সচরাচর আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি যোগাযোগ রক্ষা এবং অবসর সময় কাটানোর জন্য। বিভিন্ন গ্রুপ থেকে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাই এবং অন্য জনকে সাহায্য করতে পারি। আবেগ, অনুভূতি, অর্জন একই সাথে ফ্যামিলি এবং ফ্রেন্ডসদের সাথে শেয়ার করতে পারি। আজকাল মুহূর্তের মধ্যে দেশে এবং বিদেশ কি কি ঘটছে সে সম্পর্কে নিউজ জানতে পারি।
সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা আরও সহজ হয়েছে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা একটি ভিন্নধর্মী সোশ্যাল সম্পর্কে জানবো। আজকে আলোচনা করবো লিংকডইন কি? লিংকডইন কতো বড়? লিংকডইন ফিচার সমূহ এবং কীভাবে লিংকডইন ইউজ করবো? কথা না বাড়িয়ে চলুন লিংকডইন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
লিংকডইন কি?
আপাত দৃষ্টিতে লিংকডইন একটি টপ লেভেল সোশ্যাল মিডিয়া। যেখানে আপনি আপনার মতামত এবং বিচার-বিশ্লেষণ পৃথিবীকে জানাতে পারবেন। যদিও লিংকডইন একটি সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু গতানুগতিক সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এটি একটু ভিন্নধর্মী। বিশেষ করে প্রফেশনাল মানুষদের টার্গেট করে এই প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে।
অর্থাৎ লিংকডইন একাধারে সোশ্যাল মিডিয়া, জব সেন্টার, অনলাইন পোর্টফলিও, মার্কেটিং হাব। এখানে যে কোন ধরনের জব রিলেটেড মানুষ পাবেন। বিশ্বের মোট ১৫০ দেশের ৭৬০ মিলিয়ন মানুষ লিংকডইন ইউজ করে।
বিশেষ করে জব দেওয়া এবং নেয়ার জন্য লিংকডইন বেশি বিখ্যাত। প্রতিদিন বিশ্বের অনেক নামকরা কোম্পানি লিংকডইনে তাদের জব সার্কুলার পোস্ট করে। অনেক কোম্পানি তাদের এমপ্লয়ি রিক্রুট করার জন্য লিংকডইনের প্রোফাইল ভিজিট করে। লিংকডইন এর মোট ইউজারের একটি বড় অংশ সরাসরি রিক্রুট এর সাথে জড়িত অথবা ভবিষ্যতে রিক্রুট করবে এমন প্রকৃতির।
মোট কথা লিংকডইন সঠিকভাবে ইউজ করতে পারলে আপনি সহজেই কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে নিজেকে প্রমান করতে পারবেন। একটি লিংকডইন প্রোফাইল অন্যান্য ক্যান্ডিডেট থেকে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
লিংকডইন কীভাবে তৈরি হলো?
লিংকডইন তার যাত্রা শুরু করে ২০০২ সালে। সে সময় পেপাল ছেড়ে রেইড হফম্যান সহ আরও অনেকে মিলে লিংকডইন স্টার্টআপ শুরু করে। ২০০৩ সালের ৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে লিংকডইন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। লিংকডইন প্রতিষ্ঠিত হয় সান্তা মনিকা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং বর্তমান এর সদরদপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া লিংকডইন ২০০৪ সালের মধ্যেই ১ মিলিয়ন ইউজারের মাইল ফলক অতিক্রম করে ফেলে।
সাধারণত প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি এবং পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর জন্য লিংকডইন আদর্শ জায়গা। আর এ কারনে লিংকডইন এতো তাড়াতাড়ি সফলতা পেয়েছে। লিংকডইন তাদের কোম্পানি পাবলিক করে ২০১১ সালে। শুরুর দিকে তাদের প্রতি শেয়ারের মূল্য ছিল ৪৮ ডলার। পাবলিক হওয়ার সাথে সাথে প্রথম দিনেই তাদের শেয়ার বিক্রির হার দাড়ায় ১৭১% এবং প্রতি শেয়ার মূল্য ৯৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
B2B মার্কেটিং করার জন্য লিংকডইনের বিকল্প খুব কমই আছে। লিংকডইন সেলস ন্যাভিগেটর এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইনফর্মেশন গ্যাদারিং টুল। এই টুল ইউজ করে সহজেই অনেক রিলেভেন্ট লিড জেনারেট করা যায়।
লিংকডইন কত বড়?
লিংকডইন একটি পাবলিক শেয়ার কোম্পানি। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এই সোশ্যাল প্লাটফর্ম অল্পদিনেই পপুলার হয়ে ওঠে। বর্তমানে লিংকডইনের মোট ইউজার সংখ্যা ৭৬০ মিলিয়ন। সম্প্রতি তারা মুম্বাইে তাদের রিজিওনাল অফিস তৈরি করেছে। এছারাও বিশ্বের ১৫০ দেশের মানুষ লিংকডইন ইউজ করে। তাদের কোম্পানিতে বিশ্বব্যাপী ১৫ হাজারের উপরে কর্মী কাজ করে।
লিংকডইনের বর্তমান বাজার মূল্য ১.৫৭৫ বিলিয়ন ডলার। সিলিকন ভ্যালী থেকে প্রকাশ করা ১০০ টি মোস্ট ভালুয়াবল স্টার্টআপের মধ্যে লিংকডইন ১০ নাম্বার অবস্থানে ছিল। ২০১০ সালে ডাবলিনে তারা তাদের ইন্টারন্যাশনাল হেড কোয়ার্টার প্রতিষ্ঠা করে। উক্ত সময় টাইগার গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি থেকে লিংকডইন ২ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট পায়।
২০১৬ সালে লিংকডইনের প্রতি শেয়ারের মূল্য ছিল ১৯৬ ডলার। সে হিসেবে মাইক্রোসফট মোট ২৬.২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে লিংকডইন কিনে নেয়। এটি ছিল মাইক্রোসফটের ইতিহাসে সব থেকে বড় অধিগ্রহণ। লিংকডইন নিজে বিক্রি হওয়ার আগে মোট ১৯ টি টুল, সার্ভিস এবং কোম্পানি কিনে নেয়। যাদের মধ্যে SlideShare, Bright.com, Lynda এবং Refresh.io অন্যতম।
লিংকডইন ফিচার সমূহ
মাইক্রোসফট লিংকডইন কিনে নেওয়ার পর ২০১৭ সালে তারা নতুন ইউজার ইন্টারফেস যোগ করে। একে মাইক্রোসফট বি২বি মার্কেটিং থেকে শুরু করে ইউজারদের সুন্দর এবং পরিপাটি ইন্টারফেস প্রদান করা। লিংকডইনকে তারা ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দুই মাধ্যমেই সক্রিয় রাখে।
লিংকডইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার জেনে নেওয়া যাক।
লিংকডইন সেলস নেভিগেটর: যারা লিড জেনারেশন করে তাদের কাছে সেলস নেভিগেটর একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল। এই টুল ইউজ করে সহজেই লিংকডইনে ইন-ডেপ্ট রিসার্চ করা যায়। যে কোন বিজনেস রিলেটেড ডাটা খোঁজা যায় এবং এ্যানালাইজ করা যায়।
সেলস নেভিগেটর ইউজ করে পুরো লিংকডইন প্লাটফর্ম সার্চ করে ইমেইল সহ অন্যান্য ডাটা খুঁজে বের করা যায়। আপনি এই টুল ইউজ করে আপনার ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট সফল ভাবে মার্কেটিং করতে পারবেন। যা পরবর্তীতে আপনার সেল বৃদ্ধি করবে।
থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন: লিংকডইনে আপনি API ইউজ করে যে কোন থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আপনি যখন কোন ইউজারের ডাটা অ্যাক্সেস করতে চাইবেন তখন সেখানে আপনাকে ইউজারের পারমিশন নিতে হবে।
গ্রুপ: কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য গ্রুপ একটি উপযুক্ত জায়গা। এখানে মেম্বাররা মিলে গ্রুপ রিলেভেন্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনা করা যায়। লিংকডইনে আপনি গ্রুপ ক্রিয়েট এবং ইচ্ছেমত গ্রুপে অ্যাড হতে পারবেন।
স্কিল এনডোর্সমেন্ট: অন্যান্য প্লাটফর্ম বা পার্সোনাল পোর্টফলিওতে আপনি আপনার স্কিল বসিয়ে দিলে সেটা পার্সোনালি রিভিউ করা সম্ভব হয়না। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে লিংকডইন স্কিল এনডোর্সমেন্ট নামক একটি ফিচার উন্মুক্ত করেছে।
এই ফিচারের আওতায় আপনার প্রোফাইলে অ্যাড করা স্কিল গুলো আপনার কানেকশনে থাকা সবাই স্কিল এনডোর্স করতে পারবে। এতে বুঝা যায় আপনি কোন কোন বিষয়ে আসলেই স্কিল রাখেন যা আপনার বন্ধুরা বা পাবলিক জানে।
কীভাবে লিংকডইন ইউজ করবো?
লিংকডইন ব্যবহার করার জন্য আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। অবশ্যই আসল নাম ঠিকানা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা বেশি ভালো হবে, কারন এটি একটি প্রফেশনাল প্লাটফর্ম, এখানে আপনি চাকরির অ্যাপ্লাই না করেও জব পেতে পারেন।
একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে পুরো প্রোফাইল সত্য তথ্য দিয়ে ফুল কমপ্লিট করে ফেলবেন। প্রফেশনাল মানের একটি কভার এবং প্রোফাইল ফটো দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আপনি মোবাইল অ্যাপ অথবা ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে লিংকডইন ব্যবহার করতে পারবেন। লিংকডইনে অনেক ফিচার আছে যা আপনাকে সময় নিয়ে খুঁজে বের করতে হবে। আপনি চাইলে লিংকডইনের প্রিমিয়াম ফিচার সাবস্ক্রিপ্সন হিসেবে ক্রয় করে ইউজ করতে পারবেন।
মোট কথা আপনি আপনার লিংকডইন প্রোফাইলে আপনার সকল স্কিল, অর্জন, মতামত ইত্যাদি পোর্টফলিও করে রাখতে পারবেন। আপনার প্রোফাইল যত সমৃদ্ধ হবে আপনি তত জব সার্চে জায়গা করে নিতে পারবেন এবং এদের মধ্য থেকে যে কোন জায়গায় ইন্টারভিউ তে ডাক পেতে পারেন।
চাকরি খোঁজার সেরা ১০টি ওয়েবসাইট
যত দিন যাচ্ছে লিংকডইন তত উন্নত এবং প্রফেশনাল হচ্ছে। নতুন নতুন ফিচার এবং সুবিধাগুলো ব্যবহারকারীর সকল চাহিদা মিটাচ্ছে। সবদিক বিবেচনা করলে লিংকডইনকে একটি অল ইন ওয়ান প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক প্লাটফর্ম বলা যেতে পারে। আশা করি পুরো লেখা পড়ে আপনি লিংকডইন সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ক্যামন লাগলো তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। লিংকডইন নিয়ে আপনার মনে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।