উইকিপিডিয়া কি? উইকিপিডিয়া কিভাবে কাজ করে?

আধুনিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ছোট-বড় যেসব আবিষ্কার আমাদের প্রতিনিয়ত কাজে লাগছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো উইকিপিডিয়া। আজকে উইকিপিডিয়া না থাকলে কি পরিমাণ সময়ের অপব্যয় এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন হতো তা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। আসলেই তাই, উইকিপিডিয়া যেন এক জাদুর চেরাগ। যা আপনার ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোনের একটি ক্লিকে বলে দিতে পারে পুরো বিশ্ব সম্পর্কে। আজকের আধুনিক বিশ্বের শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা সহ সবক্ষেত্রেই উন্নতির পেছনে এক নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে উইকিপিডিয়া।

একটা সময় ছিল যখন ইন্টারনেটে স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারের আবিষ্কার হয়নি। সে সময়ে কোন কিছু সম্পর্কে কোন তথ্য বের করা ছিল অনেক কষ্টকর ব্যাপার। কারণ যে কোন তথ্যের প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহকারী কে প্রচুর পরিমাণ বইপত্র ঘাটতে হত। কিন্তু এখানেও একটু সমস্যা রয়েছে- সব ধরনের বই রাখা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না। তাই তখনকার সময়ে যে কোন ইনফরমেশন বের করা ছিল অনেক অনেক কঠিন ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

আজকের দিনে কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলেই আমরা হাতের ছোট্ট স্মার্টফোনটি কিংবা আমাদের কম্পিউটারটি ওপেন করে খুব সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করে নিতে পারি। কিন্তু পূর্বে তথ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিল বিভিন্ন বড় বড় লাইব্রেরি। আর এসব থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষেরা জ্ঞান আহরণ করত। আধুনিক বিজ্ঞানের একটি আবিষ্কার এসকল সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে। আর সেটা হলো উইকিপিডিয়া। চলুন তাহলে উইকিপিডিয়া সম্পর্কে খুটিনাটি বিস্তারিতভাবে জেনে নেয়া যাক।

উইকিপিডিয়া কি? 

উইকিপিডিয়া শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো “বিশ্বকোষ”। এটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেটভিত্তিক বহুভাষী একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম বা তথ্য ভান্ডার। সর্বপ্রথম উইকিপিডিয়া আত্মপ্রকাশ করে ২০০১ সালে। যা চালু করেন জিমি ওয়েলস ও ল্যারি স্যাঙ্গার নামের দুই ব্যক্তি।  বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৩০০ টিরও বেশি ভাষায় উইকিপিডিয়া পড়া যায়, যাদের মধ্যে বাংলা অন্যতম। উইকিপিডিয়া এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যে এখানেই প্রায় সকল সমৃদ্ধ তথ্যের প্রাচুর্যতা রয়েছে। বিশ্বের বর্তমানের প্রায় সকল তথ্য ও প্রাচীনকালের অনেক তথ্য, বই এবং বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়েরই অসংখ্য নিবন্ধন রয়েছে এখানে।

ইভ্যালি কিভাবে তৈরি হলো? ইভ্যালি কত বড়?

উইকিপিডিয়া এত বড় প্ল্যাটফর্ম যে এখানে কি কি আছে তা বলার চেয়ে কি নেই তা বলাটা অনেক সহজ। তাই আর এখন যে কোন তথ্যের প্রয়োজনে মানুষকে আর বইপত্র ঘাটতে হয়না। উইকিপিডিয়াতে একটা সার্চ দিলেই হয়ে যায়। তাই বলে বইপত্রের গুরুত্ব কিন্তু এতোটুকুও কমে যায়নি। উইকিপিডিয়া যে সুবিধাটি দিয়েছে তা হল দ্রুত তথ্য খুঁজে বের করার সক্ষমতা। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কে করেছে আরও দ্রুত ও সহজ। এখন কোন তথ্য বের করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইব্রেরীতে বসে হাজার হাজার বই খুজতে হয় না। কারণ ঊইকিপিডিয়া তে একটু খোঁজ নিলেই আপনি বিষয়টি সম্পর্কে কোন না কোন তথ্য পেয়ে যাবেন।

ইন্টারনেটভিত্তিক এ প্ল্যাটফর্মটি যে কেউ যে কোন স্থান থেকেই ব্যবহার করতে পারে। শুধু প্রয়োজন হয় ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির। মজার ব্যাপার হলো এর জন্য আপনাকে কোন প্রকার ফি-ও দিতে হয় না। কারণ উইকিপিডিয়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু বিনামূল্যে প্ল্যাটফর্ম বলে উইকিপিডিয়া দেয়া তথ্যের মান কিন্তু কোন ভাবেই খারাপ নয়। বরং ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থার দুনিয়ায় উইকিপিডিয়াই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এমনকি বর্তমান ইনফরমেশনের দুনিয়াকে নেতৃত্ব দিচ্ছে উইকিপিডিয়া।

উইকিপিডিয়া কিভাবে কাজ করে?

উইকিপিডিয়া কিভাবে কাজ করে?

উইকিপিডিয়ার মত এতবড় বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম কিভাবে কাজ করে তা জানার আগ্রহ আপনার থাকতেই পারে। কিন্তু উইকিপিডিয়ার কাজ করার প্রসেসিংটি মোটেই জটিল নয়। একটি উন্মুক্ত বিশ্বকোষ হিসাবে এখান থেকে তথ্য পাওয়া কিংবা নতুন নতুন তথ্য যোগ করা সবকিছুই খুব সাধারণ ভাবেই হয়ে থাকে। তাই বলে এখানে ভুয়া কোন তথ্য যোগ করার ও পাবলিশ করার খুব একটা সুযোগ নেই। কারণ এখানকার প্রতিটি নিবন্ধনই বারবার পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এখানে থাকেন বিভিন্ন নিবন্ধন গুলোতে কেউ রিপোর্ট করলে উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষ তা অন্য কোনো পক্ষের মাধ্যমে যাচাই করে থাকে।

উইকিপিডিয়া একটি বিশ্বকোষ হওয়ায় এখানে আপনি আমি যে কেউ কোনো বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করতে পারি। কিংবা আগে থেকে থাকা লাখ লাখ প্রবন্ধকে প্রয়োজনে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারি। কিন্তু যে কোন বিষয়ে লেখার পূর্বেই উইকিপিডিয়ার নিয়ম অনুযায়ী দেখা হয় যে সেটির উল্লেখযোগ্যতা আছে কিনা। এছাড়া নিবন্ধনের তথ্য প্রমাণ রয়েছে কিনা এবং লেখাটি ঊইকিপিডিয়া নিয়ম মেনেই লেখা হয়েছে কি-না তাও দেখা হয়। তাছাড়াও উইকিপিডিয়া অন্য কোন ওয়েবসাইট থেকে কপি করা লেখা, মতামত, গবেষণামূলক বা ব্লগ ইত্যাদি ধাঁচের লেখা গ্রহণ করে না। তাই কোন লেখা প্রকাশ করার পূর্বে এ বিষয়গুলোর উপর সতর্ক থাকতে হবে।

আর চাইলেও আপনি উইকিপিডিয়াতে অনির্ভরযোগ্য কোন তথ্য সম্বলিত লেখা যুক্ত করতে পারবেন না। কারন এরকম কোনো লেখা যুক্ত করতে চাইলে উইকিপিডিয়ার নীতিমালা অনুসারে আপনার লেখাটি অপসারণ করে দেয়া হবে। আর এতসব নিরাপত্তার জন্যই উইকিপিডিয়া অন্য সবার থেকে বিশ্বস্ত ও সবচেয়ে বড় তথ্যের প্ল্যাটফর্ম।

উইকিপিডিয়া একটি সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রকল্প। এ জন্য এতে লেখার জন্য অবদানকারীরা যেমন পারিশ্রমিক পান না, তেমনি নিবন্ধ প্রকাশ করতেও কোন অর্থ দিতে হয়না। এরপর পড়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের ফি দিতে হয় না। উইকিপিডিয়া এর ওয়েবসাইট পরিচালনা করার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় তার পুরোটাই আসে ব্যবহারকারীদের ডোনেশন থেকে। আর এজন্যই কখনও ঊইকিপিডিয়াতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হয় না। এমন একটি কৃতিত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম গড়ে তোলার কারণে বিশ্বের তথ্য ব্যবস্থাপনা হয়েছে অনেক অনেক সহজ।

উইকিপিডিয়া কত বড়?

উইকিপিডিয়া কত বড়?

উইকিপিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যভান্ডার। এখানে এত বেশি পরিমাণ নথি জমা আছে যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। এখন পর্যন্ত উইকিপিডিয়া ৩০১ টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। আর এইসব ভাষায় উইকিপিডিয়া থেকে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বেশি নিবন্ধ রচনা করা হয়েছে। যার মধ্যে শুধু ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় রয়েছে ৫৮ লাখেরও বেশি নিবন্ধ। তাই উইকিপিডিয়াকে অনায়াসেই আপনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইট বলতে পারেন। অ্যালেক্সা র‍্যাঙ্কিংয়ের দিক থেকে উইকিপিডিয়ার বৈশ্বিক অবস্থান ১৩ তম। মূলত ব্যবহারকারীদের ভিজিট এর উপর ভিত্তি করে এ্যালেক্সা তার র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে। তাই বুঝতেই পারছেন উকিপিডিয়ার উপর মানুষ কতটা নির্ভরশীল।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার উপায়

উইকিপিডিয়ায় বর্তমানে দৈনিক সাড়ে ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ তথ্য অনুসন্ধান করে থাকেন। এসব ব্যবহারকারীদের মাসিক প্রায় ১৮ বিলিয়নেরও বেশি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে উইকিপিডিয়া। এখন পর্যন্ত উইকিপিডিয়ার সর্বাধিক ১.২ বিলিয়ন সতন্ত্র পরিদর্শক রয়েছে। আর এসব কারণেই বর্তমানে উইকিপিডিয়া বিশ্বের সবথেকে বড় এবং জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যসূত্র।

বর্তমান সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ  উইকিপিডিয়া। এখানে থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন তথ্য আমাদের নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজ কর্ম গবেষণা কিংবা পড়াশোনার সঙ্গী। উইকিপিডিয়া আবিষ্কারের পর থেকেই এর গুরুত্ব কোন সময়ের জন্য কমে যায়নি। বরং উইকিপিডিয়ার সুবিধাভোগী ও ভিজিটর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। একটি কল্যাণমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য উইকিপিডিয়া সবচেয়ে বড় অবদানটি রেখে চলেছে। আর আড়ালে এ কাজটি করে যাচ্ছে উইকিপিডিয়ার পরিচালনা প্রতিষ্ঠান “উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন”। যার স্লোগান হলো “মুক্ত বিশ্বকোষ”। উইকিপিডিয়া সত্যিকার অর্থেই এমন মুক্ত বিশ্বকোষ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে। যার অবদান কোনভাবেই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

Leave a Reply