম সঠিক হয়ে থাকে তাহলে পুনরায় *247# ডায়াল করে “My bKash” অপশনটি সিলেক্ট করুন এবং “Change Mobile Menu PIN” অপশনটির মাধ্যমে নতুন আরেকটি পিন সেট করে নিন।
নতুন বিকাশ পিন সেট করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা অতিব জরুরি। যেমন-
- একটি নতুন বিকাশ পিন অবশ্যই ৫ ডিজিটের হতে হবে।
- পিন নাম্বার শুধুমাত্র সংখ্যায় লিখতে হবে।
- বিকাশ পিন নাম্বারের প্রথম সংখ্যাটি কখনও শূন্য হওয়া যাবে না।
- নতুন পিন নাম্বার সেট করার সময় ধারাবাহিক কিংবা একই ডিজিটের নাম্বার ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- 33333, 11111, 45678, 76543, 09876, 12345
আশা করি আমাদের এই আলোচনা থেকে বিকাশ পিন ভুলে গেলে করণীয় এবং সেক্ষেত্রে বিকাশ পিন রিসেট করা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। অ্যাকাউন্ট এর ভুলে যাওয়া পিন নতুনভাবে সেট করার জন্য সব থেকে সহজ এবং ফলপ্রসূ উপায় দুটি আমরা আপনাদের অবগতির জন্য এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।
মোবাইল দিয়ে রকেট একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনি যদি সঠিকভাবে উপরের দিকনির্দেশনা গুলো অনুসরণ করতে পারেন তাহলে অতি সহজে ঘরে বসেই পিন রিসেট করে নিতে পারবেন। কিন্তু তারপরেও যদি আপনি কোনোভাবে পিন পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে থাকেন তবুও দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। নিকটস্থ বিকাশের যেকোন সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারেন।
আমি 2014 সালে বিকাশ একাউন্ট খুলেছিলাম. তখন আমার আইডি কার্ড ছিল না। এখন পিন ভুলে গিয়েছি পিন রিসেট করার জন্য এনআইডি নম্বর দরকার। কিন্তু কার আইডি কার্ড দিয়ে একাউন্ট খোলা সেটা মনে নেই। এটা কি জানার উপায় আছে