প্রযুক্তির আশীর্বাদ আমাদের জীবনব্যবস্থাকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। জীবন ও জীবিকার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব লক্ষণীয়। ফলস্বরূপ ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে পণ্যের মার্কেটিং পর্যন্ত সবকিছুই ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।
যেসব ক্ষেত্রে বর্তমানে ইন্টারনেটের প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং উল্লেখযোগ্য। ডিজিটাল মার্কেটিং হলো ইন্টারনেটের সাহায্যে কোনো পণ্য, প্রতিষ্ঠান কিংবা সার্ভিসের ভার্চুয়াল মার্কেটিং পদ্ধতি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর রয়েছে অনেক শাখা প্রশাখা। তাদের মধ্যে সিপিএ (CPA) মার্কেটিং অন্যতম। সিপিএ মার্কেটিং অপেক্ষাকৃত নতুন একটি মার্কেটিং পদ্ধতি , যেটি বর্তমানে ইন্টারনেট জুড়ে ব্যাপক সারা ফেলেছে। কিন্তু এই মার্কেটিং পদ্ধতি নিয়ে রয়েছে অনেক জনের অনেক ধরনের মন্তব্য। যেখানে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষই সঠিক তথ্য না জেনেই মন্তব্য পেশ করে থাকেন। যার ফলে অনেকেই সঠিক তথ্যগুলো খুঁজে পান না।
তাই চলুন আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নেই, সিপিএ (CPA) মার্কেটিং কি এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।
সিপিএ মার্কেটিং কি?
CPA- শব্দটি হলো Cost Per Action কথাটির সংক্ষিপ্তরূপ। যার অর্থ হলো, কোনো অ্যাকশন বা কাজের ওপর অর্থ খরচ করা। কখনো কখনো ‘Cost Per Acquisition’ ও বলা হয়ে থাকে।
একটু গুছিয়ে বলতে গেলে, CPA মার্কেটিং বা cost per action মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন একটি শাখা, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের সহায়তায় অনলাইনে কোনো product, business, অথবা service এর রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মার্কেটিং ঘটিয়ে, তার বিনিময়ে কমিশন লাভের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা।
এক্ষেত্রে সিপিএ মার্কেটিং অনেকটাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মতো মনে হতে পারে। তবে এই দুটোর মাঝে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্যও রয়েছে বিস্তর।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অনলাইনে পণ্যের মার্কেটিং ঘটিয়ে পণ্য বিক্রি করা এবং তার উপর কমিশন লাভ করে আয় করা। অর্থাৎ আপনার কন্টেন্ট দ্বারা উৎসাহিত হয়ে যদি কেউ পণ্য কিনে তবে আপনি টাকা পাবেন, অথবা পাবেন না। আর এখানেই সিপিএ মার্কেটিং নিয়ে এসেছে বিশাল এক ব্যবধান।
সিপিএ মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি যদি নির্ধারিত কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেন তবেই আপনি কমিশন লাভ করবেন। অর্থাৎ রেফারেন্স লিংকের মাধ্যমে ইউজারদের যদি নির্ধারিত কাজের ওপর লিড করাতে পারেন তবেই আপনার কমিশন নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি হলো কি হলো না তা আপনার আয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।
সিপিএ মার্কেটিং এর মূল লক্ষ্যই হলো আপনার সাইটের ট্রাফিককে নির্দিষ্ট কোন লিংকের মাধ্যমে অন্য কোন একটি সাইটে নিয়ে যেয়ে সেখানে নির্ধারিত কোন কাজ করানো।
সিপিএ মার্কেটিং এর নির্ধারিত কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিভিন্ন কোম্পানির email submission করানো, application, software অথবা কোন game download করানো, form fill up করানো, form registration করানো, survey জমা দেওয়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে sign up করানো, call offer করা ইত্যাদি।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই কাজগুলো কিভাবে করতে হয়? উত্তর খুবই সহজ।
- প্রথমত আপনার এমন কোন ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে, যেখানে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিজিটর আসা-যাওয়া করেন।
- এরপর কোনো একটি বিশ্বস্ত এবং ভালো মানের সিপিএ নেটওয়ার্কে লগ ইন করতে হবে।
- এখন এই নেটওয়ার্কের advertiser এর থেকে কাজ সংগ্রহ করতে হবে।
- এরপর সেই কাজের লিংক একজন publisher হিসেবে আপনি আপনার সাইটে পাবলিশ করবেন।
- এখন এই লিংকের মাধ্যমে যত বেশি ট্রাফিক প্রবেশ করবে, আপনি তত বেশি কমিশন লাভ করতে থাকবেন।
অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, পণ্য কিংবা সার্ভিসের ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই যে প্রক্রিয়া এবং অর্থ উপার্জনের এই যে মাধ্যম, একেই বলা হয় CPA Marketing.
সিপিএ মার্কেটিং করতে কি কি লাগে?
আপনি যদি সিপিএ মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনলাইনে আয় করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে যেসব বিষয় আপনার প্রয়োজন হবে তাদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো , সিপিএ মার্কেটিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান। সঠিক জ্ঞান ছাড়া আপনি কখনোই এ কাজ সফলতার সাথে করতে পারবেন না। তবে আশা করি, এই আর্টিকেলটি এ ব্যাপারে অনেক সাহায্যকারী হবে।
এ পর্যায়ে সিপিএ মার্কেটিং সম্পর্কে জানা হয়ে গেলে সিপিএ মার্কেটিং শিখে নিতে হবে এবং সিপিএ মার্কেটিং করতে বেসিক্যালি কি কি জিনিস লাগবে তা জানতে হবে।
সিপিএ মার্কেটিং করতে যা যা লাগে:
* কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ: একটি সচল কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সিপিএ মার্কেটিং এর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যতীত অন্য কোন ডিভাইস দিয়ে প্রফেশনালি সিপিএ মার্কেটিং করা কেবল আকাশ কুসুম কল্পনা।
*দ্রুত গতির ইন্টারনেট: ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া আপনার ডিভাইসের কোনো অবদান নেই এবং যেহেতু এটি একটি অনলাইন কার্যক্রম, সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যতীত সিপিএ মার্কেটিং অসম্ভব।
*ই-মেইল অ্যাকাউন্ট: সিপিএ মার্কেটিং করতে চাইলে অবশ্যই নিজস্ব একটি অ্যাক্টিভ ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
*নিজস্ব কোন সাইট: আপনার যদি ইন্টারনেট সংযুক্ত একটি কম্পিউটার ইতিমধ্যে থেকে থাকে, তবে এ পর্যায়ে আপনার প্রয়োজন হবে প্রফেশনাল মানের একটি সাইটের। যেখানে আপনি অফার লিংকসহ আপনার কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা কনটেন্টগুলো পোস্ট করবেন। এটি হতে পারে কোন ইউটিউব চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, ই-কমার্স সাইট এবং কোনো ব্লগ অথবা ওয়েবসাইট।
*ভিজিটর বা ট্রাফিক: নিজস্ব কোনো সাইট তৈরি করার পর এ পর্যায়ে আপনাকে সাইটের ভিজিটরের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। সাইটে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভিজিটর বা ট্রাফিক না থাকলে সিপিএ মার্কেটিং করা যাবে না।
*সিপিএ নেটওয়ার্ক: সিপিএ মার্কেটিং করার জন্য সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে উপাদান তা হলো, একটি সিপিএ নেটওয়ার্ক বা প্লাটফর্ম যেখান থেকে সিপিএ মার্কেটিং এর অফারসমূহ পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সবসময় ভালো মানের সিপিএ প্লাটফর্ম নির্বাচন করতে সচেতন হতে হবে।
লিড জেনারেশন কত প্রকার? লিড জেনারেশনের পদ্ধতি
কয়েকটি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত CPA নেটওয়ার্কের নাম হলো “cpalead.com” , “peerfly.com” , “cpagrip.com” , “maxbounty.com” এবং আরও অন্যান্য। এখন নিজের পছন্দমত যেকোন একটি নেটওয়ার্কে লগ ইন করে নিতে হবে। এরপর সাইটের ক্যাটাগরির ওপর ভিত্তি করে টপিক সিলেক্ট করে সেটির লিংক শেয়ারের মাধ্যমে সিপিএ মার্কেটিং শুরু করে দিতে পারেন।