ফ্রিল্যান্সার.কম কি?

ফ্রিল্যান্সার.কম একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। যেখানে অন্যন্য মার্কেটপ্লেসের মত কাজ পাওয়া এবং ফ্রিল্যান্সার দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। বাংলাদেশে সহ বিশ্বের প্রায় ২৪৭ টি দেশে এই ফ্রিল্যান্সার.কম এর কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক ফ্রিল্যান্স যোদ্ধা ফাইভার এবং আপওয়ার্কের মত ফ্রিল্যান্স.কমে কাজ করে থাকেন। 

ফ্রিল্যান্সার.কম কি? 

ফ্রিল্যান্সার.কম একটি বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট, অস্ট্রেলিয়াতে এই মার্কেটপ্লেসের জন্ম। এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৯ সালে। বর্তমানে এটির হেড কোয়াটার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত। ফ্রিল্যান্সার.কমে কাজ করে প্রায় ৪৫ মিলিয়নের অধিক ফ্রিল্যান্সার। এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইটে সাধারণত ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে রাইটিং, সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, সাইন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেটিং, সেলস, একাউন্টিং সহ আরো অনেক লিগাল সার্ভিস নেওয়া যায়।  ফ্রিল্যান্সিং.কম সাইটে জন্মের পর থেকে এখন অবধি প্রায় ১৬ মিলিয়নের অধিক জবের পোস্ট হয়েছে। 

ফ্রিল্যান্সার.কমে কিভাবে কাজ করে?

ফ্রিল্যান্সার.কমে কিভাবে কাজ করে?

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার.কমে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চান তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে তাদের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম থেকে একটি একাউন্ট তৈরি করে নেওয়া। এক্ষেত্রে আপনার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর (যদিও ১৬ বছর বয়স হলে কাজ শুরু করা যায় এডাল্টস পার্মিশন নিয়ে)। 

পরবর্তীতে আপনার কাজ হবে, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে যে সকল ইনফর্মেশন এড করা প্রয়োজন সব গুলো করা। এক্ষেত্রে আপনি আপনার স্কিল গুলো সঠিক ভাবে সংযুক্ত করে নিবেন। আরো বেশি বিশ্বাস যোগ্যতা তৈরি করতে আপনি আপনার স্কিল গুলোর জন্য ফ্রিল্যান্সার.কমের নিকট পরিক্ষা দিতে পারেন। এরপর আপনার প্রোফাইল যদি অনুমোদন পেয়ে যায় তাহলে, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে কাজের জন্য বিড করতে পারবেন। আর যদি ক্লায়েন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনি জব পোস্ট করতে পারবেন। 

ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি হয়?

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি আপনার প্রোফাইলের ধরন অনুযায়ী কাজের নমুনা পাবেন। যেখানে আপনার পছন্দ মত এবং আপনি যে কাজের যোগ্য মনে করেন সেখানে আপনি জবের জন্য বিড করতে পারবেন। 

এর পর অন্যান্য সাধারণ ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটের মত ক্লায়েন্ট যদি আপনার প্রোপোজাল গ্রহন করে থাকে, তার মানে আপনি কাজ পেয়ে গেছেন। কাজ শেষ করার পর ক্লায়েন্ট যদি গ্রহন করে থাকে আপনার কাজ, তাহলে ফ্রিল্যান্সার.কম আপনাকে টাকা দিয়ে দিবে। টাকা উইথড্র করার ক্ষেত্রে আপনার ব্যালেন্সে নূন্যতম ৩০ ডলার পরিমান টাকা থাকতে হবে। মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার উইথড্র করতে পারবেন। এক্ষেত্রে টাকা আপনার নিকট পৌছাতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগবে। 

ফ্রিল্যান্সার.কমে আপওয়ার্কের মত দুই ধরনের কাজ পাওয়া যায়। যেমন-

  •  আওয়ারলি 
  • ফিক্সট প্রাইস

আওয়ারলি

একজন ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করার সময় বিষয়টি উল্লেখ করে দিয়ে থাকেন। আওয়ারলি প্রজেক্ট গুলো সাধারণত ঘন্টা ভিত্তিক চুক্তিতে কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিডের সময় বিষয়টি ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্ট উভয় ঠিক করে নিয়ে থাকেন প্রতি ঘন্টা কাজের বিনিময়ে কত টাকা পেমেন্ট করতে হবে।  এখানেও আপওয়ার্কের মত ট্র্যাকিং এপস রয়েছে। আপনি যখন আপনার কাজ শুরু করবেন, তখন ট্র্যাকিং অ্যাপস চালু করে দিবেন। কোন সময় কোন কাজটি করছেন, তার জন্য নোট নিয়ে রাখতে পারবেন। যখন ক্লায়েন্ট কাজ বুঝে নিতে চাইবে, তখন এই ট্র্যাকিং অ্যাপস  যথার্থ ডাটা দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। 

ফিক্সট প্রাইস

ফিক্সট প্রাইসের ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব সহজ। টোটাল কাজ করে দিতে কত টাকা দিতে হবে তা কাজ শুরু করার আগে থেকে নির্ধারণ হয়ে যায়। ফলে যখন কাজ শেষ করে, তখন বিডের সময় কাজের জন্য যে পরিমান টাকা নির্ধারণ হয়েছিলো, তা ফ্রিল্যান্সার এর মূল একাউন্টে জমা হয়ে যায়। অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সাররা ফিক্সট প্রাইজে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে থাকে। 

ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

ফ্রিল্যান্সার.কমের ভালো দিক

  • বিসনেসের জন্য ফ্রিল্যান্সার.কম থেকে ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নেওয়া ভাল। কারণ এখানে একজন কর্মীর অসুস্থতার জন্য ছুটি এবং ভ্যাকেশনের জন্য বা ট্রেনিং এর জন্য কোম্পানির কোন রকম খরচ করতে হয় না। 
  • এখানে যেকোন সময় কাজ করানো যায়। সাধারন অফিস টাইম এখানে মেনে না চললেও হয়, কারন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসে তার ইচ্ছামতো সময়ে কাজ করে নেয়, এক্ষেত্রে কোম্পানী গুলোরও সুবিধা হয়। তাদেরও সময়ের ব্যপারে সাধারণ অফিসের মত বেশি সিরিয়াস না হলেও চলে।
  • ফ্রিল্যান্সার.কম একটি বিশাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হওয়ার কারণে এখানে সকলের আরো বেশি পরিমানে যাচাই বাচাই করে কাজ করানোর সুবিধা থাকে। কারো কোন কর্মি পছন্দ না হলে যে খুব সহজে চাইলে অন্যত্র মুভ করতে পারে। এছাড়া কোন ক্লায়েন্ট যদি চায় তাদের আরও ভালো ফ্রিল্যান্সার এর প্রয়োজন রয়েছে, তারা খুব সহজে নতুন ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে নিতে পারে। ক্ষেত্রটি বিশাল হওয়ার কারনে এখানে খুব সহজে সুইচ করা যায়।
  • এখানে অনেক সময় প্রবলেম সল্ভিং এর কনটেস্ট হয়ে থাকে। কনটেস্টের বিজয়ীর জন্য থাকে আকর্ষনীয় বাজেট, যা ট্যালেন্টেড ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পেতে খুব সহায়ক। এই ধরনের কন্টেস্টে উভয়ের লাভ। কোম্পানীর প্রভলেম সলভ হয়, সাথে রাইজিং ট্যালেন্ট গুলো খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
  • প্রতি জব পোস্টের বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সার.কম চার্জ করে থাকে ১০% যা অন্যান্য জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস গুলো থেকে অনেক কম। 

ফ্রিল্যান্সার.কমের অপেক্ষাকৃত কম ভালো দিক

  • নতুন ফ্রিল্যান্সারদের অনেক বেশি পরিমানে স্ট্রাগল করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় তারা সময় অনুযায়ী খুব কম পরিমান অর্থ পেয়ে থাকে। বলা যায় নতুন ফ্রিল্যান্সারদের এই ফ্ল্যাটফর্মে টিকে থাকা খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে।
  • আওয়ারলি প্রজেক্ট গুলোর ফি অনেক বেশি হয়ে থাকে। 
  • ফ্রি মেম্বারশিপের আওতায় একজন ফ্রিল্যান্সার মাসে সর্বোচ্চ ৮ টি জবে আবেদন করতে পারে। 
  • কোন ব্যাখ্যা ছাড়া তারা একাউন্ট ব্যান করে দিয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সার.কম কি বৈধ?

ফ্রিল্যান্সার.কম কি বৈধ?

এই ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসটি স্থাপিত হয়েছে ২০০৯ সালে এবং এখনও পর্যন্ত খুব সফলতার সাথে কাজ করে আসছে। তাই আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে এটি একটি বৈধ ফ্রিল্যান্সিং সাইট, কোন প্রকার স্ক্যাম নয়। ফ্রিল্যান্সার.কমের ১১ বছরের ইতিহাসে তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালো রকম ফ্যানবেইজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু ফেসবুকে রয়েছে প্রায় দুই লক্ষ এর অধিক ফলোয়ার। এছাড়া টুইটার এবং ইন্টাগ্রামে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজারের অধিক ফলোয়ার। 

কাস্টমার সার্ভিস

ফ্রিল্যান্সার.কমের কাস্টমার সার্ভিস সার্বক্ষনিক খোলা রয়েছে। দিনে ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহে সাত দিন তাদের সার্ভিস পাওয়া যায়। মজার দিক হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার.কম কোন অভিযোগ পেলে, উভয় পক্ষ থেকে ৫ ডলার করে চার্জ করে থাকে ঝামেলা মিটমাট কারার জন্য। এক্ষেত্রে যে পক্ষ জিতে যাবে, সে পক্ষ টাকা ব্যাক পাবে। 

ফ্রিল্যান্সার .কমের কোন দিকটি মানুষ বেশি পছন্দ করে?

ফ্রিল্যান্সার.কমে কোন ঝামেলায় পড়লে ওরা ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়কে সমান চোখে দেখে থাকে। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে দেখা যায় যে, তারা একপক্ষের প্রতি বেশি পরিমানে ঝুকে পড়ে। কিন্তু এই ফ্রিল্যান্স সাইট যথেষ্ট পরিমান নিরপেক্ষ উভয়ের দিক থেকে চিন্তা করলে। তবে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া যায় অনেক ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষ থেকে। সবচেয়ে যে বিষয়টি মানুষ অপচ্ছন্দ করে থাকে, তা হলো এরা কোন প্রকার ওয়ার্নিং না দিয়ে একাউন্ট ক্লোজ করে দিয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সার কারা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *