এন্টিভাইরাস সম্পর্কে জানার আগে সর্বপ্রথম জেনে নেওয়া উচিত ভাইরাস কি এবং ভাইরাস কিভাবে কম্পিউটারে প্রবেশ করে থাকে। ভাইরাস এর পূর্নরুপ হলো Vital Information Resource Under Siege (VIRUS).
এটি মূলত কম্পিউটারের এক ধরনের প্রোগ্রাম যা ইউজার এর অজান্তে কম্পিউটারে প্রবেশ করে এবং কম্পিউটারের অনেক প্রোগ্রাম, ফাইলস এবং সফটওয়্যার কে দূষিত করে ফেলে।এই ভাইরাস নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে হার্ডওয়্যার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে করে ইউজার কখনো কখনো কম্পিউটার এর নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত হারিয়ে ফেলতে পারেন।
ভাইরাস সহজেই কম্পিউটারের এক ফোল্ডার থেকে অন্য ফোল্ডারে এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। ফাইল টান্সফারের জন্য আমরা নানা ডিভাইস ব্যবহার করে থাকি যাদের ফ্ল্যাস ড্রাইভ বলা হয়। যেমন পেনড্রাইভ, হার্ড ড্রাইভ ইত্যাদি। এসব ডিভাইস গুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ভাইরাস ট্রান্সফার হতে পারে। এছাড়াও ভাইরাস দ্বারা দূষিত কোনো ফাইল ডাউনলোড বা ক্লিক করার মাধ্যমে ও এই ফাইল আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। একবার কম্পিউটারে কোনো ভাইরাস প্রবেশ করা মানে ইউজার এর জন্য তা চরম ভোগান্তি। তাই এই ভাইরাস থেকে বাচতেই কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা বানিয়েছেন নতুন এক কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যার নাম এন্টিভাইরাস।
এন্টিভাইরাস
এন্টিভাইরাস হলো এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারে থাকা ভাইরাস প্রতিরোধ করে অথবা কোনো কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখে। এসব সফটওয়্যার কম্পিউটারে থাকা ভাইরাস সমূহ সহজেই খুজে বের করতে পারে স্ক্যানিং করার মাধ্যমে। তারপর এক এক করে সকল ফাইল, ফোল্ডার,সফটওয়্যার ভাইরাস মুক্ত করে থাকে। এসব প্রসেস এ কখনো কখনো অনেক ফাইল সম্পূর্ণরূপে ডিলিট করে ফেলতে হয় কারণ সেসব ফাইল পুরোপুরি ভাবে দূষিত হয়ে একটি ভাইরাসে রুপান্তরিত হয় যার মধ্যকার ডাটা আর রিস্টোর করার সুযোগ থাকে না।
এন্টিভাইরাস এর কাজ কি?
এন্টিভাইরাসের কাজ হলো কম্পিউটার থেকে ভাইরাস খুঁজে বের করা আর যদি কোন ভাইরাস ইতোমধ্যেই প্রবেশ করে থাকে তা কম্পিউটার থেকে ডিলিট করে দেয়া।
কোন ভাইরাস প্রবেশের পূর্বেই যদি কোন কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস ইন্সটল করে রাখা হয় সে ক্ষেত্রে ভাইরাস জনিত কোন ফাইল ডাউনলোড বা প্রবেশের পূর্বেই তা স্ক্যান করে নেয়া এবং দূষিত ফাইলগুলো অনুপ্রবেশে বাধা প্রদান করা এন্টিভাইরাস এর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, এতে করে সে কম্পিউটার এবং তার ভিতরকার ডাটা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে।
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারস
আপনার কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য থাকতে পারে। কম্পিউটার ভাইরাস এসব তথ্য সহজেই নষ্ট করে দিতে পারে আবার কখনো তথ্য চুরি হবার ও আশংকা থাকে।
তাই কম্পিউটারে থাকা ডাটা এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নানা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বানানো হয়েছে।যেসব সফটওয়্যার আপনার কম্পিউটার প্রহরীর মতো কাজ করবে।শুধু তাই নয় এসব সফটওয়্যারস প্রতিনিয়ত আপডেট হয়ে নতুন নতুন ভার্সনে পরিবর্তিত হয়।
কয়েকটি জনপ্রিয় এন্টিভাইরাস
- বিটডিফেন্ডার(Bitdefender)
- নর্টন(Norton Antivirus)
- এভিরা ফ্রি এন্টিভাইরাস (Avira Free Antivirus)
- এভিজি এন্টিভাইরাস ফ্রি(AVG Free Antivirus)
- এভাস্ট ফ্রি এন্টিভাইরাস (Avast Free Antivirus)
- ম্যাকফি(McAfee)
- ক্যাসপারাস্কি (Kaspersky)
- থ্রি সিক্সটি সিকিউরিটি (360 Security)
উপরোক্ত কিছু সফটওয়্যার এর মোবাইল এপ্লিকেশন রয়েছে।
এন্ড্রয়েট মোবাইল এর জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি এন্টিভাইরাস
- বিট ফাইন্ডার অ্যান্ড্রয়েড এপ প্রোটেকশন (Bitdefender Android App protection)
- সি এম সিকিউরিটি (CM Security)
- নর্টন থ্রি সিক্সটি অ্যান্ড্রয়েড এন্টিভাইরাস (Norton 360 Android Antivirus)
এছাড়াও উইন্ডোজ এ ডিফল্ট বা ইনবিল্ড এন্টিভাইরাস থাকে যা ব্যবহার করা অতি উত্তম। যেমন, উইন্ডোজ ১০ এ থাকে ইনবিল্ড এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার “উইন্ডোজ ডিফিন্ডার (Windows Defender)
এন্টিভাইরাস ডাউনলোড
একেকজনের কাছে একেক এন্টিভাইরাস পছন্দ হতে পারে। এন্টিভাইরাস ডাউনলোড করার পূর্বে অবশ্যই কম্পিউটারের ফিচার বুঝে নিতে হবে। আসলে সব কম্পিউটারের জন্য এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার তেমন প্রয়োজন হয়না। যেহেতু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই উইন্ডোজ ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য বলে রাখা ভালো এই উইন্ডোজ এর মধ্যে থাকা ইনবিল্ড এন্টিভাইরাসই আপনার কম্পিউটারের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। তারপরও কারো অধিক সুরক্ষার প্রয়োজনবোধে চাইলে এন্টিভাইরাস ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্যই এন্টিভাইরাস ডাউনলোড এর পূর্বে বিভিন্ন সাইট পর্যবেক্ষণ করে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই সফটওয়্যার টি ডাউনলোড করবেন। কারণ কখনো কখনো এন্টিভাইরাসে ও ভাইরাস থাকে, তাই শুধুমাত্র বিশ্বস্ত বা অফিসিয়াল সাইট থেকেই এন্টিভাইরাস ডাউনলোড করুন এবং কম্পিউটারে নিয়ম অনুযায়ী ইন্সটল করে ব্যবহার করুন।
এন্টিভাইরাস এর সুবিধা
- এন্টিভাইরাস আপনার কম্পিউটারের ডাটার সুরক্ষ করবে।
- আপনার অনুমতি ছাড়া কেউ এক্সেস নিতে পারবেনা, যাকে আমরা বলি আন-অথোরাইজড এক্সেস।
- কেউ যদি আপনার মেইলে কোনো ভাইরাস জনিত ফাইল বা হ্যাকার টুল সেন্ড করে থাকে আপনার কম্পিউটার তা ডাউনলোড করতে বাধা প্রদান করবে।
- ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে অনেক সাইটে হ্যাকিং টুল থাকতে পারে, সেসব সাইটে প্রবেশ করতে দিবেনা।
এন্টিভাইরাস এর অসুবিধা
- এন্টিভাইরাস ব্যবহারের ফলে কম্পিউটার এর গতি অনেকটাই ধীর হয়ে যায়।
- ফ্রি এন্টিভাইরাস ডাউনলোড এর সময় অনেক সাইটে এক্সেস দেয়া হয় যেসব সাইটে বিভিন্ন হ্যাকার টুল থাকে এমন সব ফ্রি এন্টিভাইরাস ডাউনলোড এর ফলে আপনার কম্পিউটার এ আপনার অজান্তেই হ্যাকাররা এক্সেস নিয়ে নিতে পারে, তাই পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারলে মোটামুটি সর্বোচ্চ সিকিউরিটির নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
- যে কোন নতুন ফাইল সংযোজন বা বাড়তি কোনো ডিভাইস ব্যবহার এর ক্ষেত্রে প্রতিবার তা স্ক্যান করে নিতে হয়। যা অনেকটাই সময়ব্যায়ী, যদিও এটা একটি প্রয়োজনীয় বিষয় কম্পিউটারের সুরক্ষার জন্য, কিন্তু অনেকের কাছে তা বিরক্তির কারণ, সেক্ষেত্রে কম্পিউটারে বিদ্যমান এন্টিভাইরাস দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়া যায় এতে সময় ও নষ্ট হয়না।
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলো অনেক বড় মাপের হওয়ায় তা কম্পিউটারের অনেকটা জায়গা ব্যবহার করে থাকে, যা কম্পিউটার ধীরে কাজ করার অন্য একটি কারণ।
কম্পিউটারের সুরক্ষায় এন্টিভাইরাস ব্যবহার এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক বেশি।অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সংরক্ষণের জন্য বড় বড় কোম্পানি গুলো নানা পেইড এন্টিভাইরাস এর উপর ভরসা করে থাকেন।কিন্তু আপনার সামান্য অসচেতনতা আপনার এই প্রহরীকেই আপনার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হিসেবেও প্রমান করতে সক্ষম। তাই পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করেই আপনার কম্পিউটারের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।