ই-পাসপোর্ট (E-passport) বা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট হলো এমন একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যেখানে একটি ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ও একটি অ্যান্টেনা সংযোজিত থাকে। এই ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপের মধ্যে পাসপোর্টধারীর সকল বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে। বায়োমেট্রিক তথ্যের মধ্যে রয়েছে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ।
প্রচলিত এমআরপি (MRP) বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (Machine Readable Passport) এর চেয়ে ই-পাসপোর্ট বা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের সুবিধা হলো, ই-পাসপোর্টধারী ভ্রমণকারীগণ খুব সহজে এবং অনেক দ্রুত কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।
যেমন- ই-পাসপোর্টধারীদের এখন আর ইমিগ্রেশন এর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বরং একজন ই-পাসপোর্টধারী ই-গেট এর সাহায্যে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সেরে নিতে পারবেন অনেক কম সময়ের মধ্যে। এছাড়া একটি ই-পাসপোর্টে ৩৮ টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এ ধরনের ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টে এমআরপি পাসপোর্টের মতো তথ্য জালিয়াতি করা সহজ নয় বলে কর্তৃপক্ষ মত প্রকাশ করেছেন।
সৌভাগ্যবশত বিশ্বের ১১৯ তম দেশ হিসেবে ২২ জানুয়ারি ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের সোনালী যুগে পদার্পণ করে। বর্তমানে বাংলাদেশি ই-পাসপোর্ট ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সকল দেশে ব্যবহার যোগ্য। অর্থাৎ বিশ্বের যে সকল দেশের বিমানবন্দরে ই-গেট রয়েছে, সে সকল দেশে ই-পাসপোর্ট কার্যকর করা হবে।
যার ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকগণ প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্টের পরিবর্তে ইলেক্ট্রনিক বা বৈদ্যুতিক পাসপোর্ট তৈরির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এটি অপেক্ষাকৃত একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা হওয়ায় এ ব্যপারে তাদের ভোগান্তির-ও শেষ নেই। সুতরাং এ সকল ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
তাই আজকের আর্টিকেলটি আমরা সাজিয়েছি ই-পাসপোর্ট তৈরির নিয়ম, ই-পাসপোর্ট তৈরির খরচ, ই-পাসপোর্ট তৈরির আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি দিয়ে। তাহলে চলুন প্রথমেই দেখে নেই ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করার নিয়ম কি কি।
ওয়েব ডেভেলপার সোহেল আরমানের সফলতার গল্প
ই-পাসপোর্ট আবেদন
ই-পাসপোর্ট তৈরির প্রথম ধাপ হলো ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করা এবং নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসের সার্ভারে তা সাবমিট করা। ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
- প্রথম www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে লগ ইন করুন।
- ওয়েবসাইটে লগ ইন করার পর “Directly to Online Application” বাটনে ক্লিক করুন।
- এ পর্যায়ে বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম এবং থানার নাম নির্বাচন করে পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করুন।
- এই ধাপে আপনার ইমেইল এড্রেস দেয়ার পর hক্যাপচা টি চেক করে Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যেতে হবে।
- ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য একটি একাউন্ট রেজিস্টারের জন্য ইমেইল দেয়ার পর একটি স্ট্রোং সিকিউর পাসওয়ার্ড টাইপ করতে হবে। যে পাসওয়ার্ড টি পরে তা কোথাও সেভ করে রাখতে হবে।
- ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্টের মূল রেজিসেট্রশন ফরমটি পূরণ করুন। এখানে ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে রয়েছে আবেদনকারীর নাম, জন্ম তারিখ, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, পূর্ববর্তী কোন পাসপোর্ট থাকলে সেই পাসপোর্টের তথ্য, পিতা-মাতার নাম এবং পেশা, যোগাযোগ করার জন্য দুটি মোবাইল নম্বর।
- এরপর পেমেন্ট সেকশনে পেমেন্ট সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন।
- এবার সম্পূর্ণ আবেদন পত্রটি ভালোভাবে চেক করুন যেন কোন তথ্য ভুল না হয়ে থাকে। কেননা চূড়ান্তভাবে আবেদনপত্র জমা দেয়ার পরে কোনক্রমেই কোন তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না।
- সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা হলে আবেদনপত্রটি সাবমিট করে দিন এবং আবেদনপত্রের একটি পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে নিন।
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম
প্রথম ধাপে আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর পাসপোর্টের মেয়াদ ও পৃষ্ঠার সংখ্যা অনুযায়ী আবেদন ফি জমা দিতে হবে। আবেদন ফি জমা দেয়ার জন্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত পাঁচ ব্যাংকের যেকোন একটি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে জমাদানের স্লিপ সংগ্রহ করতে হবে। নির্ধারিত এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে সোনালি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়াম ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক।
ব্যাংকে টাকা জমাদানের সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের একটি ফটোকপি এবং অনলাইন আবেদনপত্রের পিডিএফ ফরমটি সাথে রাখতে হবে। এ সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ব্যাংক ডিপোজিট ফরমে আবেদনকারীর নাম এবং ই-পাসপোর্ট রেজিস্ট্রেশন ফরমে দেয়া আবেদনকারীর নাম সম্পূর্ণ এক হতে হবে এবং টাকা জমা দেওয়ার পর অবশ্যই টাকা জমাদানের রশিদ সংগ্রহ করে তা নিজের কাছে রাখতে হবে।
অনলাইনে আবেদন ফরম এবং ব্যাংকে আবেদন ফি জমা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমেত বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য যেতে হবে। এ সময় অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রের পিডিএফ ফরমের হার্ডকপির সাথে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ব্যাংকে টাকা জমাদানের রশিদ সংযুক্ত করে রাখতে হবে।
তবে আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়ে থাকে তবে জন্ম নিবন্ধনের সাথে তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এ পর্যায়ে আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক তথ্য সমূহ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ধারিত কর্মদিবস সাপেক্ষে জমা দেওয়া হলে জমা দেয়ার পর থেকে সেই নির্ধারিত কর্মদিবস পর ই-পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট অফিসে সমস্ত ফাইল জমা দেওয়ার পর নির্ধারিত কার্যদিবসের মধ্যে যেকোন একসময় পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য আবেদনকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের তারিখ আবেদন ফরমে প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে ম্যাসেজ করে অথবা সরাসরি কল করে জানিয়ে দেয়া হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অবশ্যই সেই মাস কিংবা তার পূর্ববর্তী মাসের বিদ্যুৎ বিল এবং এনআইডি কার্ডের অনলাইন কপি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে।
ই-পাসপোর্ট খরচ
ই-পাসপোর্ট তৈরির খরচ বা ডেলিভারি ফি মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
- ই-পাসপোর্টের মেয়াদ
- পাসপোর্টের পৃষ্ঠা
- ই-পাসপোর্ট তৈরির কর্মদিবস
ই-পাসপোর্ট তৈরির কর্মদিবস
ই-পাসপোর্ট কর্মদিবস মূলত তিন প্রকার।
- রেগুলার: ২১ কর্মদিবস
- এক্সপ্রেস: ১০ কর্মদিবস
- সুপার এক্সপ্রেস: ২ কর্মদিবস
ই-পাসপোর্টের মেয়াদ
ই-পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর এবং ১০ বছরের জন্য হয়ে থাকে। ১৮ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী আবেদনকারীদের ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ বছর। অপরদিকে আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে ও ৫৫ বছরের উর্ধ্বে হয়ে থাকে তবে তার ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর।
ই-পাসপোর্টের পৃষ্ঠা
একটি ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট সাধারণত ৪৮ পৃষ্ঠা অথবা ৬৪ পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। সুতরাং মেয়াদ এবং পৃষ্ঠা সংখ্যার সাপেক্ষে ই-পাসপোর্টকে আমরা চারটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
- ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট
ডেলিভারি ফি রেগুলার: ৪, ২৫ টাকাএক্সপ্রেস: ৬, ৩২৫ টাকাসুপার এক্সপ্রেস: ৮, ৬২৫ টাকা |
- ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট
ডেলিভারি ফি রেগুলার: ৫, ৭৫০ টাকাএক্সপ্রেস: ৮, ৫০ টাকাসুপার এক্সপ্রেস: ১০, ৩৫০ টাকা |
- ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট
ডেলিভারি ফি রেগুলার: ৬, ৩২৫ টাকাএক্সপ্রেস: ৮, ৬২৫ টাকাসুপার এক্সপ্রেস: ১২, ০৭৫ টাকা |
- ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট
ডেলিভারি ফি রেগুলার: ৮, ০৫০ টাকাএক্সপ্রেস: ১০, ৩৫০ টাকাসুপার এক্সপ্রেস: ১৩, ৮০০ টাকা |
ই-পাসপোর্ট তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে আশা করি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় আপনাদের জেনে নেওয়া জরুরি। যেমন- যাদের ইতিমধ্যে এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে তারা যখন তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন করতে যাবেন তখন এমআরপি পাসপোর্টের পরিবর্তে তাদের ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হব।
এছাড়া যদি কেউ তার এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা অবস্থায় নতুন করে ই-পাসপোর্ট তৈরি করতে চান তবে এমআরপি পাসপোর্টের ফটোকপি সহ মূল পাসপোর্ট এবং মূল জাতীয় পরিচয় পত্র পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের-ও কোন প্রয়োজন পরবে না যেহেতু ইতিমধ্যে এমআরপি পাসপোর্ট তৈরির সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে।
ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান
এর বাহিরেও যদি আপনাদের আরও কিছু জানার দরকার পরে তাহলে এই লিংকে প্রবেশ করুন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা গ্রহণ করুন।