লোগো ডিজাইন
লোগো বলতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে তৈরি কোন চিহ্ন বা প্রতীক কে বোঝানো হয়ে থাকে। যা কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহনের পাশাপাশি সেটিকে প্রোমোট করে। বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নিজেদের পরিচিতি ও স্বকীয়তা অর্জনের জন্য নিজস্ব লোগো ডিজাইন করে নিয়ে ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে মানুষ সহজেই প্রতিষ্ঠানটিকে চিনে নিয়ে আলাদা করে নিতে পারে।
লোগো ডিজাইন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন্ড গুলোর মধ্যে একটি। এখন ছোট থেকে বড় সব প্রতিষ্ঠানই নিজেদের জন্য লোগো ডিজাইন করে ব্যবহার করতে চায়। অবস্থা এমন হয়েছে যে, লোগো ডিজাইন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।
আসলে বর্তমানে লোগো আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনার আশেপাশে একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই আপনি কোন না কোন লোগো অবশ্যই দেখতে পাবেন। কত-শত হরেক রকমের ডিজাইনের লোগোতে চারপাশ ভরে গেছে। তাইতো এখন টি-শার্ট, মগ, বই, ম্যাগাজিন, সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পর্যন্ত সবকিছুতেই শোভা পাচ্ছে লোগো।
লোগো ডিজাইন কিভাবে শিখবো?
লোগো ডিজাইন মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আসলে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মত বিস্তৃত সেক্টরের শ’খানেক ক্যাটাগরির মধ্যে লোগো ডিজাইন একটি। তাই লোগো ডিজাইন শিখতে হলে পক্ষান্তরে আপনাকে যে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে হবে তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন।
প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সাথে সাথে লোগো ডিজাইন বিষয়টি আরও মারাত্মক ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর আরেকটি কারণ হলো কম্পিউটার ও সফটওয়্যার এর অসাধারণ উন্নতি সাধন। তাই লোগো ডিজাইন আগেকার মতো জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ না হওয়ায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই নিজেদের ব্র্যান্ডিং সুবিধার জন্য লোগো ডিজাইন করিয়ে নেয়ার পথেই হাঁটছেন।
লোগো ডিজাইন যেহেতু গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি শাখা তাই লোগো ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে প্রথমেই গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বেসিক জিনিস গুলো শিখে নিতে হবে। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বেসিক জিনিস গুলোর খুঁটিনাটি আয়ত্ত করে নিতে পারলে লোগো ডিজাইন শেখা আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের সফটওয়্যার ও টুলসগুলো সাথে ভালোভাবে পরিচিত হয়ে নিন, এরপর আস্তে আস্তে অ্যাডভান্স লেভেলের দিকে অগ্রসর হন।
গ্রাফিক্স ডিজাইনার রেজাউল করিমের সফলতার গল্প
কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন লোগো মূলত একটি ভেক্টর আর্ট। তাই লোগো ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে ভেক্টর নিয়ে কাজ করে এমন সফটওয়্যার গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। লোগো ডিজাইন করার জন্য ব্যবহৃত হয় এমন কয়েকটি বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার হলো: Adobe Illustrator, CoreIDRAW, Affinity Designer ইত্যাদি। এ সফটওয়্যার গুলোর সবগুলোই ভেক্টর আর্ট বেসড সফটওয়্যার। একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো তার সব পণ্য বা অন্য সব কিছুতেই ব্যবহার করা হয় বলে প্রয়োজন অনুসারে এর সাইজ ছোট-বড় করতে হয়। ভেক্টর ইমেজে গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে এ কাজটি করা যায় বলে লোগো ডিজাইনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই ভেক্টর ইমেজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
একজন লোগো ডিজাইনার হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপনাকে দক্ষ হতে হবে। আপনাকে Typography, Logo Mark, Colour, Context বিষয়গুলোর উপর ভালো দখল থাকতে হবে। আবার আপনারা শুধু লোগো তৈরি করলেই হবে না, এর সাথে লোগোতে ব্যবহৃত Shape, Element, Symbol এর সঠিক ব্যাখ্যা থাকতে হবে আপনার কাছে। তাই লোগো ডিজাইন যে পানির মতো কোনো সহজ বিষয় নয় তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
তবে লোগো ডিজাইন সেক্টরে খুব দ্রুত সাফল্য অর্জনের জন্য আপনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নিতে পারেন। সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখায় এরকম প্রতিষ্ঠানগুলো লোগো ডিজাইনের উপরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তাই আপনার আশেপাশের এরকম স্বনামধন্য কোন প্রতিষ্ঠান খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে অনলাইনেও লোগো ডিজাইনের উপর কমপ্লিট একটি কোর্স করে নিতে পারেন। একটু খোঁজাখুঁজি করলেই অনলাইনে বিশ্বসেরা সব লোগো ডিজাইনারদের টিউটরিয়াল পেয়ে যাবেন। আপনার আশেপাশের যে কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এসব অনলাইন কোর্স এর মান শতগুণে ভালো হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
লোগো ডিজাইন কত প্রকার?
আকর্ষণীয় একটি লোগো ডিজাইন করার যে কোন ডিজাইনারদের পক্ষেই চ্যালেঞ্জের। তা উপর আপনার জন্য সঠিক ডিজাইন নির্বাচন করাও কঠিন একটি কাজ। তাই আপনার লোগোটি কেমন হবে, তার জন্য বিশেষজ্ঞরা লোগো ডিজাইন কে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে।
লোগো ডিজাইন কে প্রধান তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- Image, Words এবং Combination। তবে এ তিনটি প্রধান ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে লোগো ডিজাইনকে আরও ৮ টি প্রকারভেদে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো-
Brand Mark: আইকন ভিত্তিক লোগোকে সাধারণত ব্র্যান্ড বা সিম্বল লোগো বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের লোগোতে আপনার কোম্পানীর জন্য সুনির্দিষ্ট আইকন নির্বাচন করা হয়। এজন্য মানুষ সহজেই আপনার কোম্পানিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে। উদাহরণসরুপ- The Rolling Stones, Apple, Twitter এ ধরনের লোগো ব্যবহার করে থাকে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার উপায় – শিখতে কত দিন সময় লাগবে
Abstract Logo Marks: এ ধরনের লোগো গুলো সাধারণত ছবি বা শেপ ভিত্তিক হয়ে থাকে। টাইপ ব্র্যান্ড মার্ক লোকগুলোর সিম্পল এর চেয়ে এ ধরনের লোগো কিছুটা বড় হয়। কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনার জন্য এ ধরনের লোগো ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ- Pepsi, Microsoft (Windows), Adidas এর লোগো।
Mascots: কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র ও ব্যক্তির ছবির সংমিশ্রণে এ ধরনের লোগো তৈরি করা হয় বলে এদেরকে মাস্কটস বলে। যেমন- KFC, Pillsbury, Kellogg’s এর লোগো।
Wordmark Logos বা Logotypes: টাইপোগ্রাফি ভিত্তিক লোগোকে ওয়াল্ডমার্ক লোগো বলা হয়। এ ধরনের লোগোতে টেক্সটের মাধ্যমে ব্রান্ড বা কোম্পানির নাম লেখা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে টেক্সট এর স্টাইল, রং ইত্যাদি চোখে পড়ার মত হয়। যেমন- Subway, Uber, Camelback, Google ইত্যাদি কোম্পানির লোগো।
Lettermarks বা Monograms: এ ধরনের লোগোও ওয়ার্ল্ড মার্কের মত টাইপোগ্রাফি ভিত্তিক হয়ে থাকে। তবে ভিন্নতা হলো এ ধরনের লোগোতে শুধু মাত্র কোম্পানির নামের প্রথম অক্ষর বা সংক্ষিপ্তকরণ করে ব্যবহার করা হয়। তাই এ লোগোর আরেক নাম মনোগ্রাম লোগো। বিশ্বখ্যাত CNN, FedEx, HBO এ ধরনের লোক ব্যবহার করে থাকে।
Letterforms: লেটারফ্রম হচ্ছে মনোগ্রামের চেয়ে ছোট এক ধরনের লোগো। এ ধরনের লোগো সাধারণত একটি মাত্র অক্ষর নিয়েই তৈরি করা হয়। যেমন- McDonald’s, WordPress, Yahoo এর লোগো।
Emblem: এ ধরনের লোগো টেক্সট, আইকন বা সিম্বল একসাথে যুক্ত করে তৈরি করা হয়। মূলত স্কুল-কলেজ সংগঠন কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের লোগো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে Starbucks, Stella Artois, Superman এ ধরনের লোগো ব্যবহার করে থাকে। তবে আপনার আশেপাশেও এ রকম অনেক লোগোর অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন।
Combination Marks: উপরে বর্ণিত প্রকারভেদ বা টাইপ গুলোর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যখন কোন নতুন লোগো তৈরি করা হয় তখন এ ধরনের লোগোকে কম্বিনেশন মার্ক লোগো বলে। যেমন- Taco Bell, CVS, Toblerone এর ব্যবহৃত লোগো।
লোগো ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়?
লোগো ডিজাইন শিখে আয় করার ব্যাপারটি মূলত আপনার কাজ করার পরিমাণ ও দক্ষতার উপর নির্ভর করে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কিংবা বড় বড় আইটি কোম্পানিগুলোতে একজন দক্ষ লোগো ডিজাইনারের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে থাকে। তাই আপনি দক্ষ হয়ে থাকলে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
শুরুতে একজন লোগো ডিজাইনার তার দক্ষতা অনুযায়ী ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথ আয়-রোজগারও বাড়তে থাকে। একজন পরিপূর্ণ দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সৃজনশীল লোগো ডিজাইনার প্রতিমাসে কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কখনও কখনও একটি লোগো ডিজাইন করার পারিশ্রমিকই লাখ টাকা হয়ে থাকে। উপার্জনের দিক থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রথম সারির কাজগুলোর একটি হলো লোগো ডিজাইন। তাই দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতা থাকলে এ পেশায় টাকা উপার্জন নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না।
লোগো ডিজাইন আটিকেলটি সুন্দর হয়েছে। আমি খুব সহজে বিষটি বুঝতে পেরেছি। আপনাকে ধন্যবাদ।
ফ্রিতে লোগো ডাউনলোড করুতে এখানে ক্লিক করুন।
আপনাকেও ধন্যবাদ।