টিকটক কি?
টিকটক কি? টিকটক কিভাবে তৈরি হলো? টিকটক কত বড়?

টিকটক কি? টিকটক কিভাবে তৈরি হলো? টিকটক কত বড়?

আপনি কি আপনার সৃজনশীলতা, ট্যালেন্ট বা এক্সট্রাঅরডিনারি কিছু প্রকাশ করার প্ল্যাটফর্ম খুঁজছেন? আপনার উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়ে থাকে তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আপনাদের এমন একটি বিখ্যাত প্ল্যাটফর্ম এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যেখানে আপনি চাইলে খুব সহজেই আপনার ক্রিয়েটিভিটি কে প্রকাশ করতে ও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেন।

আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আমাদের জীবন যাপন অনেক সহজ করে দিয়েছে। তাই কোন কিছু প্রকাশ করা ও তা ছড়িয়ে দেয়া এখন আর কঠিন কিছু নয়। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের আবিষ্কারের ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় এসে গেছে। তাই এখন চাইলে ঘরে বসেই অনেক কিছুই করা সম্ভব।

ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের পূর্বে নিজের সৃজনশীলতাকে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করা একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। কারণ তখন এর জন্য বিভিন্ন লাইভ শো, পেপার-পত্রিকা, টেলিভিশন ইত্যাদির উপর নির্ভর করতে হতো। তাই ছোট-বড় অনেক মেধাবী ও সৃজনশীল প্রতিভা অগোচরেই থেকে যেত।

একবার ভাবুনতো যদি পৃথিবীর সব প্রতিভাবান, সৃজনশীল ও অসাধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারত তাহলে পৃথিবীর রূপটা কেমন হতো? নিশ্চয়ই এতে পৃথিবীর আধুনিকায়ন আরো অনেক দ্রুত থেকে দ্রুততর হতো। পাশাপাশি সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমুল উন্নতি সাধন হতো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সে সময় এসব প্রতিভা প্রকাশের সহজ কোনো মাধ্যমই ছিল না।

কিন্তু বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আবিষ্কার হয়েছে। যার মাধ্যমে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে পৃথিবীর ৪০০ কোটি মানুষকে। তাই আপনার প্রতিভা, সৃজনশীলতা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে পৌঁছে দেয়া খুবই সহজ। আর এর ফলে হাজারো নিত্যনতুন আইডিয়া ও সৃজনশীলতা পৃথিবীতে করছে আরো সমৃদ্ধ ও সহজ।

আর বর্তমানে আপনার এ সৃজনশীলতা ও প্রতিভা প্রকাশের ইন্টারনেটভিত্তিক অন্যতম একটি প্লাটফর্ম হল টিকটক। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার ছোট-বড় প্রতিভা পৌঁছে যাবে লাখো মানুষের কাছে।

টিকটক কি?

টিকটক মূলত একটি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কেউ সহজেই নিজের বিভিন্ন বিষয়ক ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করতে পারে। এটা হতে পারে অভিনয়, গান, কৌতুক, ফিটনেস, ভ্রমণ, কারিগরি দক্ষতা, স্বাস্থ্য, কবিতা, মোটিভেশন ইত্যাদি। শুধু ভিডিও অন্যদের সাথে শেয়ার করাই নয়, আপনি চাইলে এখান থেকে এমন হাজারো মানুষের ভিডিও দেখতেও পারবেন। আপনার একটি ভিডিও শেয়ার করার সাথে সাথেই তা পৌঁছে যাবে কয়েক লাখ টিকটক ব্যবহারকারীর কাছে।

এ মজার প্লাটফর্ম টিকটক মূলত একটি অ্যাপ্লিকেশন। আপনি একে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন বলতে পারেন। এখানে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস বা গান আপনার ভিডিওটিকে অসাধারণ করে তুলবে। এখানে ভিডিও বানানোর জন্য আপনার খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। টিকটক এ একটি শর্ট ভিডিও বানাতে গড়ে তিন থেকে চার মিনিট সময় লাগে।

এখনকার সময়ে সবাই চায় নিজেকে বিখ্যাত করতে ও পাবলিসিটি বাড়াতে। এজন্য বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে টিকটক ব্যবহার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এখানে বিভিন্ন রকম ক্যাটাগরির ভিডিও বানিয়ে অনেকেই খুব তাড়াতাড়ি প্রচুর পপুলারিটি পেয়েছেন। তবে টিকটক একটি ইন্টারনেট দুনিয়া। তাই এখানে খুব বেশি এনগেজড হওয়া জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সবার সাবধান থাকা উচিত।

টিকটক কিভাবে তৈরি হলো? 

সাধারণত ব্যবহারকারীর ছোট আকারের ভিডিও পাবলিশ করার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করাই ছিল টিকটক অ্যাপ্লিকেশনটির মূল লক্ষ্য। এ অ্যাপ্লিকেশনটি মূলত চীনের তৈরিকৃত বিশেষ একটি প্ল্যাটফর্ম। যা সর্বপ্রথম সংগীত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম এবং সামাজিক নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চালু করা হয়। টিকটক এর প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইয়েমিং একজন চীনা নাগরিক। টিকটক এর মূল প্রতিষ্ঠান হলো বাইডেন্স করপোরেশন। বর্তমানে এশিয়ার নেতৃত্বস্থানীয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম এবং বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় সংগীত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকটক বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অ্যাপ্লিকেশনের জায়গা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে এর কয়েক লাখ সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। তাই টিকটক কে ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই।

মানুষের কয়েক মিনিটের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো ভিডিও আকারে অন্যদের সাথে শেয়ার করার এ আইডিয়াটি খুব দ্রুতই প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে এমনকি আমেরিকাসহ বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে টিকটক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেশ কয়েকটি অ্যাপ বাজারে এসেছে। এগুলোর মধ্যে লাইকি, ভিগো লাইভ ইত্যাদি অন্যতম।

বেশ কয়েকটি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের কারণে টিকটকের মতো অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনগুলি প্রচুর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাই এ সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত তাদের অ্যাপ্লিকেশনগুলোর বিভিন্ন আপডেট করছে। সবাই নিত্য নতুন ভিডিও ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যোগ করছে। যার ফলে টিকটক এর ভিডিও গুলো হয়ে উঠেছে আরো আনন্দদায়ক ও প্রাণবন্ত।

টিকটক কত বড়?

টিকটক অ্যাপ্লিকেশনটির বিস্তৃতি বর্তমান পুরো বিশ্বজুড়ে। বর্তমানে এই অ্যাপটি আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে পরিচালনা করা যাচ্ছে। ভিডিও শেয়ারিং এ সাইটটি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত তৈরি নিত্য নতুন আপডেট নিয়ে আসছে। বর্তমানে এ অ্যাপটির মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। যার ফলে বিশ্বখ্যাত ওয়েবসাইট রাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সাতে এর অবস্থান হয়েছে ৩২০ তম। যা থেকে এর জনপ্রিয়তার পরিমাণ বোঝা যায়।

ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য অ্যাপটিতে ৪০ টিরও বেশি ভাষা ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন দেশের ও ভাষাগোষ্ঠীর ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই এ অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারে। নাচ, কৌতুক,বিনোদন  এবং শিক্ষার মতো বিষয়ে সর্বোচ্চ ৩ মিনিট ৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত ভিডিও শেয়ার করার এ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন পর্যন্ত ৪৫.৮ মিলিয়নের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে। যা টিকটককে নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনগুলোর তালিকায় স্থান করে দিয়েছে।

টিকটক থেকে টাকা উপার্জন

জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক থেকে আপনি চাইলে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এখানে আপনার বিভিন্ন ভিডিও এর ভিউয়ের উপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ আপনাকে ভার্চুয়াল কয়েন বা টোকেন দিয়ে থাকে। যেগুলো আপনি পরবর্তীতে টাকায় কনভার্ট করে নিতে পারেন। তবে এখান থেকে খুব একটা বেশি পরিমাণ আয়-রোজগার করা যায় না। কারণ এখানকার সিস্টেমটাই এরকম। তাই আপনি যদি ভিডিও শেয়ার করে অর্থ উপার্জনের চিন্তা করেন তাহলেই এ প্লাটফর্মটি আপনার জন্য নয়। তারচেয়ে আপনি বরং ইউটিউবে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে পাবলিশ করতে পারেন। যা থেকে আপনি মোটামুটি ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

টিকটক ক্ষতিকর কি-না?

জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক এর সুবিধাগুলোর পাশাপাশি বর্তমানে অনেক ক্ষতিকারক দিক নজরে এসেছে। বিশেষ করে এর অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীরা। কারণ খুব কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য তারা অনেক অসামাজিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও টিকটকে প্রকাশ করছে। এমনকি এজন্য অনেকে আইনও ভাঙছেন। যা সবার জন্যই অনেক ক্ষতিকর।

এছাড়া পড়াশুনা কিংবা দক্ষতা অর্জন না করে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের আশায় টিকটক নিয়ে ব্যস্ত থাকা অনেকেই পরবর্তীতে নানা হতাশায় ভুগছেন। যা থেকে তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড নেশা, জুয়া ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে অনেক বিশেষজ্ঞরাই টিকটক কে একটি ক্ষতিকারক ও সময় নষ্টকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এমনকি টিকটকের কারণে সৃষ্ট এসব অপরাধ রোধ করার জন্য বর্তমানে অনেক দেশেই টিকটক কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া টিকটক থাকা বিভিন্ন ভিডিও ও তথ্য ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে। এজন্য টিকটক এর ব্যবহারে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই, আমাদের টিকটক ব্যবহারে সর্তক থাকা উচিৎ।

Leave a Reply