হ্যাকিং
একটি পরিপূর্ণ হ্যাকিং অ্যটাক করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নিতে হয়। হ্যাকিং করার জন্য সবার প্রথম যা দরকার পরে তা হলো নিজেকে গোপন রাখা। অবস্থান এবং পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে টার্গেট সতর্ক হয়ে যায় এবং নিজেকে সুরক্ষিত করে ফেলে। ইন্টারনেটে গোপনীয়তা রক্ষা করা একজন সাধারণ ইউজারের জন্য অসম্ভব কিন্তু কিছু কিছু পদ্ধতি আছে যা ফলো করলে গোপন থাকা সম্ভব। এছারাও হ্যাকিং করার জন্য যে সকল টুলস বা কনফিগারেশন দরকার পরবে তা সবসময় ম্যানুয়ালি মেইন্টেইন করা কঠিন। এধরনের কঠিন কাজ সহজে করার জন্য হ্যাকিং কে টার্গেট করে হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা ৫ টি সেরা হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানবো।
কালি লিনাক্স
পৃথিবীতে হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে কালি লিনাক্স সবার উপরে আছে। কালি লিনাক্স আজকের এই অবস্থানে আসার আগে এর নাম ছিল ব্যাকট্র্যাক। সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিষ্টদের জন্য অফেনসিভ সিকিউরিটি লিমিটেড লিনাক্স কার্নেল সংস্কার করে ব্যাকট্র্যাক তৈরি করে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ফরেনসিক টেস্ট এবং পেনেট্রেশন টেস্টিং করার জন্য সুইটেবল লিনাক্স ডিস্ট্রো তৈরি করা।
এরপর ব্যাকট্র্যাক ১, ব্যাকট্র্যাক ২, ব্যাকট্র্যাক ৩, ব্যাকট্র্যাক ৪, ব্যাকট্র্যাক ৫ ভার্সনগুলো রিলিজ করার পর ফাইনালি কালি লিনাক্স নামকরন করা হয়। কালি লিনাক্স একটি ডেবিয়ান ভিত্তিক লিনাক্স ডিস্ট্রো। কালিতে মোট ৬০০+ পেনেট্রেশন টেস্টিং এবং ডিজিটাল ফরেনসিক টুল প্রি-ইন্সটল করা থাকে। যা একজন হ্যাকারের সকল টুলের চাহিদা পূরণ করে।
ওপেন সোর্স হওয়ার কারনে আপনি চাইলে কাস্টম টুল বানিয়ে কালি লিনাক্সে ব্যবহার করতে পারবেন। হ্যাকিং পরিচালনা করা এবং হ্যাকিং প্রতিরোধ করা দুটোই কালি লিনাক্স দিয়ে করা যায়। আপনি সরাসরি কম্পিউটারে ইন্সটল করে অথবা ডুয়াল বুট করে কালি লিনাক্স ইউজ করতে পারবেন। তাদের অফিশিয়াল ওয়েব সাইটে কালি লিনাক্স লাইভ নামক আইএসও ফাইল ইউজ করে পেনড্রাইভে সরাসরি ইন্সটল করে চালাতে পারবেন।
আপনি চাইলে টেস্ট করার জন্য বা হ্যাকিং এনভায়রনমেন্ট তৈরি করার জন্য ভার্চুয়াল বক্সে কালি লিনাক্স ইউজ করতে পারবেন। কালির প্রধান কার্নেল নিয়মিত আপডেট হয় এবং এতে ওয়ারেলেস নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত রাখতে একটি কাস্টম কার্নেল ব্যবহার করা হয়। এই কার্নেলে ৮০২.১১ ওয়্যারলেস ইনজেকশন প্রতিরোধের জন্য প্যাঁচ যুক্ত করা আছে। এন্ড্রয়েড ডিভাইসে কালি ইউজ করার জন্য নেটহান্টার নামক তাদের বিশেষ একটি প্রোজেক্ট আছে।
যতগুলো হ্যাকিং ওএস আছে তাদের মধ্যে কালি লিনাক্স সব থেকে বেশি ইউজ করা হয়। অন্যান্য ওএস চালানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অনলাইন বা অফলাইন সাহায্য পাওয়া যায়না। কোন সমস্যায় পরলে নিজে নিজে সমাধান খুঁজে বের করতে হয় যা ঝামেলার সৃষ্টি করে। এদিক থেকে কালি লিনাক্স অনেক এগিয়ে। অনলাইনে অনেক রিসোর্স টিউটোরিয়াল ভিডিও পাওয়া যায় যেখানে কালি লিনাক্স ইউজ করার সকল হেল্প পাওয়া যায়। সবদিক বিবেচনা করলে কালি লিনাক্স একটি পারফেক্ট এবং বেস্ট হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম।
ব্যাকবক্স
এটি একটু উবুন্টু নির্ভর হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম। সহজ এবং সাবলীল ডেক্সটপ ডিজাইন হওয়ার কারনে নতুন হ্যাকারদের কাছে ব্যাকবক্স ওএস অনেক জনপ্রিয়। সাধারণত ব্যাকবক্স একটি পেনেট্রেশন টেস্টিং এবং নেটওয়ার্ক ও ইনফরমেশন এনালাইসিস করার জন্য পারফেক্ট সিস্টেম। ব্যাকবক্স দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন এনালাইসিস থেকে শুরু করে ডাটা এনালাইসিস সহ আরও অনেক কাজ করা যায়।
ব্যাকবক্স একটি স্টাবল এবং ফাস্ট অপারেটিং সিস্টেম। তারা নিয়মিত ফুল সিস্টেম এবং টুলস আপডেট করে। নতুন হ্যাকারের পক্ষে এর ইন্টারফেস বোঝা এবং কাজ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। সিকিউরিটি সহ সকল ইথিক্যাল হ্যাকিং এর জন্য ব্যাকবক্স একটি আদর্শ অপারেটিং সিস্টেম। আপনি তাদের ওয়েবসাইট থেকে আইএসও ফাইল সরাসরি ডাউনলোড করে পেনড্রাইভ বুটেবল করে সিস্টেমে ইন্সটল করতে পারবেন।
প্যারট সিকিউরিটি অপারেটিং সিস্টেম
প্যারট একটি ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম যা মনোলেথিক কার্নেল ব্যবহার করে। এটি একটি ডেবিয়ান ভিত্তিক লিনাক্স হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম। অনেকে একে প্যারটসেক নামেও চেনে।
প্যারট ওএস একাধারে পেনেট্রেশন টেস্টিং, ডিজিটাল ফরেনসিক, ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং ইথিক্যাল হ্যাকিং নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ শুধু প্যারট ওএস দিয়ে আপনি এই সবগুলো কাজ করতে পারবেন। আপনাকে আলাদা আলাদা ওএস ইন্সটল করতে হবে না।
অনলাইনে নিজের পরিচয় গোপন রেখে কাজ করার জন্য প্যারট অনেক জনপ্রিয়। এটি তৈরি করা হয়েছে ফ্রজেনবক্স এবং কালি লিনাক্সের সমন্বয়ে। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় প্যারট অনেক লাইটওয়েট এবং স্টাবল।
MATE ডেক্সটপ এনভাইরমেন্ট ইউজ করার কারনে আপনি ইচ্ছামতো ডেক্সটপ কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। ক্লাউড ফ্রেন্ডলি হওয়ায় এর পারফর্মেন্স অনেক ফাস্ট। সার্ভার সিকিউরিটির জন্য প্যারট ওএস অনেক ভালো সার্ভিস প্রদান করে। ইউজার ইন্টারফেস সহজ হওয়ায় এবং সকল প্রয়োজনীয় টুল সাপোর্ট থাকায় প্যারট সিকিউরিটি অপারেটিং সিস্টেম হ্যাকিং এর জন্য পারফেক্ট।
সাইবর্গ হক লিনাক্স
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তৈরি হওয়া হ্যাকিং অপারেটিং সিস্টেম এই সাইবর্গ হক লিনাক্স। উবুন্টুর উপর নির্ভর করে ২০১৫ সালে এই অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়। পেনেট্রেশন টেস্টিং, নেটওয়ার্ক মেইন্টেইন, ডিজিটাল ফরেনসিক বাদেও মোবাইল সিকিউরিটি এবং ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ইত্যাদি সাইবর্গ হক লিনাক্স দিয়ে করা যায়।
এটি সম্পূর্ণ ফ্রী এবং ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম। ৭৫০+ পেনেট্রেশন এবং নেটওয়ার্ক টুল সাইবর্গ হক লিনাক্স ওএসকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সাইবর্গ হক সরাসরি সিস্টেমে ইন্সটল না করেও লাইভ সিডি হিসেবে পেনড্রাইভে ইন্সটল দিয়ে চালানো যায়। এছারাও আপনি ভার্চুয়াল বক্সে সাইবর্গ হক ইউজ করতে পারবেন।
সাইবর্গ হক বিভিন্ন ওয়্যারলেস ডিভাইস সাপোর্ট করে। যদিও প্রথমের দিকে তাদের নিজস্ব রিপোজিটরি ছিল না কিন্তু এখন তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার রিপোজিটরি আছে। সাইবর্গ হক ওএস দিয়ে আপনি রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজিটাল ফরেনসিক, স্ট্রেস টেস্টিং, মোবাইল সিকিউরিটি, ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন। এগুলো ছারাও অনেক বড় এক্সপ্লইট টুলকিট পাবেন যেখানে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় টুল পাবেন।
ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স
হ্যাকিং অপারেটিং এর দুনিয়ায় সবথেকে বেশি টুল সম্বলিত ওএস হলো ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স। এতে মোট ২৬২৪ টি হ্যাকিং এবং পেনেট্রেশন টুল আছে। আপনি চাইলে কোন নির্দিষ্ট টুল অথবা গ্রুপ আকারে টুল ইন্সটল করতে পারবেন।
এতো বিশাল টুল সাপোর্ট নিয়ে আসা ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স একটি আর্চ লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। অন্যান্য হ্যাকিং ওএসের সাথে তুলনা করলে শুধু কালি লিনাক্স এর সমতুল্য। ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স একটি কমপ্লিট অপারেটিং সিস্টেম।
ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স ইউজ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আর্চ লিনাক্স সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কারন এই ওএস আর্চ লিনাক্সের কমান্ড লাইন ইউজ করে। ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্স ৩২ এবং ৬৪ বিট স্ট্রাকচার সাপোর্ট করে।
ব্ল্যাকআর্চ ইন্সটল করার আগে আপনাকে এর আইএসও ইমেজ ডাউনলোড করে নিতে হবে। এর ফুল আইএসও এর সাইজ ১৫ জিবি এবং নেটইন্সটলারের সাইজ ৭৩৩ এমবি। আপনি সরাসরি ডাউনলোড করতে না চাইলে টরেন্ট ইউজ করেও ডাউনলোড করতে পারবেন।
ব্ল্যাকআর্চ লিনাক্সের মোটামুটি অনেকগুলো একটিভ মিরর রয়েছে যা একে সবসময় আপডেটেড রাখে। কিন্তু স্মুথ পারফরমেন্সের জন্য এটি তেমন লাইটওয়েট না। তবে ভার্চুয়াল বক্সে ইউজ করার জন্য তারা OVA ইমেজ সরবরাহ করে।
হ্যাকিং মেথড কি? কোন কোন উপায়ে হ্যাকিং করা যায়?
হ্যাকিং করার জন্য আসলে অপারেটিং সিস্টেমের থেকে হ্যাকিং দক্ষতা বেশি জরুরী। কিন্তু তারপরেও অপারেটিং সিস্টেম অনেক প্রভাব ফেলে। যেমন অনেক টুল রেডিমেড পাওয়া যায় যা অপারেটিং সিস্টেমে না থাকলে নিজের তৈরি করে নিতে হয়। আজকের পোস্টে বর্তমান সময়ের সেরা ৫ টি হ্যাকিং অপারেটিং সম্পর্কে জানলাম। হ্যাকিং ওএস নিয়ে আরও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ।