ফ্রিলান্সিংয়ে ভালো কিছু করতে চাইলে কাজে খুব দক্ষ হওয়া চাই। আর এই দক্ষতাটি অর্জন করা সম্ভব হবে তখন, যখন আপনি কাজকর্মে সৎ ও পরিশ্রমী হবেন এবং সঠিক দিক নির্দেশনা পাবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর দুনিয়ায় কাজে দক্ষ হলে পরবর্তী ধাপগুলো পেরিয়ে যাওয়া খুব সহজ হয়ে যায়। কিন্তু দক্ষতা না থাকলে এ সেক্টরে ভালো কিছু করা কখনোই সম্ভব নয়।
ফ্রিলান্সিং শেখার মাধ্যমগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেগুলো হলো- অনলাইন ও অফলাইন। আসুন তাহলে অনলাইনে এবং অফলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শেখার সুযোগ সুবিধা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
অনলাইন
ইন্টারনেটে কারণে পুরো বিশ্বে এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এখন চাইলেই অনেক কিছুই অনলাইনে শিখে নেয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে শেখার পর বর্তমানে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মার্কেটপ্লেসে কাজ করেছেন এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। তাই যে কারো পক্ষেই অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হওয়া খুব একটা জটিল বিষয় নয়।
তবে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ভাষা। অনলাইনে একটু ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায় বিখ্যাত ও সফল ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেকচার মূলত ইংলিশে। যা অনেকেই ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেনা। যার ফলে অনলাইন থেকে ভালো কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে যাদের ইংরেজি নিয়ে কোন এলার্জি নেই, বুঝতে কোন সমস্যা হয়না তাদের জন্য সোনার হরিণ হতে পারে এই অনলাইন প্লাটফর্ম। কারণ এখানে আপনি পাবেন বিখ্যাতদের অসংখ্য লেকচার। যেগুলো মানে এবং গুনে অসাধারণ। এছাড়া একই বিষয়ের উপর বেশ কতগুলো লেকচার ও আর্টিকেল পাওয়া যায়। যা আপনাকে ওই বিষয়টির উপর মাস্টার করে তুলবে। অফলাইনে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বর্তমানে অনলাইনে গুগোল, ইউটিউব এবং বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম যেমন- Udemy, Skillshare, Masterclass, Coursera থেকে ফ্রিল্যান্সিং শেখার সুযোগ রয়েছে।
অফলাইন
ইংরেজিতে দুর্বল হয়ে থাকলে বা হাতে কলমে শিখতে চাইলে অফলাইন হতে পারে আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং শেখার অন্যতম সেরা মাধ্যম। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার বা ইনস্টিটিউট এর সাহায্য নিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন। তবে এজন্য আবার আপনার আশেপাশের অলিতে গলিতে ছত্রাকের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মানহীন কোচিং সেন্টারগুলোতে ভুলেও ভর্তি হতে যাবেন না। এসব প্রতিষ্ঠান আপনার মুল্যবান সময় ও টাকার অপচয় করবে কিন্তু দিনশেষে কিছুই শিখতে পারবেন না।
তাই অফলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে গেলে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে তবেই ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি হবেন। এজন্য আপনি চাইলে সে প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া একাধিক সফল ফ্রিল্যান্সারের সাথে কথা বলে যাচাই করে নিতে পারেন। প্র্যাকটিক্যালি শেখার ক্ষেত্রে অফলাইন ফ্রিল্যান্সিং শেখার একটি ভাল মাধ্যম।
তবে আপনি যে মাধ্যমেই ফ্রিল্যান্সিং শিখুন না কেন, আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। এছাড়া শেখার বিষয়গুলোকে প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস করতে হবে। এমন অনেক বিষয় থাকবে যা আপনাকে নিজে থেকে শিখে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এগুলোর পাশাপাশি আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তার ওপর প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো মেনে চললে তবেই আপনি একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।
বিনামূল্যে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ
বিনামূল্যে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ- কথাটি শোনার সাথে সাথেই যে নামটি প্রথমেই মাথায় আসে তা হলো ইউটিউব। হ্যাঁ বন্ধুরা, ইউটিউব শুধুমাত্র বিনোদনের কোন মাধ্যম নয়। আপনি চাইলে এটিকে শেখার মাধ্যমে হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। তাই বলে এটাকে আবার যেমন তেমন শেখার কোন মাধ্যম হিসেবে ভেবে বসবেন না। ইউটিউবে থাকা বেশিরভাগ কনটেন্ট অনেক মানসম্মত হয়ে থাকে। তাই ফ্রিল্যান্সিং শেখার ক্ষেত্রে ইউটিউব হতে পারে বিনে-পয়সার অন্যতম মানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি যে সেক্টরে কাজ করতে চান তার কীওয়ার্ড লিখে ইউটিউব-এ সার্চ করলেই উল্লিখিত বিষয়টির উপর অসংখ্য ভিডিও পেয়ে যাবেন। যেগুলোর বেশিরভাগ ভিডিও অনেক দক্ষ ফ্রিল্যান্সার এবং এ ফিল্ডের সেরারা তৈরি করেছেন। এখান থেকে আপনার পছন্দমত এক বা একাধিক ভিডিও দেখুন, শিখুন এবং প্র্যাকটিস করুন।
তবে ইউটিউব-এর পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ও প্লাটফর্ম রয়েছে যেগুলোর অনেক কনটেন্ট ফ্রিতে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে সেগুলো থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। আর কোন কিছু না পারলে গুগল তো আছেই। আপনার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে বা সমস্যার উপরে অনেক জ্ঞানী মানুষের কনটেন্ট পাবেন গুগলে। যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বস বানিয়ে দিতে যথেষ্ট। তাই জানুন, শিখুন ও প্র্যাকটিস করুন। সফলতা আপনার কাছে ধরা দেবেই।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং বা “মুক্তপেশা” এর কাজের পরিধি অনেক বিস্তৃত। আবার প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কাজের সেক্টর ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিশাল কাজের পরিধি আরো বাড়ছে। মূলত মানুষের অনলাইন নির্ভরতার কারণে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের এর চাহিদা আকাশচুম্বী। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের পরিধি এত বিস্তৃত যে এর সবগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার। তবে এর বেসিক কিছু কর্ম পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে। তাহলে চলুন ফ্রিল্যান্সিংয়ের বেসিক কিছু কাজ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
লেখালেখি ও অনুবাদ: বিভিন্ন ওয়েবসাইট কনটেন্ট, আর্টিকেল, প্রোডাক্ট রিভিউ, গল্প, ভাষান্তর ইত্যাদি।
গ্রাফিক্স ডিজাইন: লোগো, ওয়েবসাইট ব্যানার, ছবি সম্পাদনা, অ্যানিমেশন, বিজনেস কার্ড, পোস্টার ইত্যাদি।
ওয়েব ডেভলপমেন্ট: ওয়েবসাইট তৈরি, ওয়েবভিত্তিক সফ্টওয়্যার তৈরি, হোস্টিং, প্লাগ-ইন, ওয়েবসাইট ফিচার ইত্যাদি।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং: সকল প্রকার কম্পিউটার প্রোগ্রামিং যেমন- সি, সি++, জাভা, পাইথন ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।
ইন্টারনেট মার্কেটিং: ইন্টারনেটভিত্তিক বাজারজাতকরণ কার্যক্রম, যেমন ব্লগ পরিচালনা, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে বিপণন।
ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট: দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির গ্রাহককে টেলিফোন, ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহাজ্যে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।
সাংবাদিকতাঃ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের জন্য তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করা এবং ভার্চুয়াল সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করবেন? ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ওয়েবসাইট
আশা করছি এ ব্লগটি থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কথা ভাবছেন, তাহলে এ পোস্টটিতে থাকা তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। সবশেষে একটি কথাই বলব জানুন, শিখুন ও নিজেকে সমৃদ্ধ করুন।