একবার ভেবে দেখুন তো ইন্টারনেটের ব্যবহার ছাড়া আপনি কতদিন থাকতে পারবেন?আধুনিক যুগের কোন সভ্য মানুষের পক্ষেই ইন্টারনেটের প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ ব্যবহার ছাড়া খুব বেশিক্ষণ টিকে থাকা সম্ভব নয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্য প্রযুক্তি ও নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান সবকিছুই এখন ইন্টারনেট নির্ভর। তাই বলতে পারেন ডিজিটালাইজেশন এর মূল শক্তিই হলো ইন্টারনেট।
আজকের ডিজিটাল বিশ্ব ব্যবসায় সবকিছুই এখন ওয়েবসাইট নির্ভর। আপনার জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে, রেজাল্ট, চাকরি আবেদন এমনকি ফ্রিল্যান্সিং সবকিছুই চলছে ওয়েবসাইটের শক্তিতে। আর ওয়েবসাইট চালানোর এ শক্তি আসছে ইন্টারনেট থেকে। তাই এ দুটির গুরুত্ব যে অপরিসীম এ নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়।
কিন্তু ইন্টারনেটে থাকা এসব কোটি কোটি ওয়েবসাইটের মধ্য থেকে আপানার কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটটির তথ্য বের করতে হবে। তাই না? এ তথ্য খুঁজে বের করার কাজটি কিন্তু এত সহজ নয়। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় অনেক সময়েরও প্রয়োজন। আর এই কাজটিকে সহজ করে দিয়েছে ওয়েব ব্রাউজার।
ওয়েব ব্রাউজার কি?
ওয়েব ব্রাউজার হলো আপনার কাঙ্খিত ওয়েবসাইটটি সমন্ধে তথ্য প্রদর্শন করাতে পারে এমন বিশেষ সফটওয়্যার। আর এ জন্যই ব্রাউজারকে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার গেটওয়ে বলা যেতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বে অনেকগুলো ওয়েব ব্রাউজার প্রচলিত আছে। যেমন- ক্রোম, সাফারি, ফায়ারফক্স, পাফিন, ইউসি, ওপেরা মিনি, মাইক্রোসফট EDGE ইত্যাদি।এখনকার সময়ে বিশ্বের প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো ব্রাউজার ব্যবহার করে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় ১০ টি ওয়েব ব্রাউজারের সম্পর্কে এখানে তুলে ধরা হলোঃ
গুগোল ক্রোম (Google Chrome)
বর্তমান বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবহৃত ওয়েব ব্রাউজার হলো গুগোল ক্রোম। বিশ্বের মোট ব্রাউজার ব্যবহারকারীর ৬৪% এ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে। এ ওয়েব ব্রাউজার প্লাটফর্মটি গুগোল ডেভেলোপ করেছে, যা ২০০৮ সালে সর্বপ্রথম মাইক্রোসফট উইন্ডোজের জন্য রিলিজ করা হয়। পরবর্তীতে ম্যাক, লিনাক্স, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েডের মত অপারেটিং সিস্টেমগুলোর জন্য এটিকে ডেভেলপড করা হয়।
ক্রোমের একটি অন্যতম সুবিধা হলো এর সুবিশাল এক্সটেনশন লাইব্রেরি। এখানকার প্রয়োজনীয় অনেক এক্সটেনশন যুক্ত করার মাধ্যমে দারুন ইউজার এক্সপ্রিয়েন্স পাওয়া যায়। অন্যদিকে গুগলের প্রোডাক্ট হওয়াতে গুগোলের বিভিন্ন সার্ভিসগুলো অন্য যে কোন ব্রাউজার থেকে ভালো পাওয়া যায়।
গুগোল ক্রোম ব্রাউজারটিকে সাজানোর জন্য গুগোল ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা ২৫ টি ভিন্ন ভিন্ন কোড লাইব্রেরি ব্যবহার করা হয়েছে। যা ক্রোমকে অন্য যে কোন সাধারণ ব্রাউজার থেকে সিকিউর ও ফাস্ট করেছে। তবে গুগোল ক্রোম অনেক র্যাম হাঙ্গেরি হওয়ায় লো কনফিগারেশনের কম্পিউটার বা ফোনে চালাতে গেলে ঠিকমত কাজ করে না।
মাইক্রোসফট ইডিজিই (Microsoft EDGE)
আপনি কি খুব ফাস্ট কোনো ব্রাউজার খুজছেন। তাহলে মাইক্রোসফট EDGE আপানার জন্য। সবচেয়ে দ্রুতগতির ব্রাউজারের খ্যাতি পেয়েছে সফটওয়্যারটি। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এ ব্রাউজারটি ডিফল্ট হিসেবে থাকে।
ক্রোস-প্লাটফর্ম এ ওয়েব ব্রাউজারটি মাইক্রোসফট করপোরেশন ডেভেলপ করেছে। যা সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে রিলিজ দেয়া হয় উইন্ডোজ ১০ ও ওয়ানবক্স ব্যবহারকারীদের জন্য। পারফরম্যান্স ও পাওয়ার ইফিসিয়েন্সির দিক থেকেও ব্রাউজারটি সেরা। ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়েব ব্রাউজার এটি।
মজিলা ফায়ারফক্স (Mozilla Firefox)
সবচেয়ে পাওয়ার এফিশিয়েন্ট ও প্রাইভেসি প্রোটেকশন ব্রাউজারের কথা বললে যার নাম সবার প্রথমে সামনে আসে তা হলো মজিলা ফায়ারফক্স। ওপেন সোর্স এ ব্রাউজারটি ডেভেলোপ করেছে মজিলা কর্পোরেশন। যা ২০০২ সালে সর্বপ্রথম “ফনিক্স” নামে রিলিজ করা হয়। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত শক্তিশালী যে সুইচ আর্মি বেশ কয়েক বছর এটিকে তাদের প্রধান ইন্টারনেট ব্রাউজার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের মোট ব্যবহারকারীর ৮.০৩% মানুষ ফায়ারফক্স ব্যবহার করে। যার ফলে ফায়ারফক্স এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জনপ্রিয় ব্রাউজার।
অপেরা (Opera)
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করা ও তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অপেরা একটি জনপ্রিয় ক্লাসিক ব্রাউজার। শুধু ব্রাউজ করা নয়,বিল্ড-ইন প্রক্সি ভিপিএন, এড ব্লকার এবং আর্কষণীয় ইন্টারফেস থাকার কারণে অন্যান্য সব ব্রাউজার থেকে অপেরা একটু ভিন্ন।
অপেরার একটি ক্ষুদ্র ভার্সন হলো অপেরা ইউএসবি। যা যে কোন ইউএসবি ড্রাইভে রেখে খুব সহজেই চালাতে পারবেন। শুধু তাই নয়, গেমারদের কথা চিন্তা করে এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে এসেছে অপেরা জি এক্স (Opera GX)। আলোচিত এ ব্রাউজারটি সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে বাজারে আসে এবং বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এখনো মোবাইল ও স্মার্টফোনে ব্যবহারের দিক থেকে ব্রাউজারটি অনেক জনপ্রিয়।
ভিভালদি (Vivaldi)
আপনি যদি নিজের মতো কাস্টমাইজড করা যায় এরকম কোনো ব্রাউজারের কথা ভেবে থাকেন তাহলে ভিভালদি আপনার জন্য। এ ব্রাউজারটির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো ব্যবহারকারী নিজের মতো করে ডক,ট্যাব ও ইন্টারফেস কাস্টমাইজেশন করে নিতে পারে।
ভিভালদি ব্রাউজারটির ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেছে প্রাক্তন অপেরা ডেভলপাররা। এর ব্যবহরকারীরা তাদের ভিজিট করা বিভিন্ন সাইট সম্পর্কে গ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন পেয়ে থাকে। যা অসাধারণ ইউজার এক্সপ্রিয়েন্স প্রদান করে। ২০০৬ সাথে রিলিজ পাওয়া এ সফটওয়্যারটি ম্যাক, উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাফারি (Safari)
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার গুলোর একটি হলো সাফারি। যা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ও আইওএস এ বিল্ট-ইন ব্রাউজার হিসেবে দেয়া থাকে। সাফারি ওয়েব ব্রাউজারটি অনেকগুলো ইউনিক ফিচারযুক্ত এবং ম্যাক ও আইফোনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও ব্রাউজারটি অনেক থার্ড পার্টি এক্সটেনশন অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট করে যা ব্রাউজারটির কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। তবে ম্যাক ও আইওএস এর জন্য তৈরি হলেও স্মার্টফোন ও উইন্ডোজে ব্রাউজারটি ব্যবহার করা যায়।
অ্যাভাস্ট সিকিউর ব্রাউজার (Avast Secure Browser)
অ্যাভাস্ট সাধারণত এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয়। কিন্তু অ্যাভাস্ট সিকিউর ব্রাউজারটিও বিশ্বের অনেক দেশেই সমাদৃত ও জনপ্রিয়। যা সর্বপ্রথম ২০১৮ সালে বাজারে আসে।
সিকিউরিটি ও প্রাইভেসিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অ্যাভাস্ট সিকিউর ব্রাউজারটি। যা একটি ক্রোমিয়াম বেসড ব্রাউজার এবং উইন্ডোজ, ম্যাক ও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়।
টর (Tor)
টর ব্রাউজারটি আপনাকে যে কোন প্রকার ট্রাকিং, সার্ভেলিয়েন্স এবং সেন্সরশিপ থেকে রক্ষা করে ও নিরাপদ রাখে। এখানে আপনি নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি টুলসের পুরো একটি সুইট পাবেন। তাই টর কোনো ব্রাউজারের থেকেও অনেক বেশি কিছু।
অ্যানভান্স সিকিউরিটি ফিচার যুক্ত থাকায় টর ব্যবহারকারীরা যে কোন নজরদারি খুব সহজেই পেরিয়ে যেতে পারেন। এ ব্রাউজারটি বর্তমানে উইন্ডোজ, লিন্যাক্স, অ্যান্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে ব্যবহার করা যায়। বলা বাহুল্য, এ ব্রাউজারটির বিভিন্ন ফিচারের কারণে এটি হ্যাকারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ম্যাক্সথন (Maxthon)
খুবই ফাস্ট, নিরাপদ ও বিল্ড-ইন ফিচার সমৃদ্ধ ব্রাউজারের মধ্যে একটি হলো ম্যাক্সথন ওয়েব ব্রাউজার। যা প্যারেন্ট কোম্পানি ডেভেলপ করেছে।
এ ব্রাউজারটির বিল্ড-ইন ফিচারে বাই ডিফল্ট এড ব্লোকার, রিডার মুড, নাইট মুড, স্ক্রিন ক্যাপচার টুলস এবং অন্যান্য আরও অনেক ফিচার যুক্ত থাকে। তাই আপনাকে ক্রোম বা ফায়ারফক্সের মত এক্সটেনশন খুঁজে যুক্ত করতে হয় না।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explore)
একসময় ব্রাউজারের দুনিয়ার কিং হিসেবে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যাপক জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত ছিল। যা মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য ১৯৯৫ সালে রিলিজ করা হয়। এক্সপ্লোরারের জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে ২০০৩ সালে শতকারা ৯৫% ব্যবহারকারী ব্রাউজারটি ব্যবহার করে। যার ফলসরুপ মাইক্রোসফট ওয়েব ব্রাউজারের দুনিয়ার শীর্ষ স্থান দখল করে নেয়।
ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখবো?
কিন্তু পরবর্তীতে ক্রোম, EDGE, ফায়ারফক্স ইত্যাদি ব্রাউজারের সাথে প্রতিযোগীতায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ব্রাউজারটি। উইন্ডোজ ২০১৬ সালে এক্সপ্লোরারকে ডিসকন্টিনিউ করে। তবে এর সফটওয়্যার ও অন্যান্য সিকিউরিটি আপডেট ২০২৯ সাল পর্যন্ত পাওয়া যাবে। এক্সপ্লোরারের বর্তমান জায়গাটি দখল করে নিয়েছে মাইক্রোসফট এর অন্য আরেকটি সেরা ব্রাউজার মাইক্রোসফট EDGE।