গ্রাফিক্স ডিজাইন
বর্তমান বিশ্বায়নের এ যুগে তুমুল জনপ্রিয়, আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন। হবে নাই বা কেন? আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইন অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য পণ্যের মোড়ক থেকে শুরু করে, পোস্টার, টি-শার্ট, বই-খাতা, ব্যাগ, ব্যানার সবকিছু তৈরিতেই এখন প্রয়োজন হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনের।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য সোর্স নির্বাচনের আগে বিষয় নির্বাচন করা জরুরি। গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি বৃহৎ ও বিস্তৃত সেক্টর হওয়ার এখানে ভালো কিছু করার জন্য অবশ্যই কাজের ফিল্ড বা ক্ষেত্র ঠিক করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি বিজনেস কার্ড, টি-শার্ট, সিভি বা রিজিউম, ইনফোগ্রাফিক, ফটোশপ, ভেক্টর আর্ট ইত্যাদি কাজগুলোর মধ্যে দুই-একটি কে বেছে নিতে পারেন।
বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় এই গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য অনেকগুলো সোর্স বা মাধ্যম অবলম্বন করা যেতে পারে। কিন্তু অবস্থা ও পরিবেশ ভেদে এক একটি মাধ্যম একেকজনের জন্য উপযোগী হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার এ সোর্সগুলোকে আমরা ইন্টারনেট, ইউটিউব, আর্টিকেল, অনলাইন কোর্স, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এ কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি। যার প্রতিটি সোর্সেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু সুবিধা-অসুবিধা ও সতন্ত্রতা।
গ্রাফিক্স ডিজাইন ক্যারিয়ার শুরুর আগে যা যা জানতে হবে
ইন্টারনেটঃ বর্তমান আধুনিক ও ডিজিটাল বিশ্বের কোনো কিছু জানতে, বুঝতে ও শিখতে পারার জাদুকরী অস্ত্র হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের অবদানে আমরা বিশ্বকে পরিণত করতে পেরেছি গ্লোবাল ভিলেজে। আর তাই আজ কোন কিছু জানতে, বুঝতে ও শিখতে গেলে প্রথমেই যার কথা মনে পড়ে তা হলো ইন্টারনেট। আর এ জন্যই গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার নির্ভরযোগ্য একটি সোর্স হতে পারে ইন্টারনেট।
ইউটিউবঃ ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা ইউটিউব আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শীর্ষ ভিডিও শেয়ারিং সাইট। যা মূর্হুতেই কোনো ভিডিও বার্তা লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এ কারনে সব পেশার মানুষরাই এখন ইউটিউবকে তাদের অভিজ্ঞতা, বিনোদন কিংবা শেখানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই যে মাধ্যমেই শিখেন না কেন, বিশ্বসেরা সব গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের টিপস, এক্সপ্রিয়েন্স ও টিউটোরিয়ালের জন্য ইউটিউবকে অন্যতম একটি সোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ওপেন সোর্স বা বিন্যামূল্যে শেখার প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে ইউটিউবের ধারেকাছেও কেউ নেই।
আর্টিকেলঃ ইন্টারনেটে থাকা হাজার হাজার আর্টিকেল থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের সম্ভাব্য প্রায় সকল সমস্যা ও জটিলতার সমাধান খুঁজে নিতে পারেন। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠিত অনেক গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের কাছ থেকে পরিপূর্ণ গাইডলাইন পেতে পারেন এ সোর্স ব্যবহার করে।
অনলাইন কোর্সঃ ইন্টারনেটের বদৌলতে ভার্চুয়াল জগতে দুরত্ব বলতে আর তেমন কিছু নেই। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বনামধন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে পারেন ঘরে বসেই। যা আপনার আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করবে। এর সাথে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ও নেটওয়ার্ক অনেক বৃদ্ধি পাবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার আরও একটি ভালো সোর্স হতে পারে আপনার আশেপাশে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। যেখানে আপনি কাজ শেখা থেকে শুরু করে কাজ পাওয়া পর্যন্ত সাহায্য পেতে পারেন। তবে এজন্যে আপনাকে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। তাই অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে তাদের কোয়ালিটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই ভর্তি হবেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য কিছু সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার পর কাজ করার জন্য বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য উপায় রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে অলিখিতভাবে ফ্রিল্যান্সিং হলো সবচেয়ে ভালো ও সহজতম পদ্ধতি। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য মানসম্মত কোনো উপায়ের প্রয়োজন। অন্যথায় যে কেউ অনলাইনে স্ক্যামিং বা প্রতারণার স্বীকার হতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং কে আরও সহজ ও গ্রহনযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে এ নিয়ে কাজ করছে। যার ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বেশ কিছু মানসম্মত, বিশ্বস্ত ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে বায়ার এবং সেলার উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে কেউ কোনো প্রকার হুমকি, হয়রানি বা ক্ষতির শিকার হয় না। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত এমন কয়েকটি গ্রাফিক্স ডিজাইন ফ্রিল্যান্সিং সাইট হলো-
Sutterstock (শাটারস্টক): ফটোগ্রাফি ও ভেক্টর আর্ট এর দুনিয়ায় ফ্রিল্যান্সিং গ্রাফিক্স ডিজাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর কিং হলো শাটারস্টক। বিশ্বের ১৪৪ টি দেশের মানুষ এ প্লাটফর্মটিতে কাজের সাথে জড়িত। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা এ সাইটটিতে এ পর্যন্ত ৯০ মিলিয়নের (৯ কোটি) বেশি ফ্রি ফটো, ইলাস্ট্রেটর ও ভেক্টর আর্ট রয়েছে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে প্যাসিভ ইনকাম করার উপায়
GraphicRiver (গ্রাফিকরিভার): প্রিমিয়াম ডিজাইন টেমপ্লেট এবং স্টক গ্রাফিক্স এর ক্ষেত্রে গ্রাফিক্সরিভার একটি সেরা সাইট। যা মূলত ফন্ট, লোগো, ওয়েবসাইট, বিজনেস কার্ড ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। এখানে গ্রাফিক্সরিভার টিম নিজেই এসব কাজের মান যাচাই বাছাই করে। এজন্য এখানকার কাজগুলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটিসম্পন্ন হয়।
Fiverr (ফাইবার): বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো ফাইবার। যা মাত্র এক দশক আগে ২০১০ সালে তার প্রথম যাত্রা আরম্ভ করে। বিশেষত সস্তা বাজার ও তুলনামূলক কম কর্মঘন্টার কাজগুলোর জন্য ফাইবার অনেকেরই পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ফাইবারে সেলাররা তাদের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বাজেট সহ কোনো একটি কাজের উপর গিগ পোস্ট করে। এরপর বায়াররা তাদের চাহিদা ও বাজেট অনুসারে পছন্দের কাজটিকে বেছে নেয়। এক্ষেত্রে গিগকে আর্কষণীয় করতে ইমেজ, ভিডিও ও বিভিন্ন ফাইল যুক্ত করার অপশন থাকে।
Hatchwise (হ্যাচওয়াইস): যে কোন প্রকার গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার জন্য হ্যাচওয়াইস সাইটটি বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন প্রকার ডিজাইন প্রজেক্ট দেয়া হয়, যেখানে প্রতিযোগীতামূলক ডিজাইনাররা কাজ পেয়ে থাকে।
Designcrowd (ডিজাইনক্রাউড): এ গ্রাফিক্স ডিজাইন মার্কেটপ্লেসটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্যবসায়িক পর্যায়ের জন্য কোয়ালিটি কাজ ডেলিভারি করার উদ্দেশ্য নিয়ে। বিভিন্ন কোম্পানিরা এখান থেকে তাদের বিভিন্ন ছোট-বড় বা প্রজেক্টের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ছড়িয়ে থাকা ডিজাইনারদের হায়ার করে থাকে।
Artweb (আর্টওয়েব): বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা তাদের তৈরি আর্ট ও ডিজাইন এ সাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। এ সাইটটি তাদের সেবা প্রদানের জন্য মধ্যবর্তী কোনো ধরনের কমিশন গ্রহন করে না। ইউনিক ডিজিটাল আর্ট এর জন্য সাইটটি বিখ্যাত।