হ্যাকিং কিভাবে শিখবো? হ্যাকিং শেখার উপায়

হ্যাকিং শব্দটি শুনলে আমরা মনে মনে থ্রিল অনুভব করি। এই থ্রিল অনুভব করার পিছনে অবশ্য বিভিন্ন মুভিতে দেখানো দৃশ্য দায়ী। যেখানে দেখানো হয় কতো সুন্দরভাবে কোড লিখে একের পর এক সিস্টেম হ্যাক করা হচ্ছে। নিমেষেই যে কোনো ব্যক্তির ঠিকানা এবং অবস্থান বের করা যাচ্ছে। মুভিতে এরকম দেখানো হলেও বাস্তবে ব্যাপারটা তেমন থ্রিলের না। হ্যাকিং শেখা এবং অ্যাপ্লাই করা একটি লং টার্ম প্রসেস। এর জন্য দরকার লম্বা সময় ধরে প্র্যাকটিস এবং ডেডিকেশন। কিন্তু সঠিক গাইডলাইন পেলে অনেক সহজেই হ্যাকিং শেখা শুরু করা সম্ভব। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা হ্যাকিং কিভাবে শিখবো? হ্যাকিং শেখার উপায় গুলো জানবো। তো চলুন শুরু করা যাক।

হ্যাকিং কিভাবে শিখবো?

হ্যাকিং অনেক বিস্তৃত একটি বিষয়। কোন একটি পোস্ট পড়ে বা একটি কোর্স করে কখনই হ্যাকার হওয়া সম্ভব না। হ্যাকিং এর বিভিন্ন প্রকারভেদ থাকার কারনে কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে শুরু করাটা বোকামি। কারণ হ্যাকিং করতে হলে আপনাকে একাধারে অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, নেটওয়ার্কিং সহ অনেক বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। কথা না বাড়িয়ে চলুন হ্যাকিং শিখতে হলে কি কি করতে হবে সে সম্পর্কে জানি।

অপারেটিং সিস্টেম

আমরা জানি অপারেটিং সিস্টেম কাজ করে একটি ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারকে সমন্বয় করে আউটপুট দিতে। হ্যাকিং যেহেতু সিস্টেম নিয়ে খেলাধুলা সেহেতু সিস্টেমে প্রবেশ করার জন্য অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে হবে।

আর অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে যখন জ্ঞান অর্জন করা হবে তখন কিন্তু আমরা পুরো সিস্টেম কীভাবে  কাজ করে সে সম্পর্কে জানবো। কোন সিস্টেম সম্পর্কে জানলে সে সিস্টেমে প্রবেশ এবং লুকিয়ে থাকা আরও সহজ হয়। সে দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা আপনাকে অর্জন করতে হবে।

অনেক গুলো প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেম থাকলেও উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স এবং অ্যান্ড্রোয়েড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে।  

লিনাক্স/কালী লিনাক্স

হ্যাকিং করতে গেলে প্রথমত যে সমস্যায় পরতে হয় তা হল কোন অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করবো তা নিয়ে। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র লিনাক্স বললে ভুল হবে না। লিনাক্স ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হওয়ার কারনে একে নিজের ইচ্ছা মতো কাস্টমাইজ করে নেওয়া যায়।

লিনাক্স কি? লিনাক্স পরিচিতি

হ্যাকিং করার জন্য লিনাক্সকে আদর্শ ওএস বলা হয়। লিনাক্স এর অনেক গুলো ডিস্ট্রো আছে যা লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা কাজের জন্য তৈরি করা। এদের মধ্যে কালী লিনাক্স কে হ্যাকিং কে টার্গেট করে তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে প্রি-ইন্সটল হিসেবে অনেক হ্যাকিং টুল ইন্সটল করা থাকে। কালী লিনাক্সে ৩৫০ এর থেকেও বেশি হ্যাকিং টুল প্রি-ইন্সটল করা থাকে। এই টুল গুলো তৈরি করা হয়েছে সিকিউরিটি স্পেশালিস্টদের জন্য। এই টুল গুলো দিয়ে যেমন হ্যাকিং ঠেকানো যায় তেমনি হ্যাকিং করা যায়। অতএব, কালী লিনাক্স সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে ধারণা রাখতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে।

সার্ভার

হ্যাকিং করার জন্য সার্ভার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অতি জরুরী। সার্ভার নিয়ে অ্যাডভান্স জ্ঞান আপনাকে ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান হ্যাক করায় সাহায্য করবে। আপনি যখন সার্ভার নিয়ে শেখা শুরু করবেন তখন সাইড নলেজ হিসেবে অনেক কিছু শিখতে পারবেন।

একটি ওয়েবসাইট কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে যদি না জানেন তাহলে ওই সাইট হ্যাক করবেন কীভাবে? কোন কিছু হ্যাক করার পূর্বশর্ত হল ওই জিনিস বা সিস্টেম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা থাকতে হবে। না হলে আপনি কখনই দুর্বলতা খুঁজে পাবেন না এবং অনুপ্রবেশ করতে পারবেন না।

এক্সএসএস(XSS) অ্যাটাক,  এসকিউয়েল ইনজেকশন (SQL Injection) সহ ডিডস(DDoS) অ্যাটাক পরিচালনা করার জন্য আপনাকে সার্ভার ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একটি সার্ভারে কি কি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয় এবং কি ভাবে সেগুলো বাইপাস করা যায় সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।     

নেটওয়ার্কিং/ইন্টারনেট

হ্যাকিং জগতে একটি প্রবাদ আছে “ইন্টারনেট কানেক্টেড প্রতিটি ডিভাইস হ্যাক করা যায়”। তাহলে চিন্তা করে দেখুন হ্যাকিং করার জন্য ইন্টারনেট সবার প্রথমে। হ্যাকিং করার জন্য আমাদের টার্গেট নির্বাচন এবং তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হয়।

এছাড়াও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আপনাকে খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। হ্যাকিং শুরু করার জন্য নেটওয়ার্কের পোর্ট, কানেকশন প্রোটোকল, ডিএনএস, আইপি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। কোন ডিভাইসে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস ইঞ্জেক্ট করতে হলে নেটওয়ার্ক এর সাহায্য নিতে হবে।

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

আপনার আয়ত্তে যত বেশি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ থাকবে আপনি হ্যাকিং দুনিয়ায় তত এগিয়ে থাকবেন। কারন আপনার যে হ্যাকিং টার্গেট থাকবে তা কিন্তু কোন না কোন প্রোগ্রামের উপর ডিপেন্ড করে চলে, এখন ওই টার্গেটের দুর্বলতা খুঁজে পেতে আপনাকে টার্গেট কি দিয়ে তৈরি তা জানতে হবে।

হ্যাকিং কি? হ্যাকার কে?

প্রতিটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা কিন্তু অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার কিন্তু কিছু কমন ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যেগুলো আপনাকে শিখতে হবে। যেমন পাইথন, সি, সি প্লাস প্লাস, রুবি, পার্ল, জাভা ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হ্যাকারদের ইউজ করে। এর বাইরে আরও কিছু সার্ভার সাইড এবং মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, এইচটিএমএল, এসকিউএল ইত্যাদি শিখতে হবে।বিভিন্ন অ্যাটাক এবং টুল তৈরি করার জন্য এই ল্যাংগুয়েজ গুলো সম্পর্কে অ্যাডভান্স ধারনা থাকতে হবে।

ডাটাবেস

এস কিউ এল ইনজেকশন একটি অতিপরিচিত হ্যাকিং মেথড যা নিউবি হ্যাকার থেকে শুরু করে এক্সপার্ট বা এলিট হ্যাকাররা ইউজ করে। অনেকেই আছে যারা তাদের হ্যাকিং জীবন এই মেথড দিয়ে শুরু করে। এই মেথড দ্বারা একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের ডাটাবেস হ্যাক করে পাসওয়ার্ড এবং ইউজার ডাটা চুরি করা হয়। ডাটা গুলো চুরি এবং প্রসেস করার জন্য আপনাকে ডাটাবেস সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

হার্ডওয়্যার

আমরা রাসবেরি পাই নামক ডিভাইসের কথা অবশ্যই শুনেছি। যদি না শুনে থাকি তাহলে হ্যাকিং শুরু করার আগে এই সম্পর্কে অবশ্যই যেনে নিতে হবে। রাসবেরি পাই একটি মিনি কম্পিউটার যা মনিটর বাদে একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার। এর মধ্যে আপনি বিভিন্ন হ্যাকিং টুল ইন্সটল করে হ্যাকিং করতে পারবেন।

এমন অনেক হ্যাকিং হার্ডওয়্যার আছে যা দিয়ে সহজেই বিভিন্ন অ্যাটাক সম্পন্ন করা যায়। এছাড়াও হার্ডওয়্যারের জ্ঞান আপনার অনেক কাজ সহজ করে দিবে। অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার কাজ করার জন্য যে ড্রাইভার ইন্সটল করা হয় তার ত্রুটি বের করে হ্যাকিং করা যায়।

আপনি যত বেশি হার্ডওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান রাখবেন সিস্টেম কনফিগারেশন তত বেশি সহজ হবে। একটি সিস্টেম সম্পর্কে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন তত বেশি দুর্বলতা বের করা সম্ভব।

সিকিউরিটি

হ্যাকিং পরিচালনা করার সময় আপনি সব থেকে বেশি যে সমস্যায় পরবেন তা হলো সিকিউরিটি। কোন সিস্টেমে ভাইরাস ইঞ্জেক্ট করতে গেলে সিস্টেমে থাকা অ্যান্টিভাইরাস আপনাকে বাঁধা প্রদান করবে। কোন ভাবে আপনি যদি সিকিউরিটি বাইপাস করতে পারেন তাহলে কিন্তু হ্যাকিং করতে আর সমস্যায় পরবেন না।

অন্যদিকে আপনি যখন কোন ভাইরাস তৈরি করবেন তখন সিকিউরিটি কে ফাঁকি দেওয়ার মতো অ্যাবিলিটি অ্যাড করে দিতে পারবেন। যদি সিকিউরিটি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করেন তাহলে কিন্তু সফলভাবে অ্যাটাক পরিচালনা করতে পারবেন না।

অ্যানোনিমাস থাকা

আমরা জানি বিভিন্ন ভিপিএন ব্যবহার করে নিজের আইপি হাইড করে অন্য দেশের আইপি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অনলাইনে হাইড থাকা সম্ভব নয়। ফ্রী ভিপিএন ইউজ করে তো আরও সম্ভব নয়। যে দেশের আইপি ইউজ করুন আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবেই।

যারা এক্সপার্ট হ্যাকার তারা একটি পদ্ধতি ইউজ করে যা অনেক কাজে দেয়। এই পদ্ধতিকে বলে স্পুফিং বা ঠকানো। সাধারণত আইপি স্পুফিং করে আপনি নিজেকে অনেকটাই সেফ রাখতে পারবেন।এই মেথডে আপনার আইপি একের পর এক বিভিন্ন দেশের সার্ভার থেকে রেজাল্ট দেখাবে। যদি কোন সিকিউরিটি এক্সপার্ট আপনার আইপি ট্রেস করার চেষ্টা করে তাহলে সে একই সময়ে বিভিন্ন প্লেসের ঠিকানা পাবে। যেখান থেকে আপনাকে বা রুট আইপি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন বা অসম্ভব।

হ্যাকিং শেখার উপায় গুলো কি কি?

হ্যাকিং শেখার উপায় গুলো কি কি?

হ্যাকার হতে আমাদের কি কি শিখতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নিলাম কিন্তু কীভাবে হ্যাকিং শিখবো সে সম্পর্কে এখনো আমাদের জানা হয়নি। তো চলুন হ্যাকিং শেখার পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

অনলাইন কোর্স

অনলাইনে এমন অনেক প্লাটফর্ম আছে যেখানে আপনি হ্যাকিং সম্পর্কে শিখতে পারবেন। যেমন Udemy, Skillshare, Coursera ইত্যাদি লার্নিং প্লাটফর্ম। এগুলো বাদেও Security+ এবং CEH বা OSCP এই সার্টিফিকেট কোর্স করা বাদে আরও অনেক হ্যাকার আছে যারা ভিডিও কোর্স তৈরি করে।

বিশ্বসেরা কয়েকজন সেরা হ্যাকার

সে কোর্স গুলো সংগ্রহ করে আপনি শেখা শুরু করে দিতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন হ্যাকিং কোর্সগুলোতে শুধু বিভিন্ন হ্যাকিং মেথড শেখানো হয়। আপনি আগে যদি ব্যাসিক সম্পর্কে ধারনা না রাখেন তাহলে কোর্স করে কোন লাভ হবে না। শুরু করার আগে আপনাকে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, সার্ভার, অপারেটিং সিস্টেম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে।

অনলাইন প্লাটফর্ম

অনলাইনে অনেক অনেক রিসোর্স আছে যেখানে সব ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে শিখতে পারবেন। W3Schools একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট যেখানে আপনি সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে ব্যাসিক থেকে অ্যাডভান্স শেখতে পারবেন।এরপর ইউটিউব সহ অনেক অনেক ব্লগ আছে যেখানে আপনি প্রোগ্রামিং শিখতে পারবেন।

ট্রেইনিং সেন্টার

সাইবার সিকিউরিটি এবং ইথিকাল হ্যাকিং শেখায় এমন প্রতিষ্ঠান অনলাইন এবং অফলাইন দুই জায়গায় পাওয়া যায়। কোন মেন্টরের থেকে শেখার উপকার হলো প্রশ্ন করে জেনে নেওয়া যায়। তবে ট্রেইনিং সেন্টার আপনাকে কখনোই এক্সপার্ট করে দিতে পারবে না। এক্সপার্ট হতে আপনাকে নিজে নিজে শিখতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে। যত বেশি প্র্যাকটিস করবেন আপনি তত বেশি শিখতে পারবেন।

হ্যাকিং একটি আর্ট যা আপনাকে প্র্যাকটিস করে করে আয়ত্তে আনতে হবে। হ্যাকিং করার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আপনি যে কোনো পদ্ধতিতে হ্যাক করতে পারবেন। আপনি যত বেশি এক্সপার্ট হবেন আপনার হ্যাকিং তত সফল হবে। আজকের লেখায় আমরা হ্যাকিং কিভাবে শিখবো? এবং হ্যাকিং শেখার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আশাকরি লেখাটা পড়ে আপনি হ্যাকিং শেখা শুরু করে দিতে পারবেন এবং কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।

4 thoughts on “হ্যাকিং কিভাবে শিখবো? হ্যাকিং শেখার উপায়”

Leave a Reply