অ্যাপল কতো বড়? অ্যাপল এর অজানা ইতিহাস

আইফোন নামক শব্দ শুনলে আমরা প্রথমেই কিডনির কথা চিন্তা করি। সমাজে আইফোন সমান কিডনি নামক একটি মিথ প্রচলিত আছে। সাধারণত আইফোনের বেশি দামের কারণেই আমাদের মধ্যে এই ধারণা কাজ করে। কিন্তু আইফোন যে কোয়ালিটি দেয় তাতে বেশি দাম রাখা স্বাভাবিক। অতিরিক্ত দামের কারণে এই স্মার্টফোন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এতক্ষণ আমরা যে মোবাইল সম্পর্কে কথা বললাম তার প্রস্তুতকারক কোম্পানির নাম অ্যাপল। অ্যাপল তাদের উদ্ভাবনী মনমানুষিকতার জন্য খুব ভালোভাবে বিশ্ব বাজারে স্থান দখল করে নিয়েছে। আমরা এই সাধারণ বিষয় গুলো জানলেও অ্যাপল সম্পর্কে বিস্তারিত জানিনা। আমাদের আজকের পোস্টে অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড কি? অ্যাপল কতো বড় এবং এর অজানা ইতিহাস সম্পর্কে জানবো।

অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড কি?

অ্যাপল যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এর নাম অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড ছিল না। ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াক অ্যাপল ১ নামে একটি পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরি করে। এই কম্পিউটার তারা তৈরি করে বিক্রি করার জন্য। সে সময় স্টিভ ওজনিয়াক কম্পিউটারের টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করতো এবং এই কম্পিউটার ডিজাইন করার জন্য রোনাল্ড ওয়েন ওজনিয়াককে পার্টনারশিপ হিসেবে নেয়। সেখানে স্টিভ জবস মার্কেটিং এবং কম্পিউটার বিক্রি করার দায়িত্ব নেয়। 

১৯৭৭ সালে তারা তাদের কোম্পানিকে তারা অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেটেড (Apple Computer Inc) নামে রেজিস্ট্রেশন করে। স্টিভ জবস তাদের কোম্পানির প্রথম কম্পিউটার অ্যাপল ১ বিক্রি করেন ২০ টি। এর থেকে তিনি পার্সোনাল কম্পিউটারের বাজার এবং মূল চাহিদা বুঝতে পারেন। আর এ জন্য তিনি সিধান্ত নেয় তারা পরবর্তী সংস্করণ বের করবে।

১৯৭৭ সালে তারা অ্যাপল ২ উন্মোচন করে। সে সময়কার সকল পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে অ্যাপল ২ ছিল সব থেকে শক্তিশালী কম্পিউটার। এতে ছিল এমওএস টেকনোলজি প্রসেসর ও ৪ কিলোবাইট র‌্যাম যা ছিল খুব শক্তিশালী। এরপর অ্যাপলকে আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি।

অ্যাপল লোগোর ইতিহাস

অ্যাপল লোগোর ইতিহাস

রোনাল্ড ওয়েন ওজনিয়াক ছিলেন অ্যাপল কোম্পানির প্রধান ডিজাইনার, তিনি অ্যাপলের লোগোর জন্য আপেল গাছের নিচে বসে থাকা স্যার আইজ্যাক নিউটনের লোগো প্রস্তাব করেন। কিন্তু স্টিব জবসের সেটি পছন্দ হয়নি এবং তিনি কামড় দেওয়া রঙিন আপেল লোগো হিসেবে অনুমোদন দেন। 

এই কামড় দেওয়া আপেলের পিছনে একটি মজার বিষয় আছে। যে সময় অ্যাপলের জন্য লোগো বাছাই করা হয় সে সময় স্টিভ জবস ডায়েটে ছিলেন। যার কারণে তাকে প্রচুর ফল খেতে হতো আর এর থেকেই তার মাথায় এই বুদ্ধি আসে। নিঃসন্দেহে এই লোগো অনেক সুন্দর আর উচ্চমানের।

অ্যাপল কম্পিউটারের বিবর্তন

অ্যাপল ১ এবং অ্যাপল ২ ছিল কমান্ড লাইন কম্পিউটার, এবং একটি কীবোর্ড দিয়েই সকল কাজ করা হতো, এরপর ১৯৮৩ সালে অ্যাপল লিসা নামে একটি কম্পিউটার তৈরি করে যাতে মাউস এবং গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস যোগ করা হয়। এই পদক্ষেপ ছিল কম্পিউটার প্রযুক্তিতে একটি অভাবনীয় উদ্ভাবন। যা পার্সোনাল কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন যুগের সূচনা করে দেয়।

গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস প্রথম আবিষ্কার করে অ্যাপল এবং তারাই প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে কম্পিউটারে ব্যবহার করে। এই গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস বিল গেটস কৌশলে হাসিল করে উইন্ডোজ এ ব্যবহার করে। যা থেকে জবস এবং গেটসের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট হয়।

১৯৮৪ সালে অ্যাপল ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার বাজারজাত করে। সেই সময় এই কম্পিউটার ছিল সব কম্পিউটারের বস এবং এর দাম ছিল ২৪৯৫ ইউ এস মার্কিন ডলার। যা সেই সময় ছিল সব থেকে দামী কম্পিউটার, এবং এটি ছিল একটি পরিপূর্ণ পার্সোনাল কম্পিউটার।

এর পর তারা ল্যাপটপ, আইম্যাক নামক পার্সোনাল কম্পিউটার বাজারে আনে। অ্যাপল কম্পিউটারের লিমিটেড সফটওয়্যার ব্যবহার সমস্যার কারণে এটি মানুষের মাঝে অত আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি। যদিও তাদের ব্যতিক্রম চিন্তা ধারার কারণে ব্যবসা টিকে ছিল।

অ্যাপলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল

ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ে ১৯৮৫ সালে অ্যাপল ম্যানেজমেন্ট বোর্ড ঝামেলায় পরে যায়। তখন অ্যাপল কোম্পানির ভিতর দুইটি অংশ তৈরি হয়, এতে স্টিভ জবসকে অ্যাপল ছেড়ে দিতে হয়। জবস চলে যাবার পর স্টিভ ওজনিয়াক অ্যাপল ছেড়ে দেয়, এবং এই দুইজনের অভাবে অ্যাপল তাদের ব্যবসা হারাতে বসে।

অ্যাপল থেকে চলে যাবার পর স্টিভ জবস নেক্সট নামে একটি কোম্পানি শুরু করে। অ্যাপলকে বাঁচানোর জন্য তৎকালীন প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস এর নেক্সট কোম্পানি কিনে নেয়। এবং স্টিভ জবস আবার অ্যাপলে ফিরে আসে এবং প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেয়।

অ্যাপল ল্যাপটপের বিবর্তন

১৯৯১ সালে অ্যাপল পাওয়ারবুক ১০০ নামে সনির ডিজাইন করা ল্যাপটপ বাজারে আনে। যার দাম রাখা হয় ২৫০০০ ডলার। এই অতি উচ্চ দাম দিয়ে অ্যাপল ল্যাপটপের বাজার ধরতে পারেনি। তারপর অ্যাপল ২০০৬ সালে ম্যাকবুক নামে একটি ল্যাপটপ বাজারে আনে যার বর্তমান মূল্য বিভিন্ন মডেলের উপর নির্ভর করে ১২৯৯ থেকে ২৭৯৯ ইউ এস মার্কিন ডলার পর্যন্ত। এরপর ২০০৮ সালে ম্যাকবুক এয়ার নামে একটি ল্যাপটপ বাজারজাত করে। যার বর্তমান মূল্য বিভিন্ন মডেল অনুযায়ী ৯৯৯ থেকে ১২৪৯ ইউ এস মার্কিন ডলার পর্যন্ত।

স্মার্টফোনের ইতিহাস

২০০৭ সালে অ্যাপল বিশ্ব কে তাক লাগিয়ে বিশ্বের প্রথম টাচ স্ক্রীন ফোন বাজারে আনে। তাদের প্রথম স্মার্টফোন আইফোন ছিল কেবল শুরু। এরপর তারা একে একে আইফোন ৩,৪,৫,৬,৭,৮,১১,১২ সহ আইফোন এক্স, আইফোন এসই সহ মোট ২৯ মডেলের ফোন বাজারে আনে।

আইফোনের প্রতিটি মডেলের দাম অনেক বেশি থাকার কারণে একে সচরাচর দেখা যায় না। অ্যাপল এর লেটেস্ট মডেল আইফোন ১২ প্রো যার বাজার মূল্য ১০৯৯ ইউ এস মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় দাড়ায় ৯৩,২০০ হাজার টাকা।

অ্যাপল কতো বড়?

অ্যাপল পৃথিবীর মধ্যে প্রথম কোম্পানি যারা ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বর্তমানে তাদের মার্কেট ভ্যালু ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অ্যাপল স্যামসাংএবং টাটা কোম্পানি থেকে ছোট হলেও গুগল, ফেসবুক এবং অ্যামাজন থেকে অনেক বড় কোম্পানি।

প্রতি বছর অ্যাপল আইফোন বিক্রি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে যা সত্যি অবিশ্বাস্য। আইফোন বিক্রির পাশাপাশি অ্যাপলের কিছু ডিজিটাল পণ্য আছে। পণ্য গুলো হলো- অ্যাপল স্মার্টওয়াচ, আইটিউন, অ্যাপল স্টোর, আইপড, অ্যাপল টিভি, পিক্সার, আইপ্যাড, ওএস এক্স, সাফারি ইত্যাদি।

অ্যাপলের কিছু ইন্টারেস্টিং ঘটনা

অ্যাপল এমন একটি কোম্পানি যারা অতি অল্প সংখ্যক পণ্য বিক্রি করে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হয়েছে। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা তার নিজ কোম্পানি থেকে বিতারিত হয় এবং পরে আবার তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। অ্যাপল Think Different এই শ্লোগানে বিশ্বাসী। অ্যাপলের কর্মীরা অন্য সকল টেক রিলেটেড কোম্পানির কর্মী থেকে বেশি দক্ষ। অ্যাপল এমন ভাবে পণ্য তৈরি করে যে সফটওয়্যার ডেভেলপার জানে না কি ডিভাইস এর জন্য সফটওয়্যার বানাচ্ছে। অন্য দিকে হার্ডওয়্যার নির্মাতা জানে না কোন সফটওয়্যারের জন্য হার্ডওয়্যার বানাচ্ছে। এর ফলে অ্যাপলের পণ্য বেশি সিকিউর হয়। অ্যাপল প্রথম টাচ স্ক্রীন মোবাইল ফোন, গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস এবং মাউস আবিষ্কার করে। অ্যাপল ২০২০ সালে মোট ২৭৪.৫ বিলিয়ন ইউ এস মার্কিন ডলার আয় করে। এবং সব মিলিয়ে অ্যাপলের মোট কর্মচারী সংখ্যা ১৩৭,০০০ যা সর্বশেষ গণনা হয় ২০১৯ সালে।

অ্যাপল একটি মাল্টিন্যাশনাল ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির কোম্পানি। একই ধাঁচের অন্যান্য কোম্পানির থেকে অ্যাপলের পণ্য অনেক কম। কিন্তু এই কম পণ্য দিয়েই অ্যাপল বর্তমানে ২ ট্রিলিয়ন মূল্যের একটি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। অ্যাপল নিয়ে আপনার মনে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন ধন্যবাদ। 

স্যামসাং কিভাবে তৈরি হলো? স্যামসাং এর ইতিহাস

Leave a Reply