উইন্ডোজ এবং লিনাক্স কি, এদের পার্থক্য ও সুবিধা অসুবিধা কি কি

উইন্ডোজ এবং লিনাক্স বর্তমান সময়ের অপারেটিং মার্কেটের মুল অংশ ধরে রেখেছে। বিশ্বের প্রায় ৭২% ডিভাইসে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ ব্যবহার হয়। বিশেষ করে যারা পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহার করে তারা সব থেকে বেশি উইন্ডোজের উপরে ভরসা করে। আমাদের আজকের লেখায় উইন্ডোজ এবং লিনাক্স কি, এদের পার্থক্য ও সুবিধা অসুবিধা কি কি তা আলোচনা করে হয়েছে। 

কম্পিউটার উইন্ডোজ কি

উইন্ডোজ মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের একটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। ১৯৮৫ সালের দিকে তারা তাদের এমএস ডস যা কমান্ড লাইন ওএস ছিল তা থেকে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসে মুভ করে। উক্ত সময়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারিদের মধ্যে কমান্ড লিখে কাজ করানোর থেকে মাউস দিয়ে বিভিন্ন অপশন ক্লিক করে চালানো বেশি জনপ্রিয়তা পায়। 

যেহেতু মাইক্রোসফটের পূর্বে থেকেই একটি অপারেটিং সিস্টেম ছিল তাই তারা এটি গ্রাফিক্যাল ইউআই তে রুপান্তর করে এবং উইন্ডোজ নাম দিয়ে মার্কেটে রিলিজ করে। সর্বপ্রথম ভার্সন হিসেবে এর নাম দেওয়া হয় উইন্ডোজ ১.০। বর্তমানে এমএস উইন্ডোজের ১১ তম সংস্করণ পর্যন্ত চালু আছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে তারা যখন উইন্ডোজ ১০ চালু করে তখন তারা পূর্বের ভার্সনগুলোর সিকিউরিটি আপডেট এবং মান উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে মাইক্রোসফট আধুনিক কম্পিউটার ব্যবহার করা কাস্টমারদের ফ্রীতে উইন্ডোজ ১১ আপগ্রেড করার সুযোগ করে দিয়েছে। 

সহজ ইউজার ইন্টারফেস, সহজলভ্যতা, বিশাল কমিউনিটি থাকার কারনে বিশ্বে যত পার্সোনাল পিসি রয়েছে তার বেশিরভাগে উইন্ডোজ চলতেছে। অন্যদিকে এর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অনেক পরিমাণে ফ্রী রিসোর্স রয়েছে। এতে একজন সাধারণ ইউজার থেকে অ্যাডভান্স ইউজার পর্যন্ত এটি ব্যবহার করতে পারে। মূলত উইন্ডোজ ওএস এর এত জনপ্রিয়তার পেছনে সহজ সেটিংস উল্লেখযোগ্য। 

উইন্ডোজ ও লিনাক্স এর সুবিধা ও অসুবিধা?

লিনাক্স মানে কী?

আমরা সচরাচর লিনাক্সকে অপারেটর সিস্টেম হিসেবে জানি। আমাদের জানায় কোন ভুল না থাকলেও এখানে একটু বিভ্রান্তি রয়েছে। মূলত লিনাক্স একটি কার্নেলের নাম। লিনাক্স বোঝার আগে আমাদের কার্নেল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। 

সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালে লিনাস টরভল্ডস কার্নেল শব্দটির সাথে বিশ্ববাসীকে পরিচিত করায়। তার উদ্দেশ্য ছিল এই কার্নেল সিস্টেম ইউজ করে প্রোগ্রামার তাদের প্রয়োজন মত অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে ওপেন সোর্স ধারণার বিপ্লব ঘটাবে। পরবর্তীতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং বিশ্বব্যাপি অনেক প্রোগ্রামার এর ব্যাবহার করে অপারেটিং সিস্টেম দুনিয়ায় অভূতপূর্ণ পরিবর্তন আনে। 

যাইহোক, লিনাক্স কার্নেল তৈরি করার পর তা বাজারে সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ইন্টেল এক্স৮৬ আর্কিটেকচারের জন্য তৈরি করা লিনাক্স কার্নেল পরবর্তী সময়ে অপারেটিং সিস্টেম জগতে পরিবর্তন আনা শুরু করে। পার্সোনাল কম্পিউটারে ব্যাবহারের পাশাপাশি সার্ভার কম্পিউটারে এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় এবং বর্তমানে সার্ভার অপারেটিং হিসেবে লিনাক্সের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। 

জনপ্রিয় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। স্মার্টফোন অপারেটিং মার্কেটে অ্যান্ড্রয়েডের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যদিও মাইক্রোসফট ও অ্যাপল অ্যান্ড্রয়েডের সাথে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করে চলেছে তবে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। 

সেরা ১০ টি অপারেটিং সিস্টেম

উইন্ডোজ ও লিনাক্সের পার্থক্য?

নিচে উইন্ডোজ ও লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে তা বিস্তারিত আলচনা করা হলো। 

উইন্ডোজলিনাক্স 
ফ্রী ও পেইড উভয় ভার্শন রয়েছেপুরোপুরি ফ্রী ও ওপেনসোর্স 
মোট ইউজারের ৭২% উইন্ডোজ ব্যবহার করে মোট ইউজারের ৬% লিনাক্স ব্যবহার করে
ইন্সটল ও মেইন্টেইন সহজ ইন্সটল সহজ তবে মেইন্টেইন করা অ্যাডভান্স লেভেলের 
খুব সহজে সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায়সফটওয়্যার ইন্সটল করার সহজ এবং জটিল দুই পদ্ধতি রয়েছে
প্রচুর ভাইরাস অ্যাটাক হয়ভাইরাস অ্যাটাক হয় না
ডেডিকেটেড স্টোর থেকে অথবা ডাউনলোড ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায়রিপজেটরি সহ স্ন্যাপ ও ফ্ল্যাটহাব থেকে অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা যায়
অনেকবেশি হার্ডডিস্ক স্পেস খরচ হয়কম হার্ডডিস্ক স্পেস খরচ হয়
এখানে পপুলার সফটওয়্যার অ্যাভেইলেবলএখানে পপুলার সফটওয়্যার অ্যাভেইলেবল নয়
সার্ভার সফটওয়্যার হিসেবে আলাদা ভার্শন পাওয়া যায়এটি সার্ভারের জন্য অনেক বেশি কম্প্যাটিবল
উইন্ডোজে NTFS ফাইল সিস্টেম ইউজ করেলিনাক্স EXT3, EXT4, BTRFS, XFS ফাইল সিস্টেম ইউজ করে
ফোল্ডার ম্যানেজমেন্ট সহজএখানে আপনি সহজ এবং কঠিন উভয়ভাবেই ফোল্ডার ও ফাইল মানেজ করতে পারবেন
ট্রায়াল শেষ হলে পেইড ভার্শন কেনার জন্য বাধ্য করা হয়এটি ফ্রীতে পাওয়া যায়
হার্ডওয়্যার সাপোর্ট অনেক বেশি হার্ডওয়্যার সাপোর্ট কম 
ড্রাইভার ইস্যু নেইড্রাইভার ইস্যু আছে 
এর কমিউনিটি অনেক বড় এর কমিউনিটি ছোট 
সমস্যার সমাধান দ্রুত পাওয়া যায় সমস্যার সমাধান দ্রুত পাওয়া যায় না
এটি ইউজ করতে তেমন টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলেও চলেটেকনিক্যাল জ্ঞান ছাড়া লিনাক্স ইউজ করা অনেক কষ্টকর
ইচ্ছামত কাস্টমাইজেশন করা যায় নাইচ্ছামত কাস্টমাইজেশন করা যায়
এখানে নিরাপত্তার দুর্বলতা রয়েছেএখানে নিরাপত্তার দুর্বলতা নেই
অনেক বেশি গেম সাপোর্ট করে গেম সাপোর্টের দিক থেকে এখনো তেমন আপডেটেড না 
উইন্ডোজ ইউজার ডাটা সংগ্রহ করে লিনাক্স উইন্ডোজ ডাটা সংগ্রহ করে না

উইন্ডোজ ও লিনাক্স এর সুবিধা ও অসুবিধা?

নিচে উইন্ডোজ ও লিনাক্সের সুবিধা ও অসুবিধা বিস্তারিত আলোচনা করা হল। 

উইন্ডোজ ও লিনাক্স এর সুবিধা ও অসুবিধা?

উইন্ডোজের সুবিধা 

নিচে উইন্ডোজের সুবিধা দেওয়া হলো। 

  • ইউজার ইন্টারফেস অনেক সহজ ও সাবলিল। উইন্ডোজ ১০ এর ইউআই অনেক মডার্ন ও সময়োপযোগী। তাছাড়া ফোল্ডার ও ফাইল ম্যানেজমেন্ট অনেক সহজ। 
  • প্লাগ এন্ড প্লে সাপোর্ট করে অর্থাৎ এতে ড্রাইভার প্রিইন্সটল থাকার কারনে ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস প্লাগ করার সাথে সাথে ব্যবহার করা যায়। 
  • সকল ধরণের হার্ডওয়্যারের সাথে কম্প্যাটিবল। 
  • সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য যে ধরণের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সাপোর্ট প্রয়োজন তার সব উইন্ডোজে পাওয়া যায়। 
  • ডেক্সটপ ও টাচস্ক্রিন সাপোর্ট করে। 

উইন্ডোজের অসুবিধা 

নিচে উইন্ডোজের অসুবিধা দেওয়া হলো।

  • সিকিউরিটি দুর্বলতা অনেক বেশি। 
  • ফ্রী সফটওয়্যার অনেক কম। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করতে গেলে পেইড সফটওয়্যার কিনতে হয়। 
  • এটি সম্পূর্ণ পেইড ওএস। যদিও এর ট্রায়াল ভার্শন রয়েছে তবে তা বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী নয়। 
  • উইন্ডোজ ওএস পরিচালনার জন্য উচ্চ হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন প্রয়োজন পরে। 
  • সিস্টেম ক্রাশ করলে হয় রিবুট দিতে হয় না হলে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। 
  • উইন্ডোজ আপডেট দিতে বাধ্য করা হয়।
  • টেকনিক্যাল সাপোর্ট অনেক দুর্বল। 
  • অনেক বেশি পরিমানে ভাইরাস অ্যাটাক হয়।  

লিনাক্সের সুবিধা 

নিচে লিনাক্সের সুবিধা দেওয়া হলো।

  • লিনাক্স পুরোপুরি ওপেন সোর্স কার্নেলের উপর নির্ভর করে তৈরি। যে কারনে আপনি ওপেন সোর্স হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। 
  • এটি অনেক স্টাবল। অর্থাৎ প্রতিটি লিনাক্স ডিস্ট্রোর স্টাবল ভার্শন পাওয়া যায়। 
  • অনেক গুলো ডিস্ট্রো থাকার কারনে আপনি এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের পছন্দমত লিনাক্স ব্যবহার করতে পারবেন। 
  • সিকিউরিটির জন্য লিনাক্স একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী অপারেটিং সিস্টেম। অন্যদিকে এর ফাইল সিস্টেম আলাদা হওয়ায় হ্যাকার কোন উইন্ডোজ ভাইরাস ফাইল এখানে এক্সিকিউট করতে পারে না।
  • এখানে আর্থিক খরচ অনেক কম। যে কারনে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি আপনি মডার্ন ও মিনিমাল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন। 
  • সার্ভার হিসেবে ইউজ করার জন্য লিনাক্স বেস্ট ও শক্তিশালী। 

লিনাক্সের অসুবিধা 

নিচে লিনাক্সের অসুবিধা দেওয়া হলো।

  • ড্রাইভার সাপোর্ট খুব কম যে কারনে প্লাগ এন্ড প্লে সাপোর্ট পাওয়া যায় না। 
  • হার্ডওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি বেশি না থাকায় অনেক সময় সব কনফিগারেশনে ইউজ করা যায় না। 
  • উইন্ডোজের মত সফটওয়্যার সাপোর্ট নেই। যদিও লিনাক্সে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের অনেক সফটওয়্যারের অল্টারনেটিভ পাওয়া যায় তবে সেগুলো চাহিদা পূরণ করতে পারে না। 
  • এর ইকো-সিস্টেম এখনো তেমনভাবে তৈরি করা হয় নাই। যে কারনে আপনি যদি উইন্ডোজ বা অ্যাপলের মত ইকো-সিস্টেম আশা করে তাহলে মনঃক্ষুণ্ণ হতে হবে। 

এখানে উইন্ডোজ ও লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা কর হয়েছে। বর্তমান সময়ে উইন্ডোজ, অ্যাপল এবং লিনাক্স মার্কেট দখল করে আছে। পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে শুরু করে সার্ভার এবং সুপার কম্পিউটার পরিচালনা করা হচ্ছে এই সকল অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করে। 

Leave a Reply