বিশ্বয়নের এই যুগে কম্পিউটারের নাম শোনেনি এমন মানুষ হয়তো হাতে হারিকেন নিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে কম্পিউটারের নাম শুনলেও আমরা এখনো জানি না এর পেছনের ইতিহাস কি? অফিসের কাজের বাইরেও যে এর বহু কাজ রয়েছে তা আজ গুটি কয়েক মানুষেরই জানা। শুধু বইয়ের ভাষায় শিখে গেছি কম্পিউটর মানে গনণাকারী যন্ত্র। আর কতদিন এমন থাকবে?
তাই সময় এসেছে আজ কম্পিউটার সম্পর্কে পূণার্ঙ্গভাবে জানার। আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো:
কম্পিউটার কি?
আপনাকে প্রশ্ন করলে হয়তো বলবেন, কম্পিউটার এক ধরনের গণনাকারী যন্ত্র । যার মাধ্যমে গণনা ছাড়া অনেক ধরনের কাজ সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু আসলেই কি শুধু এটাই ? না, এভাবে আপনি কখনো কম্পিউটারকে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন না। কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র এটা ঠিক আছে। তবে এর সাহায্যে যে, অনেক ধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু আপনার অফিস কিংবা স্কুলের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর কাজের বিস্তার এতটাই যে, এর মাধ্যমে কি করা যায় না, তা ভাবাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে আজকাল।
কম্পিউটার পিসির দাম কত? কেনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
কম্পিউটার কিভাবে তৈরি হলো?
আজকাল আমরা যে কোন কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করলেও, এর আবিষ্কারের কারণটা কিন্তু একটু ভিন্ন ছিল। এখনকার মতো ইমেইল কিংবা ফেসবুকের দরকার তো আগে ছিল না। তাহলে আবিষ্কারের পিছনের কারণটা কি ছিল?
কাহিনিটা অনেক মজার। আমরা সবাই জানি কম্পিউটিং শব্দটা থেকে কম্পিউটার শব্দটি এসেছে । অর্থাৎ গণনা করার জন্য মূলত এর আবিষ্কার হয়েছিল। যা আমরা Abacus এর ইতিহাস দেখলেই বুঝতে পারি। যার সূত্রপাত চীন ও মিশরে হয়েছিল। এ তো গেল প্রাচীন কম্পিউটারের ইতিহাস। এখানে আধুনিক কম্পিউটারের ইতিহাস আরেকটু মজার।
১৮৮০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা এমনভাবে বেড়ে যায় যে, সে দেশের আদশুমারী বা লোকসংখ্যা গণনা করতে গিয়ে প্রায় হিমশিম খেয়ে বসে। আর ঠিক তখনই তারা একটু দ্রুত গতির পথ খুঁজতে থাকে কিভাবে তাড়াতাড়ি গ্ণনা করা যায়। এরই বাস্তবায়ন হিসাবে তারা Punch Card ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়, যা ছিল কম্পিউটার এর সাথে সম্পর্কিত।
তবে এ কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারটি আমাদের প্রাচীন কম্পিউটারই ছিল। আসলে এই সময়টাতেই আধুনিক কম্পিউটারের মূল যাত্রাটা শুরু হয়। যার ফল আমরা কিছুদিন পরেই দেখতে পারি। ১৮২২ সালে চার্লস ব্যাবেজ প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন, যা ছিল প্রাচীন কম্পিউটারগুলো থেকে ভিন্ন ও বর্তমান কম্পিউটারগুলোর প্রথমরূপ। আর এভাবেই কম্পিউটারের সাথে সবাই পরিচিত হতে থাকে।
কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে?
কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে? বিষয়টা একটু জটিল। আসলে এর যা কাজ সব মেশিনের অভন্ত্যরেই ঘটে থাকে, যা আমাদের দ্বারা দেখে সম্ভব নয়। তবে মূল কথা এখানে আমরা এর কিছুটা ধারণা পেতে পারি। চলুন একটু জেনে আসি-
কম্পিউটারে একধরনের কন্ট্রোল সেন্টার থাকে যা আপনার প্রেরিত ইনপুটকে পড়ে ইনরমেশন আউটপুট হিসাবে ফলাফল প্রদান করে। আর এটাকেই মূলত কম্পিউটারের ব্রেইন বা সিপিইউ বলা হয়। অর্থাৎ ইনপুট ও আউটপুট এটা মেনেই কম্পিউটার কাজ করে।
ইনপুট কি?
ইনপুট হচ্ছে কম্পিউটারের কাজের প্রথম ধাপ যা আমাদের নির্দেশ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে। আসলে আপনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে যে কাজগুলো করে থাকেন এগুলো তাই। ধরুন ভিডিও কল করতে ওয়েবক্যাম ব্যবহার করবেন এক্ষেত্রে ওয়েবক্যাম ব্যবহার করাটাই এক ধরনের ইনপুট। আবার ধরুণ মাইক্রফোন ব্যবহার করবেন। সেক্ষেত্রে ওটা আরেক ধরনের ইনপুট।
মেমোরি কি?
আপনার ব্যবহৃত ফাইল বা ছবিগুলো যে মাধ্যমে জমা হয় তাই মূলত মেমোরি। এক্ষেত্রে আপনার সব ধরনের ফাইলই প্রযোজ্য।
প্রসেসিং কি?
ধরুন আপনি কিছু ইনপুট দিলেন এর পরের কাজটি কি হবে? এরপরের কাজটিই হলো প্রসেসিং যা প্রধান কন্ট্রোলার বা সিপিইউ করে থাকে। আপনি মাঝে মাঝে হয়তো কম্পিউটারের একটা ফ্যানের শব্দ শুনতে পান। এর মানে হচ্ছে সিপিইউ কাজ করছে, এবং তাকে ঠান্ডা রাখার জন্যই মূলত এই ফ্যান।
আউটপুট কি?
এটি হচ্ছে আপনার মূল রেজাল্ট অর্থাৎ ফলাফল। সোজা ভাষায় বলতে গেলে আপনি যে জন্য কমান্ড দিয়েছিলেন তারই ফলাফল। এক্ষেত্রে আউটপুট হিসাবে প্রিন্টারের এর প্রিন্টিং এর কথা ভাবতে পারেন বা আপনার কম্পিউটারে যে মুভিটা দেখেছেন তাও এক ধরনের আউটপুট। এভাবেই আপনার প্রদত্ত ইনপুট এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে আউটপুট প্রদান করাই কম্পিউটারের কাজ।
কম্পিউটার কিসের মাধ্যমে কাজ করে?
কম্পিউটার কিসের মাধ্যমে কাজ করে বিষয়টা জানার জন্য এর বিভিন্ন অংশের কাজ সম্পর্কে জানাই যথেষ্ট। চলুন জেনে আসি এর বিভিন্ন অংশ সমন্ধে-
সিপিইউ কি?
এখানে শুরুতেই যেটি আসে অর্থাৎ যা এড়ানোর নয় তা হলো সিপিইউ। এটি কিভাবে কাজ করে? তা একটু জটিল। আসলে এর ভিতর আগে থেকেই যে প্রোগ্রাম করা থাকে তার উপর ভিত্তি করেই এটি কাজ করে। ছোট বড় সব ধরনের কম্পিউটারেই এটি দেখা যায়। এটি ছাড়া কম্পিউটার অচল বলা চলে। সিপিইউ এর কাজটি আবার মেমোরি ভিত্তিক। অর্থাৎ মেমোরির সাথে এর কাজের কিছুটা সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের মেমোরি দু’ধরনের হয়ে থাকে। একটি প্রাইমারি ও অন্যটি সেকেন্ডারি। সিপিইউ এর সম্পর্ক মূলত প্রাইমারি বা প্রধান মেমোরি এর সাথে। আর সিপিইউ এর যাবতীয় প্রোগ্রামও এর উপর ভিত্তি করেই। তবে মেমোরি এখানে সিপিইউ এর অংশ নয়।
র্যাম কি?
এটি মূলত সেই অংশ যা আপনার ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যার কিংবা অ্যাপ্লিকেশন এর ডাটা সংগ্রহ করে রাখে। কারণটা কি? কারণটা আর কিছুই না। আপনার সিপিইউ যেন খুব সহজেই আপনার ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে এক্সেস করতে পারে, যাতে আপনি খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারেন। তবে এখানে একটি বিষয় যা হলো কম্পিউটার একবার বন্ধ করলেই এই ডাটা শেষ হয়ে যায়।
হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ কি?
এটা হচ্ছে আপনার কম্পিউটারের মেমরি যেখানে আপনি আপনার ব্যবহৃত বিভিন্ন ফাইল রেখে থাকেন। এখন বাজারে চলে এসেছে নতুন এসএসডি নামক হার্ড ডিস্ক, যা কম্পিউটার কে খুবই ফাস্ট করে তুলেছে।
মাদারবোর্ড কি?
যার কোনো বিকল্প নেই, অর্থাৎ যা ছাড়া আপনার কম্পিউটার চলবেই না সেই জিনিসটাই হলো মাদারবোর্ড। প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করতে যার সাথে মাদার শব্দটি যুক্ত হয়েছে। মাদারবোর্ড কম্পিউটারের সব ধরনের কম্পনেন্ট এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। ধরুন সিপিইউ এর সাথে প্রাইমারি মেমোরি এর কোনো কাজ রয়েছে। এক্ষেত্রে মাদারবোর্ড তাদের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে দেয়।
ভিডিও ও সাউন্ড কার্ড কি?
কম্পিউটারে সাউন্ডের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে সাউন্ড কার্ড। ভিডিও কার্ড ও সাউন্ড কার্ড এর মধ্যে আপনার সাউন্ড কার্ড না হলেও চলবে, কারণ সাউন্ড কার্ড শুধুমাত্র সাউন্ড এর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ভিডিও কার্ড ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ আপনার কম্পিউটারের যে ডিসপ্লে তা মূলত ভিডিও কার্ডের মাধ্যমেই প্রদর্শিত হয়ে থাকে।
নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার কি?
এই জিনিসটি ছাড়া কম্পিউটার চললেও আপনি হয়তো চলতে পারবেন না। কারণ ইন্টারনেট ছাড়া এখন কম্পিউটার এর কথা ভাবাই যায় না। আবার বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ এর অনেক ফিচার ব্যবহার করতে গেলেও আপনার নেটওয়ার্ক দরকার। অর্থাৎ নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার মূলত আপনার ইন্টারনেট এক্সেস এর বিষয়টি দেখে রাখে।
কিবোর্ড কি?
কি-বোর্ড কম্পিউটারের প্রধান জিনিসগুলোর মধ্যে না পড়লেও এর গুরুত্ব বলে বুঝানোর নয়। আপনি হয়তো বলতে পারেন কি-বোর্ড ছাড়াও তো আমি লিখতে পারি। হ্যাঁ লিখতে পারেন, তবে সেটা যে কতটা সময় সাপেক্ষ তা আমাদের সবারই জানা আছে। কি-বোর্ড কম্পিউটারে লেখালেখির এক অনন্য হাতিয়ার। লেখক কে যেমন কলম ছাড়া মানায় না, তেমনি একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হলে কি-বোর্ড ছাড়া আপনাকে মানাবে না। বর্তমানে নানান ধরনের কি-বোর্ডের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
মাউস কি?
হ্যাঁ, ইঁদুরের মতো দেখতে ওই ছোট্ট জিনিসটা যা আপনি হাতের মধ্যে নিয়ে সারাক্ষণ নাড়াচাড়া করতে থাকেন তাই মাউস। ছোট আকৃতির জন্যই মূলত এর নাম এমন। কি-বোর্ডের মতোই এটিও আপনার কম্পিউটার ব্যবহারকে করেছে আরো সহজ। কম্পিউটার স্ক্রিনের এক জায়গা থেকে যে আরেক জায়গায় নিমেষেই যাওয়া যায় এর মাধ্যমে।
মনিটর কি?
যার দিকে তাকিয়ে আছেন, বা তাকিয়ে কাজ করেন সেটাই মনিটর। কম্পিউটার এর প্রয়োজনীয় অংশগুলোর একটি হলো এটি। মনিটর না থাকলে হয়তো অন্ধের মতো কাজ করতে হতো। ভাবুন একবার বিষয়টা। হ্যাঁ মনিটরও আপনার কম্পিউটার ব্যবহারের বিষয়টিকে অনেকটাই সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে।
কম্পিউটার আধুনিক বিশ্বের এক অভিনব আবিষ্কার। যা আপনার আমার সবার জীবনকেই অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। এর শুরুটা শুধু গণনা দিয়ে হলেও এখন কিন্তু এর পরিধি বিশদ যা আপনার আমার সবার সামনেই বিদ্যমান। আর বইয়ের ওই জ্ঞানের বাইরেও যদি এটির পরিধি সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারেন তবে আপনার কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পাবে । মোদ্দা কথা মূল বিষয়টি শনাক্ত করতে পারলেই আপনার ব্যবহার হবে আরো স্বাছন্দ্যময়।