ডেস্কটপ কিনবেন? না ল্যাপটপ কিনবেন?

আপনাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আধুনিক যুগের সবচেয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কার কোনটি? তাহলে আপনি কি উত্তর দেবেন? খুব সহজ, এ প্রশ্নটি করার সাথে সাথেই আপনার মাথায় কেবল একটি উত্তরই ঘুরপাক খাবে, আর তা হলো কম্পিউটার

আজকের বিশ্বের যে এতটা অগ্রগতি তার মূল কারন কিন্তু এ কম্পিউটার।  কম্পিউটারের আবিষ্কার আমাদের বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে পুরোপুরিভাবে বদলে দিয়েছে। আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতিকে বদলে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতি ও অগ্রগতির যাত্রাকে নতুন রূপ দিয়েছে। আজকে আমরা যে আধুনিক বিশ্ব দেখেছি, তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে রয়েছে কম্পিউটারের অবদান। তাই কম্পিউটার ছাড়া এ সচল বিশ্ব যে অচল হয়ে যাবে তা সুনিশ্চিত।

তবে সময়ের সাথে শুধু কম্পিউটারই আমাদের বিশ্বকে বদলায়নি তার সাথে সাথে নিজেও বদলে গেছে। এজন্যে প্রথমদিকের কম্পিউটার এবং বর্তমানের কম্পিউটারের মধ্যে কাজে, আকারে ও দামে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। এ সবকিছুরই কারণ মূলত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন।

সর্বপ্রথম যখন কম্পিউটার আবিষ্কার করা হয়। তখন শুধুমাত্র ল্যাবরেটরী ও গবেষণার কাজে একে ব্যবহার করা হতো। যা আজকের সময়ের মতো জনসাধারণের হাতের নাগালের বাইরে ছিল। এছাড়া কম্পিউটারের কাজের ক্ষেত্রেও ব্যাপক সীমাবদ্ধতা ছিল। কম্পিউটার আজকের মত এত আধুনিক ও কাজের যন্ত্র ছিল না। তখনকার সময়ে কম্পিউটার ছিল একটা কাঠখোট্টা যন্ত্র। যা দিয়ে শুধুমাত্র জটিল গাণিতিক হিসাব নিকাশ ও বিভিন্ন গবেষণা করা হতো। আর এখনকার কম্পিউটার মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ এবং হাজারো কাজের উপযোগী। এমনকি যে কেউ এর ব্যবহার করতে পারে।

কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকেই এর প্রধান একটি সীমাবদ্ধতা ছিল, তা হলো এর আকার। শুরুতে কম্পিউটারের আকার এত বড় ছিল যে একে রাখা ও মেইটেনেন্স এর জন্য রীতিমতো মহাযজ্ঞ করতে হতো। এসময় দুই-তিনটি বড় বড় রুমজুড়ে কম্পিউটারকে রাখতে হত। এছাড়া ধুলাবালি ও বিভিন্ন জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য কঠোর নিয়ম কানুন মেনে চলতে হতো। এসবের ফলে এর পরিচালন ব্যয়ও অনেক অনেক বেশি হত। তাই সব সময় কম্পিউটার লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যেত।

কিন্তু বিজ্ঞানী ও গবেষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে কম্পিউটারকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে ডায়োট ও ট্রায়োডের আবিষ্কার ইলেকট্রনিক্স এর জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। যার ফলে প্রত্যেকটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র আকার ছোট হওয়া শুরু করে। আস্তে আস্তে বিশালাকার সেই কম্পিউটারটিকে মনিটর ও সিপিইউ নামে দুইটি বাক্সের আকারে পরিণত করা হয়। যা বিভিন্ন কলকারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার এমনকি বাসাবাড়িতে কম্পিউটার ব্যবহারের পথ সুগম করে দেয়। আজকে আমরা যে কম্পিউটারটি দেখতে পাই তাই কিন্তু এটি। এর দাম থেকে শুরু করে আকার, পরিচালনা সবকিছুই এখন আমাদের হাতের নাগালে।

কম্পিউটার ভাইরাস কি? কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কি?

এত আধুনিকায়নের পরেও কম্পিউটারের কিন্তু একটি সীমাবদ্ধতা থেকেই গেছে। আর তা হল এর বহনযোগ্যতা বা পোর্টেবিলিটি। আর এই কারণে আবিষ্কার হয়েছে ল্যাপটপের। ল্যাপটপের একটিমাত্র ভালো দিক যা কম্পিউটারকে হারিয়ে দেয় তা হলো এর পোর্টেবিলিটি। ছোট্ট একটি বাক্সের আকারের দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের এই ল্যাপটপটি আপনি চাইলে খুব সহজেই যেকোন স্থানে নিয়ে যেতে পারবেন। যা কোনো দিক থেকেই কম্পিউটারের চেয়ে কম নয়।

এখনকার বাজারে ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ দুটোই থাকার কারণে এবং এদের কাজও এক হওয়ার কারণে আমাদের প্রায় সবাইকে একটি সাধারণ সমস্যায় পড়তে হয়। আর এ কমন সমস্যাটি হলো- ল্যাপটপ কিনব? নাকি, ডেস্কটপ কিনব?

এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কিন্তু মোটেই সহজ নয়। কারণ একেকজনের ক্ষেত্রে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের ব্যাপারটি ভেরি করে। তাই বলে আপনি ল্যাপটপ না ডেক্সটপ কিনবেন তা বের করা কিন্তু অসম্ভব কিছু না। শুধুমাত্র কয়েকটি ব্যাপার ভেবে দেখুন। এরপরে সিদ্ধান্ত নিন আপনার জন্য ল্যাপটপ ভালো হবে নাকি ডেক্সটপ। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগ সহকারে একটু ভাবলেই আপনি আপনার সিদ্ধান্তে পৌছে যাবেন-

ল্যাপটপ যে কারণে কিনবেন

ল্যাপটপ যে কারণে কিনবেন

সুবিধাঃ

পোর্টেবিলিটিঃ  ল্যাপটপের এই একটা মাত্র গুণ ডেস্কটপ থেকে একে শতগুণে এগিয়ে রাখে। বর্তমান ব্যস্ত জীবনে পোর্টেবিলিটি মারাত্মক একটি জিনিস। অফিসের কাজেই হোক কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে ল্যাপটপ এর প্রয়োজনীয়তা হয় সবার আগে। তাই পোর্টেবিলিটির প্রয়োজনে কোনো কিছু চিন্তা না করে ল্যাপটপ কিনুন।

কম্ফোর্টিবিলিটিঃ  ল্যাপটপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরেকটি মজার জিনিস হলো এর কম্ফোর্টিবিলিটি। পোর্টেবল হওয়ার খুব সহজেই একে আপনি বিছানায়, টেবিলে, বাসে কিংবা অন্য যে কোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। এতে মোটেও আপনার কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। তাই কম্ফোর্টিবিলিটির দিক থেকেও ল্যাপটপ ডেস্কটপের থেকে অনেক এগিয়ে।

পাওয়ার ব্যাকআপঃ  যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর মূল চালিকা শক্তি হল বিদ্যুৎ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কাজের সময় বিদ্যুৎ থাকে না। যার ফলে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ল্যাপটপের সাথে অলরেডি পাওয়ার ব্যাকআপ যুক্ত থাকে। যা কোন প্রকার বাধাহীনভাবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বা তারও বেশি সময়ের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেয়।

সীমাবদ্ধতাঃ

ল্যাপটপে খুব ভারী কাজ করতে গেলে অনেক সময় ল্যাগিং ও আরো অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই আপনার যদি ভিডিও এডিটিং বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের মত ভারি কাজগুলো করার প্রয়োজন হয়। তাহলে ল্যাপটপ দিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না।

ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়

ল্যাপটপকে মোটামুটি এক্সপেন্সিভ বলতে পারেন। কারণ এর দাম ডেক্সটপের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাই ল্যাপটপ কিনতে হলে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে।

ডেক্সটপ যে কারণে কিনবেন

ডেক্সটপ যে কারণে কিনবেন

সুবিধাঃ

সহজলভ্যতাঃ ডেস্কটপ এর দাম ল্যাপটপের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম। মোটামুটি মানের বাজেট হলেই ভালো একটি ডেস্কটপ কেনা সম্ভব। দাম অনেক কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সবারই ডেস্কটপ কেনার ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে। তাই অর্থ বাঁচাতে চাইলে ডেক্সটপই সেরা অপশন।

হাইপারফরমেন্সঃ ডেস্কটপের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর পারফরম্যান্স। সরাসরি এসি পাওয়ারে চলার কারণে এটি high-performance ডেলিভারি দিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে ল্যাপটপ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। ডেক্সটপ দিয়ে আপনি অনায়াসেই ভারী কাজ গুলো করতে পারবেন। তাই ভালো পারফরমেন্স পেতে চাইলে ডেক্সটপ কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আপগ্রেডেবলঃ ডেক্সটপের সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো এর আপগ্রেডিবিলিটি। আপনার ডেস্কটপের কনফিগারেশন অনুযায়ী খুব সহজেই আপনি একে আপগ্রেড করে নিতে পারবেন। যার ফলে আপনার অর্থ ও সময় দুটোই বাঁচবে। পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে আপনার ডেস্কটপটিকে কাজের উপযোগী করে নিতে পারবেন, যা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কখনো সম্ভব নয়।

সীমাবদ্ধতাঃ

ডেক্সটপের প্রধান সীমাবদ্ধতা হল এর পোর্টেবিলিটি নেই। তাই আপনি চাইলেও কাজের প্রয়োজনে একে ল্যাপটপের মতো খুব সহজে কোন স্থানে নিয়ে যেতে পারবেন না। এছাড়াও আপনাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই কাজ করতে হবে। ল্যাপটপের মত কম্ফর্ট ভাবে ডেক্সটপ ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।

বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতার কারণে কোন কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন না। যার ফলে অনেক কাজ করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হতে পারেন। তবে ইদানিং আইপিএস ও ইউপিএস এর মাধ্যমে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে।

ল্যাপটপ এবং ডেক্সটপ উভয়েরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। তাই এসব বিবেচনায় নিয়েই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এজন্য আপনি কি চান? তার উপর নির্ভর করবে আপনি কোনটি কিনবেন। 

আপনি যদি খুব ট্রাভেল করেন বা আপনার ডিভাইসটিকে এখানে সেখানে নিয়ে যেতে হয় তাহলে ল্যাপটপের বিকল্প কিছু হবে না। তবে পোর্টেবিলিটির প্রয়োজন না হলে আপনি ডেক্সটপ কেনার দিকে নিজেকে সুইচ করতে পারেন। সবকিছুই মূলত নির্ভর করবে আপনার সিদ্ধান্তের উপর। এজন্য আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটি সুদূরপ্রসারি সিদ্ধান্ত নিন।

Leave a Reply